ঢাকা ৫ ভাদ্র ১৪৩১, মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন রেমিট্যান্স প্রবাহের শীর্ষে আরব আমিরাত; পিছিয়ে সৌদি আরব

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০১:০২ পিএম
রেমিট্যান্স প্রবাহের শীর্ষে আরব আমিরাত; পিছিয়ে সৌদি আরব
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বৈধ পথে বাংলাদেশের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষস্থানে থাকা সৌদি আরব (কেএসএ) থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নেমেছে। সৌদি আরবের স্থান এখন চতুর্থ। বরাবরের মতো সৌদি আরবে সর্বাধিক সংখ্যক শ্রমিক গেলেও রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে আসার বিষয়টি এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলেও বরাবরের মতো দেশটি দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে। রেমিট্যান্সের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চতুর্থ স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত রেমিট্যান্স সম্পর্কিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৩০টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ইউএই থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৫৯ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার (৪ দশমিক ৫৯৯ বিলিয়ন)। আগের অর্থবছরে এসেছিল ৩০৩ কোটি ৩৯ লাখ ডলার (৩ দশমিক ৩৩৯ বিলিয়ন)। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ইউএইতে কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমিয়েছেন ৯৮ হাজার ৪২২ জন। আর চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে নতুন শ্রমিক গেছেন ৩৩ হাজার ৪৬৫ জন।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে থাকা সৌদি আরবের অবস্থান এখন চতুর্থ। মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ ধনী এ দেশটি থেকে সদ্যবিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নেমেছে। ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার (২ দশমিক ৭৪১ বিলিয়ন)। আগের অর্থবছরে এসেছিল ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার (৩ দশমিক ৭৬৫ বিলিয়ন)। রেমিট্যান্স কমেছে ২৭ শতাংশ।

বিএমইটির তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থাৎ ৪ লাখ ৯৮ শ্রমিক কাজে গেছেন। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গেছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার জন।

সৌদি আরবে মোট বাংলাদেশি কর্মীর পরিমাণ বিশ্বের সব দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রায় ৩৯ লাখ। সৌদি আরবে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকের এ পরিমাণ দেশটি থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া মোট শ্রমিকের ৩১ শতাংশ। অথচ এ দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাপক হারে কমে গেছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান খবরের কাগজকে বলেন, এর কারণ হচ্ছে হুন্ডির দৌরাত্ম্য। ডলারের সংকট চলতে থাকায় হুন্ডি ব্যাপকহারে বেড়ে গিয়েছিল। এদিকে, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, সৌদি আরব থেকে প্রবাসীরা ডলার নিয়ে আসে না, আনে স্বর্ণের বার। তাই বৈধ পথে প্রবাসী আয় যেমন কমছে তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অর্থবছরে বিদেশ থেকে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স প্রবাহের ক্ষেত্রে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের উৎস দেশ হিসেবে নতুন করে শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বারমুডা ও আফগানিস্তান। বারমুডা থেকে বিগত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ৭৬ লাখ (১৩৭ দশমিক ৬০ মিলিয়ন) ডলার এবং আফগানিস্তান থেকে এসেছে ৩ কোটি ৭৫ লাখ (৩৭ দশমিক ৫০ মিলিয়ন) ডলার। শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে লেবানন ও আয়ারল্যান্ড।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, কাতার, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এর মধ্যে বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৯৬ কোটি ১০ লাখ (২ দশমিক ৯৬১ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থবছরে এসেছিল ৩৫২ কোটি ২০ লাখ (৩ দশমিক ৫২২ বিলিয়ন) ডলার। কমেছে ৫৬ কোটি ১০ লাখ (৫৬১ মিলিয়ন) ডলার। জাপান থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩২ শতাংশ। এ ছাড়া কাতার থেকে কমেছে ২১ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া থেকে কমেছে ১১ শতাংশ এবং কুয়েত থেকে কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ।

