ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

গাছের ভাষা বুঝতে পারে নতুন এআই মডেল

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ এএম
গাছের ভাষা বুঝতে পারে নতুন এআই মডেল
এআই মডেল গাছের জেনেটিক ভাষা বুঝতে সক্ষম হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এআই) মডেল গাছের জেনেটিক ভাষা বুঝতে সক্ষম হয়েছে। ‘প্ল্যান্ট আরএনএ-এফএম (Plant RNA-FM)’ নামের এই মডেল উদ্ভিদের রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (আরএনএ) ডেটা ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত হয়েছে। 

গবেষকরা জানান, এই মডেল উদ্ভিদের আরএনএ ডেটা বিশ্লেষণ করে গাছের কোষের মধ্যে থাকা জেনেটিক ভাষার লজিক ও গঠন বোঝার সক্ষমতা অর্জন করেছে। আরএনএ হলো একটি বড় আণবিক উপাদান, যা জীব ও ভাইরাসে পাওয়া যায়। এর সঙ্গে ডিএনএ-এর মিল রয়েছে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কোষগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আরএনএ ব্যবহার করে, যা গাছের বৃদ্ধি ও গঠন নির্ধারণে সাহায্য করে।

মডেলটি বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ১২৪ প্রজাতির উদ্ভিদের ‘জেনেটিক অ্যালফাবেট বা জিনগত বর্ণমালা’ গঠনে ৫৪ বিলিয়ন টুকরা আরএনএ-এর একটি ডেটা সেট ব্যবহার করেছে। মডেলটির প্রশিক্ষকরা বলছেন, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি মানুষের ভাষায় সাড়া দেওয়ার মতো করে আরএনএ-এর ব্যাকরণ ও যুক্তি বুঝতে শিখেছে। ইংল্যান্ডের জন ইনেস সেন্টারের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক ড. হাওপেং ইউ জানান, ‘মানব চোখে আরএনএ-এর ক্রম এলোমেলো মনে হতে পারে, তবে আমাদের এআই মডেল এই লুকানো বিন্যাসগুলোকে ডিকোড করতে শিখেছে।’

গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ‘নেচার মেশিন ইন্টেলিজেন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার, চীনের নর্থইস্ট নরমাল ইউনিভার্সিটি ও চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষকরাও অংশ নিয়েছেন।

গবেষকরা মনে করছেন, এই মডেল উদ্ভিদের বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও কৃষিব্যবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এআইয়ের সাহায্যে গাছের ভেতরের লুকায়িত ভাষা বোঝার এই নতুন ধারা কৃষিক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। উদ্ভিদের আরএনএ-এর কার্যকারিতা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে ও গঠন শনাক্ত করতে গবেষকরা নতুন এআই মডেল ব্যবহার করেছেন। এই মডেল উদ্ভিদের কোষের আরএনএ-তে থাকা জটিল কাঠামোগত বিন্যাস বিশ্লেষণ করে। এসব বিন্যাস উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও চাপসহ বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

জন ইনেস সেন্টার জানিয়েছে, মডেলটির পূর্বাভাস পরীক্ষামূলকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। আরএনএ-এর যে জটিল গঠন মডেলটি চিহ্নিত করেছে, সেগুলো প্রোটিন তৈরি প্রক্রিয়াকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে।

গবেষক দলের নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক ইলিয়াং ডিং বলেন, ‘এই সাফল্য উদ্ভিদ সম্পর্কে গভীরভাবে বুঝতে ও এগুলোকে প্রোগ্রাম করার নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। এটি উন্নতমানের শস্য ও পরবর্তী প্রজন্মের এআই-ভিত্তিক জিন নকশায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে।’

বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাপনায় বড় চ্যালেঞ্জ আগাছা

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৩২ পিএম
বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাপনায় বড় চ্যালেঞ্জ আগাছা
কৃষিবিদ ড. আসাদুজ্জামান আসাদ আগাছ পর্যবেক্ষণ করছেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাপনায় ফসলের আগাছা নিরোধ একটি বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। আধুনিক উন্নত বিশ্ব এ চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করছে ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় কী? এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে খবরের কাগজ আগাছা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশিষ্ট গবেষক ও অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কৃষিবিদ ড. আসাদুজ্জামান আসাদের মুখোমুখি হয়েছে।

ড. আসাদ আপনি অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন এবং আগাছা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণা করছেন। আগাছা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

যে গাছগুলো ফসল নয় কিন্তু ফসলের জমিতে জন্মে ফসলের ক্ষতি করে সেগুলোকে আগাছা বলে। এগুলো জমি থেকে ফসলের পুষ্টিগুণ শোষণ করে ফসলের উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। আমাদের দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনায় কৃষকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথাগত পদ্ধতি অর্থাৎ হাত দিয়ে আগাছা তুলে থাকেন। তবে বর্তমানে শ্রমিক মজুরি বেশি হওয়ায় এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। তাই কৃষকরা আগাছা দমনে বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করেন।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় কৃষকরা কেমিক্যালগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। এতে করে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়, যা ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ও পরিবেশের ক্ষতি করে। আসলে আগাছা এমনভাবে ফসল বা ফসলের জমির ক্ষতি করে, যা খালি চোখে দেখা যায় না বা এর ক্ষতির মাত্রা উপলব্ধি করা যায় না। তাই আধুনিক উন্নত বিশ্ব এই আগাছাকে ফসলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সরকার, কৃষক ও গবেষকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আগাছা দমন করে থাকে।

ফসলের আগাছা দমন বিষয়ে উন্নত বিশ্ব বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া কোন ধরনের ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে থাকে? সে বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করেন-

উন্নত বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণানির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। দেশটির সমগ্র কৃষি ব্যবস্থাপনা একটা উন্নত সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। একজন সাধারণ কৃষকও এই সিস্টেম অনুসরণ করেন। যেমন সেখানকার প্রত্যেক কৃষক প্রতি বছর তাদের জমিতে কোন ধরনের আগাছা হয় তার একটা নিজস্ব রেকর্ড রাখেন। শুধু তাই নয়, তারা প্রতি বছর কোন জমিতে কী পরিমাণ কেমিক্যাল, কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করেছেন তার একটা রেকর্ড রাখেন। এই তথ্যগুলো তারা সরকারের কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে শেয়ার করেন। তার ওপর ভিত্তি করে সরকার অনেকগুলো পলিসি ডেভেলপ করে। অর্থাৎ কোন কেমিক্যাল তাদের জমির জন্য উপকারী বা সঠিকভাবে কাজ করছে না- এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকার বিদেশ থেকে কেমিক্যাল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু দেশ এখন আগাছা দমনের ক্ষেত্রে শুধু কেমিক্যালের ওপর নির্ভরশীল না। কারণ কেমিক্যালের একটা খারাপ দিকও আছে। সেটা হচ্ছে আগাছার ভেতরে প্রতিরোধ তৈরি হওয়া, যেটাকে আমরা টেকনিক্যালি বলি হার্বিসাইড রেজিস্ট্যান্স গ্রো করা। এতে করে আগাছাকে আর কেমিক্যাল দিয়ে প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এজন্য কেমিক্যাল একমাত্র সমাধান নয়। এ কারণে তারা মাল্টিপল সলিউশন নিয়ে কাজ করে। যেমন- ক্রপ রোটেশন করে। অর্থাৎ এক বছরে একটা ফসল চাষ করার পরের বছর একই জমিতে অন্য একটা ফসল চাষ করা। এ ছাড়া তারা কিছু উন্নত টেকনোলজি ব্যবহার করা শুরু করেছে। যেমন ফার্মে তারা ড্রোন ব্যবহার করেন। ড্রোন দিয়ে তারা আগাছার অবস্থান ম্যাপ করে নিয়ে আসেন। তারপর সেই ম্যাপ অনুযায়ী যেখানে আগাছা আছে, ঠিক সেখানেই কেমিক্যাল স্প্রে করেন। এতে করে পুরো জমিতে কেমিক্যাল স্প্রে করতে হয় না। কেমিক্যালেরও খরচ অনেক কমে যায়, যা উৎপাদন খরচ কমায়। একই সঙ্গে উৎপাদন বেড়ে যায়। 

