ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪

আইসিডিডিআরবি কলেরা হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০ রোগী ভর্তি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১০ এএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:২১ এএম
আইসিডিডিআরবি কলেরা হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০ রোগী ভর্তি
ছবি: খবরের কাগজ

শিশু আব্দুল্লাহ্‌র বয়স ছয় মাস দশদিন। ক্লান্ত চাহনি আর দুর্বল শরীর নিয়ে মা সুরাইয়া বেগমের কোলে জড়সড়ো হয়ে বসে আছে। সামনে রাখা লাল রঙের বাটিতে খাবার স্যালাইন। সুরাইয়া বেগমের দিশেহারা অবস্থা। টলটলে চোখ, যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে ছুটবে অশ্রুধারা। সারাক্ষণ উশখুশ করে যেন খুঁজছে কিছু, বা কাউকে।

দৃশ্যটি বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) মহাখালী আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি কলেরা হাসপাতালের। 

সুরাইয়া বেগম জানান, গত পরশু রাত থেকে বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হয় আব্দুল্লাহ্‌র। সঙ্গে রয়েছে জ্বর। এত ছোট বাচ্চার ঘন ঘন পাতলা পায়খানা আর বমি হওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। দিশা না পেয়ে সকালেই ছেলেকে নিয়ে ছুটে এসেছেন এখানে। ডাক্তার দেখার পর বারবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু শুধু স্যালাইন খাওয়ালেই ঠিক হয়ে যাবে, ব্যাপারটিতে ঠিক ভরসা পাচ্ছেন না সুরাইয়া।

রিসেপশন এরিয়ার বিপরীত দিকের একটি কক্ষে সারি দেওয়া চেয়ার-টেবিল রাখা। সেখানেই মায়েদের কোলে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরা। প্রতিটি শিশু রোগীর সামনে একটি বাটিতে রাখা আছে খাবার স্যালাইন। মায়েরা সেখান থেকে চামচে তুলে কোলের শিশুদের স্যালাইন খাওয়াচ্ছেন। 

হাসপাতালের রিসেপশন পেরিয়ে ওয়ার্ডে গেলে দেখা মেলে সত্তরোর্ধ্ব ভর্তি রোগী আক্তার নাজনীনের। নারায়ণগঞ্জের দেউলী চৌড়াপাড়ার বাসিন্দা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। গত তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছে। এই বয়সে শরীরে এত ধকল কাবু করে ফেলেছে বৃদ্ধাকে। গত দুদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি তিনি। বললেন, ‘আমি তো ভাবছি মইরাই যামু। উইঠ্যা বহার শক্তি আছিল না। এইহানে আহার পর সুই দিয়া স্যালাইন দিল হাতের মইধ্যে। আস্তে আস্তে এহন অবস্থা ঠিক অইছে। সকালে স্যালাইন খুইল্যা দিছে।’ সঙ্গে থাকা পুত্রবধূ পপি আক্তার কিছুক্ষণ পরপর বাটি থেকে চামচ ভর্তি স্যালাইন তুলে দিচ্ছেন শাশুড়ির মুখে। 

হাসপাতাল ঘুরে প্রতিটি কোণেই দেখা যায় ডায়রিয়া আর কলেরা আক্রান্ত রোগীর হাহাকার। একই সঙ্গে দেখা যায় সাদা অ্যাপ্রোন পরা ডাক্তার আর নার্সদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অক্লান্ত ছুটে চলা। এত কর্মব্যস্ততা আর ছুটোছুটির ভেতরেও সবকিছু যেন সিস্টেমেটিক। ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা হাসপাতালে কোথাও নেই একটু কটু গন্ধ, না আছে কোথাও এতটুকু ময়লার চিহ্ন। রোগীদের ভাষ্যানুযায়ী আইসিডিডিআরবির ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও সংশ্লিষ্ট সব কর্মীর ব্যবহার ও সেবা তাদের মন ছুঁয়ে গেছে। 

আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ডায়রিয়া ও কলেরার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) কলেরা হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের কাছে এক আস্থার জায়গা। এখানে সেবা নিতে আসা সিংহভাগ মানুষই অতি দরিদ্র পরিবার থেকে আসেন। আমরা রোগীদের শুধুমাত্র রোগী নয়, বরং সহমর্মিতার দৃষ্টিতে দেখি। এখান থেকে বছরে আড়াই লাখের মতো রোগী বিনা খরচে চিকিৎসা নেয়। গত ছয় দশকের বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবন, চিকিৎসা, রোগী ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধে অগণিত সাফল্য অর্জন করে চলেছে আইসিডিডিআরবি। ওরস্যালাইন আবিষ্কার, মুখে খাওয়া কলেরার টিকা আবিষ্কার, ডায়রিয়া চিকিৎসায় জিংকের ব্যবহার, শিশুদের তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসাপদ্ধতিসহ দেশের স্বাস্থ্য খাতের অর্জনে এই প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রেখে চলেছে।

হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘যেসব রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন, তাদের ৬০ শতাংশ রোগীই পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু। যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন, তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর ফ্লুইড রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হয়। সাধারণ খাবার স্যালাইনই রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য যথেষ্ট।’ 

তিনি জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারশ জন রোগীর সেবা দেওয়া হয়। তবে মে থেকে জুন এবং নভেম্বর থেকে জানুয়ারি, বছরের এই দুই সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থেকে। প্রতি বছরই এই সময়টাতে দিনে প্রায় ১২শ থেকে ১৩শ রোগীর সেবা দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এ ছাড়া গত দুই মাসে হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী মে মাসে সেবা পেয়েছেন মোট ১৮ হাজার ১৪১ এবং জুন মাসে মোট ১৮ হাজার ৬৩৪ জন রোগী। সে হিসাবে দুই মাসে দিনে ৬শ জনেরও বেশি ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এই হাসপাতাল থেকে। 

হাসপাতালের নার্সিং অফিসার ক্যাথরিন কস্তা বলেন, ‘আগের দিন রাতের হিসাব অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২১২। এদের মধ্যে অনেকেই যাদের অবস্থা আজ শঙ্কামুক্ত, তাদের ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগীকেই আমরা শুধু খাবার স্যালাইন খেতে বলি। বেশির ভাগ রোগীই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যেতে পারেন। যাদের অবস্থা একটু বেশি খারাপ, তাদেরকেই শুধু ভর্তি রাখা হয়। এসব রোগীও সর্বোচ্চ তিন দিনের ভেতর সুস্থ হয়ে যায়। তিন দিনের বেশি ভর্তি রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।’ 

ডা. বাহারুল আলম জানান, এখানে শুধু ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসাই হয় না, গবেষণাও হয়। আমাদের সেবা এখন শুধুমাত্র দেশের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে গেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহে, এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ ফলাফল কাজে লাগিয়ে আর্তমানবতার সেবার জন্য গৃহীত নানা কার্যক্রম ক্রমাগত সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুরোধে হাইতি, ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়াসহ পৃথিবীর যে দেশেই কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, সেখানেই আইসিডিডিআরবির চিকিৎসক ও গবেষকরা ছুটে গিয়েছেন এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের কার্যকরভাবে কলেরা চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী ৪ দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন আজ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৪ এএম
প্রধানমন্ত্রী ৪ দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন আজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন সোমবার (৮ জুলাই)।

এই সফর উপলক্ষে রবিবার (৭ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। 

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে ২০টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এ ছাড়া কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা আসতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী বুধবার (১০ জুলাই) বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হবে। সেখানে তাদের সঙ্গে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলও থাকবে। এরপর দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হবে।

পররাস্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘একই দিন অর্থাৎ বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চী‌নের প্রেসি‌ডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এ ছাড়া সরকারপ্রধান বেইজিং সফ‌রের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ চীনা ভাষায় অনূদিত বইটির মোড়ক উন্মোচন কর‌বেন।’’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ৬ষ্ঠ ও ৯ম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পিপল টু পিপল সংযোগ প্রভৃতি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।’ 

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তা বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের যৌথ নদী। তিস্তা নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ভারত একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তারা একটি কারিগরি দল পাঠাবে বলে আমাদের জানিয়েছে। বাংলাদেশে এসে ওই কারিগরি দল যৌথভাবে সমীক্ষা করে, কী করা উচিত, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেবে। তিস্তা যাদের সঙ্গে যৌথ নদী, সেই ভারতের প্রস্তাব আমাদের বিবেচনা করতে হবে। চীনও এ ক্ষেত্রে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি ভালো। সফরের সময়, চীন যদি বিষয়টি আলোচনায় আনে, তাহলে আলোচনা হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সোমবার সকাল ১১টায় ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা ৬টায় বেইজিংয়ে অবতরণ করবেন। ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বৈঠক করবেন। আগামী ১১ জুলাই দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। 

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে সহায়তা চাওয়া হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবগুলো সমঝোতা স্মারক হবে। চুক্তি নয়। চীন অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করছে।’ 

বাজেট সহায়তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নানা দেশ নানা প্রস্তাব দেয়। প্রয়োজনের নিরিখে, শর্ত পূরণ হলে সেসব সহায়তা বাংলাদেশ নেয়। চীনের সব প্রস্তাব আমরা নিই না। অফিশিয়াল কোনো প্রস্তাব বাংলাদেশ দেয়নি।’ 

মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন নিয়ে আলোচনা হবে জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এবারও গুরুত্বের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর উন্নয়ন নিয়ে কথা হবে। অতীতের সব চুক্তি নিয়েও আলোচনা হবে।’ 

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার তুলে নিতে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হবে।

বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:২০ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:২০ এএম
বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জীশান মীর্জা। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

রবিবার (৭ জুলাই) সাংবাদিকদের তিনি জানান, অনুসন্ধান শেষ হলে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এরপর মামলা হবে কী না, তা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট নেওয়ার ঘটনায় আরেকটি অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি হয়েছে। সম্পদবিবরণী দিতে তাদের ২১ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে গত ২১ এপ্রিল অনুসন্ধান শুরু হয়। বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে এখন পর্যন্ত ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাট, দেশের বিভিন্ন জেলায় ৬৯৭ বিঘা জমি, একাধিক মৎস্য ও গরুর খামার, রিসোর্ট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, বিও অ্যাকাউন্টসহ ৩৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সিটিজেন টেলিভিশনসহ ৫টি পূর্ণ মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৮টি ব্যবসায়িক শেয়ার পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে এসব অর্থ-সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে। 

অবৈধ সম্পদের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে বেনজীর আহমেদ গত ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন। তিনি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত র‍্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন।

 

রাজধানীতে সহপাঠীর হাতে শিক্ষার্থী খুন, গ্রেপ্তার ১

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:৫২ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:৫২ এএম
রাজধানীতে সহপাঠীর হাতে শিক্ষার্থী খুন, গ্রেপ্তার ১
মিরপুর কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির (বিজ্ঞান বিভাগ) শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান রাফিত। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান রাফিত (১৮) হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চৌধুরী রাজিন ইকবালকে (১৮) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

রবিবার (৭ জুলাই) রাতে হবিগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে রাজিন ও তার বাবা ইকবাল হোসাইনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত রাফিতের বাবা আবুল বাশার। রাত সাড়ে ১০টার দিকে র‍্যাবের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

গত শনিবার বিকেলে সহপাঠী রাফিতকে কোচিং শেষে বাসায় ডেকে নিয়ে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বাসার সামনে ফেলে রাখেন রাজন। এ ঘটনা জানাজানি হলে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।

আরাকান আর্মির বোমায় টেকনাফে রোহিঙ্গা নিহত

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৫ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:২০ এএম
আরাকান আর্মির বোমায় টেকনাফে রোহিঙ্গা নিহত
বোমার আঘাতে নিহত মোহাম্মদ জুবায়ের। ছবি: খবরের কাগজ

কক্সবাজারের টেকনাফের জালিয়ার দ্বীপ পয়েন্টের নাফ নদীতে মাছ শিকারের সময় মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিক্ষেপ করা বোমার আঘাতে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তার নাম মোহাম্মদ জুবায়ের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২ রোহিঙ্গা জেলে।

রবিবার (৭ জুলাই) রাত ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওসমান গনি।

নিহত জুবায়ের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া ক্যাম্পের হামিদ হোসেনের ছেলে। আহতরা হলেন, লেদা-২৪ নম্বর ক্যাম্পের কামাল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ জাবের ও ২৭ নম্বর ক্যাম্পের মোহাম্মদ শুক্কুর। পেশায় তারা তিনজনই কাঁকড়া শিকারি। 

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওসমান গনি জানান, বিকেলে নাফ নদীর জালিয়ার দ্বীপের আশেপাশে কাঁকড়া শিকার করছিলেন তিনজন। এ সময় মায়ানমারের দিক থেকে ছোড়া বোমার আঘাতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান মোহাম্মদ জুবায়ের। আহত দুজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মুহিববুল্লাহ মুহিব/এমএ/

কোটাবিরোধী আন্দোলন এবার একদফা দাবিতে দেশজুড়ে ব্লকেড কর্মসূচি

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:১৫ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০৮ এএম
এবার একদফা দাবিতে দেশজুড়ে ব্লকেড কর্মসূচি
ছবি: খবরের কাগজ

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে টানা লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে। এবার লাগাতার আন্দোলনের সপ্তম দিনে এসে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দেশ জুড়ে পালন শেষে এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। দাবিটি হলো- সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে সংস্কার করতে হবে। ঘোষিত এই দাবিতে দেশজুড়ে ব্লকেড কর্মসূচি এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীদের দুই সমন্বয়ক।

রবিবার (৭ জুলাই) রাত ৮টায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলন’ এর প্রধান মুখপাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম এবং আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এ ঘোষণা দেন। 

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এতোদিন ধরে আমাদের চার দফা দাবি ছিল। কিন্তু সোমবার থেকে সারাদেশে এক দফা দাবিতে কার্যক্রম চলবে। আমাদের দাবিটি হচ্ছে— সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাকে সংস্কার করতে হবে।

এদিকে শাহবাগে অবরোধ চলাকালীন এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সরকারের একটি অংশের সঙ্গে আলোচনা হয়। পরে রাত পৌনে ৮টায় শাহবাগে আন্দোলনকরীদের অস্থায়ী মঞ্চে ফিরে আসেন। ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন আমরা বলেছি আমরা রাজপথ থেকে এই ফয়সালার স্পষ্ট জানতে চাই। কোন আলাপ, সংলাপ, গোলটেবিল হবে না ৷ আমাদেরকে বলা হচ্ছে এটি সাব জুডিশিয়ারি ম্যাটার, একটি আদালতের বিষয়। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা নির্বাহী বিভাগ এবং সরকারের কাছে জানতে চেয়েছি কেন ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করা হলো। সরকারের কাছে এখনো সুযোগ রয়েছে, নতুন একটি পরিপত্র ঘোষণা করার।

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের আংশিক সমাধান হয়েছিল, দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক সমাধান আমরা পাইনি। এবার যখন আমরা রাস্তায় নেমেছি, আমরা এখন সকল গ্রেডের কোটা সংস্কার নিয়ে ঘরে ফিরতে চাই।

পরবর্তী কর্মসূচির প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, আমাদের আন্দেলন নগর থেকে নগরে, মহানগর থেকে মহানগরে সাড়া ফেলেছে। কাল থেকে এই আন্দোলন আরও অধিক বেশি ছড়িয়ে পড়বে। ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আমাদের যে ছাত্র ধর্মঘট চলছে, সেটি অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের যে ব্লকেড কর্মসূচি সেটি আরও বৃদ্ধি করে দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে এর কার্যক্রম চলবে। আজকে আমরা শাহবাগ থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত গিয়েছি, আগামীকাল আমরা ফার্মগেট পার হয়ে যাব। সোমবার সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সবাই জমায়েত হয়ে আমরা আবার আমাদের ব্লকেড কর্মসূচি পালন করব। তারা ভেবেছিল আমরা ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাব কিন্তু সেটিকে আমরা ভুল প্রমাণিত করব। দাবি না আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা পড়ার টেবিলে ফিরব না। আমরা ’৫২, ’৬৬, ’৭১, ’১৮ সালে হারিনি এবং ’২৪ সালেও হারব না।’

পরে রাত ৮টা ৫ মিনিটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে শাহবাগে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিকেল সোয়া তিনটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজু ভাস্কর্য-চারুকলা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। 

এদিকে শাহবাগ অবরোধের দশ মিনিট যেতে না যেতে ৪টা ৫ মিনিটে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় দখল করেন। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকা উড়াতে থাকেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

অন্যদিকে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে রাখে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং সায়েন্সল্যাব অবরোধ করে রাখে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়াও রাজধানীর চাঁনখারপুল, মহাখালী-মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। পরে রাত আটটার পূর্ব মূহুর্তে বিভিন্ন সময়ে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার, ও শনিবার (৬ জুলাই) একই দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। ঘণ্টা খানেক অবরোধ শেষে শাহবাগ ত্যাগ করেন আন্দোলনকারীরা। গত শনিবার দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ মিছিল এবং আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শাহবাগ অবরোধ শেষে রবিবার থেকে সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ব্লকেড করার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা এর নাম দেয় ‘বাংলা ব্লকেড।’

আরিফ জাওয়াদ/এমএ/