কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলে স্লোগানে স্লোগানে যে প্রতিবাদ হয়, তার বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।
তারা বলছেন, ‘রাজাকার স্লোগান যারা দিয়েছে, প্রমাণ করছে তারা এ যুগের সাচ্চা রাজাকার। এটি সরকারবিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান।’ সেই সঙ্গে ‘এ যুগের রাজাকারদের’ পরিণতি ‘ওই যুগের রাজাকারদের মতোই হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তাদের কেউ কেউ।
সোমবার (১৫ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান। এটি সরকারবিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান।’
কোটা আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের স্লোগান নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ড. দীপু মনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহিদের রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে মিছিল করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল লিখেছেন, ‘যাদের মুখ থেকে বের হয়, আমি রাজাকার- তারা প্রমাণ করছে তারা এ যুগের সাচ্চা রাজাকার! এরা আদালত মানে না, সরকারও মানে না। সুতরাং এই রাষ্ট্রদ্রোহীদের পক্ষে এই রাষ্ট্রকে মানা সম্ভব না! সঠিক স্লোগানই ধরেছে তারা! বের হয়ে আসুক এ যুগের রাজাকারদের আসল চেহারা! এ যুগের রাজাকারদের পরিণতি ওই যুগের রাজাকারদের মতোই হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে আর যা-ই হোক, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোনো দাবি আদায় হবে না।’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক লিখেছেন, ‘যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ ছাত্র-শিক্ষকদের গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?’
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো রাজাকারদের দখলে থাকতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে, ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। দাবি আদায়ে রাজাকার স্লোগানে তাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) অপমান যারা করছে, তারা নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে। এমনভাবে স্লোগান দিচ্ছে যেন আমরা জানতাম না ওরা রাজাকারের নাতি-নাতনি।’
গত রবিবার বিকেলে চীন সফরের বিষয় তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।’
এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে থালাবাটি বাজিয়ে সমস্বরে ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর একে একে রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘মেধা না কোটা/মেধা মেধা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
কাছাকাছি সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন। এগুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা চালানোর খবর আসে।