ঢাকা ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪

ওপেকের প্রতিবেদন ইরানের তেল উৎপাদন এখনো ঊর্ধ্বমুখী

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৮ পিএম
ইরানের তেল উৎপাদন এখনো ঊর্ধ্বমুখী
ছবি : সংগৃহীত

ইরানের তেল উৎপাদন এখনো ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা (ওপেক)। সংস্থাটি তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, ইরান জুন মাসে দৈনিক গড়ে ৩২ লাখ ৫১ হাজার (বিপিডি) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন করেছে, যা আগের মাসের তুলনায় ১৩ হাজার বিপিডি বেশি। খবর তেহরান টাইমসের। 

সেকেন্ডারি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান মে মাসে ৩২ লাখ ৩৮ হাজার বিপিডি (ব্যারেল পার ডে) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের গড় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৩৭ হাজার বিপিডি। এটি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তুলনায় ৫৮ হাজার বিপিডি বেশি। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইরানের গড় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৫৪ হাজার বিপিডি। অন্যদিকে ২০২৩ সালে গড় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৮ লাখ ৫৯ হাজার বিপিডি।

এই পরিসংখ্যানগুলো থেকে দেখা গেছে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান ওপেক সদস্যদের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী হিসেবে তার স্থান বজায় রেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ইরানের গড় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৪ ডলার ৭৬ সেন্ট বেড়েছে।

ওপেকের মতে, উল্লেখিত সময়ে ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৮৩ ডলার ৬৫ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া সৌদি আরবের অপরিশোধিত তেলের দাম ২৯ সেন্ট কমে প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলার ৩১ সেন্টে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন মাসে ওপেকের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ৩৭ সেন্ট কমেছে এবং ব্যারেলপ্রতি ৮৩ ডলার ৩২ সেন্টে পৌঁছেছে।

এর আগে এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ইরানের জ্বালানি তেল উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৫ লাখ বিপিডি বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে উৎপাদনের পরিমাণ ৩১ লাখ বিপিডিতে পৌঁছেছে।

আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইরানের অর্থনীতির অন্যতম উৎস তেল খাত ১৫ শতাংশের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মেয়াদের তিন বছরে এই খাতটি দ্বিগুণ অঙ্কের প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে। সুতরাং তেল খাত ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে যথাক্রমে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ, ১০ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০২৪ সালে ইরানের জ্বালানি তেল উৎপাদন আরও ১ লাখ বিপিডি বাড়বে। এর মধ্য দিয়ে মোট উৎপাদন ৩২ লাখ বিপিডিতে পৌঁছাবে।

২০২২ সালে ইরানের প্রতিদিন গ্যাস উৎপাদনও ছিল ৪৮ লাখ ব্যারেল তেলের সমতুল্য। এর পরিমাণ বেড়ে ২০২৩ সালে ৫১ লাখ বিপিডিতে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুমান করেছে, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরও ৩ লাখ ব্যারেল বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ লাখ বিপিডিতে পৌঁছাবে।

২০২৩ সালে ইরান প্রতিদিন ১৪ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তেল রপ্তানির তথ্যের চেয়েও ৫ লাখ ব্যারেল বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। চলতি বছরে আরও ১ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি বাড়ার আশা করা হচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে ইরানের রপ্তানির পরিমাণ দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেলে পৌঁছাবে।

প্রসঙ্গত, ইরানের অর্থনীতি জ্বালানি তেলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটির রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে জ্বালানি তেল থেকে। সরকারের বাজেটেরও বড় অংশ জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে জ্বালানি তেলের দামের ওঠানামা ইরানের অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলে। যখন তেলের দাম বেশি থাকে, তখন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটে। অন্যদিকে, যখন তেলের দাম কমে যায়, তখন অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের জ্বালানি তেল রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ইরান।

ট্যারিফ কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান মইনুল খান

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৬:০২ পিএম
ট্যারিফ কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান মইনুল খান
মইনুল খান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মইনুল খানকে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, অবসর নেওয়ার আগে মইনুল খান নিজ ক্যাডারে ফেরত যাবেন।

ফারজানা লাবনী/সালমান/

নতুন সম্ভাবনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০১:০২ পিএম
নতুন সম্ভাবনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাগান। ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম দেশজুড়ে উৎকৃষ্ট স্বাদের জন্য পরিচিত। সাধারণত মে মাসে পাওয়া যায় এ আম। তবে কিছু উদ্ভাবনী চাষি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সিজনাল আম আগস্ট মাসে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, অসময়ী খিরসাপাত আম সিজনের তুলনায় তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। এতে চাষিরা লাভবান হবেন এবং জেলার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এখন চাষিরা পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন এ উদ্যোগের বাণিজ্যিক সফলতা নিশ্চিত করতে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এখন আমের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে।

আম চাষিরা বলছেন, খিরসাপাত (হিমসাগর) আম উৎপাদন হয় মূলত মে মাসে। এটি একটি সিজনাল আম। আর এই আমের সুনাম ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। তবে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকজন চাষি আগস্ট মাসে এ আম গাছে ফলিয়েছেন। এটি ভালো খবর। এটি যদি বাণিজ্যিক আকারে করা যায়, তবে লাভবান হবেন চাষিরা। কারণ সিজনের চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হবে এ আম।

সম্প্রতি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ভাঙাব্রিজ এলাকার আম চাষি সজিব আলীর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কাটিমন আমের মাঝে মাঝে ঝুলছে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে সনদপ্রাপ্ত খিরসাপাত আম। আর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এমনকি বাগানেই ১৩-১৫ হাজার টাকা মণ দরে কিনে নিতে চাইছেন ক্রেতারা।

সজিব আলী বলেন, ‘৩ বছর আগে ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে খিরসাপাত আমের বাগান চাষ শুরু করেছিলাম। পরে খিরসাপাত আমের দাম না পেয়ে জাত পরিবর্তন করে কাটিমন আম চাষ করি। এখন কাটিমন আম গাছে ধরে আছে। এরই মধ্যে দেখছি কিছু কিছু গাছে খিরসাপাত জাতের আমের ডাল থেকে গেছে। ডালগুলোতে এখন আম এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শেষ মৌসুমেও আম হয়েছে। প্রথমে দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমগুলোর দাম অনেক। ১২-১৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এ সময় যদি খিরসাপাত আম ধরানো যায়। সিজনের থেকে প্রায় তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে এটি করে দেখা গেছে। আশা করছি, অসময়েও উৎপাদন করতে পারব।’

আম চাষি আনারুল বলেন, ‘আমাদের বাগানের পাশেই এই আম বাগান। কাটিমনগাছের জাতের সঙ্গে সঙ্গে খিরসাপাত আমও হচ্ছে, তাই দেখতে এসেছি। আমার সিজনাল আমের গাছ আছে কিন্তু আম ধরে না। তাই জাত পরিবর্তন করতে চাচ্ছি।’

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘আগে চাষিরা জানত না এ সময়ে খিরসাপাত আম উৎপাদন করা যায়। খিরসাপাতগাছে কাটিমন জাতের ডাল গ্রাফটিং করা হয়েছিল। পূর্বের ডালের শিকড় বের হয়ে আম ধরছে। আর কলম করা ডালে তো কাটিমন আম আছেই। তাই চাষিরা এখন পরীক্ষামূলকভাবেই খিরসাপাত অসময়ে ধরানোর চেষ্টা করছে। এ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে আম সেক্টরকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে এগিয়ে আসতে হবে কৃষি বিভাগকে।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পলাশ সরকার বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে অসময়ে আশ্বিনা আম উৎপাদন হচ্ছে। তবে খিরসাপাত এখনো বাণিজ্যিকভাবে হয়ে ওঠেনি। চাষিরা ব্যাপক চেষ্টা করছেন। মূলত সিজনে আমের মুকুল ভেঙে দিয়ে কিছুদিন পরে প্যাকলোবিউটাজল নামক রাসায়নিকের মাধ্যমে অসময়ে আমের মুকুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছেন চাষিরা।’

ভোলায় ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম
আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম
ভোলায় ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে
ভোলায় ইলিশের বাজার। ছবি: সংগৃহীত

ভোলায় সম্প্রতি ইলিশ মাছের সরবরাহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে প্রচুর রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে। এর ফলে জেলেরা ব্যস্ত এবং মাছের বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে। জেলেদের মতে, নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ইলিশের বিচরণ সহজ হয়েছে। বর্তমানে ৩০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। খবর বাসসের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন মাছের ঘাট, আড়ত, পাইকারি ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক ও দর-কষাকষিতে মুখরিত ইলিশের বাজার। প্রতিদিন জেলার শতাধিক ঘাটে কয়েক কোটি টাকার ইলিশ বেচাকেনা হয়। গত বছর জেলায় যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল, তা দেশের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৩২ ভাগ। এখানকার ইলিশ ঢাকা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। 

সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ এফ এম নাজমুস সালেহীন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাছের ঘাটগুলো ঘুরে দেখেছি। প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে নদীতে। একই সঙ্গে রুই, কাতলসহ বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছও আটকা পড়ছে জেলেদের জালে। মনে করা হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যা হওয়ার ফলে ভেসে যাওয়া পুকুর-ঘেরের  মাছ এসব। তবে আহরণ করা ইলিশের মধ্যে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বেশি। এ ছাড়া এক কেজি বা তার চেয়ে বড় ইলিশ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। 

জেলে মো. ইব্রাহিম ও আখতার হোসেন জানান,  গত কয়েক দিন ধরে ইলিশ মাছের সরবরাহ বেড়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ইলিশ বিচরণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাই ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদীতে জাল ফেলছেন জেলেরা। দাম ভালো থাকাতে লাভবান হচ্ছেন তারা। 

মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের ইলিশ মাছের হালি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রামের হালি ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, এক কেজি ইলিশ মাছের হালি সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা ও ১ হাজার ৩০০ গ্রাম থেকে ১ হাজার ৬০০ গ্রামের হালি ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ‘জেলায় সারা বছরই কমবেশি ইলিশ পাওয়া যায়। তবে জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদীতে পানির গভীরতা বেড়েছে। ফলে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, চলতি ইলিশের সাইজ বেশ বড়। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন ঘাটে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টন ইলিশ আহরণ হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছর জেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন ইলিশ মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সামনের দিকে আরও ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে করে ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে প্রত্যাশা তার।

ফেনীতে প্রাণিসম্পদ খাতে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম
ফেনীতে প্রাণিসম্পদ খাতে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি
ফেনী সদর উপজেলার সরিষাবাড়ি হাইস্কুলে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও আশ্রয় নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ জেলার প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শত শত খামারি তার পুঁজি ও রোজগার হারিয়ে পথে বসেছেন। বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা না করলে এই খাতটি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে এ খাতের কর্মীদেরও।

জানা গেছে, জেলার ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী, ফেনী সদর ও দাগনভুঞা উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়িঘর ও দোকানপাট ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি শত শত মুরগির খামার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু ফেনীতেই পানিতে মারা গেছে ৩৮ হাজার গরু। এই বিশাল ক্ষতি পুষিয়ে নিতে খামারিদের দীর্ঘ সময় লাগবে।

ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেনীর ছয়টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ হাজার ৭৩১টি গরু, ১২৯টি মহিষ, ১৫ হাজার ৬০৪টি ছাগল, ৩৫৬টি ভেড়া মারা গেছে। এ ছাড়া ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮১০টি মুরগি ও ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। ২৮৫ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২৯ লাখ ১৩ হাজার ৩১৩টি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি বন্যার কবলে পড়েছে। ১৯৯২টি গবাদিপশুর খামারে ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা এবং ১৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারে ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ৩ হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির খাবার এবং ২৫৫০ টন খড়, ১ লাখ ৮৪ হাজার ২১০ টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে, যার বাজারমূল্য ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ক্ষতি হয়েছে ৩০২ কোটি ৬৭ লাখ ৯২ হাজার ৩৩০ টাকা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জীবিকা এবং ফেনীর প্রাণিসম্পদ খাতের পুনর্বাসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা ও সহায়তার মাধ্যমে এই ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে।

ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বন্যায় একাডেমি রোডসংলগ্ন জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসও ডুবে গেছে। ফেনী সদর উপজেলা অফিসে ৩-৪ ফুট পানি জমেছে, ফলে মেশিনারি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. শহিদুল ইসলাম খোকন বলেছেন, ‘ফেনীতে প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। শুধু মাংস নয়, দুধ ও ডিমের ঘাটতি দেখা দেবে। বর্তমানে গো-খাদ্যের চরম সংকট চলছে। অনেক পশু খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে। আমাদের অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করেছি, যা আরও বাড়তে পারে।’

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাড়ছে সরবরাহ

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাড়ছে সরবরাহ
ব্যস্ততা ফিরেছে খাতুনগঞ্জে। আসছে ভোগ্যপণ্যবাহী গাড়ি। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বাজারে আসতে শুরু করেছে পণ্যের গাড়ি। ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ছে। তবে এর প্রভাব পড়েনি খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলি পাইকারি বাজারে। সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা বেশি এমন চাল বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ডিম, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দরেই। তবে সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। 

জানা গেছে, বন্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রামমুখী লেন খোলা থাকলেও তীব্র যানজটে ভোগ্যপণ্যবাহী গাড়ি আটকে ছিল। তাই সপ্তাহখানেক ধরে ভোগ্যপণ্যবাহী কোনো গাড়ি আসতে পারেনি। বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ধীরগতিতে যানবাহন চলছে। এক্ষেত্রে পণ্যবাহী গাড়িকেই চলাচলে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তাই গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজারে আসতে শুরু করেছে গাড়ি। ফলে নগরজুড়ে তীব্র যানজটও দেখা দিয়েছে। 

তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। চালের চাহিদা বাড়ায় দামটা কমছে না। অপরদিকে অনেক খামারের মুরগি নষ্ট হওয়ায় ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এদিকে একই অজুহাতে চড়া দাম দেখা গেছে পেঁয়াজেও। 

চাহিদাসম্পন্ন চালের দাম বেড়েছে 
গতকাল পাহাড়তলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে সেখানে ১০ থেকে ১২টি চালবাহী গাড়ি এসেছে। বেচাকেনা বেশ ভালো দেখা গেছে। কিন্তু চাহিদা বেশি আছে এমন চালের বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে। চালের বাজারে মোটা সেদ্ধ চাল, পাইজাম সেদ্ধ, পাইজাম আতপ, বেতি আতপ, মিনিকেট চাল বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। 

পাহাড়তলি বাজারের সাবেক ব্যবসায়ী নেতা মো. নিজাম উদ্দিন দাবি করছেন, ‘চালবাহী গাড়ি আসছে, তবে চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এখন সাধারণ মানুষ চাল কিনেছেন, আশপাশের খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা আসছেন, তার ওপর অনেকে ত্রাণ দেওয়ার কারণে চালের ওপর চাপ পড়ছে। তাই বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। 

পাইকারিতে ইচ্ছামতো দরে বিক্রি, অলিগলিতে মিলছে না ডিম 
অপরদিকে সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাতে পাইকারি বাজারে ডিম ব্যবসায়ীরা যে যার মতো দামে ডিম বিক্রি করছেন। গত ২৬ আগস্ট পাইকারিতে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয়েছিল ১২ টাকা ৫০ পয়সা। তবে গতকাল বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা। অপরদিকে গত তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগরের অলিগলিতে ডিম পাচ্ছেন না সাধারণ ভোক্তারা। নগরের হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদ এলাকা ঘুরে তার প্রমাণও মিলেছে। তবে কাজীর দেউড়ি এলাকায় প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। 

অপরদিকে পাহাড়তলির ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, আগে প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮টি ডিমবাহী গাড়ি আসত। এখন আসছে ৭ থেকে ৮টি। এর মধ্যে ডিমের চাহিদা এত বেশি বেড়ে গেছে যে, নগরের অনেক এলাকায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। তার ওপর অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই ডিমের বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। 

নতুন দোহাই পেঁয়াজের বাজারে
এদিকে পেঁয়াজের বাজারে এবার পণ্যবাহী গাড়ি আসছে না- এমন দোহাই থেকে সরে এসেছেন পাইকাররা। তারা এবার বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ কম আসছে, তাই দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। কারণ দেশি পেঁয়াজ মোকামে মণপ্রতি ৪ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১৫ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে একই দরে। 

স্বস্তি পাইকারি সবজির বাজারে
তবে স্বস্তি মিলছে পাইকারি সবজির বাজারে। গতকাল রিয়াজুদ্দিন বাজারে প্রায় ১০০ গাড়ি সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে। পণ্যগুলোর মানও ভালো বলে জানিয়েছেন সবজি ব্যবসায়ীরা। গতকাল পাইকারি এই বাজারে প্রতি কেজি কাঁকরোল মানভেদে ৪০ থেকে ৫৫ টাকা, শসা ২০ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০, ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ১৫ থেকে ২০ টাকা, কচুর ছড়া ৪০ টাকা, পটোল ২৫ টাকা, করলা ৫০ টাকা, বেগুন ৫৫ টাকা ও কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৩০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

রিয়াজুদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ফেনী এলাকায় অনেক গাড়ি আটকে থাকায় গত চার দিন ধরে কোনো গাড়ি আসতে পারেনি। আজ (মঙ্গলবার) অনেক গাড়ি এসেছে। সরবরাহ বেড়েছে। তাই দামটাও কমে গেছে।’ 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার খবরে আজও অভিযান পরিচালনা করেছি। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি, ন্যায্যদামে পণ্য বিক্রি করতে নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’