এদিকে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় শীর্ষ উৎস দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। আগে যুক্তরাজ্যের স্থান ছিল চতুর্থ। দেশটি থেকে বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭৯ কোটি ৩২ লাখ (২ দশমিক ৭৯৩ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭১ কোটি ২৮ লাখ (৭১২ মিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশি প্রবাসী আয়ের পঞ্চম বৃহত্তর উৎস দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। দেশটি থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬০ কোটি ৭৭ লাখ (১ দশমিক ৬০৭ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থবছরে এসেছিল ১১২ কোটি ৫৯ লাখ (১ দশমিক ১২৫ বিলিয়ন) ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৮ কোটি ১৮ লাখ (১ দশমিক ৮০ মিলিয়ন)। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩ শতাংশ।

বিএমইটির তথ্যানুযায়ী মালয়েশিয়া বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তর শ্রম বাজার। দেশটিতে মোট ১২ লাখের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে নতুন শ্রমিক গেছেন ৯২ হাজার ৬৮৫ জন।

ইউরোপের দেশ ইতালি থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ গত অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে দেশটি থেকে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৪৬ কোটি ১৬ লাখ (১ দশমিক ৪৬১ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থবছরে এসেছিল ১১৮ কোটি ৫৯ লাখ (১ দশমিক ১৮৫ বিলিয়ন) ডলার। দেশটিতে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ৮০ হাজার ৫৯৯।

একই অর্থবছরে এশিয়ার অন্যতম ধনী রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। দেশটিতে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৮৯২ জন বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছে বলে বিএমইটির তথ্য রয়েছে। কিন্তু সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স কখনোই ১ বিলিয়নের অঙ্কে পৌঁছায়নি। এ দেশ থেকে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৩ কোটি ২৩ লাখ (৬৩২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন) ডলার। সমপরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। কাতার থেকে ২১ শতাংশ রেমিট্যান্স কমলেও গত অর্থবছরে এসেছে ১১৫ কোটি (১ দশমিক ১৫০ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরও দুই দেশ ওমান ও বাহরাইন থেকে যথাক্রমে ৪২ শতাংশ ও ২১ শতাংশ। এ ছাড়া ফ্রান্স ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ সামান্য বেড়েছে।

উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ
ছবি : সংগৃহীত

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ উত্তরা ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এতে নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট থেকেই উত্তরা ব্যাংকটির দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ আহসানুল হাবিব ও মোহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অবরোধ করে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আসতে পারছেন না এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেনসহ অনেক কর্মকর্তা। এতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেন নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশি সহায়তা চেয়ে নিকটবর্তী মতিঝিল থানায় যোগাযোগ করলে জনবলসংকটের কথা জানিয়ে বলা হয়, এই মুহূর্তে কিছু করার নেই। 

সোমবার (১৯ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিলে সিটি টাওয়ারের কাছেই উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের রিসিপশনে নিরাপত্তাকর্মীদের পাশে বসে আছেন দুজন তরুণ। নিরাপত্তাকর্মী এ সময় কোনো কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। একটু এগিয়ে বসে থাকা দুই তরুণের কাছাকাছি যেতেই একজন চলে যান। অন্যজন নিজেকে রাশেদ নাম পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি ব্যাংকটির আশুলিয়া শাখায় কর্মরত আছেন। 

তিনি এখানে কেন, জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া আছে।’ দাবিদাওয়া কী কী, জানতে চাইলে তিনি মোহাম্মদ আহসানুল হাবিবের নাম উল্লেখ করে বলেন, উনি কথা বলবেন।’ 

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে আহসানুল হাবিব বলেন, ‘আমাদের অনেক কথা আছে। আমি এই মুহূর্তে একটি মিটিংয়ে আছি। একটু পর কল দিয়ে বিস্তারিত জানাব।’ কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরও তিনি আর কিছু জানাননি। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে দেওয়া অভিযোগে এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেন উল্লেখ করেন, ‘গত ৬ আগস্ট থেকে ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বহিরাগতের সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছেন, অফিসের আসবাব ভাঙচুর করছেন। আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন ও কর্মকর্তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছেন। নিকটস্থ থানায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল না থাকায় সেখানে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।’

