চট্টগ্রাম শহরে যানজট নিরসন ও মানুষের ভোগান্তি দূর করতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো হবে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের নতুন কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।
সোমবার (৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় মিট দ্য প্রেসে এ কথা বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) নতুন কমিশনারের সঙ্গে সাংবাদিকদের মতবিনিময় উপলক্ষে দামপাড়া পুলিশ লাইনসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যাণ্ড অপারশেনস) আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্ন ও পরামর্শের আলোকে সিএমপি কমিশনার বলেন, এই শহরকে মডেল হিসেবে গড়তে চাই। এই শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। নগরীতে সড়কের মাঝখানে যে ডিভাইডারগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো যদি যানজটের কারণ হয় তাহলে সে ব্যবস্থা নেব। এগুলো পরিকল্পিতভাবে দেওয়ার কথাও আমরা ভেবে দেখব। যেহেতু ট্রাফিক বিভাগে সবচাইতে সমস্যা বেশি সেহেতু সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ট্রাফিকে কাজ করব আমি।
তিনি আরও বলেন, অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিংকে ঢেলে সাজানো হবে। বিশেষ করে কমিটিগুলোকে সাজাব। সেখানে কোনো কিশোর গ্যাংয়ের প্রশ্রয়দাতা-গডফাদাররা ঢুকে যাচ্ছে কিনা সেটি দেখব। বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হবে। ওপেন হাউজ ডেতে বিশাল আয়োজন করে খাবারের অর্থায়নের জন্য বিট পুলিশিংয়ের কমিটিতে কাউকে নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। সিঙ্গারা খাওয়ানোর টাকা পুলিশের কাছে আছে। এত বিশাল আয়োজন দরকার নেই। আর আমি ওপেন হাউজ ডে থানায় করতে দেব না। এটি করতে হবে ওয়ার্ডে। কেননা, মানুষ থানায় এসে কেন তার অভিযোগ জানাবে? পুলিশ যাবে তার কাছে।
সিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘অপরাধীর পরিচয় যেই হোক না কেন; আমার কাছে তার পরিচয় শুধুই অপরাধীই। তাকে আমি অপরাধী হিসেবে চিনব। খুনের আত্মা আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। বলে যে আমি খুন হয়েছি। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে দাও। যতক্ষণ না আসামি ধরা পড়ছে বা আমি তাদেরকে ধরতে পারছি ততক্ষণ আমার শান্তি হয় না।’
তিনি আরও বলেন, নগরীতে চুরি-ছিনতাইয়ের শত শত ঘটনা। জিডি হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কিছু হচ্ছে না। আমি আসার পর ওসিদের বলেছি জিডিগুলো নিয়ে ভাল করে কাজ করতে। কেন হারানো মোবাইল পাওয়া যায়নি? যেই অফিসার তদন্ত করেছে তিনি কি করছেন? উদ্ধার না হয়ে থাকলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? কি রিপোর্ট দিয়েছেন? আমি জানতে চেয়েছি। এরপর থেকে ফিডব্যাক আসতে শুরু করেছে। ইনশাআল্লাহ আমি এগুলো নিয়ে আরও ভালো করে কাজ করতে পারব। আমি চাই মামলা বাড়ুক। কেননা অপরাধের ঘটনা ঘটলে মামলা হলে ডকুমেন্টস তৈরি হয়। প্রতিমাসে আমি জিজ্ঞেস করতে পারব সেই মামলার কি অগ্রগতি হলো।
সিএমপিকে মানবিক পুলিশ ইউনিটে রূপান্তর করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে সিএমপি কমিশনার আরও বলেন, আমি চাই সিএমপির দরজা সবার জন্য খোলা থাকুক। প্রয়োজনে কোনো গেট রাখব না। কোনো ধরাবাধা থাকবে না। সবাই আসতে পারবে। মানুষ অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের অবশ্যই থানার ওসিরা সহযোগিতা করবে। আপনাদের ফোনও ধরবেন উনারা। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব। কোনো তথ্য না পেলে আমার সঙ্গে কথা বলবেন সরাসরি। আমাকে জানাবেন। আমি সেই তথ্য পৌঁছে দিব। প্রতি তিন মাস অন্তর আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে বসব। আমি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফুটপাত দখল করে দোকান, ভ্যান, অবৈধ স্থাপনা থেকে পুলিশ টাকা নেয়। এ অভিযোগের আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আর সন্ত্রাসীদের তালিকা করে প্রকাশ হবে। কেননা অপরাধী আমার আত্মীয় নয়। আমি পুরো শহরে অপরাধ দমনে ভিন্নভাবে কাজ করব। আমি কোথায় যাব সেটি আমার বডিগার্ডও জানবে না। আমি এই শহরে আগে একটি বিভাগের ডিসি ছিলাম। কাজেই শহরটা চেনা-জানা। থানাগুলো চিনি।
সিএমপি কমিশনার আরও বলেন, যতদিন আছি মানুষের সেবা করার চেষ্টা করব। আমি তেলে মাথায় তেল দিতে যাব না কিন্তু সেই অসহায় মানুষটার মাথায় অবশ্যই তেল দেব, যাকে একটু তেল দেওয়া আসলেই দরকার। আমি সবার সহযোগিতা চাই।
মনির/অমিয়/