ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

আশুগঞ্জ স্টিল রাইস সাইলোর নির্মাণের কাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০২:২৫ পিএম
আশুগঞ্জ স্টিল রাইস সাইলোর নির্মাণের কাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর পাড়ে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক স্টিল রাইস সাইলো। ছবি: মো. জুয়েল রহমান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর পাড়ে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক স্টিল রাইস সাইলো। পুষ্টিগুণ অটুট রেখে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত এই সাইলোতে চাল সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যশস্য সংরক্ষণাগার বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নানা সংকটে ছয় বছরেও সাইলোটির নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কয়েক দফায় বাড়ানো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর মাসে। যদিও এখনো ঢিমেতালেই চলছে নির্মাণকাজ। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। ফলে বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিপুল পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগ। সংগৃহীত এসব ধান-চাল রাখা হয় খাদ্যগুদামগুলোয়। জেলার খাদ্যগুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ২১ হাজার ৫০০ টন। বর্তমানে জেলার আশুগঞ্জে একটি সাইলো আছে। এটিতে গম সংরক্ষণ করা হয়। আর ধান ও চাল সংরক্ষণ করা হয় খাদ্যগুদামে। তবে জেলায় প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করা হয়- বিতরণের পর বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত থাকে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় উদ্বৃত্ত চালগুলো সংরক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়।

চাল সংরক্ষণ সংকট নিরসনে সরকারের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় আশুগঞ্জে নতুন একটি স্টিল রাইস সাইলো নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ২০১৮ সালের এপ্রিলে চুক্তি করে খাদ্য অধিদপ্তর। ১ লাখ ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার সাইলোটি নির্মাণে ব্যায় ধরা হয় ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা। আর প্রকল্পের মেয়াদ ধরা দুই বছর। আধুনিক এ সাইলোটিতে ৩০টি বিন রাখা হয়েছে। একেকটি বিনে সংগ্রহ করা যাবে ৩ হাজার ৫০০ টন চাল।

স্টিল রাইস সাইলোটিতে স্বয়ংক্রিয় তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে দুই বছর পর্যন্ত চালের পুষ্টিগুণ অটুট রেখে সংরক্ষণ করা যাবে। সংরক্ষিত চাল প্যাকেটজাত এবং বস্তাবন্দি করতে ঘণ্টায় ৫০০ টন স্পিডের বেল্ট কনভেয়িং এবং চেইন কনভেয়িং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মূলত করোনা মহামারি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ অভ্যন্তরীণ কিছু জটিলতায় প্রায় দেড় বছর সাইলোর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। এ ছাড়া করোনার কারণে বিদেশ থেকে প্রকল্পের পরামর্শকরাও যথাসময়ে আসতে পারেননি। এতে করে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় কয়েক দফায় বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ।

সরেজমিন নির্মাণাধীন দেখা গেছে, ৩০টি বিনের সবকটির স্থাপন কাজ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে নদী থেকে সাইলো পর্যাপ্ত জেটি, টপ সাইলো স্টিল ব্রিজ, টপ সাইলো স্টিল কলাম, বাল্ক ট্রাক রিসিভিং (বিটিআর) অবকাঠামো ও ট্রাক স্কেল ল্যাব ওয়েটসহ অন্যান্য অবশিষ্ট কাজগুলো চলছে। তবে কাজে খুব একটা গতি লক্ষ করা যায়নি। অনেকটা ঢিমেতালে চলছে কাজ। যদিও ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে সাইলোর সব যন্ত্রাংশ চলে এসেছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো. নিশাত হোসাইন বলেন, ‘সাইলোর বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আসে। কিন্তু করোনাকালে কোনো যন্ত্রাংশ আমদানি করা যায়নি। এ ছাড়া করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। পরবর্তী সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি নতুন করে সংকটে ফেলে। এতে করে কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে। তবে সব সংকট কাটিয়ে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। আশা করছি সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘প্রতি মৌসুমেই বিতরণের পর আমাদের প্রচুর পরিমাণ চাল উদ্বৃত্ত থাকে। গুদামগুলোয় জায়গা সংকটের কারণে সেগুলো আশপাশের জেলাগুলোয় পাঠানো হয়। নতুন সাইলোটির নির্মাণকাজ শেষ হলে আমাদের এ সমস্যা আর থাকবে না।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্টিল রাইস সাইলো প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল করিম শেখ বলেন, ‘করোনার কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য কিছু সমস্যার কারণে এক-দেড় বছর কোনো কাজই করা যায়নি। ফলে চার দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যায় বাড়বে না। সম্প্রতি সব সমস্যা সমাধান করে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

৩ পার্বত্য জেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতির মুখে পর্যটন খাত

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৮ পিএম
৩ পার্বত্য জেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতির মুখে পর্যটন খাত
কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু। ছবি : খবরের কাগজ

নিরাপত্তাঝুঁকিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের অনুরোধ কার্যকর হচ্ছে। ফলে দুর্গাপূজা ও পাহাড়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘কঠিন চীবর দান’ অনুষ্ঠানের ছুটিতে পর্যটকরা আসতে পারছেন না। এতে রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রিক পাঁচ খাতে দৈনিক ক্ষতির মুখে পড়বে ১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি। তবে ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের ভ্রমণ দ্রুত উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

পাহাড়, ঝরনা আর হ্রদের শহর রাঙামাটি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে যেন মুগ্ধতার আরেক নাম। তাই সারা বছরই এটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু পাহাড়ের চলমান অস্থিরতায় পর্যটকসংখ্যা কমে গেছে। রাঙামাটি শহরে ৬৫টি হোটেল-মোটেল, ১৭টি ইকো রিসোর্ট, কাপ্তাই ও সাজেকে ১৩২টি কটেজে পর্যটকদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

পূজা ও কঠিন চীবর দান উৎসবের ছুটিতে আগাম বুকিং বাতিল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। একই সঙ্গে পর্যটকনির্ভর অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যেও ধস নেমেছে।

আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, খাবারের দোকান (রেস্টুরেন্ট), পাহাড়িদের তৈরি টেক্সটাইল কাপড়, সড়ক, নৌযান ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান- এই পাঁচ খাতকে ঘিরেই মূলত রাঙামাটির পর্যটনশিল্প। সব মিলিয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ দিনে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাঙামাটি শহর, কাপ্তাই ও সাজেক জেলার এই তিন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকরা আসেন। স্বাভাবিক সময়ে সারা বছর গড়ে ১০-১২ হাজার পর্যটক ভ্রমণে আসেন। তবে শুক্র, শনিবার ও ঈদ-পূজা-পার্বণে সরকারি টানা ছুটিতে এই সংখ্যা বেড়ে ৬০-৭০ হাজারে পৌঁছায়। ফলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা এ সময়টাকে টার্গেট করে ব্যবসার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।

পর্যটন নৌযান ঘাটের ট্যুরিস্ট বোটচালক রাকিব হোসেন বলেন, ‘ভাবছিলাম পূজা আর কঠিন চীবর দানে ভালো আয় করব। কিন্তু এই সমস্যায় (পর্যটক ভ্রমণে বিরত থাকার অনুরোধ) সেটা আর হচ্ছে না। আমাদের দেড় শতাধিক ট্যুরিস্ট বোটচালক এখন বেকার হয়ে গেছে। ইনকাম একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।’

পর্যটন নৌযান ঘাটের ব্যবস্থাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই সেতু ডুবে যাওয়ায় পর্যটক কমে গেছে। তার ওপর এখন ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ অবস্থায় একেবারেই পর্যটক শূন্য হয়ে গেছে রাঙামাটি।’

পাহাড়িদের তৈরি টেক্সটাইল কাপড় বিক্রেতা টিনা চাকমা বলেন, ‘পর্যটক না থাকায় বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। দৈনিক খরচের টাকা উঠছে না।’

আবাসিক হোটেল ইফশার মালিক ইউছুপ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যারা পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, বলতে হবে আমাদের দুর্ভাগ্য। জুলাই বিপ্লব থেকে পর্যটক কম আসছে। এখন নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও দৈনিক খরচের টাকা তুলতে পারছি না। আগাম বুকিংও বাতিল করেছেন পর্যটকরা।’

রাঙামাটি রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুমেধ চাকমা বলেন, ‘জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় পর্যটক না আসায় আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এখন প্রশাসনের আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’

এদিকে জেলা প্রশাসনের ‘পর্যটক ভ্রমণে বিরত থাকার’ নির্দেশনায় উদ্বেগ জানিয়েছে রাঙামাটির পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ১০ সংগঠন। তারা অবিলম্বে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। একই সঙ্গে পর্যটনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করার ও পর্যটন খাতে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রণোদনা পাওয়ার দাবি জানিয়েছে।

 

বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৭ পিএম
বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী
বিএসইসি

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী এবং কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনী পদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করবে বলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত রবিবার বিএসইসি ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মুহাম্মদ মোহসিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সরকার ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহায়তা করবে মর্মে উল্লিখিত বৈঠকে আলোচিত হয়। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যক্রম যাতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ও নির্বিঘ্নভাবে সম্পাদিত হয়, তা নিশ্চিতেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বাজারের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক ও আলোচনা করছে এবং একটি স্বচ্ছ, গতিশীল, বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীবান্ধব পুঁজিবাজার তৈরিতে নিরলস কাজ করছে। বর্তমান কমিশন পর্যায়ক্রমে দেশের পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনায় বসছে। পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কারসংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ পিএলসি (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম), বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) শীর্ষ নির্বাহীদের এবং গত ১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (এসিএরএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) শীর্ষ প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও আলোচনায় বসার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬ অক্টোবর কমিশনের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের বৈঠক হয় এবং সে বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।

সর্বোপরি দেশের পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ও কল্যাণে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করে বাজারসংশ্লিষ্ট সবার মতামত ও পরামর্শের আলোকে পুঁজিবাজারের গঠনমূলক ও টেকসই সংস্কারের জন্য বিএসইসি কাজ করে যাচ্ছে।

পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম
পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত

দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে দরপতন। এই দরপতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েও বিনিয়োগকারীরা থামাতে পারছেন না পতন। 

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৭ অক্টোবর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। ফলে দুই বাজারেই মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের।

শুধু চলতি সপ্তাহ নয়, শেয়ারবাজারের এই দরপতন চলছে কয়েক সপ্তাহ ধরেই। যে কারণে এই দরপতনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে দুই কার্যদিবস এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। বিনিয়োগকারীদের এই বিক্ষোভ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপরে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।

বিএসইসির কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে রবিবার দিনের লেনদেন শেষে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আবারও বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করেন।

এ পরিস্থিতিতে সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়। তবে লেনদেনের শেষ আড়াই ঘণ্টায় শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। এতে দাম কমার তালিকা যেমন বড় হয়েছে, তেমনি সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ৫৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচকের খুব বড় পতন হয়নি।

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৩৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৬ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের ২৩ কোটি ৫৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইবনে সিনা।

সোমবার ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।

এদিন ডিএসইতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।

দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মার্কেনটাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসি। কোম্পানিটির শেয়ারদর ১ টাকা ১০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়েছে। দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ইসলামী ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ৬০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সোমবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে- তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

সোমবার ডিএসইতে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড।

সোমবার দিন শেষে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ২০ টাকা ৬০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ১০ টাকা বা ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৭ দশমিক ২০ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।

এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- খুলনা প্রিন্টিং প্যাকিজিং লিমিটেড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রহিমা ফুড করপোরেশন লিমিটেড, দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২২টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ২০০ ডলার ছাড়াতে পারে

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০১ পিএম
জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ২০০ ডলার ছাড়াতে পারে
ইরানের একটি জ্বালানি তেল পরিশোধানগার। ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লে ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। সম্প্রতি একজন পণ্য বিশ্লেষক আমেরিকান বিজনেস নিউজ চ্যানেল সিএনবিসিকে এমনটা জানিয়েছেন।

লাটভিয়াভিত্তিক বৃহত্তম ব্যাংক এসইবির প্রধান বিশ্লেষক বিয়ার্নে শিলড্রপ বলেন, ইরান প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেলের বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানি করে। তিনি বলেন, যদি অঞ্চলের উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে ইরানের তেল অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়, তাহলে এটি ওপেক প্লাস জোটের অতিরিক্ত জ্বালানি তেল সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। শিলড্রপ আরও বলেন, এটি কেবল দামই বাড়াবে তা নয়, বরং জ্বালানি তেলের বাজারে অনিশ্চয়তাও তৈরি করবে। বাজারে পরবর্তী প্রশ্ন হবে- এখন হরমুজ প্রণালিতে কী হবে এবং এই সংঘাত অবশ্যই জ্বালানি তেলের সঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি (বিমা) প্রিমিয়াম যোগ করবে। অর্থাৎ এর ফলে অবশ্যম্ভাবীভাবে বাড়বে জ্বালানি পণ্যটির দামও। 

শিলড্রপ আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়লে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ২০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যেটি বর্তমান দামের থেকেও ১৬১ শতাংশ বেশি।

এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল সোমবার জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছুঁইছুঁই করছিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ লেনদেন অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৭৬ ডলার ৪৪ সেন্ট। ইসরায়েলের ওপর ইরানের বড় মিসাইল হামলার ফলে দাম গত মঙ্গলবারে তলানিতে ঠেকার পরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটি আবার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। ইরানের এই হামলাটি লেবাননে ইসরায়েলের স্থলভাগে আক্রমণের জবাবে করা হয়েছিল বলে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সিএনবিসির খবরে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা আরও উত্তেজনা বাড়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন, বিশেষ করে ইসরায়েল কীভাবে প্রতিশোধ নেবে সে দিকে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছেন তারা।

এদিকে দাম বাড়া সত্ত্বেও ব্রেন্ট ক্রুড এখনো চলতি বছরের সর্বোচ্চ দাম ৯১ ডলারের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ নিচে লেনদেন হচ্ছে। অন্য বিশ্লেষকরা শিলড্রপের সঙ্গে সুর মেলাবেন বলেই মনে হচ্ছে। তাদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ততক্ষণ পর্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না বিনিয়োগকারীরা জ্বালানি তেলের অবকাঠামোতে প্রকৃত ক্ষতি দেখতে পাবেন।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক (জ্বালানি বাজার, নীতি ও ভূ-রাজনৈতিক) বিশ্লেষণকারী সংস্থা র‌্যাপিডান এনার্জি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বব ম্যাকনালি সিএনবিসিকে বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের বাজার ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয়। আমরা সম্প্রতি লিবিয়ায় দেখেছি যেভাবে তেলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সে রকম কোনো ঘটনা যদি না ঘটে, তাহলে এই ঝুঁকির প্রভাব খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ হবে না।’

বব ম্যাকনালি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি তারা আশা করছে এবং তাদের প্রত্যাশা খুব সম্ভবত ইসরায়েল তার প্রতিক্রিয়ায় সংযত থাকবে এবং আমরা জ্বালানি উৎপাদন ও প্রবাহে কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত দেখব না।’

তবুও কিছু বিনিয়োগকারী জ্বালানি তেল উৎপাদনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনায় এক রকম বাজি ধরছে বলে ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে। গত বুধবার প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড লেনদেন হয়েছে ১০০ ডলারে। এর অর্থ এটা দাঁড়ায় যে, ব্যবসায়ীরা তেলের দাম তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর ঝুঁকি এড়াতে চাইছেন।

সিএনবিসি বলছে, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর একমাত্র কারণ নয়। জ্বালানি তেলের উত্তোলন আরও কমানো হবে কি না- ডিসেম্বরে ওপেক প্লাস সেই সিদ্ধান্ত নেবে, যার ফলে উৎপাদন জোটের কিছু সদস্য তাদের জ্বালানি তেল উত্তোলনের সীমাবদ্ধতা থেকে ছাড় পাবে।

এই নিষেধাজ্ঞা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য চালু করা হয়েছিল, তবে জোটটিকে তাদের বাজারের অংশ হারাতে হয়েছে। এদিকে কিছু সদস্য তাদের কোটা মেনে চলেনি, যা ওপেকের নেতা সৌদি আরবের ক্ষোভের কারণ হয়েছে। গত সপ্তাহে সৌদি আরব হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে, ওপেক যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উৎপাদন না কমায়, তাহলে ব্রেন্টের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলার পর্যন্ত নামতে পারে। কিছু দেশ এটিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছে। তারা মনে করেন, সদস্যরা যদি এই সিদ্ধান্ত না মানে, তাহলে রিয়াদ নিজেদের জ্বালানি তেলে উৎপাদন বাড়াবে। [সূত্র: রয়টার্স, ব্লমবার্গ ও সিএনবিসি]

চট্টগ্রাম আবারও অস্থির কাঁচা মরিচের বাজার

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৬ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম
আবারও অস্থির কাঁচা মরিচের বাজার
চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে কাঁচা মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার অভিযান পরিচালনা করে। খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের আবারও কাঁচা মরিচের বাজার অস্থির, পাইকারিতে দাম ২৭৫ টাকায় পৌঁছেছে। এক মাসে দাম বেড়েছে ১১০ টাকা, খুচরা বাজারে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বন্যার কারণে সরবরাহ কমে গেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কমছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, সব পর্যায়ে তদারকি চলছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামে রিয়াজুদ্দিন বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা সবজি। বাজারটিতে বর্তমানে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ২৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকায়। তবে নগরের বিভিন্ন অলিগলিতে ভ্যান গাড়িতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়। 

পাইকারি বাজার যাচাই করে দেখা গেছে, গত ৯ আগস্ট প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। দেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে ১৯ আগস্ট থেকে বাড়তে শুরু করে মরিচের দাম। গত ১৯ আগস্ট কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বন্যা পরিস্থিতিতে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারায় বাজারে তৈরি হয় সংকট। আর এই অজুহাতে গত ২৪ আগস্ট প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। তবে সরবরাহ বাড়লে গত ২৬ আগস্ট দাম কমে কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। একদিন পর অর্থাৎ ২৭ আগস্ট দাম আরও কমে গিয়ে কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচের দাম ঠেকে ১৭০ টাকায়। 

কাঁচা মরিচের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০ দিন আগেও কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। তবে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, সম্প্রতি বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক মরিচ নষ্ট হয়েছে। সরবরাহও আগের তুলনায় কম। তাই পণ্যটির দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ২৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

রিয়াজুদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ শিবলী খবরের কাগজকে বলেন, সরবরাহ কমায় পাইকারিতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে। সরবরাহ বেড়ে গেলে অবশ্যই দাম কমে যাবে। কারণ এটা পচনশীল পণ্য। তবে খুচরায় মাত্রাতিরিক্ত দামে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
 
নগরের নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফুল আলম বলেন, খুচরা বাজারে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তি। খুচরা ব্যবসায়ীরা একটা ডিম ১৪ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছে। কাঁচা মরিচ দোকানে ৩৫০ টাকায়, আবার ভ্যানগাড়িতে ৪০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। এক কথায়, তদারকি না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছে বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করছে। তাই খুচরা বাজারেও তদারকি করা উচিত। 

খাতুনগঞ্জে কমেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
সরবরাহ বাড়ায় খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। দশদিনের ব্যবধানে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজের কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। পাশাপাশি মিশরীয় পেঁয়াজের কেজিতে ৫ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজের কেজিতে ৩ টাকা কমেছে। বর্তমানে প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকায়, মিসরীয় ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

তাছাড়া পাইকারি এই বাজারে প্রতিকেজি কেরালা আদা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, মায়ানমারের আদা ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও দেশি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজিতে। 

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় খাতুনগঞ্জে আমাদের ১০০ টাকার ওপরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছিল। বর্তমানে ভারত থেকে কম শুল্কের পেঁয়াজ আসছে। পাশাপাশি মিসর, পাকিস্তানসহ অন্য দেশ থেকেও পণ্যটি আসায় সরবরাহ বেড়েছে। তাই দামও কমতির দিকে রয়েছে। 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমরা সব সময় দেখেছি, কর্মকর্তারা পাইকারি কিছু দোকানে তদারকি করে অভিযান কার্যক্রম শেষ করে দেন। অসাধু ব্যবসায়ী তো শুধু পাইকারি বাজারে নয়, খুচরা পর্যায়েও রয়েছে। সেখানেও তো সমানতালে অভিযান চালানো প্রয়োজন। খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরাসরি ভোক্তার সম্পর্ক। তাদের শাস্তি দেওয়া না হলে বাড়তি দাম নেওয়ার অপরাধ প্রবণতা থেকেই যায়। 

তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের পাইকারি থেকে শুরু করে খুচরা সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিম, মুরগি, সবজি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রয়, বিক্রয়মূল্য, মূল্য তালিকা সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জরিমানা ও সতর্ক করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী সমিতিকেও যাবতীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।