এমডি ও সিইও রবিউল হোসেন আরও বলেন, ‘ওই দিন সকালে ব্যাংকের সাবেক ও চাকরিচ্যুত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বহিরাগতদের নিয়ে ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডদের বাধা না মেনে প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। আমাকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ করেন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে পদত্যাগ করতে বলেন। এ সময় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তারা অশোভন ও মারমুখী আচরণ করেন। তাদের ইন্ধন দেন বর্তমানে ব্যাংকের চাকরিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা, যাদের নামে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকা, অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন ৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই কর্মকর্তারা শতাধিক বহিরাগতসহ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রতিটি ফ্লোরে গিয়ে মারমুখী আচরণ করেন। এরপর ৮ আগস্ট থেকেই তারা অফিস চলাকালে দল বেঁধে ব্যাংকের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত গার্ডদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে ভেতরে অবস্থান করছেন। তারা অফিস সময়ের শুরুতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢোকার প্রধান ফটকের দরজা বন্ধ করে দেন। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকে ঢুকতে না পেরে ফিরে যান। তারা প্রতিদিন নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন। আমি বাসায় অবস্থান করে দাপ্তরিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে ও সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় গভর্নরের জরুরি হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।’

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বিষয়টি গভর্নরের নজরে দেওয়া হয়েছে।

 

১৭ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩২ পিএম
১৭ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা
ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে থমকে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। চলতি আগস্টের প্রথম ১৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আগস্টের প্রথম ১৭ দিনে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৪ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার বেশি।

এ সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারের বেশি আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সাড়ে ২১ লাখ ডলার।

সালমান/ 

হবিগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
হবিগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি
হবিগঞ্জে সরকারি গুদামে চাল সংগ্রহ চলছে। ছবি: খবরের কাগজ

হবিগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিন মাস পার হওয়ার পরও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জন হয়নি। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দাবি করেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে এবং যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার জেলার ৯টি উপজেলা থেকে ১৪ হাজার ৭৬০ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর গত ৯ মে থেকে ধান-চাল কেনার কাজ শুরু করেছে, যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। কিন্তু তিন মাসে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৭৭৬ টন ধান, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। 

কৃষকরা সরকারের ধান সংগ্রহের সময়ে নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বানিয়াচংয়ের কৃষক মো. তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘এবার আমি ৩০০ মণ ধান পেয়েছি, কিন্তু সরকারের কাছে এক মণও দিতে পারিনি। ধান কাটা শেষ হওয়ার পর সরকার ধান কেনার কাজ শুরু করেছে। আমরা তখন সব ধান বিক্রি করে দিয়েছি।’ 

আজমিরীগঞ্জের কৃষক সুকান্ত দাসের মতে, ‘সরকার সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হয়। আমরা ধান নিয়ে গেলে বলা হয়, ‘ধান শুকনা না, পরিষ্কার না।’ 

মনির দাস বলেন, ‘পাইকারের কাছে ধান ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি করা যায়। তারা বাড়িতে এসে ধান নিয়ে যায়। কিন্তু সরকারের কাছে ধান বেচতে হলে গুদামে নিয়ে যেতে হয়, গাড়ি ভাড়া লাগে, শ্রমিক লাগে- সব মিলিয়ে অনেক কষ্ট হয়। এর পরও কর্মকর্তাদের অজুহাতের শেষ নেই।’

এদিকে, আতপ চাল সংগ্রহ আশানুরূপ হলেও সেদ্ধ চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার কাছেও পৌঁছানো যায়নি। চলতি বছর জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৮৬ টন, এর মধ্যে সিদ্ধ চাল ১৫ হাজার ৪৬৬ টন ও আতপ চাল ৯ হাজার ৫২০ টন। এখন পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৮ হাজার ১১৪ টন, যার মধ্যে সিদ্ধ চাল ৯ হাজার ৭৩৩ টন (লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৯৩ শতাংশ) এবং আতপ চাল ৮ হাজার ৩৮১ টন (লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ দশমিক ০৪ শতাংশ)।

চালকল মালিক শংকর পাল বলেন, ‘আমরা সরকারকে চাল দিতে প্রস্তুত। তবে এ বছর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা চাল উৎপাদন করতে পারছি না। যদি লোডশেডিং না হতো, তবে আমরা অনেক আগেই চাল সরবরাহ করতে পারতাম। আশা করি, আরও কিছুদিন সময় রয়েছে, এর মধ্যে আমরা বরাদ্দকৃত চাল সরবরাহ করতে পারব।’

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা চাই থোয়াই প্রু মার্মা বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন সম্ভব হবে না। বেশকিছু সমস্যা এবং চলমান পরিস্থিতির কারণে ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। লক্ষ্য অর্জনে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলায় ৫৬টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে অটোরাইসমিল ১৫টি ও সেমি অটোরাইসমিল ৪১টি। কিছু মিল সাময়িক ডিলে করছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সরবরাহ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে চুক্তি বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। এ ছাড়া, আমন মৌসুমে এই চালকলগুলো সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।’

নাটোরে বাড়ছে রোজেলা চাষ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম
নাটোরে বাড়ছে রোজেলা চাষ
নার্সারিতে রোজেলা চারা পরিচর্যা করছেন শহিদুল ইসলাম। ছবি: খবরের কাগজ

নাটোর সদর উপজেলার ঔষধি গ্রামখ্যাত কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায় রোজেলা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। ‘চুকা’ নামে পরিচিত এই ফুলের চা বাজারে নতুন চাহিদা তৈরি করেছে। রোজেলা চা অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। এর ফলে কৃষকরা রোজেলা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। 

স্থানীয় কৃষকরা দাবি করছেন, রোজেলা চাষে তারা অন্য কোনো ফসল চাষের তুলনায় অনেক বেশি লাভ পাচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করে তাদের লাভ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এই লাভজনকতার কারণেই দিন দিন রোজেলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোজেলা চায়ের বিশেষত্ব হলো টক স্বাদ ও উচ্চমানের ভিটামিন সি। এ ছাড়া রোজেলা চা কাশি উপশমকারী হিসেবে কাজ করে, শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করে ও গ্যাসনাশক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এসব উপকারিতার কারণে রোজেলা চায়ের কদর বাজারে বেড়ে গেছে।

কাঁঠালবাড়িয়ার ঔষধি গ্রামের প্রথম রোজেলা চাষি শহিদুল ইসলাম। তিনি ২০১৮ সালে তার ৫ শতক জমিতে প্রথম রোজেলা চাষ শুরু করেন। রোজেলার গুণাগুণ ও বাজারের চাহিদা দেখে তিনি চাষ শুরু করেন। যথাযথ পদ্ধতিতে চাষের ফলে তার ব্যবসা সফল হয় ও নতুন ক্রেতার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। গত বছর শহিদুল ইসলাম ৫ বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করেন। এ বছর তিনি মোট ১০ বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করেছেন। প্রতি বছর জুন মাসে তিনি রোজেলা বীজ বপন করেন এবং নভেম্বর মাসে ফুল সংগ্রহ করেন। ফুলগুলো ড্রায়ার মেশিনে শুকানোর পর প্যাকেটজাত করা হয় এবং খোলা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এক বিঘা জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফুল তুলে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত তার খরচ হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ৭০-৮০ কেজি ফুল-পাপড়ি পাওয়া যায়, যা পাইকারি দরে ৩ হাজার ২০০ টাকা ও খুচরায় ৪ হাজার টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। এতে করে তার বিঘাপ্রতি প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়।

স্থানীয় কৃষক ইদ্রিস আলী, কোরবান, রুবেল ও সাদেক আলী জানান, শহিদুল ইসলামের দেখাদেখি তারা গত কয়েক বছর ধরে রোজেলা চাষ করছেন এবং এ বছরও ভালো লাভের আশা করছেন। তাদের মতে, রোজেলা চাষে মুনাফা ভালো হওয়ায় তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

নাটোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফারাজী আহমেদ রফিক বাবন জানান, তিনি শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে নিয়মিত রোজেলা চা কিনে পান করেন। স্বাভাবিক চা পান করার পরিবর্তে রোজেলা চা পান করার উপকারিতায় তিনি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এক কাপ রোজেলা চা তৈরি করতে ৩-৬টি ফুল ব্যবহার করে দু-এক মিনিট ফুটাতে হয়, যার ফলে সুন্দর একটি ফ্লেভার পাওয়া যায়। চিনিসহ পান করার ফলে চা আরও সুস্বাদু হয়।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, রোজেলা চাষে লাভজনকতার কারণে কৃষকরা দিন দিন বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোজেলা চা অনলাইন এবং অফলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। রোজেলা চায়ের পানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কৃষকদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখছে।

