ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

যশোরে ‘সততা স্টোরে’ অর্থ দেওয়া পরিবার-সমাজ থেকে শিশুরা অসৎ হওয়ার শিক্ষা পায়’

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
পরিবার-সমাজ থেকে শিশুরা অসৎ হওয়ার শিক্ষা পায়’

‘সব শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় সততা নিয়ে জন্ম নেয়। কিন্তু এরপর পরিবার ও সমাজ থেকে শিশুরা অসৎ হওয়ার শিক্ষা পায়। এ কারণে শিশুকে প্রথমে পরিবার থেকেই সততার শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততার বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আর সেই কাজ করে যাচ্ছে ‘সততা স্টোর’। প্রতিটি স্কুলে ‘সততা স্টোর’ সততা চর্চার একটি অন্যতম প্লাটফর্ম। এটি একটি প্রতীক। নতুন প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং অল্প বয়স থেকেই দুর্নীতিবিরোধী নৈতিকতায় উদ্বুদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) যশোর জিলা স্কুল অডিটোরিয়ামে ‘দুর্নীতির সময় শেষ গর্ব সোনার বাংলাদেশ’ স্লোগানকে সামনে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশনের শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, প্রতিষ্ঠানে সততা স্টোরে অর্থ দেওয়া ও শিক্ষার্থী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল-আমিন। প্রধান অতিথি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারে সততা স্টোর গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোয়েব হোসেন ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ।
বক্তারা বলেন, ‘সততা স্টোর’ থেকে যেসব শিক্ষার্থী পণ্য কিনছে, তারা পণ্য কেনার পাশাপাশি তাদের দিতে হচ্ছে সততা এবং বিবেকের পরীক্ষা। যে কেউ চাইলে এখান থেকে মূল্য পরিশোধ না করে চুপিচুপি পণ্য নিয়ে চলে যেতে পারবে। কিন্তু তারা সেটা করছে না। অর্থাৎ সরকারের এ উদ্যোগ সার্থক হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল-আমিন বলেন, যশোরের ১৭৫টি স্কুলে সততা স্টোরে টাকা দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝে সততা স্টোরের টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুদকের পক্ষ থেকে ১৪ জনকে উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণও এ অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘কৈশোরেই শিক্ষার্থীরা লোভ-লালসা ত্যাগ করে সততার সঙ্গে বেড়ে ওঠার ‘হাতে-কলমে’ নতুন পাঠ নেবে। সততা স্টোর হচ্ছে- স্কুল প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিক্রেতাবিহীন দোকান। এসব দোকানে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি বিস্কুট, চিপস, চকলেট ইত্যাদি রাখা হয়। প্রতিটি সততা স্টোরে পণ্যের মূল্য তালিকা ও পণ্য মূল্য পরিশোধের জন্য ক্যাশ বাক্স রাখা হয়। কোনো বিক্রেতা থাকে না। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে তারাই ক্যাশ বাক্সে পণ্যের মূল্য দিয়ে রাখবে। এভাবেই শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিখবে সততার প্রথম পাঠ।’

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, যশোরের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে যশোর ও নড়াইল জেলার ২৪টি বিদ্যালয়ে সততা স্টোর স্থাপনের জন্য স্কুলপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যশোর ও নড়াইল জেলার ২৫০টি বিদ্যালয়ের অনুকূলে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেলার ১৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর সদর উপজেলায় ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাতটি উপজেলায় ২০টি করে ১৪০টি প্রতিষ্ঠানে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঢাবির হলগুলোতে ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৬ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম
ঢাবির হলগুলোতে ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর
ঢাবির হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। ছবি: খবরের কাগজ

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে প্রায় ৩০০ কক্ষে ভাঙচুর করেছে। ইতোমধ্যে হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণও করা হয়েছে, শিগগিরই হলগুলো সংস্কার করে খোলার পরিকল্পনা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোকেয়া হল এবং স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন করেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এসময় তিনি ভাঙচুর হওয়া বিভিন্ন হলের কক্ষ পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ডিভিশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিকট হতে আর্থিক বরাদ্ধ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলগুলোর কক্ষের পাশাপাশি অনেক স্থপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোও সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্কার শেষে দেশব্যাপী স্থিতিশীলতা বিরাজ করলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি প্রস্তুত হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে।’

কবে নাগাদ খুলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে একটি অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ইউজিসিকে এই আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হবে। সেখানে আবার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে। পরবর্তীতে টেন্ডার ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) অনুসরণ করে কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে। যেই সময়টি প্রয়োজন এতোটুকু সময় তো প্রয়োজন। এখন টেন্ডার দেওয়ার পর সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব কবে কাজ শেষ হবে। এরপর আমরা খোলার সিদ্ধান্ত নেবো।’

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর: গত ১৭ জুলাই রাত ১২টা অভিযোগ ওঠে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসাইনসহ ৯ ছাত্রলীগ নেত্রী হলের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে, ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা এবং ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাদের টেনে-হিঁচড়ে হল থেকে বের করে দেয়। পরে রোকেয়া হলে ‘সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ’- এই মর্মে একটি বিবৃতি প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেন। 

একে-একে রাতের বিভিন্ন সময়ে শামসুন নাহার, কবি সুফিয়া কামাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হল ত্যাগ করতে বাধ্য করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর ভোরে ছাত্রলীগ উৎখাত করে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, এরপর সকাল সাতটা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হল, সকাল সাড়ে আটটা থেকে কবি জসিম উদ্দীন হল, বিজয় একাত্তর, মাস্টার দা’ সূর্য সেন, মুহসীন, স্যার এ এফ রহমান এবং সবশেষ সলিমুল্লাহ মুসলিম হল নিয়ন্ত্রণে নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় হলে থাকা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দেন কেউবা আগেই সটকে পড়েন। একেবারেই ছাত্রলীগ শূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো।

পরে আন্দোলনকারী বেছে বেছে পদধারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর এবং জিনিসপত্র বাহিরে ফেলে দেন। এ এফ রহমান হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ৩১৮ নম্বর কক্ষ, কবি জসিম উদ্দীন হলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের কক্ষ, বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের পদ্মা-৭০১০ কক্ষ ও সূর্যসেন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়নের ৩৪৪ নম্বর ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে একটি এবং সূর্যসেন হলের সামনে আরেকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় আন্দোলনকারী।

পরবর্তীতে ওইদিন সকালেই জরুরি সিন্ডিকেটের সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত আসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধে হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এর পরপরই পুরোপুরিভাবে হল ছাড়তে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও এর আগে গত ১৫ ও ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ্ হল এনং ফজলুল হক হল দখলে নেন আন্দোলনকারীরা।

আরিফ জাওয়াদ/এমএ/

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের জন্য চট্টগ্রামে দোয়া

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের জন্য চট্টগ্রামে দোয়া

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় নিহতদের আত্মার শান্তি এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় চট্টগ্রাম নগরীর পাড়া-মহল্লার মসজিদে মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে। এ সময় ইসরায়েলের বর্বরোচিত আক্রমণ থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়। এতে অসংখ্য মুসল্লি অংশ নেন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) জুমার নামাজের পর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করে। 

চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন খবরের কাগজকে বলেন, নগরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মসজিদে জুমার নামাজের পর কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া চেয়ে মোনাজাত করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছি। আজ (শুক্রবার) দেড় হাজার মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচি চলবে। মূলত কারফিউতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা কাজ করতে না পারায় তারা যেন কষ্টে না পড়েন, সে লক্ষ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।’ 

উল্লেখ্য, গত ১৬ ও ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম নগরী। এই দুই দিন দফায় দফায় নগরের মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া নগরের কোতোয়ালি, নিউ মার্কেট, নতুন ব্রিজ, বাকলিয়া এলাকাও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এই দুই দিনে তাৎক্ষণিক ৫ জন ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ মারা যান। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ; যাদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ। গত ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ শুরু হলে নগরে থেমে যায় সংঘর্ষের ঘটনা।

ছয় জেলায় দুই কাউন্সিলরসহ গ্রেপ্তার ৮৪

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৪ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম
ছয় জেলায় দুই কাউন্সিলরসহ গ্রেপ্তার ৮৪
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার মামলায় সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জেলায় অভিযান চালিয়ে ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৬৮ জন, দিনাজপুরে ৯, নারায়ণগঞ্জ ও মেহেরপুরে দুই কাউন্সিলর, খুলনায় ৩ ও নড়াইলে ২ জন। খবরের কাগজের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

চট্টগ্রামে ৬৮ জন গ্রেপ্তার

নাশকতার বিভিন্ন মামলায় চট্টগ্রামে আরও ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ৮০৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এদিকে গতকাল নগরের ডবলমুরিং থানায় ৩১ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৭ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত সিএমপিতে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮টিতে। অন্যদিকে জেলা পুলিশের আওতাধীন ১৬টি থানায় মামলা হয়েছে ১১টি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র কাজী তারেক আজিজ ও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর ইস্রাফিল গ্রেপ্তার

নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইস্রাফিল প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত বৃহস্পতিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাউন্সিলর ইস্রাফিল প্রধান দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

দিনাজপুরে কাউন্সিলরসহ ৯ জন গ্রেপ্তার 

দিনাজপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মো. আব্দুল্লাহসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে গত তিন দিনে ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, পুলিশের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য আছে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে শহরে নাশকতা চালিয়েছেন। পুলিশ তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে। তাদের ধরতে চিরুনি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

মেহেরপুরে বিএনপি নেতা বাবলু গ্রেপ্তার 

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুকে (৫৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে গাংনী থানা-পুলিশ তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। বাবলু গাংনী শহরের চৌগাছার বাসিন্দা। তিনি সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, কয়েক মাস আগে নাশকতার একটি মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নড়াইলে যুবদল নেতাসহ ২ জন গ্রেপ্তার

নড়াইলে নাশকতার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজ নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তি ব্যক্তিরা হলেন নড়াগাতি থানা যুবদলের আহ্বায়ক মিজান মীর (৪৯) ও ছাত্রদল কর্মী সাজেদুল ইসলাম (২৪)। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, নাশকতার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

খুলনায় ৩ জন গ্রেপ্তার

নাশকতার মামলায় খুলনা নগরীর যুবদলের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলী খানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে নাশকতার তিনটি মামলায় গত ১০ দিনে খুলনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯৩ জন। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে যারা ইন্ধন দিয়েছেন তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাগুরায় আটক ৫০ জন 

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে আন্দোলন, সংগ্রাম, নিহতের ঘটনা ঘটলেও মাগুরার পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। মাগুরাতে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আন্দোলনের সময় ১৭ জুলাই জেলার শ্রীপুর উপজেলা সদরে ও ১৮ জুলাই জেলা শহরের ভায়নার মোড়ে কিছু সময়ের জন্য আন্দোলনে যুক্ত হয় শিক্ষার্থীরা। শ্রীপুর উপজেলার আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও জেলা শহরের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা দাওয়ার ঘটনা ঘটে। সে সময় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কলিমুল্লাহসহ পুলিশের একাধিক সদস্যের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে। তবে নতুন করে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে কারণে পুলিশ প্রায় ৫০ জনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কলিমুল্লাহ। 

বিজিবি পাহারায় তেলবাহী ট্রেন চলাচল শুরু

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩৭ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩৭ পিএম
বিজিবি পাহারায় তেলবাহী ট্রেন চলাচল শুরু
ছবি: সংগৃহীত

আট দিন বন্ধ থাকার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কড়া পাহারায় চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনের মাধ্যমে সারা দেশে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৬ জুলাই) ভোরে একাধিক তেলবাহী ট্রেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে। 

জানা গেছে, প্রথম ট্রেনটি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ২৪টি তেলবাহী বগি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দ্বিতীয় ট্রেনটি সকাল সাড়ে ৬টায় ১৬টি তেলবাহী বগি নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়। পরবর্তী সময় সকাল ১০টায় ১২টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন দোহাজারীর উদ্দেশে এবং বেলা ১১টায় ১২টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন হাটহাজারীর উদ্দেশে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ট্রেনে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান জানান, সারা দেশে জ্বালানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু তেলবাহী ট্রেন চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে। বিজিবি সব ধরনের সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি তেলবোঝাই ট্রেন চলাচল শুরু হলেও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নরসিংদীতে জেলে তাণ্ডব পলাতক আরেক জঙ্গি গ্রেপ্তার, ৪৮১ বন্দির আত্মসমর্পণ

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪০ পিএম
পলাতক আরেক জঙ্গি গ্রেপ্তার, ৪৮১ বন্দির আত্মসমর্পণ
ছবি: খবরের কাগজ

নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে কারাগার পালানো দুই নারীসহ চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হলো। এ ছাড়া ৪৮১ জন বন্দি আত্মসমর্পণ করেছেন। 

পুলিশ সুপার কার্যালয়ে শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে দুষ্কৃতকারীরা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে। এই প্রেক্ষাপটে ১৯ জুলাই ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নরসিংদীতে যেসব স্থানে নাশকতা চালানো হয়েছে, বেশির ভাগই সরকারি স্থাপনা। এসব হামলা কোনো ব্যক্তির ওপর নয়। শুধু রাষ্ট্রের ক্ষতি করার জন্যই এসব পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় জেলা পুলিশের চারজন গুরুতর আহতসহ মোট ৩৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নরসিংদীর পৃথক স্থানে সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১টি মামলায় ১৮৪ জন নাশকতাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

পুলিশ সুপার আরও জানান, নরসিংদী কারাগার থেকে লুট করা ৮৫ অস্ত্রের মধ্যে ২০টি চায়না রাইফেল, বাংলাদেশি রাইফেল ১৫টি, শটগান ১০টিসহ গত পাঁচ দিনে ৪৫টি অস্ত্র উদ্ধার এবং ৭ হাজার গুলির মধ্যে ১ হাজার ৯১টি উদ্ধার করা হয়েছে।