![ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরতে ভোগান্তি, ভাড়া দ্বিগুণ](uploads/2024/06/22/capita-1719033460.jpg)
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থল রাজধানীতে ফিরছে মানুষ। গত বুধবার ঈদের ছুটি শেষে খুলেছে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ছুটি শেষ হলেও বেশির ভাগ মানুষই আরও দুই দিন যোগ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২১ জুন) ফিরছে ঢাকায়। কিন্তু দূরপাল্লার গাড়ি না পাওয়া, অতিরিক্ত ভাড়া ও পরিবহনে সিট না পেয়ে পথে পথে ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই কর্মস্থলে ফিরছেন তারা।
শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুর জেলার শিবচরের সূর্যনগর, বন্দরখোলা, পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, অনেক যাত্রী বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার পরিবহনগুলো এসব বাসস্ট্যান্ডে থামছে না। দু-একটি পরিবহন এসে থামলেও অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের চাপে অনেককেই বাসে উঠতে যেমন হিমশিম খেতে হয়েছে, তেমনি বাসের সিট ফাঁকা না পেয়ে দাঁড়িয়েই যেতে হয়েছে বহু যাত্রীকে। আর এত কষ্টের সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া।
একই স্ট্যান্ডে কথা হয় মাদারীপুর সদরের মিঠাপুর এলাকা থেকে আসা মেহেদী হাসান নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে থাকতে কার না ভালো লাগে। বুধ ও বৃহস্পতিবার বাড়তি ছুটি নিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে ভেঙে ভেঙে এ পর্যন্ত এসেছি। এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি, বাস পাচ্ছি না। একটি বাস যাত্রীদের দাঁড় করিয়ে এনেছে, তারপরও ২০০ টাকার ভাড়া চাইছে সাড়ে ৩০০।’
সূর্যনগর বাসস্ট্যান্ডে মো. কালাম বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে স্থানীয় অটোবাইকগুলোর ভাড়াও বেড়েছে। ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে এখানে এসেছি। এখন বাসে উঠতে পারছি না, কোনো গাড়ি থামছে না।’
শিবচর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে এক্সপ্রেসওয়েতে হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ তৎপরতা রয়েছে। পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে শিবচর অংশে হাইওয়ে পুলিশের একাধিক টিম দায়িত্বরত রয়েছে। অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে হাইওয়ে পুলিশ টহলরত আছে। এ ছাড়া মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিল আহমেদ বলেন, ‘ঈদে মহাসড়কে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে পরিবহনের চাপ। এ সময় আমাদের পুলিশের টিম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করছে। ঈদের পরও ঢাকামুখী যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সার্বক্ষণিক মহাসড়কে রয়েছি।’
কর্মস্থলে ফিরতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া
ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে কর্মজীবী মানুষকে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ বাস ভাড়া। গতকাল সকাল থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোল চত্বর, কড্ডার মোড়, সয়দাবাদ ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থলে যাওয়া মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়।
এদিকে গণপরিবহন না থাকায় অনেককে দীর্ঘপথ হেঁটে এই মহাসড়কে আসতে দেখা গেছে। বাস না পাওয়ায় পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যানসহ ছোট ছোট পরিবহনে যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই ঢাকায় ফিরতে চেষ্টা করেছেন। যানবাহন সংকট থাকায় বিভিন্ন পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। এর ফলে প্রচণ্ড রোদ ও গরমের মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
আবু হানিফ নামে ঢাকাগামী এক যাত্রী বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে হাটিকুমরুল গোল চত্বরে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো যাত্রীবাহী বাস পাইনি। তা ছাড়া দু-একটি বাস এসে দাঁড়ালেও ভাড়া চাচ্ছে দ্বিগুণ, এত টাকা ভাড়া দিয়ে আমাদের মতো গরিব মানুষের যাওয়া সম্ভব নয়।’
আরেক যাত্রী হেলানা খাতুন বলেন, ‘পরিবারসহ ঢাকায় যেতে দেড় ঘণ্টা ধরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছি না। তাই ট্রাক বা পিকআপ এখন শেষ ভরসা।’
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে মহাসড়কে তেমন কোনো যানজট না থাকলেও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে কিছু কিছু পয়েন্টে ধীরগতিতে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। যানবাহনের যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশকে কাজ করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম ওয়াদুদ জানান, উত্তরাঞ্চল থেকে মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারে এ জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মহাসড়কের কোনো জায়গায় যাতে যানজট সৃষ্টি না হয়, সে জন্য তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।