নার্সারি করে সফল পাটগ্রামের আমিনুর

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
নার্সারি করে সফল পাটগ্রামের আমিনুর
নার্সারিতে গাছের পরিচর্যা করছেন আমিনুর ইসলাম। ছবি: খবরের কাগজ

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের মধ্য ইসলামপুর এলাকার যুবক আমিনুর ইসলাম ফুল, ফল, বনজ ও ঔষধি গাছের নার্সারি গড়ে আর্থিক সাফল্য অর্জন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত নার্সারিতে বর্তমানে দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম।

২০১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে আমিনুর ইসলাম সিদ্ধান্ত নেন নিজস্ব নার্সারি গড়ে তোলার। ওই বছরেই ৫ শতাংশ জমিতে মাত্র ১০০ গাছের চারা লাগিয়ে শুরু করেন সায়েম নার্সারির যাত্রা। প্রথম দিকে এই নার্সারির কার্যক্রম সীমিত ছিল, তবে একনিষ্ঠ পরিশ্রম ও পরিকল্পনার মাধ্যমে তা দ্রুত প্রসারিত হয়। বর্তমানে দুই একর জমির মধ্যে তার নার্সারি রয়েছে, যেখানে দেশি-বিদেশি ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের বিশাল সমারোহ দেখা যায়। 

বর্তমানে আমিনুর ইসলামের নার্সারিতে নানা প্রকারের ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের চারা পাওয়া যায়। এখানে প্রায় ৭ লাখ টাকা মূল্যের ফুলের চারার সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি, ৫ লাখ টাকা মূল্যের মাল্টার চারা ৮ হাজার, লাখ টাকা মূল্যের লিচুর চারা ১ হাজার, ২০ হাজার আমের চারা গাছের মূল্য ৫ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার লটকনের চারা, ১ লাখ টাকা মূল্যের ১ হাজার ড্রাগন ফলের চারা এবং আরও নানা প্রকারের চারা পাওয়া যায়। এই চারা সংগ্রহ ও উৎপাদনের মাধ্যমে নার্সারির অভ্যন্তরে প্রাপ্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর নাম ছড়িয়ে পড়েছে। 

আমিনুর ইসলামের নার্সারিতে ব্যবহৃত গাছের চারা ও বীজ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। সিলেট, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, যশোর ও খুলনা থেকেও উন্নত মানের চারা এবং বীজ সংগ্রহ করা হয়। এরপর এসব চারা দেশীয় পদ্ধতিতে নার্সারিতে প্রস্তুত করা হয়। নার্সারির পরিচর্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিদিন সকালে আমিনুর তার পরিবারের সদস্যসহ চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক নার্সারি পরিচর্যা করেন।

নার্সারি থেকে বার্ষিক গাছের চারা বিক্রয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকার। সব খরচ বাদে মাসে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি হয়। এই আয় থেকে আমিনুর ইসলাম তার পরিবারের অন্যান্য খরচ মেটানোর পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বও পালন করেন। বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা, ছোট ভাইবোনদের শিক্ষার খরচ, বাবার প্রয়োজনীয়তা পূরণ এবং নিজের সংসারের খরচ সবই নার্সারি থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে করা হয়। 

আমিনুর ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ভবিষ্যতে আধুনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহজে গাছের চারা তৈরি করার কৌশল বের করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন মোবাইলে কল আসে, নার্সারির খোঁজখবর নেওয়া ও চারা তৈরির ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আর পরিশ্রম করলে অনেক কিছুই সম্ভব। দেশের শিক্ষিত যুবকরা যদি চাকরির পেছনে না ছুটে নার্সারি গড়ে তোলেন, তাহলে তারা সফলতা অর্জন করতে পারবেন।’

পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল গাফফার বলেন, ‘নার্সারি একটি লাভজনক পেশা। দেশের শিক্ষিত যুবকরা যদি নার্সারি গড়ে তোলেন, তাহলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব। পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন জানায় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।’ তিনি জানান, আমিনুর ইসলামের সফলতা কেবল তার নিজের জন্য নয়, বরং অন্য যুবকদের জন্যও একটি প্রেরণার উৎস।