ঢাকা ৫ ভাদ্র ১৪৩১, মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

আশুগঞ্জ স্টিল রাইস সাইলোর নির্মাণের কাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০২:২৫ পিএম
আশুগঞ্জ স্টিল রাইস সাইলোর নির্মাণের কাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর পাড়ে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক স্টিল রাইস সাইলো। ছবি: মো. জুয়েল রহমান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর পাড়ে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক স্টিল রাইস সাইলো। পুষ্টিগুণ অটুট রেখে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত এই সাইলোতে চাল সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যশস্য সংরক্ষণাগার বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নানা সংকটে ছয় বছরেও সাইলোটির নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কয়েক দফায় বাড়ানো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর মাসে। যদিও এখনো ঢিমেতালেই চলছে নির্মাণকাজ। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। ফলে বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিপুল পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগ। সংগৃহীত এসব ধান-চাল রাখা হয় খাদ্যগুদামগুলোয়। জেলার খাদ্যগুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ২১ হাজার ৫০০ টন। বর্তমানে জেলার আশুগঞ্জে একটি সাইলো আছে। এটিতে গম সংরক্ষণ করা হয়। আর ধান ও চাল সংরক্ষণ করা হয় খাদ্যগুদামে। তবে জেলায় প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করা হয়- বিতরণের পর বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত থাকে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় উদ্বৃত্ত চালগুলো সংরক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়।

চাল সংরক্ষণ সংকট নিরসনে সরকারের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় আশুগঞ্জে নতুন একটি স্টিল রাইস সাইলো নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ২০১৮ সালের এপ্রিলে চুক্তি করে খাদ্য অধিদপ্তর। ১ লাখ ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার সাইলোটি নির্মাণে ব্যায় ধরা হয় ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা। আর প্রকল্পের মেয়াদ ধরা দুই বছর। আধুনিক এ সাইলোটিতে ৩০টি বিন রাখা হয়েছে। একেকটি বিনে সংগ্রহ করা যাবে ৩ হাজার ৫০০ টন চাল।

স্টিল রাইস সাইলোটিতে স্বয়ংক্রিয় তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে দুই বছর পর্যন্ত চালের পুষ্টিগুণ অটুট রেখে সংরক্ষণ করা যাবে। সংরক্ষিত চাল প্যাকেটজাত এবং বস্তাবন্দি করতে ঘণ্টায় ৫০০ টন স্পিডের বেল্ট কনভেয়িং এবং চেইন কনভেয়িং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মূলত করোনা মহামারি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ অভ্যন্তরীণ কিছু জটিলতায় প্রায় দেড় বছর সাইলোর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। এ ছাড়া করোনার কারণে বিদেশ থেকে প্রকল্পের পরামর্শকরাও যথাসময়ে আসতে পারেননি। এতে করে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় কয়েক দফায় বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ।

সরেজমিন নির্মাণাধীন দেখা গেছে, ৩০টি বিনের সবকটির স্থাপন কাজ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে নদী থেকে সাইলো পর্যাপ্ত জেটি, টপ সাইলো স্টিল ব্রিজ, টপ সাইলো স্টিল কলাম, বাল্ক ট্রাক রিসিভিং (বিটিআর) অবকাঠামো ও ট্রাক স্কেল ল্যাব ওয়েটসহ অন্যান্য অবশিষ্ট কাজগুলো চলছে। তবে কাজে খুব একটা গতি লক্ষ করা যায়নি। অনেকটা ঢিমেতালে চলছে কাজ। যদিও ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে সাইলোর সব যন্ত্রাংশ চলে এসেছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো. নিশাত হোসাইন বলেন, ‘সাইলোর বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আসে। কিন্তু করোনাকালে কোনো যন্ত্রাংশ আমদানি করা যায়নি। এ ছাড়া করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। পরবর্তী সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি নতুন করে সংকটে ফেলে। এতে করে কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে। তবে সব সংকট কাটিয়ে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। আশা করছি সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘প্রতি মৌসুমেই বিতরণের পর আমাদের প্রচুর পরিমাণ চাল উদ্বৃত্ত থাকে। গুদামগুলোয় জায়গা সংকটের কারণে সেগুলো আশপাশের জেলাগুলোয় পাঠানো হয়। নতুন সাইলোটির নির্মাণকাজ শেষ হলে আমাদের এ সমস্যা আর থাকবে না।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্টিল রাইস সাইলো প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল করিম শেখ বলেন, ‘করোনার কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য কিছু সমস্যার কারণে এক-দেড় বছর কোনো কাজই করা যায়নি। ফলে চার দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যায় বাড়বে না। সম্প্রতি সব সমস্যা সমাধান করে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

ওরিয়নকে ঋণখেলাপি দেখাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩০ এএম
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৩ পিএম
ওরিয়নকে ঋণখেলাপি দেখাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণে ১৫ বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ দীর্ঘ সময়েও পরিশোধ না করায় সুদ-আসলসহ মোট ১০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ঋণখেলাপি হিসেবে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ওরিয়নকে ২০১০ সালে ওই ঋণ দেয় সোনালী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির ঋণের আসল প্রায় ৩০ কোটি টাকা এবং ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা সুদ বকেয়া রয়েছে। সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে বারবার সময় নিয়েও ওই ঋণ পরিশোধ করেনি ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

সোমবার (১৯ আগস্ট) সোনালী ব্যাংককে দেওয়া ওই নির্দেশে আগামী ৩ কার্যদিবস অর্থাৎ ২২ আগস্টের মধ্যে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে অপরিশোধিত ঋণের যথাযথ শ্রেণিবিভাগ করে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বকেয়া ঋণ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘মন্দ ঋণ’ ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবদ্ধ ছিল। কোম্পানিটি তখন পর্যন্ত চারটি কিস্তি পরিশোধ করেনি। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমতির ওপর ভিত্তি করে এই ঋণ ‘খেলাপি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক শর্ত দেয়, ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে অনাদায়ী কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।

পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে প্রকাশ পায়, ঋণগ্রহীতা মাত্র দুই কোটি টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া ১১ জুলাই পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে ১৫টি চেক দিয়েছে। এমতাবস্থায় ৩০ জুন পর্যন্ত ওই ঋণখেলাপি শ্রেণিভুক্ত করেনি সোনালী ব্যাংক। কিন্তু ওরিয়নের দেওয়া চেকগুলো দিয়ে চলতি আগস্ট পর্যন্ত নগদ অর্থ উত্তোলন করতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) আফজাল করিম কল রিসিভ করেননি।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কিস্তি বকেয়া থাকায় নিয়মানুযায়ী ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে দেওয়া ঋণ ‘খেলাপি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে হবে।

উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ
ছবি : সংগৃহীত

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ উত্তরা ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এতে নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট থেকেই উত্তরা ব্যাংকটির দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ আহসানুল হাবিব ও মোহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অবরোধ করে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আসতে পারছেন না এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেনসহ অনেক কর্মকর্তা। এতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেন নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশি সহায়তা চেয়ে নিকটবর্তী মতিঝিল থানায় যোগাযোগ করলে জনবলসংকটের কথা জানিয়ে বলা হয়, এই মুহূর্তে কিছু করার নেই। 

সোমবার (১৯ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিলে সিটি টাওয়ারের কাছেই উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের রিসিপশনে নিরাপত্তাকর্মীদের পাশে বসে আছেন দুজন তরুণ। নিরাপত্তাকর্মী এ সময় কোনো কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। একটু এগিয়ে বসে থাকা দুই তরুণের কাছাকাছি যেতেই একজন চলে যান। অন্যজন নিজেকে রাশেদ নাম পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি ব্যাংকটির আশুলিয়া শাখায় কর্মরত আছেন। 

তিনি এখানে কেন, জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া আছে।’ দাবিদাওয়া কী কী, জানতে চাইলে তিনি মোহাম্মদ আহসানুল হাবিবের নাম উল্লেখ করে বলেন, উনি কথা বলবেন।’ 

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে আহসানুল হাবিব বলেন, ‘আমাদের অনেক কথা আছে। আমি এই মুহূর্তে একটি মিটিংয়ে আছি। একটু পর কল দিয়ে বিস্তারিত জানাব।’ কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরও তিনি আর কিছু জানাননি। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে দেওয়া অভিযোগে এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রবিউল হোসেন উল্লেখ করেন, ‘গত ৬ আগস্ট থেকে ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বহিরাগতের সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছেন, অফিসের আসবাব ভাঙচুর করছেন। আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন ও কর্মকর্তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছেন। নিকটস্থ থানায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল না থাকায় সেখানে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।’

এমডি ও সিইও রবিউল হোসেন আরও বলেন, ‘ওই দিন সকালে ব্যাংকের সাবেক ও চাকরিচ্যুত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বহিরাগতদের নিয়ে ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডদের বাধা না মেনে প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। আমাকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ করেন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে পদত্যাগ করতে বলেন। এ সময় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তারা অশোভন ও মারমুখী আচরণ করেন। তাদের ইন্ধন দেন বর্তমানে ব্যাংকের চাকরিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা, যাদের নামে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকা, অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন ৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই কর্মকর্তারা শতাধিক বহিরাগতসহ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রতিটি ফ্লোরে গিয়ে মারমুখী আচরণ করেন। এরপর ৮ আগস্ট থেকেই তারা অফিস চলাকালে দল বেঁধে ব্যাংকের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত গার্ডদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে ভেতরে অবস্থান করছেন। তারা অফিস সময়ের শুরুতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢোকার প্রধান ফটকের দরজা বন্ধ করে দেন। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকে ঢুকতে না পেরে ফিরে যান। তারা প্রতিদিন নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন। আমি বাসায় অবস্থান করে দাপ্তরিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে ও সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় গভর্নরের জরুরি হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।’

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বিষয়টি গভর্নরের নজরে দেওয়া হয়েছে।

 

১৭ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩২ পিএম
১৭ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা
ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে থমকে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। চলতি আগস্টের প্রথম ১৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আগস্টের প্রথম ১৭ দিনে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৪ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার বেশি।

এ সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারের বেশি আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সাড়ে ২১ লাখ ডলার।

সালমান/ 

হবিগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
হবিগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি
হবিগঞ্জে সরকারি গুদামে চাল সংগ্রহ চলছে। ছবি: খবরের কাগজ

হবিগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিন মাস পার হওয়ার পরও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জন হয়নি। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দাবি করেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে এবং যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার জেলার ৯টি উপজেলা থেকে ১৪ হাজার ৭৬০ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর গত ৯ মে থেকে ধান-চাল কেনার কাজ শুরু করেছে, যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। কিন্তু তিন মাসে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৭৭৬ টন ধান, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। 

কৃষকরা সরকারের ধান সংগ্রহের সময়ে নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বানিয়াচংয়ের কৃষক মো. তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘এবার আমি ৩০০ মণ ধান পেয়েছি, কিন্তু সরকারের কাছে এক মণও দিতে পারিনি। ধান কাটা শেষ হওয়ার পর সরকার ধান কেনার কাজ শুরু করেছে। আমরা তখন সব ধান বিক্রি করে দিয়েছি।’ 

আজমিরীগঞ্জের কৃষক সুকান্ত দাসের মতে, ‘সরকার সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হয়। আমরা ধান নিয়ে গেলে বলা হয়, ‘ধান শুকনা না, পরিষ্কার না।’ 

মনির দাস বলেন, ‘পাইকারের কাছে ধান ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি করা যায়। তারা বাড়িতে এসে ধান নিয়ে যায়। কিন্তু সরকারের কাছে ধান বেচতে হলে গুদামে নিয়ে যেতে হয়, গাড়ি ভাড়া লাগে, শ্রমিক লাগে- সব মিলিয়ে অনেক কষ্ট হয়। এর পরও কর্মকর্তাদের অজুহাতের শেষ নেই।’

এদিকে, আতপ চাল সংগ্রহ আশানুরূপ হলেও সেদ্ধ চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার কাছেও পৌঁছানো যায়নি। চলতি বছর জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৮৬ টন, এর মধ্যে সিদ্ধ চাল ১৫ হাজার ৪৬৬ টন ও আতপ চাল ৯ হাজার ৫২০ টন। এখন পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৮ হাজার ১১৪ টন, যার মধ্যে সিদ্ধ চাল ৯ হাজার ৭৩৩ টন (লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৯৩ শতাংশ) এবং আতপ চাল ৮ হাজার ৩৮১ টন (লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ দশমিক ০৪ শতাংশ)।

চালকল মালিক শংকর পাল বলেন, ‘আমরা সরকারকে চাল দিতে প্রস্তুত। তবে এ বছর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা চাল উৎপাদন করতে পারছি না। যদি লোডশেডিং না হতো, তবে আমরা অনেক আগেই চাল সরবরাহ করতে পারতাম। আশা করি, আরও কিছুদিন সময় রয়েছে, এর মধ্যে আমরা বরাদ্দকৃত চাল সরবরাহ করতে পারব।’

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা চাই থোয়াই প্রু মার্মা বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন সম্ভব হবে না। বেশকিছু সমস্যা এবং চলমান পরিস্থিতির কারণে ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। লক্ষ্য অর্জনে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলায় ৫৬টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে অটোরাইসমিল ১৫টি ও সেমি অটোরাইসমিল ৪১টি। কিছু মিল সাময়িক ডিলে করছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সরবরাহ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে চুক্তি বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। এ ছাড়া, আমন মৌসুমে এই চালকলগুলো সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।’

নাটোরে বাড়ছে রোজেলা চাষ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম
নাটোরে বাড়ছে রোজেলা চাষ
নার্সারিতে রোজেলা চারা পরিচর্যা করছেন শহিদুল ইসলাম। ছবি: খবরের কাগজ

নাটোর সদর উপজেলার ঔষধি গ্রামখ্যাত কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায় রোজেলা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। ‘চুকা’ নামে পরিচিত এই ফুলের চা বাজারে নতুন চাহিদা তৈরি করেছে। রোজেলা চা অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। এর ফলে কৃষকরা রোজেলা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। 

স্থানীয় কৃষকরা দাবি করছেন, রোজেলা চাষে তারা অন্য কোনো ফসল চাষের তুলনায় অনেক বেশি লাভ পাচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করে তাদের লাভ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এই লাভজনকতার কারণেই দিন দিন রোজেলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোজেলা চায়ের বিশেষত্ব হলো টক স্বাদ ও উচ্চমানের ভিটামিন সি। এ ছাড়া রোজেলা চা কাশি উপশমকারী হিসেবে কাজ করে, শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করে ও গ্যাসনাশক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এসব উপকারিতার কারণে রোজেলা চায়ের কদর বাজারে বেড়ে গেছে।

কাঁঠালবাড়িয়ার ঔষধি গ্রামের প্রথম রোজেলা চাষি শহিদুল ইসলাম। তিনি ২০১৮ সালে তার ৫ শতক জমিতে প্রথম রোজেলা চাষ শুরু করেন। রোজেলার গুণাগুণ ও বাজারের চাহিদা দেখে তিনি চাষ শুরু করেন। যথাযথ পদ্ধতিতে চাষের ফলে তার ব্যবসা সফল হয় ও নতুন ক্রেতার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। গত বছর শহিদুল ইসলাম ৫ বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করেন। এ বছর তিনি মোট ১০ বিঘা জমিতে রোজেলা চাষ করেছেন। প্রতি বছর জুন মাসে তিনি রোজেলা বীজ বপন করেন এবং নভেম্বর মাসে ফুল সংগ্রহ করেন। ফুলগুলো ড্রায়ার মেশিনে শুকানোর পর প্যাকেটজাত করা হয় এবং খোলা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এক বিঘা জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফুল তুলে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত তার খরচ হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ৭০-৮০ কেজি ফুল-পাপড়ি পাওয়া যায়, যা পাইকারি দরে ৩ হাজার ২০০ টাকা ও খুচরায় ৪ হাজার টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। এতে করে তার বিঘাপ্রতি প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়।

স্থানীয় কৃষক ইদ্রিস আলী, কোরবান, রুবেল ও সাদেক আলী জানান, শহিদুল ইসলামের দেখাদেখি তারা গত কয়েক বছর ধরে রোজেলা চাষ করছেন এবং এ বছরও ভালো লাভের আশা করছেন। তাদের মতে, রোজেলা চাষে মুনাফা ভালো হওয়ায় তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

নাটোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফারাজী আহমেদ রফিক বাবন জানান, তিনি শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে নিয়মিত রোজেলা চা কিনে পান করেন। স্বাভাবিক চা পান করার পরিবর্তে রোজেলা চা পান করার উপকারিতায় তিনি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এক কাপ রোজেলা চা তৈরি করতে ৩-৬টি ফুল ব্যবহার করে দু-এক মিনিট ফুটাতে হয়, যার ফলে সুন্দর একটি ফ্লেভার পাওয়া যায়। চিনিসহ পান করার ফলে চা আরও সুস্বাদু হয়।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, রোজেলা চাষে লাভজনকতার কারণে কৃষকরা দিন দিন বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোজেলা চা অনলাইন এবং অফলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। রোজেলা চায়ের পানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কৃষকদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখছে।