চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মোহাম্মদ জাকারিয়ার আইডি জাল করে এলসি খোলা হয়েছে। আবার যে কোম্পানির নামে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা হয়েছে, সেখানেও করা হয়েছে জালিয়াতি। অথচ ‘হ্যামকো করপোরেশন’ নামে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি কোনো এলসিই করেনি ব্যাংকের ওই শাখা থেকে। ভয়াবহ এই জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়েছে সিগারেটের বিশাল এক চালান। এ বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত সপ্তাহে জব্দ করা সিগারেট আমদানির প্রতিটি ক্ষেত্রে জালিয়াতি করেছে চক্রটি। জালিয়াতিতে কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনারের আইডি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মোবাইলে ওটিপি আসেনি। মোবাইলে ওটিপি আসার মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কিন্তু সেখানেও চক্রটি জালিয়াতি করেছে। এ ছাড়া যে প্রতিষ্ঠানের নামে এলসি খোলা হয়েছিল, সেই প্রতিষ্ঠানটি কিছুই জানে না। সেখানেও জালিয়াতি হয়েছে। আমরা সব তথ্য উল্লেখ করে এনবিআরকে জানিয়েছি, তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে এখনো মামলা হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি।’
গত ২৭ জুন রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও কাস্টমস গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় ৫০ লাখ পিস বিদেশি সিগারেট, যার বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জানায়, ঢাকাভিত্তিক শিল্প গ্রুপ হ্যামকো করপোরেশন লিমিটেডের ব্যবসা নিবন্ধন নম্বর ‘বিআইএন’ ব্যবহার করে আনা হয়েছে এসব সিগারেট। তবে পরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনুসন্ধানে উঠে আসে জালিয়াতির তথ্য। তবে এ বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানে না কোম্পানিটি। তাদের নিবন্ধন ও বিআইএন জাল করা হয়েছে।
হ্যামকো করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, হ্যামকো গ্রুপের তথ্য ব্যবহৃত হলেও চালানের সঙ্গে সম্পর্ক নেই কোম্পানিটির। পুরোপুরি জালিয়াতির মাধ্যমে চালান এনেছে একটি চক্র। তাদের দাবি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তদন্ত করে বের করুক এ জালিয়াতিতে কারা জড়িত।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, শুধু নির্ধারিত ব্যক্তির আইডি-পাসওয়ার্ড দিয়ে কাস্টমসের আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এসাইকুডায় প্রবেশ করতে পারেন। যে আইডি দিয়ে সার্ভার লগইন হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল নম্বরে ভেরিফিকেশন কোড বা ওটিপি যাবে।
এর আগেও এসাইকুডা সিস্টেমে এমন জালিয়াতি করে ২০২২ সালে এক অতিরিক্ত কমিশনারের আইডি ব্যবহার করে পাঁচ কনটেইনার মদ খালাস করা হয়। সে সময় যদিও ওটিপি এসেছিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মোবাইলে, যা থেকে তথ্য পাওয়া যায় চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি থেকে সেই জালিয়াতি করা হয়েছিল। এর আরও আগে অবসরে যাওয়া, এমনকি মৃত কর্মকর্তার আইডি দিয়ে কয়েক শ কনটেইনার পণ্য বের করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে।