![নিজের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণে প্রধানমন্ত্রীর আপত্তি](uploads/2024/07/01/Sheikh_Hasina-1719846220.jpg)
সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে শিবচরের ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি’র নাম মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে মাদারীপুরের এই প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি’।
সোমবার (১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ নিজের নামে করার বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন, ২০২৪’ অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭’-এর খসড়া এবং পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ‘পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি পিএলসি’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) আইন, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমেই বলেন যে এটি তার নামে হবে না। তিনি প্রস্তাবিত আইনটি থেকে ‘শেখ হাসিনা’ শব্দ দুটি বাদ দিতে বলেন। এরপর আইনটির খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত আইসিটি-সংক্রান্ত প্রযুক্তি, গবেষণা, প্রযুক্তি উৎপাদন, গবেষণায় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এটি হবে মাদারীপুরের শিবচরে। এই ইনস্টিটিউটের একটি গভর্নিং বর্ডি থাকবে এবং একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকবেন। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রপ্তানি বাড়ানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী পণ্যের কোয়ালিটিতে যাতে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন প্রতিবছর রপ্তানি হয় ৭০ বিলিয়ন ডলারের মতো। তিন বছর পর যাতে লক্ষ্যমাত্রা ১১০ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে যেসব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে, সেদিকে বিশেষ নজর দিয়ে রপ্তানি নীতিমালা করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বাজেট বাস্তবায়নে সচেতনভাবে, স্বচ্ছতা-দক্ষতা ও জবাবদিহির সঙ্গে কাজ করতে মন্ত্রিপরিষদকে নির্দেশনা দেন।
পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে গঠিত হবে সরকারি কোম্পানি
পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি গঠনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। নাম দেওয়া হয়েছে ‘পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি পিএলসি’। এই কোম্পানির মূলধন হবে ১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালে সেতু বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এই কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব দেয়। মেট্রোরেল পরিচালনায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) যেভাবে কাজ করছে, ‘পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি পিএলসি’ একইভাবে কাজ করবে। এটি হবে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি। এই কোম্পানি পদ্মা সেতুর টোল আদায়সহ পরিচালনার কাজ করবে।
২০২২ সালের ২৫ জুন বহুল প্রত্যাশিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এটি দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। পদ্মা সেতু এখন সরকারের সেতু বিভাগের সম্পদ। সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল থেকে যে আয় হচ্ছে, তা জমা হচ্ছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে। কোম্পানি গঠিত হলে এই সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাবে ‘পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি পিএলসি’।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী এই কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। এই বোর্ডে থাকবেন ১৪ জন। তারা জনবল কাঠামো ঠিক করবেন। বোর্ডে সেতু বিভাগ, অর্থ বিভাগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বর্তমানে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের কাজ পরিচালনা করছে। পাঁচ বছরের জন্য তাদের ৬৯৩ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সেতু বিভাগের হয়ে টোল আদায়, সেতুর দুই প্রান্তে ওজন মাপার যন্ত্র বসানো, সেতুতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও আনুষঙ্গিক মেরামতের দায়িত্ব পালন করছে। পদ্মা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কবে নাগাদ নতুন কোম্পানির অধীন যাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ওই চুক্তি শেষ হওয়ার পর এই কোম্পানি কাজ করবে।