যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে বিরল দৃশ্য হিসেবে একসঙ্গে আকাশে দেখা গেছে অক্টোবরের সুপারমুন ও ধূমকেতু। এ বছরের চারটি সুপারমুন সিরিজের মধ্যে অক্টোবরের সুপারমুন তৃতীয় হলেও এটিকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের তুলনায় আরও বড় ও উজ্জ্বলতম মনে হয়। এই সুপারমুন চলতি বছরে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী গত বুধবার রাতে চাঁদ পৃথিবী থেকে প্রায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। এটি বৃহস্পতিবার পূর্ণিমার পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে যখন সুপারমুন পূর্ণিমার পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন বাংলাদেশে ১৮ অক্টোবর ভোর প্রায় সাড়ে ৫টা।
মজার বিষয় হলো, এ সময় মহাকাশে ধূমকেতু ‘অ্যাটলাস’ও ছিল, যা গত বছর আবিষ্কৃত হয়েছে। এই ধূমকেতু সি/২০২৩ এ-থ্রি সুচিনশ্যান নামে পরিচিত। এটি উত্তর গোলার্ধের আকাশে এখন দৃশ্যমান। এর আগে এটি দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে সবাইকে মুগ্ধ করেছে। ধীরে ধীরে এ সপ্তাহের শেষে এটি ক্ষীণ হয়ে যাবে। এই ধূমকেতু আবার ৮০ হাজার বছর পর ফিরে আসবে। অক্টোবরের সুপারমুন দেখতে ব্যর্থ হলেও চিন্তা নেই। বছরের শেষ সুপারমুন দেখা যাবে আগামী ১৫ নভেম্বর।
নাসার বিজ্ঞানী বিল কুক বলছেন, ‘বেশিরভাগ জ্যোতির্বিজ্ঞানী পূর্ণিমা পছন্দ করেন না। কারণ এর উজ্জ্বল আলো অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তু পর্যবেক্ষণে সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে এটি ২০২৪ সালের সবচেয়ে বড় সুপারমুন হওয়ায় কিছুটা হলেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
সুপারমুন কীভাবে আলাদা?
সুপারমুন বৈজ্ঞানিক শব্দের চেয়ে বরং জনপ্রিয় এক শব্দ। এটি তখন ঘটে যখন পূর্ণিমার সময় চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসে। চাঁদের ক্রমাগত স্থানান্তর, ডিম্বাকৃতি আকৃতির কক্ষপথের কারণে সুপারমুনের মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
সুপারমুন সাধারণ চাঁদের চেয়ে বড় নয়, তবে দেখতে কিছুটা বড় মনে হতে পারে। এই পার্থক্য খুব সূক্ষ্ম, যা সবাই বুঝতে পারে না। সাধারণ চাঁদ থেকে সুপারমুন প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল হয়। তাই এই উজ্জ্বলতা সহজেই চোখে ধরা পড়ে।
আগস্টের সুপারমুন ছিল পৃথিবী থেকে প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৯৭০ কিলোমিটার দূরে। সেপ্টেম্বরে এটি আরও প্রায় ৪ হাজার ৪৮৪ কিলোমিটার কাছে আসে। সেই সময় আংশিক চন্দ্রগ্রহণ হয়। আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপের বেশির ভাগ অংশে এটি দৃশ্যমান হয়েছে। নভেম্বরের সুপারমুন পৃথিবী থেকে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করবে।
সুপারমুন কতবার ঘটে?
নাসার তথ্যমতে, সুপারমুন বছরে তিন থেকে চারবার ঘটে। যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে টানা সুপারমুন দেখায় অনেকে হয়তো ভাবছেন সুপারমুন আর তেমন বিরল নয়। তবে এভাবেই সুপারমুন পরপর আসে। চাঁদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘোরার কারণে সুপারমুন একটানা ঘটে। সূর্যের মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা ধীর হয়ে যায়। এর ফলে চাঁদের পেরিজি (পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের বিন্দু) পরিবর্তিত হয়।
চাঁদের পেরিজি সূর্যের সঙ্গে একই অবস্থানে ফিরে আসতে ৪১১ দিন লাগে। এটি প্রতি ১৪ মাসে বড় ও ছোট পূর্ণিমার একটি চক্র তৈরি করে। যখনই পূর্ণিমা ও পেরিজি একসঙ্গে মিলে যায়, তখন সুপারমুন ঘটে। এটি একাধিকবার পরপর ঘটতে পারে। সূত্র: এপি