শুধু তাই নয় উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগাছার বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য একটা নির্দিষ্ট বিভাগ থাকে। আমি আমেরিকাতে দেখেছি ওখানে আগাছার জন্য নির্দিষ্ট স্কুল বা বিভাগ আছে। অস্ট্রেলিয়াতেও আছে। তবে বাংলাদেশে এরকম কোনো বিভাগ নাই। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কৃষিতত্ত্ব নামে একটা বিভাগ থাকে। তার অধীনে আগাছা বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয় বা গবেষণা করা হয়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া বা ডেভেলপ কান্ট্রিতে প্রচুর বিনিয়োগ করা হয় আগাছার বিষয়ে গবেষণার জন্য। তারা ছাত্রদের, শিক্ষকদের ও এক্সটেনশন অফিসারদের আগাছা বিষয়ে গবেষণা এবং প্রচার চালানোর জন্য উৎসাহিত করে।

অস্ট্রেলিয়াতে আমি দেখেছি প্রত্যেকটি কাউন্সিল বা পৌরসভায় একজন করে উইড অফিসার বা আগাছাবিষয়ক অফিসার থাকেন। তার কাজ হচ্ছে শহরের রাস্তার পাশে জন্মানো আগাছাগুলোকে সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা। এ ক্ষেত্রে সরকার থেকে প্রচুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কৃষকরাও এতে সহযোগিতা করেন। মজার বিষয় হচ্ছে, নতুন কোনো আগাছা যদি কোনো মাঠে বা রাস্তাঘাটে দেখা যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তারা নিকটবর্তী যে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস আছে, সেখানে তারা রিপোর্ট করেন। তারা সেটার রেকর্ড রাখে ও এটা তাদের ডেটাবেজে যুক্ত করেন, যেন ভবিষ্যতে এটি নিয়ে তারা গবেষণা বা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এটা নিয়ে তারা কাজ করতে পারেন। 

এই ডেটাবেজগুলো কৃষি উন্নয়নে বা সরকারের পলিসি গ্রহণে কীভাবে কাজ করে?

এক্ষেত্রে ডেটাবেজের একটা সেন্ট্রাল হাব আছে। সেই হাবের ভেতরে অনেকগুলো উপাদান থাকে। সেখানে সরকারের পলিসি, কৃষকের অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিগত ডেটা শেয়ার করা হয়। এ ছাড়া এই হাবে স্টেট গভর্নমেন্টের কিছু বিনিয়োগ থাকে, রিসার্চ থাকে ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাজ করে। যেখানে ছাত্ররা গবেষণা করে, সেই তথ্যগুলো সেখানে থাকে। এর মানে একটা হাবের অধীনে সব তথ্য একটার সঙ্গে একটা যুক্ত থাকে। এতে করে সরকারে পক্ষ থেকে কোন পলিসি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে খুব সহজ হয়। কোন পলিসির পরিবতর্ন হলে সেই পরিবতর্ন দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। যদি কোনো কৃষক লক্ষ করে, সে গত ১০ বছর ধরে আগাছা দমন করার জন্য একটা কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। কিন্তু দেখা গেল কোনো একটা আগাছাকে কেমিক্যাল দিয়ে দমন করা যাচ্ছে না। তখন সে সেটা তার নিকটবর্তী কৃষি অফিসারকে রিপোর্ট করে। তখন এই রিপোর্টটা ধীরে ধীরে উপর লেভেলে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে গবেষণা শুরু হয় ও একটা সময় সরকারে কাছে পৌঁছে যায়। তখন সরকার ওই নির্দিষ্ট কেমিক্যালটা আমদানি করবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে। তারপর তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পলিসি বাস্তবায়ন করে।

ড. আসাদ আপনি বাংলাদেশের সন্তান। আপনি বাংলাদেশের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। এখানে অনেক দিন কাজ করেছেন। এই আগাছা ব্যবস্থাপনায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাপনার মধ্যে আপনি কোন ধরনের পার্থক্য প্রত্যক্ষ করেন?

সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের দেশে আগাছাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমাদের দেশে ফসলের রোগ বা পোকামাকড়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্দিষ্ট বিভাগ রয়েছে। আমি কৃষিতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ছিলাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ওই বিভাগের অধীনে একটা অংশ হিসেবে আগাছা ব্যবস্থাপনা পড়ানো হয়। কিন্তু ফসল উৎপাদনে আগাছার গুরুত্ব অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে আগাছার আক্রমণের কারণে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ফসলের ফলন কমে যায়। যেটা একটা পোকার আক্রমণের চেয়েও বেশি বা রোগের আক্রমণের চেয়েও বেশি। তবে গুরুত্ব কম দেওয়া হচ্ছে আগাছা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।

দ্বিতীয় যে প্রশ্নটা আসে, আমাদের দেশে কৃষকরা আগাছা দমনের জন্য সঠিক তথ্য পান না। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্র প্রথাগত পদ্ধতি তথা হাত দিয়ে বা ম্যানুয়ালি আগাছা দমন করেন। এটার অনেকগুলো সুবিধা ও অসুবিধা আছে। সুবিধাগুলো হচ্ছে, এতে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। যেটা ভালো। অসুবিধা হচ্ছে এটা অনেক মজুরি খরচ বাড়ায়। আমাদের দেশে এখন শ্রমিক পাওয়া যায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। তাই অনেক সময় তারা সঠিক সময়ে আগাছা দমন করতে পারেন না। আবার কিছু ক্ষেত্রে আগাছা দমনের জন্য যে কেমিক্যাল তারা ব্যবহার করেন, তার সঠিক ব্যবহার তারা জানেন না। আগাছা দমনের ক্ষেত্রে শুধু কয়েকটি কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। আমি নিজেই গবেষণা করছি, যদি কোনো ফসলের জমিতে একই কেমিক্যাল কয়েক বছর ব্যবহার করা হয় তাহলে আগাছার মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় বা রেজিস্ট্যান্স গ্রো করে।

এটা আসলেই খারাপ একটা বিষয়। আরেকটা বিষয় হলো আমাদের দেশে কেমিক্যালের ব্ল্যাক মার্কেট আছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন দেশ থেকে কেমিক্যাল আমদানি করেন। আমাদের দেশের কৃষকরা কিছুটা অসহায় বা কিছুটা হলেও অসচেতন হওয়ায় তাদের কাছে এই কেমিক্যালগুলো বিক্রি করে। তারা কৃষককে পরামর্শ দেয়, তুমি এটা নিয়ে যাও। এই পরিমাণ তুমি স্প্রে করে দাও। আমাদের সহজ-সরল কৃষক সেটাই করেন। তবে সেটা আসলে সঠিক কি না, সেটা তারা জানের না। কারণ, কেমিক্যালের পরিমাণ নির্ভর করে ফসলের আগাছা কী অবস্থায় আছে ও কোন গ্রোথ স্টেজে আছে তার ওপর। অর্থাৎ একটা অনুমাননির্ভর পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তারা এই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতে করে আমরা হয় খুব বেশি কেমিক্যাল ব্যবহার করি, আর না হয় খুবই কম। দুটোরই অসুবিধা রয়েছে। খুব বেশি বা কম কেমিক্যাল ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় পর ওই আগাছা রেজিস্ট্যান্স গ্রো করে। ফসলের জমিতে মাইক্রো অর্গানিজম থাকে, বেশি কেমিক্যাল ব্যবহারে উপকারী মাইক্রো অর্গানিজমের ওপর একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। 

বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় আগাছা দমনে গবেষণা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগাছা বিষয়ে গবেষণা বাড়ানো উচিত। এ বিষয়ে আমি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটি এ বিষয়ে সাহায্য করার জন্য খুবই পজিটিভ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তারা এ বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করতে চায়। আমাদের এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ আছেন। বাংলাদেশ যদি চায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারে এবং একটা হাব তৈরি করতে পারে। এই হাবের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরি করা যায়। সেখানে প্রশিক্ষণের একটা ব্যবস্থা থাকতে পারে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলামে একটু আপগ্রেড করা প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি  কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত একটি করে হার্বিসাইড রেজিস্ট্যান্ট টেস্টিং সেন্টার তৈরি ও মনিটর করা উচিত। সরকারের পলিসিতে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা উচিত। যেমন কেমিক্যাল আমদানির ক্ষেত্রে সরকারে নজর দেওয়া উচিত।

আমাদের দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে আগাছা নিরোধ করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রোফড ফান্ড থেকে একটি প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?

আধুনিক পদ্ধতিতে আগাছা দমন করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার কৃষি গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রোফড ফান্ডের একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঠাকুরগাঁও শহরে ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে। এই ওয়ার্কশপে আমার সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন আরও তিনজন অস্ট্রেলিয়ান গবেষক যারা গত বুধবার বাংলাদেশে এসেছেন। আমি লিড ফ্যাসিলেটর হিসেবে কাজ করছি এই প্রজেক্টে। আগাছা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জড়িত কৃষক, কৃষি কেমিক্যাল আমদানিকারক ডিলার, কৃষি অফিসার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের নিয়ে এসব ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে আমরা একটা সচেতনতা তৈরি করতে চাই। বিশেষ করে, কৃষকরা যেন সঠিক জ্ঞান পান। তারা যেন সঠিকভাবে ও সময়মতো কেমিক্যাল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া সময়মতো আগাছা দমন করতে পারেন। দিনশেষে যেন তারা বেশি উপকৃত হয় আগাছা দমনের মাধ্যমে, সে বিষয়টিকে ওয়ার্কশপে গুরুত্ব দেওয়া হবে। 

আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষি ব্যবস্থাপনায় আগাছা দমনে অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল হাবের কথা বলছিলেন। বাংলাদেশে কি এ ধরনের কোনো হাব নির্মাণ করা সম্ভব? যেখানে তথ্য, তত্ত্ব ও অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশে একটি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যাবে?

আমি অস্ট্রেলিয়াতে থাকা অবস্থায় দুটি ফান্ডিং বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, যারা ডেভেলপিং কান্ট্রিতে গবেষণার জন্য বিশেষ করে এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে গবেষণার জন্য ফান্ডিং করে থাকে। তারা বলেছে, যদি বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় আগ্রহী হয় তাহলে তারা বাংলাদেশেও ফান্ডিং করতে আগ্রহী আছেন। সেক্ষেত্রে তারা একটা বড় অ্যামাউন্ট কন্ট্রিবিউশন করতে চায় দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার জন্য। কিন্তু অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকেও সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। হয়তো একটা নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ সরকার বা কৃষি মন্ত্রণালয়কে বিনিয়োগ করতে হবে।

সে ক্ষেত্রে সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থ ফান্ডিং বোর্ডই করে থাকে। বাকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ইন কান্ট্রি বা যে দেশ এ ধরনের হাব তৈরি করতে চায় তাদের দিতে হয়। আমি একটা উদাহরণ দিতে পারি- আমরা সম্প্রতি লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় এরকম একটা হাব তৈরি করার জন্য কাজ করছি। তাদের সরকার স্বেচ্ছায় ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে চায়। আমরা অস্ট্রেলিয়ান ফাউন্ডিং বডিকে বলেছি, তারা যেন ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করে। যদি করে, তাহলে আমরা সেখানে এই প্রজেক্টটি চালু করব। যেহেতু আমি জানি, বাংলাদেশে আগাছা দমন অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই এখানে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

/আবরার জাহিন

পৃথিবীর আকাশে ১৬০০০০ বছর পর বিরল ধূমকেতু

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
পৃথিবীর আকাশে ১৬০০০০ বছর পর বিরল ধূমকেতু
ছবি: সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো পৃথিবীর আকাশে এক লাখ ৬০ হাজার বছর পর বিরল একটি  ধূমকেতু দেখা যাবে বলে বলে জানিয়েছে নাসার গবেষকরা।

নাসা জানায়, সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ধূমকেতুটি সূর্যের কাছে সর্বাধিক নিকটবর্তী অবস্থানে (পেরিহেলিওন) পৌঁছায়। এই অবস্থানের ফলে এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। 

কমেট সি/২০৪ জি৩ (অ্যাটলাস) নামের ধুমকেতুটি খালি চোখে দেখতে পাওয়ার মতো উজ্জ্বল থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমকেতুটি দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যেতে পারে এবং এটি শুক্র গ্রহের মতো উজ্জ্বল হতে পারে।

গত বছর এই ধূমকেতুটি শনাক্ত করে নাসার অ্যাস্টেরয়েড টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম (এটিএলএএস)। কক্ষপথের হিসেব অনুযায়ী ধূমকেতুটি সূর্য থেকে প্রায় ৮৩ লাখ মাইল দূর দিয়ে অতিক্রম করবে।

লন্ডনের কিংস কলেজ অ্যাস্ট্রোপার্টিকল ফিজিক্স এবং কসমোলজি বিভাগ বিরল এই ধূমকেতুটি পর্যবেক্ষণ করছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা এই ধূমকেতুকে ১ লাখ ৬০ হাজার বছরে একবার ঘটতে যাওয়া একটি বিশেষ ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এর আগে গত শনিবার নাসার মহাকাশচারী ডন পিটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে ধূমকেতুর তোলা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছেন, কক্ষপথ থেকে ধূমকেতু দেখা সত্যিই বিস্ময়কর। অ্যাটলাস সি/২০৪ জি৩ আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। সূত্র: বিবিসি

মেহেদী

ম্যাসটাইটিস ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৯ এএম
আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১০ এএম
ম্যাসটাইটিস ভ্যাকসিন উদ্ভাবন
বাকৃবির একটি খামারে কাজ করছেন গবেষক দল। ছবি: খবরের কাগজ

গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস রোগ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুতর সমস্যা। এটি সাধারণত গাভি বা মহিষের স্তনে সংক্রমণের কারণে ঘটে, যা স্তনের দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং পশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। এ ছাড়া দুধের গুণগত মান কমার পাশাপাশি খামারিদের আর্থিক ক্ষতি এবং গ্রাহকদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। 

সম্প্রতি গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ রোগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান ও তার গবেষক দল। চার বছরের গবেষণা শেষে দেশে প্রথমবারের মতো এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন তারা। অধ্যাপক বাহানুরের এই গবেষক দলে ছিলেন ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী। 

জানা যায়, গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ মূলত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগে গাভির ওলান ফুলে যায়, ওলানে জ্বালাপোড়াসহ ব্যথা অনুভূত হয় ও দুধ উৎপাদন কমে যায়। অধিক সংক্রমণে দুধ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এই রোগের ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট হওয়ায় প্রতিষেধক চিকিৎসায় কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (বাস-ইউএসডিএ) প্রোগ্রামের অর্থায়নে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর এই গবেষণাটি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। গবেষণাটির মেয়াদকাল ছিল তিন বছর এবং এটি ২০২৪ সালের ১১ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে উপস্থাপন করা হয়।

গবেষণার বিষয়ে ড. বাহানুর বলেন, ‘২০২০ সালে গবেষণাটি শুরু করি। আমরা ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ ৯টি জেলার ২০৯টি খামারে জরিপ পরিচালনা করি। জরিপে ৪৬ শতাংশ গাভিতে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ খুঁজে পাই। মাঠপর্যায় থেকে আমরা স্যাম্পল সংগ্রহ করে সোমটিক সেল কাউন্টের মাধ্যমে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ ও এর তীব্রতা নিরূপণ করি। পরবর্তী সময়ে গবেষণাগারে দীর্ঘ ক্লিনিকাল টেস্ট ও প্রক্রিয়াকরণ শেষে আমরা এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সক্ষম হই। ৫১৭টি গাভি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিন তৈরিতে ৪টি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করেছি।’

ব্যাকটেরিয়াগুলো হলো Streptococcus agalactiae, Escherichia coli, Staphylococcus aureus ও Streptococcus uberis। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনা থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। ভ্যাকসিনটি চারটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে বিধায় একে Polyvalent Mastitis Vaccine বলে। ব্যাকটেরিয়াগুলো জুনোটিক স্বভাবের কারণে প্রাণী থেকে মানুষেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

ড. বাহানুর আও বলেন, ‘ভালো দুধ উৎপাদনে গাভীর ওলানের সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ছত্রাকের আক্রমণে গাভির এই রোগ হয়ে থাকে। দেশে আগে এই রোগের ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে এটি দেশে আর পাওয়া যায় না। গাভির সুস্থতা নিশ্চিত করতে ও দুধ উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেই লক্ষ্যে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে আমরাই প্রথম ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি।’ 

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হলেই সেটি সফল হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু উদ্ভাবিত আমাদের ভ্যাক্সিনটি প্রায় শতভাগ কার্যকর।’

ভ্যাকসিনটির ব্যবহারবিধি সম্পর্কে অধ্যাপক বাহানুর রহমান বলেন, এটি ইঁদুর ও গিনিপিগে প্রয়োগ করে এর নিরাপত্তা যাচাই করা হয়েছে এবং পঞ্চম প্রজন্মের অ্যাডজুভেন্ট এই ভ্যাকসিনে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি গাভির গর্ভাবস্থায় প্রয়োগ করতে হয়। দুটি ডোজ দিতে হবে। প্রথম ডোজ গর্ভাবস্থার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজ বাচ্চা হওয়ার আগ মুহূর্তে অর্থাৎ ৯ থেকে সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে দিতে হবে। ৫ মিলি করে প্রতি ডোজে দিতে হবে। এই ভ্যাকসিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। দুটি ডোজ গাভিকে দিয়ে দিলে ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে। বাজারজাত করা সম্ভব হলে এই ভ্যাকসিনের দাম কৃষকের নাগালের মধ্যেই থাকবে।

গাঁজা সেবনে মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম
গাঁজা সেবনে মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে
গাঁজা সেবনে মস্তিষ্কের স্নায়ু সংযোগ কমে যায়। ছবি: সংগৃহীত

গাঁজা সেবনে মস্তিষ্কের স্নায়ু সংযোগ কমে যায়, যা ‘সাইকোসিস বা মনোরোগ’-এর ঝুঁকিতে থাকা তরুণদের ক্ষেত্রে আরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। সাইকোসিস পরবর্তী সময়ে সিজোফ্রেনিয়ার মতো মারাত্মক মানসিক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সাইকোসিস একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তি বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই বিচ্ছিন্নতা প্রায়ই হ্যালুসিনেশন ও বিভ্রমের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি পরিচালিত গবেষণাটি সম্প্রতি ‘জামা সাইকিয়াট্রি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সুস্থ ব্যক্তিদের তুলনায় সাইকোসিসের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে স্নায়ু কোষের সংযোগ (সিনাপটিক ডেনসিটি) উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে। এদের মধ্যে যারা গাঁজায় আসক্ত, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া আরও তীব্র হয়।

গাঁজা বহুদিন ধরে মানসিক রোগ, বিশেষত সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে এই প্রথমবার গবেষকরা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন শনাক্ত করেছেন। 

এই গবেষণার কাজ করেছেন রোমিনা মিজরাহি। তিনি বলেন, ‘গাঁজা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক পরিশোধন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, যা মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশের জন্য অপরিহার্য।’  

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক গাঁজা সেবনকারী সাইকোসিস বা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন না। তবে যাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি, আমাদের গবেষণা সেই কারণগুলো স্পষ্ট করেছে।’ 

গবেষকরা ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর উন্নত মস্তিষ্ক স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ গবেষণা চালিয়েছেন। এদের মধ্যে কারও কারও মধ্যে সম্প্রতি সাইকোসিসের লক্ষণ দেখা গেছে, আবার কেউ কেউ উচ্চ ঝুঁকিতে ছিলেন।

গবেষকরা জানিয়েছেন, সাইকোসিসের প্রাথমিক পর্যায় ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় স্নায়বিক সংযোগের ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। এই ঘাটতির সঙ্গে নেতিবাচক উপসর্গ, যেমন সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও উদ্দীপনার অভাব সম্পর্কিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণা বলছে, এই স্নায়বিক অস্বাভাবিকতা ভবিষ্যতে সিজোফ্রেনিয়ার দিকে ধাবিত করতে পারে।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কম সিনাপটিক ডেনসিটিরে কারণে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা, কাজ বা পড়াশোনার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত মানসিক রোগের ওষুধগুলো শুধু হ্যালুসিনেশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে এই ধরনের জটিল উপসর্গ দূর করতে ব্যর্থ হবে।

গবেষক দলের প্রধান বেলেন ব্লাস্কো বলেন, ‘বর্তমান ওষুধগুলো সামাজিক সম্পর্ক ও দৈনন্দিন জীবনের মান বজায় রাখতে যে সমস্যাগুলো হয়, তা সমাধানে কার্যকর নয়। সিনাপটিক ডেনসিটির ওপর ভিত্তি করে আমরা ভবিষ্যতে এমন থেরাপি তৈরি করতে পারি, যা মানসিক রোগীদের জীবনের মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।’

গবেষকরা ভবিষ্যতে মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলো আরও বিশদ আকারে গবেষণার পরিকল্পনা করছেন। এর মাধ্যমে মানসিক রোগের ঝুঁকি আগে থেকে নির্ধারণ ও  প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হতে পারে। সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট

পৃথিবীর জলবায়ুর অতীত উন্মোচন

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:১০ এএম
পৃথিবীর জলবায়ুর অতীত উন্মোচন
পৃথিবীর জলবায়ুর অতীত সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর জলবায়ুর অতীত সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ড্রুজের গবেষকরা। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার জিওসায়েন্স’ জার্নালে। 

গবেষক দলটি ৩৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ২৬ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে কার্বনিফেরাস ও পারমিয়ান যুগে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিবর্তন নির্ধারণ করতে জীবাশ্মের সাহায্য নিয়েছেন গবেষকরা। এই সময়কালটি ‘লেট প্যালিওজোয়িক আইস এজ বা শেষ প্যালিওজোয়িক বরফযুগ’ নামে পরিচিত। এই সময়ের জলবায়ু ছিল অত্যন্ত শীতল। 

গবেষণায় জানা গেছে, এই বরফযুগে দীর্ঘ সময় ধরে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কম ছিল। তবে ২৯ কোটি ৪০ লাখ বছর আগে ব্যাপক আকারের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও বরফ গলতে শুরু করে। গবেষক দলের মতে, তাদের এই গবেষণা প্রমাণ করে কার্বন ডাই-অক্সাইড পৃথিবীর জলবায়ু ও পরিবেশগত অবস্থার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

গবেষণা দলের প্রধান ড. হানা জুরিকোভা বলেন, ‘লেট প্যালিওজোয়িক আইস এজের সমাপ্তি ছিল পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের বিকাশ ও পরিবেশগত পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই সময়ে সরীসৃপের উদ্ভব ঘটে। এখন আমরা জানি, এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের পরিবর্তন।’

গবেষক দলটি তাদের গবেষণায় প্রাচীন শামুক জাতীয় জীবাশ্ম ‘ব্রাকিওপড শেল’-এর রাসায়নিক চিহ্ন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করেছেন। এই শেলগুলোয় সংরক্ষিত রাসায়নিক চিহ্ন থেকে পৃথিবীর জলবায়ু ও পরিবেশের বিকাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই প্রাচীন জীবাশ্ম আজও সমুদ্রে পাওয়া যায়। এই গবেষণার আরেক গবেষক ড. জেমস রে বলেন, ‘অতীতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ পৃথিবীতে ব্যাপক উষ্ণায়ন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়েছে। যদি এই প্রবণতা অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে ভবিষ্যতেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।’

গবেষকরা বলছেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের বর্তমান কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হওয়া উচিত। সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট