ঢাকা ৪ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪

পরিপত্র জারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বাণিজ্য মেলা নয়

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বাণিজ্য মেলা নয়

বাণিজ্য মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশিকা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে দেশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা যাবে না। আর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো বিদেশি শিল্পী, মডেল বা সেলিব্রিটি কোনো মেলায় অংশ নিতে পারবেন না। মেলায় আমদানিনিষিদ্ধ বা অবৈধ কোনো পণ্য বিক্রি এবং অশালীন, অসামাজিক ও অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। এ ছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কিছু প্রচার করা যাবে না।

স্থানীয় পর্যায়ে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের মাশুল (ফি) হবে দিনভেদে ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনে মাশুল দিতে হবে ৩০০ থেকে ২ হাজার মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৫ টাকা ধরে) সাড়ে ৩৪ হাজার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এসব নির্দেশনার উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘মেলা পরিপত্র ২০২৪’ জারি করেছে, যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ছাড়া দেশের কোনো জায়গায় কেউ মেলা আয়োজন করতে চাইলে আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। আর অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে কমপক্ষে দুই মাস আগে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পাশাপাশি বাণিজ্য মেলা ও স্থানীয় বাণিজ্য মেলার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে। বলা হয়েছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও কমপক্ষে তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ থাকলেই তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হিসেবে গণ্য হবে। আর গ্রাম থেকে শুরু করে বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন এবং বিক্রির ব্যবস্থা থাকলে সেটাকে বলা হবে বাণিজ্য মেলা। এ ছাড়া দেশের ভেতরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে আয়োজিত মেলাকে বলা হবে স্থানীয় বাণিজ্য মেলা। তবে দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত মেলাকে বাণিজ্য মেলা বলা যাবে না। যেমন বৈশাখী মেলা, চৈত্রসংক্রান্তি মেলা, মহররমের মেলা, একুশে বইমেলা ও ঢাকা বইমেলা।

মেলা আয়োজনের মেয়াদ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে মাশুল, যা চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মেলার ক্ষেত্রে এক থেকে পাঁচ দিনের জন্য মাশুল হবে ৩০০ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া ৬ থেকে ১০ দিনের জন্য ৫০০, ১১ থেকে ১৫ দিনে ৭৫০, ১৬ থেকে ২০ দিনে ১ হাজার, ২১ থেকে ২৫ দিনে ১ হাজার ৫০০ এবং ২৬ থেকে ৩০ দিনের জন্য ২ হাজার ডলার মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্থানীয় বাণিজ্য মেলার মাশুল হবে ১ থেকে ৫ দিনের জন্য ৫ হাজার টাকা। আর ৬ থেকে ১০ দিনের জন্য ১০ হাজার এবং দিনওয়ারি ১৫ হাজার, ২০ হাজার, ২৫ হাজার ও ৩০ হাজার টাকা মাশুল দিতে হবে।

যেসব শর্ত মানতে হবে: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, স্থানীয় বাণিজ্য মেলা ও বাণিজ্য মেলা, এ তিন ধরনের জন্য আলাদা নিয়ম করা হয়েছে।

ডিআইটিএফ ছাড়া দেশের কোনো জায়গায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা করতে চাইলে অনুমতির জন্য দুই মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে আবেদনকারীর হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর ও ভ্যাট পরিশোধের সনদ, মেলার স্থানসংক্রান্ত বরাদ্দপত্র এবং মাশুল চালানের কপি।

ইপিবি, চেম্বার অব কমার্স বা স্থানীয় প্রশাসনের মতামত নেওয়ার পর সন্তোষজনক মনে হলে তবেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেবে। জেলা পর্যায়ে মেলা করতে হলে ডিসির অনাপত্তিপত্র লাগবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া স্থানীয় বাণিজ্য মেলার ক্ষেত্রে মাশুল জমা দেওয়ার এক মাস আগে আবেদন করতে হবে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, মেলা আয়োজনের অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সময় বাড়ানো যাবে না। কোনো কারণে মেলা আয়োজন করা সম্ভব না হলে নতুন করে আবেদন করতে হবে এবং মাশুলও দিতে হবে নতুন করে। মেলা আয়োজন করতে গিয়ে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ
ছবি : সংগৃহীত

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ উত্তরা ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এতে নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট থেকেই উত্তরা ব্যাংকটির দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ আহসানুল হাবিব ও মোহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অবরোধ করে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আসতে পারছেন না এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেনসহ অনেক কর্মকর্তা। এতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেন নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশি সহায়তা চেয়ে নিকটবর্তী মতিঝিল থানায় যোগাযোগ করলে জনবলসংকটের কথা জানিয়ে বলা হয়, এই মুহূর্তে কিছু করার নেই। 

সোমবার (১৯ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিলে সিটি টাওয়ারের কাছেই উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের রিসিপশনে নিরাপত্তাকর্মীদের পাশে বসে আছেন দুজন তরুণ। নিরাপত্তাকর্মী এ সময় কোনো কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। একটু এগিয়ে বসে থাকা দুই তরুণের কাছাকাছি যেতেই একজন চলে যান। অন্যজন নিজেকে রাশেদ নাম পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি ব্যাংকটির আশুলিয়া শাখায় কর্মরত আছেন। 

তিনি এখানে কেন, জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া আছে।’ দাবিদাওয়া কী কী, জানতে চাইলে তিনি মোহাম্মদ আহসানুল হাবিবের নাম উল্লেখ করে বলেন, উনি কথা বলবেন।’ 

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে আহসানুল হাবিব বলেন, ‘আমাদের অনেক কথা আছে। আমি এই মুহূর্তে একটি মিটিংয়ে আছি। একটু পর কল দিয়ে বিস্তারিত জানাব।’ কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরও তিনি আর কিছু জানাননি। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে দেওয়া অভিযোগে এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেন উল্লেখ করেন, ‘গত ৬ আগস্ট থেকে ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বহিরাগতের সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছেন, অফিসের আসবাব ভাঙচুর করছেন। আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন ও কর্মকর্তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছেন। নিকটস্থ থানায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল না থাকায় সেখানে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।’

এমডি ও সিইও রবিউল হোসেন আরও বলেন, ‘ওই দিন সকালে ব্যাংকের সাবেক ও চাকরিচ্যুত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বহিরাগতদের নিয়ে ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডদের বাধা না মেনে প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। আমাকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ করেন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে পদত্যাগ করতে বলেন। এ সময় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তারা অশোভন ও মারমুখী আচরণ করেন। তাদের ইন্ধন দেন বর্তমানে ব্যাংকের চাকরিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা, যাদের নামে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকা, অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন ৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই কর্মকর্তারা শতাধিক বহিরাগতসহ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রতিটি ফ্লোরে গিয়ে মারমুখী আচরণ করেন। এরপর ৮ আগস্ট থেকেই তারা অফিস চলাকালে দল বেঁধে ব্যাংকের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত গার্ডদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে ভেতরে অবস্থান করছেন। তারা অফিস সময়ের শুরুতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢোকার প্রধান ফটকের দরজা বন্ধ করে দেন। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকে ঢুকতে না পেরে ফিরে যান। তারা প্রতিদিন নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন। আমি বাসায় অবস্থান করে দাপ্তরিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে ও সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় গভর্নরের জরুরি হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।’

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বিষয়টি গভর্নরের নজরে দেওয়া হয়েছে।

 

১৭ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩২ পিএম
১৭ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা
ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে থমকে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। চলতি আগস্টের প্রথম ১৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আগস্টের প্রথম ১৭ দিনে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৪ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার বেশি।

এ সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারের বেশি আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সাড়ে ২১ লাখ ডলার।

সালমান/ 

হবিগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
হবিগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি
হবিগঞ্জে সরকারি গুদামে চাল সংগ্রহ চলছে। ছবি: খবরের কাগজ

হবিগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিন মাস পার হওয়ার পরও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জন হয়নি। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দাবি করেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে এবং যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার জেলার ৯টি উপজেলা থেকে ১৪ হাজার ৭৬০ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর গত ৯ মে থেকে ধান-চাল কেনার কাজ শুরু করেছে, যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। কিন্তু তিন মাসে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৭৭৬ টন ধান, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। 

কৃষকরা সরকারের ধান সংগ্রহের সময়ে নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বানিয়াচংয়ের কৃষক মো. তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘এবার আমি ৩০০ মণ ধান পেয়েছি, কিন্তু সরকারের কাছে এক মণও দিতে পারিনি। ধান কাটা শেষ হওয়ার পর সরকার ধান কেনার কাজ শুরু করেছে। আমরা তখন সব ধান বিক্রি করে দিয়েছি।’ 

আজমিরীগঞ্জের কৃষক সুকান্ত দাসের মতে, ‘সরকার সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হয়। আমরা ধান নিয়ে গেলে বলা হয়, ‘ধান শুকনা না, পরিষ্কার না।’ 

মনির দাস বলেন, ‘পাইকারের কাছে ধান ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি করা যায়। তারা বাড়িতে এসে ধান নিয়ে যায়। কিন্তু সরকারের কাছে ধান বেচতে হলে গুদামে নিয়ে যেতে হয়, গাড়ি ভাড়া লাগে, শ্রমিক লাগে- সব মিলিয়ে অনেক কষ্ট হয়। এর পরও কর্মকর্তাদের অজুহাতের শেষ নেই।’

এদিকে, আতপ চাল সংগ্রহ আশানুরূপ হলেও সেদ্ধ চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার কাছেও পৌঁছানো যায়নি। চলতি বছর জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৮৬ টন, এর মধ্যে সিদ্ধ চাল ১৫ হাজার ৪৬৬ টন ও আতপ চাল ৯ হাজার ৫২০ টন। এখন পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৮ হাজার ১১৪ টন, যার মধ্যে সিদ্ধ চাল ৯ হাজার ৭৩৩ টন (লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৯৩ শতাংশ) এবং আতপ চাল ৮ হাজার ৩৮১ টন (লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ দশমিক ০৪ শতাংশ)।

চালকল মালিক শংকর পাল বলেন, ‘আমরা সরকারকে চাল দিতে প্রস্তুত। তবে এ বছর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা চাল উৎপাদন করতে পারছি না। যদি লোডশেডিং না হতো, তবে আমরা অনেক আগেই চাল সরবরাহ করতে পারতাম। আশা করি, আরও কিছুদিন সময় রয়েছে, এর মধ্যে আমরা বরাদ্দকৃত চাল সরবরাহ করতে পারব।’

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা চাই থোয়াই প্রু মার্মা বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন সম্ভব হবে না। বেশকিছু সমস্যা এবং চলমান পরিস্থিতির কারণে ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। লক্ষ্য অর্জনে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলায় ৫৬টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে অটোরাইসমিল ১৫টি ও সেমি অটোরাইসমিল ৪১টি। কিছু মিল সাময়িক ডিলে করছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সরবরাহ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে চুক্তি বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। এ ছাড়া, আমন মৌসুমে এই চালকলগুলো সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।’

নাটোরে বাড়ছে রোজেলা চাষ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম
নাটোরে বাড়ছে রোজেলা চাষ
নার্সারিতে রোজেলা চারা পরিচর্যা করছেন শহিদুল ইসলাম। ছবি: খবরের কাগজ

নাটোর সদর উপজেলার ঔষধি গ্রামখ্যাত কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায় রোজেলা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। ‘চুকা’ নামে পরিচিত এই ফুলের চা বাজারে নতুন চাহিদা তৈরি করেছে। রোজেলা চা অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। এর ফলে কৃষকরা রোজেলা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। 

স্থানীয় কৃষকরা দাবি করছেন, রোজেলা চাষে তারা অন্য কোনো ফসল চাষের তুলনায় অনেক বেশি লাভ পাচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করে তাদের লাভ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এই লাভজনকতার কারণেই দিন দিন রোজেলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোজেলা চায়ের বিশেষত্ব হলো টক স্বাদ ও উচ্চমানের ভিটামিন সি। এ ছাড়া রোজেলা চা কাশি উপশমকারী হিসেবে কাজ করে, শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করে ও গ্যাসনাশক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এসব উপকারিতার কারণে রোজেলা চায়ের কদর বাজারে বেড়ে গেছে।

কাঁঠালবাড়িয়ার ঔষধি গ্রামের প্রথম রোজেলা চাষি শহিদুল ইসলাম। তিনি ২০১৮ সালে তার ৫ শতক জমিতে প্রথম রোজেলা চাষ শুরু করেন। রোজেলার গুণাগুণ ও বাজারের চাহিদা দেখে তিনি চাষ শুরু করেন। যথাযথ পদ্ধতিতে চাষের ফলে তার ব্যবসা সফল হয় ও নতুন ক্রেতার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। গত বছর শহিদুল ইসলাম ৫ বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করেন। এ বছর তিনি মোট ১০ বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করেছেন। প্রতি বছর জুন মাসে তিনি রোজেলা বীজ বপন করেন এবং নভেম্বর মাসে ফুল সংগ্রহ করেন। ফুলগুলো ড্রায়ার মেশিনে শুকানোর পর প্যাকেটজাত করা হয় এবং খোলা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এক বিঘা জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফুল তুলে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত তার খরচ হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ৭০-৮০ কেজি ফুল-পাপড়ি পাওয়া যায়, যা পাইকারি দরে ৩ হাজার ২০০ টাকা ও খুচরায় ৪ হাজার টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। এতে করে তার বিঘাপ্রতি প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়।

স্থানীয় কৃষক ইদ্রিস আলী, কোরবান, রুবেল ও সাদেক আলী জানান, শহিদুল ইসলামের দেখাদেখি তারা গত কয়েক বছর ধরে রোজেলা চাষ করছেন এবং এ বছরও ভালো লাভের আশা করছেন। তাদের মতে, রোজেলা চাষে মুনাফা ভালো হওয়ায় তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

নাটোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফারাজী আহমেদ রফিক বাবন জানান, তিনি শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে নিয়মিত রোজেলা চা কিনে পান করেন। স্বাভাবিক চা পান করার পরিবর্তে রোজেলা চা পান করার উপকারিতায় তিনি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এক কাপ রোজেলা চা তৈরি করতে ৩-৬টি ফুল ব্যবহার করে দু-এক মিনিট ফুটাতে হয়, যার ফলে সুন্দর একটি ফ্লেভার পাওয়া যায়। চিনিসহ পান করার ফলে চা আরও সুস্বাদু হয়।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, রোজেলা চাষে লাভজনকতার কারণে কৃষকরা দিন দিন বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোজেলা চা অনলাইন এবং অফলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। রোজেলা চায়ের পানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কৃষকদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখছে।

নার্সারি করে সফল পাটগ্রামের আমিনুর

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
নার্সারি করে সফল পাটগ্রামের আমিনুর
নার্সারিতে গাছের পরিচর্যা করছেন আমিনুর ইসলাম। ছবি: খবরের কাগজ

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের মধ্য ইসলামপুর এলাকার যুবক আমিনুর ইসলাম ফুল, ফল, বনজ ও ঔষধি গাছের নার্সারি গড়ে আর্থিক সাফল্য অর্জন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত নার্সারিতে বর্তমানে দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম।

২০১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে আমিনুর ইসলাম সিদ্ধান্ত নেন নিজস্ব নার্সারি গড়ে তোলার। ওই বছরেই ৫ শতাংশ জমিতে মাত্র ১০০ গাছের চারা লাগিয়ে শুরু করেন সায়েম নার্সারির যাত্রা। প্রথম দিকে এই নার্সারির কার্যক্রম সীমিত ছিল, তবে একনিষ্ঠ পরিশ্রম ও পরিকল্পনার মাধ্যমে তা দ্রুত প্রসারিত হয়। বর্তমানে দুই একর জমির মধ্যে তার নার্সারি রয়েছে, যেখানে দেশি-বিদেশি ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের বিশাল সমারোহ দেখা যায়। 

বর্তমানে আমিনুর ইসলামের নার্সারিতে নানা প্রকারের ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের চারা পাওয়া যায়। এখানে প্রায় ৭ লাখ টাকা মূল্যের ফুলের চারার সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি, ৫ লাখ টাকা মূল্যের মাল্টার চারা ৮ হাজার, লাখ টাকা মূল্যের লিচুর চারা ১ হাজার, ২০ হাজার আমের চারা গাছের মূল্য ৫ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার লটকনের চারা, ১ লাখ টাকা মূল্যের ১ হাজার ড্রাগন ফলের চারা এবং আরও নানা প্রকারের চারা পাওয়া যায়। এই চারা সংগ্রহ ও উৎপাদনের মাধ্যমে নার্সারির অভ্যন্তরে প্রাপ্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর নাম ছড়িয়ে পড়েছে। 

আমিনুর ইসলামের নার্সারিতে ব্যবহৃত গাছের চারা ও বীজ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। সিলেট, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, যশোর ও খুলনা থেকেও উন্নত মানের চারা এবং বীজ সংগ্রহ করা হয়। এরপর এসব চারা দেশীয় পদ্ধতিতে নার্সারিতে প্রস্তুত করা হয়। নার্সারির পরিচর্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিদিন সকালে আমিনুর তার পরিবারের সদস্যসহ চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক নার্সারি পরিচর্যা করেন।

নার্সারি থেকে বার্ষিক গাছের চারা বিক্রয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকার। সব খরচ বাদে মাসে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি হয়। এই আয় থেকে আমিনুর ইসলাম তার পরিবারের অন্যান্য খরচ মেটানোর পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বও পালন করেন। বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা, ছোট ভাইবোনদের শিক্ষার খরচ, বাবার প্রয়োজনীয়তা পূরণ এবং নিজের সংসারের খরচ সবই নার্সারি থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে করা হয়। 

আমিনুর ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ভবিষ্যতে আধুনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহজে গাছের চারা তৈরি করার কৌশল বের করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন মোবাইলে কল আসে, নার্সারির খোঁজখবর নেওয়া ও চারা তৈরির ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আর পরিশ্রম করলে অনেক কিছুই সম্ভব। দেশের শিক্ষিত যুবকরা যদি চাকরির পেছনে না ছুটে নার্সারি গড়ে তোলেন, তাহলে তারা সফলতা অর্জন করতে পারবেন।’

পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল গাফফার বলেন, ‘নার্সারি একটি লাভজনক পেশা। দেশের শিক্ষিত যুবকরা যদি নার্সারি গড়ে তোলেন, তাহলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব। পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন জানায় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।’ তিনি জানান, আমিনুর ইসলামের সফলতা কেবল তার নিজের জন্য নয়, বরং অন্য যুবকদের জন্যও একটি প্রেরণার উৎস।