ঢাকা ৫ ভাদ্র ১৪৩১, মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ‘জেড’ শ্রেণির শেয়ারের ক্রমাগত দরপতন

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০১:১০ পিএম
ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ‘জেড’ শ্রেণির শেয়ারের ক্রমাগত দরপতন
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সম্প্রতি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনকৃত কোম্পানিগুলোর মধ্যে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার হিসেবে পরিচিত ‘জেড’ শ্রেণির কোম্পানিগুলোর শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে। 

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চলতি অর্থবছরের জন্য নতুন বিনিয়োগ নীতি ঘোষণা করেছে। নতুন বিনিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি এখন থেকে দুর্বল মৌলভিত্তির ‘জেড’ শ্রেণির শেয়ার না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে আর কোনো শেয়ার বিক্রি করবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটির এই খবরে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ‘জেড’ শ্রেণির শেয়ারে বড় পতন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ‘জেড’ শ্রেণির ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ৪৪টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৬টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টির এবং লেনদেন হয়নি ২টির।

বৃহস্পতিবারের ধারাবাহিকতায় বজায় রেখে রবিবারও (১৪ জুলাই) ‘জেড’ শ্রেণির ৪২টি কোম্পানির শেয়ারে দরপতন হয়। এদিন ‘জেড’ শ্রেণির কোম্পানির মাত্র ৯টি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে এবং  অপরিবর্তিত থাকে ৩ কোম্পানির শেয়ারদর। গতকাল ডিএসইতে জেড শ্রেণির ৫৪ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২-৩ বছর যাবত আইসিবির বিনিয়োগ তলানিতে নেমে গেছে। তারপরেও পুঁজিবাজারের লেনদেনের ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটির সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের উত্থান পতনে ভূমিকা রাখে। 

এ বিষয়ে  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, ‘আইসিবি একসময় দেশের  পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী ছিল। এখন নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি তার অবস্থান হারিয়েছে। তবে পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করলে প্রতিষ্ঠানটি তার হারানো অবস্থান ফিরে পেতে পারে।’ প্রতিষ্ঠানটির সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে প্রভাব রাখেও বলে জানান তিনি। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইসিবি ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার কিনবে না-এমন খবরে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারের ঢালাও পতন হয়েছে। এর পেছনে কেবল বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্বিক কারণ নিহিত।

শহিদুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী খবরের কাগজকে বলেন, বারবার  ‘জেড’শ্রেণির শেয়ার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমার কাছে ‘জেড’ শ্রেণির ৪টি কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। আমি যখন বিনিয়োগ করেছিলাম তখন এ কোম্পানিগুলো ভালো শ্রেণির শেয়ার ছিল। কিন্তু বিএসইসি, ডিএসই এবং সর্বশেষ আইসিবির সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছি।

জেড শ্রেণির শেয়ার  নিয়ে নানা নির্দেশনা: চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে পরপর ২ বছর যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ দেয়নি এমন কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ ঘোষণায় ব্যর্থ হলে তাকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে। একই সঙ্গে টানা দুই বছর বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করতে ব্যর্থ হলেও কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানো হবে। তবে এজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনো রিট পিটিশন বা আদালতে বিচারাধীন কোনো আইনি প্রক্রিয়া থাকে তাহলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছরের জন্য বিবেচনা করা হবে।

এ ছাড়া উৎপাদনহীন কোম্পানি নিয়েও কড়া নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। এখন থেকে কোনো কোম্পানি টানা ৬ মাস তার কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকলে বা উৎপাদন বন্ধ রাখলে সেটিকেও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে। পাশাপাশি কোনো কোম্পানির টানা দুই বছর ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহ  নেতিবাচক আসলে এবং পরিশোধিত মূলধনের থেকে ঋণ বেশি হলে তাকেও স্থান দেওয়া হবে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো কোম্পানি সিকিউরিটিজ আইন, বিধি-বিধান, বিজ্ঞপ্তি, আদেশ কিংবা নির্দেশাবলী পালনে ব্যর্থ হলে বা অসম্মতি জানালে সেটিকেও কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ‘জেড’ শ্রেণিতে স্থানান্তর করা হবে।

