![তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা](uploads/2024/06/01/sundarban-1717210257.jpg)
জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় টানা তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আজ ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ সময় সুন্দরবনে সাধারণ মানুষের চলাফেরাসহ নদী-খালে মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। মাছ ও বন্য প্রাণীর বংশবৃদ্ধি, বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নিষেধাজ্ঞা সামনে রেখে গহীন সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরছেন উপকূলীয় অঞ্চলের বনজীবী হিসেবে পরিচিত জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালরা। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকত। ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে করা হয়েছে। সেই থেকে ১ জুন হতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হচ্ছে।
বন বিভাগ ও মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখন সুন্দরবনে ২৫১ প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই বন বিভাগ থেকে জেলেদের জন্য সব ধরনের পারমিট বন্ধ রাখা হবে। বনের নদী ও খালে নৌযান চলাচল করলে মাছের ডিম ছাড়তে সমস্যা হবে তাই সব ধরনের নৌযানও বন্ধ থাকবে।
এ ছাড়া বনে ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রকারের সরীসৃপ, ৪২ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এখন তাদের প্রজনন মৌসুম চলছে। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বাঘ, হরিণ, শূকর, বানর, কুমির, ডলফিন, ভোঁদড়, বন বিড়াল ও মেছো বাঘসহ অন্যান্য প্রাণী।
সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক এক পাঁচ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, জুন থেকে আগস্ট- এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ ছাড়া এই সময়ে বন্য প্রাণীরও প্রজনন মৌসুম। এই তিন মাস বনে পর্যটক ও জেলে না গেলে বনের জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী নিরুপদ্রব থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠবে।
মোংলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মোংলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮ হাজার ৪০০ জন। অবশ্য স্থানীয় বনজীবীরা বলছেন, মোংলায় জেলেদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। ভৌগোলিক কারণে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ। মোংলায় অনেক জেলে পরিবারের বসবাস, যারা বংশপরম্পরায় বনজীবী। তারা সারা বছর সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।
মৎস্যজীবী আছাদুল মোল্লা বলেন, ‘সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করে আমাদের সংসার চলে। তিন মাস পাস বন্ধ থাকবে। মাত্র কদিন হলো ঝড়ের সংকেত শুনে বন থেকে বাড়িতে ফিরেছি। খুব বেশি মাছ ধরতে পারিনি। সামনের তিন মাস বন্ধের সময় সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকা নেই। কীভাবে সংসারের খরচ মিটাব এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক বিপর্যয়সংক্রান্ত নানামুখী প্রতিকূলতা রোধ করে উপকূলীয় অঞ্চলে ডেলটা প্ল্যানের সফল বাস্তবায়নের আওতায় বিশ্বের ম্যানগ্রোভ বনভূমির ইকোসিস্টেম পুনরুজ্জীবিতকরণ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের ১৩ ও ১৪ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যক্ষভাবে অর্জনের লক্ষ্যে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে সর্বপ্রকার পর্যটন ও বননির্ভর পেশা স্থগিত রাখা হয়েছে। এ আইন অমান্য করলে বন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ের ভেতরে সংরক্ষিত এলাকাটির ওপর জীবন-জীবিকার জন্য নির্ভরশীল বাওয়ালি, মৎস্যজীবীদের নির্ধারিত সময়ে বিশেষ খাদ্যসহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।