
প্রবন্ধ রচনা
(গত ২২ জানুয়ারি প্রকাশের পর)
শ্রমের মর্যাদা
ইসলামে শ্রমের মর্যাদা: হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘নিজ হাতে কাজ করার মতো পবিত্র জিনিস আর কিছু নেই।’
ইসলাম ধর্মে শ্রমের গুরুত্ব ও শ্রমিককে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) নিজেও শ্রমিকদের মতো শ্রম করেছেন। রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাবার আগে তার পাওনা পরিশোধ করে দাও।’ কাজেই এ কথা বলা যায়, ইসলামে শ্রমের মর্যাদার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীতে কোনো শ্রমেরই মর্যাদা কম নয়।
শ্রমের সুফল: প্রবাদে আছে, ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’। পৃথিবীতে কাজ বলতে যা কিছু আছে সবকিছুই সবার জন্য করণীয়। পরিশ্রম করা মোটেই সম্মানহানিকর কাজ নয়। শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকার শ্রমের মাধ্যমেই ব্যক্তি ও জাতি মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি ও দেশ তত বেশি উন্নত। প্রবাদে আছে, ‘পরিশ্রম ধন আনে পুণ্য আনে সুখ।’ শ্রমবিমুখ জাতির পতন অনিবার্য। শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হলেই পরিশ্রমের প্রকৃত সুফল পাওয়া সম্ভব।
শ্রম ও সভ্যতা: কথায় বলে, ‘Industry is the mother of good luck.’ মানব সৃষ্টি কোন আদি উৎস থেকে শুরু হয়েছিল শ্রমের অঝোর ধারা, আজও তা শেষ হয় নাই। পরিশ্রম যে শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক তা নয়। সভ্যতার বিকাশের নিয়ন্ত্রক। পৃথিবীকে সুন্দর করার এবং মানুষের বাসযোগ্য করার প্রচেষ্টা পরিশ্রমের ফলশ্রুতি। উন্নত দেশগুলোর মানুষ পরিশ্রমী বলেই তারা আজ উন্নত ও সুসভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত। মোট কথা শ্রমের মাধ্যমে সৌভাগ্য গড়ে উঠে।
আরো পড়ুন : শ্রমের মর্যাদা বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা, ১ম পর্ব
প্রতিভা বিকাশে শ্রম: ‘Man is the architect of his own fate.’ প্রত্যেক মানুষের মাঝেই রয়েছে তার সুপ্ত প্রতিভা। শ্রমই মানুষকে সুন্দর সার্থক করেছে। পৃথিবীতে যেসব প্রতিভাবান ব্যক্তি রয়েছে, তারা সবাই কঠোর পরিশ্রম করেই প্রতিভাবান হয়েছে। ফুলের মতোই ছড়িয়ে পড়েছে তার সৌরভ। নিজের ভাগ্যকে মানুষের নিজেরই নির্মাণ করতে হয়। আর এই ভাগ্য নির্মাণের একমাত্র হাতিয়ার হলো তার পরিশ্রম।
শ্রম সম্পর্কে ধারণা: আমাদের অনেকের ধারণা পরিশ্রম আত্মসম্মানের জন্য হানিকর। কিন্তু এসব ধারণা নিতান্ত ভ্রান্ত ও ভুল। শারীরিক শ্রম যে অমর্যাদাকর নয় এবং কোনো কাজই যে ক্ষুদ্র নয় এ সত্যটি আমরা ভুলেই যাই। আমাদের মতে, শ্রমজীবী মানুষ অর্থাৎ চাষি, মজুর, শ্রমিক সবাই নেহায়েত ছোটলোক, কিন্তু দেশ ও জাতিকে রক্ষার দায়িত্ব তো তাদেরই। উন্নত দেশের মানুষের কাছে এরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের কাছে ছোট-বড় কোনো ভেদাভেদ নেই। আর এ কারণেই সে সব দেশ আজ অগ্রগতি লাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে একজন মনীষী বলেছেন, ‘জীবনকে যদি তুমি ভালোবাসো তাহলে শ্রমের অমর্যাদা করো না, কারণ জীবনটা শ্রমের সমষ্টি দিয়ে তৈরি।’
ব্যক্তিগত জীবনে শ্রম: শ্রমবিমুখ অলস ব্যক্তি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকে। প্রত্যেক মানুষই নিজ কর্মক্ষেত্রে কঠোরভাবে পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহের প্রয়াস পায়। সে জন্য আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং পরিশ্রম ব্যক্তিগত জীবনেও গৌরবের চাবিকাঠি। তাই মনে রাখতে হবে- ‘Failure is the pillar of success.’
শ্রমিকের লাঞ্ছনা: ‘তাঁতী বসে তাঁত বুনে, জেলে ধরে মাছ, বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার, তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার।’ সমাজের ওপরের স্তরের মানুষ যারা, তারা করেছে সম্মানজনক কাজ, গৌরবময় কাজ, সমাজের সব সুযোগ-সুবিধা নিজেরা আয়ত্ত করে, তারা নিম্নশ্রেণির মানুষদের নিক্ষেপ করছে অপমান আর ঘৃণার অন্ধকারে। অথচ এই নিম্নশ্রেণির শ্রমিকরা চিরকালই ঘাটে বীজ বুনেছেন। তারা বক্ষ বিদীর্ণ করে সোনার ফসল ফলিয়েছেন।
(বাকি অংশ পরের সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে)
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, উত্তরা, ঢাকা
কবীর