বিএসইসির এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসই চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি  তালিকাভুক্ত ২২ কোম্পানির শেয়ারকে আগের ‘এ’ বা ‘বি’ শ্রেণি থেকে অবনমন করে ‘জেড’ শ্রেণিতে নিয়ে যায়। 

তবে লভ্যাংশ ইস্যুতে কোনো কোম্পানিকে তখনই ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করার অনুমতি দেয়নি বিএসইসি।

ডিএসইর এ সিদ্ধান্তের ফলে তখন দেশের পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে  বিএসইসির পক্ষ থেকে তখন  বলা হয়, এখন থেকে আর কোনো কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হবে না। তারপরেও চলতি বছরের মার্চ মাসে ডিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে আরও ৬টি কোম্পানিকে নতুন করে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে ‘এ’ বা ‘বি’শ্রেণি থেকে হঠাৎ করে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করার ফলে এ কোম্পানিগুলোর শেয়ার তখন  মার্জিন ঋণ নিয়ে কেনা যায় নাই। আইন অনুযায়ী ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত শেয়ার মার্জিন ঋণ নিয়ে কেনা যায় না। ফলে পুঁজিবাজারে পতন ঘটে। কারণ যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনার জন্য মার্জিন ঋণ দিয়েছিল তারা ফোর্স সেল করে তাদের বিনিয়োগ উঠিয়ে নেয়। এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চলতি বছরের মে মাসে  পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের বিষয়ে আবার বেশ কিছু শর্ত দিয়ে নতুন নির্দেশনা  জারি করে বিএসইসি। 

বিএসইসির জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়, শর্তগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি শর্ত লঙ্ঘন করলে  ডিএসই ও সিএসই ওই কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে।

বিএসইসির নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেষ ডিভিডেন্ড ঘোষণার তারিখ থেকে বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির তারিখ থেকে পরপর দুই বছরের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে ব্যর্থ হলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে।

এর পাশাপাশি আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হলেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে কোনো রিট পিটিশন বা আদালতে বিচারাধীন কোনো আইনি প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ এজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ার ক্ষেত্রে অর্থাৎ উপ-বিচারের বিষয় বা জোরপূর্বক ঘটনা ঘটলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছর সময় পর্যন্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যদি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংস্কার বা বিএমআরই (ভারসাম্য, আধুনিকীকরণ, পুনর্বাসন এবং সম্প্রসারণ) এর জন্য এই ধরনের কোনো সময় ব্যতীত ন্যূনতম ছয় মাস ধরে একটানা উৎপাদনে না থাকলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে।

এ ছাড়া পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছাড়িয়ে গেলে ওই কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা যাবে।

এ ছাড়া কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত বা অনুমোদিত ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ পরিশোধ বা বিতরণ করতে ব্যর্থ হলে স্টক এক্সচেঞ্জ তা ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারে।

ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ছাড়া ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত অন্য কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকদের শেয়ার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

ওরিয়নকে ঋণখেলাপি দেখাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩০ এএম
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৩ পিএম
ওরিয়নকে ঋণখেলাপি দেখাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণে ১৫ বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ দীর্ঘ সময়েও পরিশোধ না করায় সুদ-আসলসহ মোট ১০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ঋণখেলাপি হিসেবে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ওরিয়নকে ২০১০ সালে ওই ঋণ দেয় সোনালী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির ঋণের আসল প্রায় ৩০ কোটি টাকা এবং ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা সুদ বকেয়া রয়েছে। সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে বারবার সময় নিয়েও ওই ঋণ পরিশোধ করেনি ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

সোমবার (১৯ আগস্ট) সোনালী ব্যাংককে দেওয়া ওই নির্দেশে আগামী ৩ কার্যদিবস অর্থাৎ ২২ আগস্টের মধ্যে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে অপরিশোধিত ঋণের যথাযথ শ্রেণিবিভাগ করে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বকেয়া ঋণ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘মন্দ ঋণ’ ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবদ্ধ ছিল। কোম্পানিটি তখন পর্যন্ত চারটি কিস্তি পরিশোধ করেনি। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমতির ওপর ভিত্তি করে এই ঋণ ‘খেলাপি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক শর্ত দেয়, ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে অনাদায়ী কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।

পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে প্রকাশ পায়, ঋণগ্রহীতা মাত্র দুই কোটি টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া ১১ জুলাই পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে ১৫টি চেক দিয়েছে। এমতাবস্থায় ৩০ জুন পর্যন্ত ওই ঋণখেলাপি শ্রেণিভুক্ত করেনি সোনালী ব্যাংক। কিন্তু ওরিয়নের দেওয়া চেকগুলো দিয়ে চলতি আগস্ট পর্যন্ত নগদ অর্থ উত্তোলন করতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) আফজাল করিম কল রিসিভ করেননি।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কিস্তি বকেয়া থাকায় নিয়মানুযায়ী ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে দেওয়া ঋণ ‘খেলাপি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে হবে।

উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ
ছবি : সংগৃহীত

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ উত্তরা ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এতে নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট থেকেই উত্তরা ব্যাংকটির দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ আহসানুল হাবিব ও মোহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অবরোধ করে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আসতে পারছেন না এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেনসহ অনেক কর্মকর্তা। এতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেন নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশি সহায়তা চেয়ে নিকটবর্তী মতিঝিল থানায় যোগাযোগ করলে জনবলসংকটের কথা জানিয়ে বলা হয়, এই মুহূর্তে কিছু করার নেই। 

সোমবার (১৯ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিলে সিটি টাওয়ারের কাছেই উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের রিসিপশনে নিরাপত্তাকর্মীদের পাশে বসে আছেন দুজন তরুণ। নিরাপত্তাকর্মী এ সময় কোনো কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। একটু এগিয়ে বসে থাকা দুই তরুণের কাছাকাছি যেতেই একজন চলে যান। অন্যজন নিজেকে রাশেদ নাম পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি ব্যাংকটির আশুলিয়া শাখায় কর্মরত আছেন। 

তিনি এখানে কেন, জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া আছে।’ দাবিদাওয়া কী কী, জানতে চাইলে তিনি মোহাম্মদ আহসানুল হাবিবের নাম উল্লেখ করে বলেন, উনি কথা বলবেন।’ 

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে আহসানুল হাবিব বলেন, ‘আমাদের অনেক কথা আছে। আমি এই মুহূর্তে একটি মিটিংয়ে আছি। একটু পর কল দিয়ে বিস্তারিত জানাব।’ কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরও তিনি আর কিছু জানাননি। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে দেওয়া অভিযোগে এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেন উল্লেখ করেন, ‘গত ৬ আগস্ট থেকে ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বহিরাগতের সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছেন, অফিসের আসবাব ভাঙচুর করছেন। আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন ও কর্মকর্তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছেন। নিকটস্থ থানায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল না থাকায় সেখানে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।’

এমডি ও সিইও রবিউল হোসেন আরও বলেন, ‘ওই দিন সকালে ব্যাংকের সাবেক ও চাকরিচ্যুত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বহিরাগতদের নিয়ে ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডদের বাধা না মেনে প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। আমাকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ করেন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে পদত্যাগ করতে বলেন। এ সময় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তারা অশোভন ও মারমুখী আচরণ করেন। তাদের ইন্ধন দেন বর্তমানে ব্যাংকের চাকরিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা, যাদের নামে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকা, অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন ৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই কর্মকর্তারা শতাধিক বহিরাগতসহ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রতিটি ফ্লোরে গিয়ে মারমুখী আচরণ করেন। এরপর ৮ আগস্ট থেকেই তারা অফিস চলাকালে দল বেঁধে ব্যাংকের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত গার্ডদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে ভেতরে অবস্থান করছেন। তারা অফিস সময়ের শুরুতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢোকার প্রধান ফটকের দরজা বন্ধ করে দেন। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকে ঢুকতে না পেরে ফিরে যান। তারা প্রতিদিন নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন। আমি বাসায় অবস্থান করে দাপ্তরিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে ও সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় গভর্নরের জরুরি হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।’

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বিষয়টি গভর্নরের নজরে দেওয়া হয়েছে।

 

১৭ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩২ পিএম
১৭ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা
ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে থমকে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। চলতি আগস্টের প্রথম ১৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আগস্টের প্রথম ১৭ দিনে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৪ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার বেশি।

এ সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারের বেশি আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সাড়ে ২১ লাখ ডলার।

সালমান/ 

হবিগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
হবিগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি
হবিগঞ্জে সরকারি গুদামে চাল সংগ্রহ চলছে। ছবি: খবরের কাগজ

হবিগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিন মাস পার হওয়ার পরও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জন হয়নি। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দাবি করেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে এবং যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার জেলার ৯টি উপজেলা থেকে ১৪ হাজার ৭৬০ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর গত ৯ মে থেকে ধান-চাল কেনার কাজ শুরু করেছে, যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। কিন্তু তিন মাসে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৭৭৬ টন ধান, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। 

কৃষকরা সরকারের ধান সংগ্রহের সময়ে নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বানিয়াচংয়ের কৃষক মো. তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘এবার আমি ৩০০ মণ ধান পেয়েছি, কিন্তু সরকারের কাছে এক মণও দিতে পারিনি। ধান কাটা শেষ হওয়ার পর সরকার ধান কেনার কাজ শুরু করেছে। আমরা তখন সব ধান বিক্রি করে দিয়েছি।’ 

আজমিরীগঞ্জের কৃষক সুকান্ত দাসের মতে, ‘সরকার সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হয়। আমরা ধান নিয়ে গেলে বলা হয়, ‘ধান শুকনা না, পরিষ্কার না।’ 

মনির দাস বলেন, ‘পাইকারের কাছে ধান ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি করা যায়। তারা বাড়িতে এসে ধান নিয়ে যায়। কিন্তু সরকারের কাছে ধান বেচতে হলে গুদামে নিয়ে যেতে হয়, গাড়ি ভাড়া লাগে, শ্রমিক লাগে- সব মিলিয়ে অনেক কষ্ট হয়। এর পরও কর্মকর্তাদের অজুহাতের শেষ নেই।’

এদিকে, আতপ চাল সংগ্রহ আশানুরূপ হলেও সেদ্ধ চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার কাছেও পৌঁছানো যায়নি। চলতি বছর জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৮৬ টন, এর মধ্যে সিদ্ধ চাল ১৫ হাজার ৪৬৬ টন ও আতপ চাল ৯ হাজার ৫২০ টন। এখন পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৮ হাজার ১১৪ টন, যার মধ্যে সিদ্ধ চাল ৯ হাজার ৭৩৩ টন (লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৯৩ শতাংশ) এবং আতপ চাল ৮ হাজার ৩৮১ টন (লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ দশমিক ০৪ শতাংশ)।

চালকল মালিক শংকর পাল বলেন, ‘আমরা সরকারকে চাল দিতে প্রস্তুত। তবে এ বছর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা চাল উৎপাদন করতে পারছি না। যদি লোডশেডিং না হতো, তবে আমরা অনেক আগেই চাল সরবরাহ করতে পারতাম। আশা করি, আরও কিছুদিন সময় রয়েছে, এর মধ্যে আমরা বরাদ্দকৃত চাল সরবরাহ করতে পারব।’

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা চাই থোয়াই প্রু মার্মা বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন সম্ভব হবে না। বেশকিছু সমস্যা এবং চলমান পরিস্থিতির কারণে ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। লক্ষ্য অর্জনে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলায় ৫৬টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে অটোরাইসমিল ১৫টি ও সেমি অটোরাইসমিল ৪১টি। কিছু মিল সাময়িক ডিলে করছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সরবরাহ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে চুক্তি বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। এ ছাড়া, আমন মৌসুমে এই চালকলগুলো সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।’

নাটোরে বাড়ছে রোজেলা চাষ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম
নাটোরে বাড়ছে রোজেলা চাষ
নার্সারিতে রোজেলা চারা পরিচর্যা করছেন শহিদুল ইসলাম। ছবি: খবরের কাগজ

নাটোর সদর উপজেলার ঔষধি গ্রামখ্যাত কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায় রোজেলা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। ‘চুকা’ নামে পরিচিত এই ফুলের চা বাজারে নতুন চাহিদা তৈরি করেছে। রোজেলা চা অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। এর ফলে কৃষকরা রোজেলা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। 

স্থানীয় কৃষকরা দাবি করছেন, রোজেলা চাষে তারা অন্য কোনো ফসল চাষের তুলনায় অনেক বেশি লাভ পাচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করে তাদের লাভ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এই লাভজনকতার কারণেই দিন দিন রোজেলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোজেলা চায়ের বিশেষত্ব হলো টক স্বাদ ও উচ্চমানের ভিটামিন সি। এ ছাড়া রোজেলা চা কাশি উপশমকারী হিসেবে কাজ করে, শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করে ও গ্যাসনাশক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এসব উপকারিতার কারণে রোজেলা চায়ের কদর বাজারে বেড়ে গেছে।

কাঁঠালবাড়িয়ার ঔষধি গ্রামের প্রথম রোজেলা চাষি শহিদুল ইসলাম। তিনি ২০১৮ সালে তার ৫ শতক জমিতে প্রথম রোজেলা চাষ শুরু করেন। রোজেলার গুণাগুণ ও বাজারের চাহিদা দেখে তিনি চাষ শুরু করেন। যথাযথ পদ্ধতিতে চাষের ফলে তার ব্যবসা সফল হয় ও নতুন ক্রেতার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। গত বছর শহিদুল ইসলাম ৫ বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করেন। এ বছর তিনি মোট ১০ বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করেছেন। প্রতি বছর জুন মাসে তিনি রোজেলা বীজ বপন করেন এবং নভেম্বর মাসে ফুল সংগ্রহ করেন। ফুলগুলো ড্রায়ার মেশিনে শুকানোর পর প্যাকেটজাত করা হয় এবং খোলা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এক বিঘা জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফুল তুলে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত তার খরচ হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ৭০-৮০ কেজি ফুল-পাপড়ি পাওয়া যায়, যা পাইকারি দরে ৩ হাজার ২০০ টাকা ও খুচরায় ৪ হাজার টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। এতে করে তার বিঘাপ্রতি প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়।

স্থানীয় কৃষক ইদ্রিস আলী, কোরবান, রুবেল ও সাদেক আলী জানান, শহিদুল ইসলামের দেখাদেখি তারা গত কয়েক বছর ধরে রোজেলা চাষ করছেন এবং এ বছরও ভালো লাভের আশা করছেন। তাদের মতে, রোজেলা চাষে মুনাফা ভালো হওয়ায় তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

নাটোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফারাজী আহমেদ রফিক বাবন জানান, তিনি শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে নিয়মিত রোজেলা চা কিনে পান করেন। স্বাভাবিক চা পান করার পরিবর্তে রোজেলা চা পান করার উপকারিতায় তিনি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এক কাপ রোজেলা চা তৈরি করতে ৩-৬টি ফুল ব্যবহার করে দু-এক মিনিট ফুটাতে হয়, যার ফলে সুন্দর একটি ফ্লেভার পাওয়া যায়। চিনিসহ পান করার ফলে চা আরও সুস্বাদু হয়।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, রোজেলা চাষে লাভজনকতার কারণে কৃষকরা দিন দিন বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোজেলা চা অনলাইন এবং অফলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। রোজেলা চায়ের পানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কৃষকদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখছে।