![উপজেলার চেয়ারম্যানদের ৭৬ শতাংশ ব্যবসায়ী: সুজন](uploads/2024/07/04/sujan-1720091264.jpg)
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিজয়ীদের মধ্যে সম্পদশালী ব্যক্তিরাই প্রাধান্য বিস্তার করেছেন। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৭৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের তথ্যের বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন বিষয়ে সুজনের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সুজনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এবারের উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী ৪৭০ জন উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩৬০ জনই পেশায় ব্যবসায়ী; যা বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৭৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ৪৮ জন চেয়ারম্যান নিজেদের পেশা হিসেবে কৃষিজীবী বলে উল্লেখ করেছেন।
এ সময় দেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ করতে সুজনের পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সুজন জানায়, উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী ৪৭০ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে এসএসসি পাস করেনি ৬৭ জন। তাদের মধ্যে ১০৩ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর; যা ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ। স্নাতক পাস করেছেন ১৬৫ জন যা বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ১১ শতাংশ। ৮৩ জন চেয়ারম্যান এইচএসসি পাস এবং ৫১ জন প্রার্থী এসএসসি পাস করেছেন। এসএসসির নিচে রয়েছে ৬৭ জন। একজন শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেনি।
১১৪ বিজয়ী চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ২২৩টি মামলা রয়েছে। ৪৭০ জন বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং ১৮২ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ৭৫ জনের অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে।
পেনাল কোডের ৩০২ ধারা হলো খুনের শাস্তি। ২৫ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিজয়ী চেয়ারম্যানদের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তাদের ৭৭ শতাংশের পেশা ব্যবসা। তবে বাস্তবে এই সংখ্যাটা আরও বেশি। অনেকেই আসলে ব্যবসা করেন। তবে সমস্যা সেটা না, এখানে টাকার খেলা থাকলে সমস্যা। যদি টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনে ভোট কিনে, এই ভোটে ভোটারদের অনীহা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জন করছে। এটা একই সুতোয় গাঁথা। মূল কারণ হলো নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থাহীনতা।’
ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যা দেখানো হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে প্রশ্ন আছে? তাও সন্তোষজনক না। ৫০ শতাংশ পার হয়নি।’
একইসঙ্গে এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ইসির প্রকাশিত তথ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন সুজন সম্পাদক।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও সুজনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কৌশলগত দিক ছিল আওয়ামী লীগের। সেখানে তারা কিছুটা হলেও সাকসেসফুল। কারণ ভোটটা ওপেন করে দেওয়ায়। উপজেলায় নির্দলীয় প্রতীকে ফিরে যাওয়া উচিত হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। কারণ জনগণ এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকে। সেই জিনিসটা রাখতে পারলে ভাল। দলীয় মার্কা নিয়ে না আসাই ভাল। যে কারণে জনগণ এত সম্পৃক্ত হয়েছে। না হলে ৩৬ শতাংশ হতো না। ১৬ শতাংশ হতো।’
বিরোধীদলের স্থানীয় সরকারের ভোটে অংশ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ড. মনসুর। তার মতে, নির্দলীয়ভাবে ব্যক্তি হিসেবেও তারা নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে পারতেন।
স্থানীয় সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতায়িত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চাইলে তাদের যা খুশি করতে পারে। এটা ঠিক নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব কর্তৃত্ব সেটা হওয়ার কথা নয়। উপজেলার আর্থিক সক্ষমতা নেই। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
কেন্দ্র থেকে বিকেন্দ্রীকরণের চিন্তা করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ক্ষমতায়িত করতে হবে বলে মনে করেন ড. মনসুর।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা সুজনের সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় সংলাপ, নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা নির্ধারণের বিষয়ে দলগুলোকে ঐকমত্যে আসা; সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করা; আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন, স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার অবসান করতে আইন সংশোধন করে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো নির্দলীয়পদ্ধতিতে করার ব্যবস্থা করা।
দেশে বর্তমানে উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি। সম্প্রতি পাঁচ ধাপে ৪৬৯ উপজেলায় ভোট শেষ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। এছাড়া বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলা ভোট স্থগিত হলেও সেখানেএকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকায় ৪৭০ জন চেয়ারম্যান নিয়ে এ বিশ্লেষণ করে সুজন।
এলিস/অমিয়/