ঢাকা ৯ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪

রাজাকার স্লোগানের প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রীরা ওই যুগের রাজাকারদের মতোই হবে এদের পরিণতি

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
ওই যুগের রাজাকারদের মতোই হবে এদের পরিণতি
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলে স্লোগানে স্লোগানে যে প্রতিবাদ হয়, তার বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।

তারা বলছেন, ‘রাজাকার স্লোগান যারা দিয়েছে, প্রমাণ করছে তারা এ যুগের সাচ্চা রাজাকার। এটি সরকারবিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান।’ সেই সঙ্গে ‘এ যুগের রাজাকারদের’ পরিণতি ‘ওই যুগের রাজাকারদের মতোই হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তাদের কেউ কেউ।

সোমবার (১৫ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান। এটি সরকারবিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান।’

কোটা আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের স্লোগান নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ড. দীপু মনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহিদের রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে মিছিল করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল লিখেছেন, ‘যাদের মুখ থেকে বের হয়, আমি রাজাকার- তারা প্রমাণ করছে তারা এ যুগের সাচ্চা রাজাকার! এরা আদালত মানে না, সরকারও মানে না। সুতরাং এই রাষ্ট্রদ্রোহীদের পক্ষে এই রাষ্ট্রকে মানা সম্ভব না! সঠিক স্লোগানই ধরেছে তারা! বের হয়ে আসুক এ যুগের রাজাকারদের আসল চেহারা! এ যুগের রাজাকারদের পরিণতি ওই যুগের রাজাকারদের মতোই হবে।’

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে আর যা-ই হোক, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোনো দাবি আদায় হবে না।’

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক লিখেছেন, ‘যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ ছাত্র-শিক্ষকদের গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?’

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো রাজাকারদের দখলে থাকতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে, ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। দাবি আদায়ে রাজাকার স্লোগানে তাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) অপমান যারা করছে, তারা নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে। এমনভাবে স্লোগান দিচ্ছে যেন আমরা জানতাম না ওরা রাজাকারের নাতি-নাতনি।’

গত রবিবার বিকেলে চীন সফরের বিষয় তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।’ 

এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে থালাবাটি বাজিয়ে সমস্বরে ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর একে একে রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘মেধা না কোটা/মেধা মেধা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

কাছাকাছি সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন। এগুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা চালানোর খবর আসে। 

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৭ দাবি

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৭ দাবি
ছবি: সংগৃহীত

পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাত দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার আহ্বান জানান সংগঠনটির সদস্যরা।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী এসব দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, মানবাধিকার কর্মী মেইন থিন প্রমীলা, দীপায়ন খীসা। 

সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। দাবিগুলো হলো-পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক তত্ত্বাবধান বন্ধ করা, আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের ক্ষমতায়ন, ভূমি অধিকার এবং পুনর্বাসন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়ন, সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠা। 

খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘২৬ বছর ধরে পার্বত্য শান্তি চুক্তির মূল উপাদানগুলো অনেকাংশে অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ এবং সারা দেশের নাগরিকদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বাংলাদেশের সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখা এবং একই সঙ্গে দেশের জাতীয় ঐক্যের জন্য অপরিহার্য।’

খায়রুল ইসলাম চৌধুরী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সক্রিয় করা, আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে সংলাপ, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের পুর্নগঠন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। 

মেইন থিন প্রমীলা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমির সমস্যার সঙ্গে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ভূমি সমস্যাটা আরও বেশি প্রকট। বরগুনা, পটুয়াখালী অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ভূমি এখনো দখল করা হচ্ছে। তাদের শ্মশান, মন্দির দখল করা হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে তাদের এ নিপীড়নের কথা বলতে হবে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য মুর্শিদা আক্তার ডেইজী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, ঢাকাস্থ জুম্ম নাগরিক সমাজের নেতা ডা. অজয় প্রকাশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলী খান পান্নার মৃত্যু নিয়ে রহস্য

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলী খান পান্নার মৃত্যু নিয়ে রহস্য
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে।

পান্নার ঘনিষ্ট একজন নেতা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, গত শুক্রবার মধ্যরাতে সিলেটের সীমান্ত ভারতের মেঘালয়ের শিলং পাহাড়ে উঠার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পান্না মৃত্যুবরণ করেন। ওই নেতা বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবলীগের রাজনীতি করছেন।

পান্নার মৃত্যুর খবর জানিয়ে শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকাল থেকেই ফেসবুকে শোক জানিয়ে তার বন্ধু-বান্ধব, রাজনৈতিক কর্মীরা পোস্ট করছেন।

তবে পান্নার মৃত্যু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্যও পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে তার লাশের এক পাশে রক্তের স্তূপ দেখা যায়। এ ছাড়া তার পায়ে রক্তের দাগ দেখা গেছে। তবে শরীরের দৃশমান অংশে (বুক, মুখ ও হাত-পায়ে) গুলি বা আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।

পান্নার রাজনৈতিক ঘনিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থানকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। সে সময় তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা ও ছাত্রলীগের আরেক নেতা ছিলেন। তবে কবে, কখন কীভাবে তারা শিলং পৌঁছালেন এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

ইসহাক আলী খান পান্না ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ওই সময় ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। পেশাগতভাবে ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন পান্না। ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক এবং পরে বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

সালমান-আনিসুল-দীপু মনি ও জিয়াউল আবারও রিমান্ডে

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৮ পিএম
আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৯ পিএম
সালমান-আনিসুল-দীপু মনি ও জিয়াউল আবারও রিমান্ডে
ছবি: সংগৃহীত

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের পৃথক দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিন, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির এক মামলায় ৪ দিন ও সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজের এক মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার (২৪ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিমের আদালত তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ডে চেয়ে এই আবেদন করা হয়।

এর মধ্যে রাজধানীর আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। শনিবার তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর আক্কাস মিয়া ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তাদের উপস্থিতিতে শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর নিউ মার্কেট থানার এক হত্যা মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর ১৫ আগস্ট গভীর রাতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। 

ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই লালবাগের আজিমপুর সরকারি আবাসিক এলাকায় আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় তার বাবা কামরুল হাসান ১৯ আগস্ট লালবাগ থানায় এই হত্যা মামলা করেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে মো. সুমন শিকদারকে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর বাড্ডা থানার মামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। গতকাল বাড্ডা থানার পুলিশ এ রিমান্ড আবেদন করে। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ২০ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মিছিলে নির্বিচারে গুলিবর্ষণে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় দীপু মনির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সোহাগ মিয়া নামে এক কিশোর হত্যার অভিযোগে রাজধানীর ভাটারা থানার মামলায় জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও টানা আটবারের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিল পুলিশ। শুনানি নিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

আরও ৪ জেলায় মামলা, মন্ত্রী-এমপিসহ আসামি ১৫০০

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম
আরও ৪ জেলায় মামলা, মন্ত্রী-এমপিসহ আসামি ১৫০০

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি ও হামলায় হতাহত এবং আগের বিভিন্ন হামলার অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার (২৪ আগস্ট) চার জেলায় সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক একজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী, তিনজন সাবেক সংসদ সদস্য ও দুজন সাবেক মেয়রসহ ১ হাজার ৫৫০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আসামি ১ হাজার ১০০ জন। আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

রাজশাহীতে সাবেক এমপি ও মেয়রের নামে মামলা

পাঁচ বছর আগে রাজশাহীর পবা উপজেলায় মারধর, লুটপাট-ভাঙচুর ও ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ৯ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ২০০-২৫০ জন। গত শুক্রবার আরএমপির কর্ণহার থানায় তালুক ধর্মপুর গ্রামের সাবের আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম সবুজের (২৫) মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারে ৪২ জনের নাম উল্লেখ আছে।

গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন নিহতের বাবা মাইনুল হক (৬০)। এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট নগরীর শাহ মখদুম কলেজ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাকিব আনজুম সবুজ। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক গণপূর্তমন্ত্রীর নামে হত্যা মামলা

সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৬ নেতা-কর্মীর নামে হত্যা মামলা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ জেলা শহরে সংঘর্ষের সময় মাদ্রাসাছাত্র হুইসাইন আহম্মেদ নিহতের ঘটনায় এ মামলা করেন নিহতের বড় বোন তানিয়া আক্তার। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলাটি করা হয়।

মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন এবং সাবেক মন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরীর দুই ব্যক্তিগত সহকারী আবু মুছা আনছারী ও এম এ এইচ মাহবুব আলমসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।

খুলনায় হাসিনার চাচাতো চার ভাইয়ের নামে মামলা

খুলনায় বিএনপির অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো চার ভাইয়ের নামে দুটি মামলা হয়েছে। তারা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বাবু।

গত শুক্রবার রাতে খালিশপুর থানায় মামলা দুটি করেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শেখ দবির ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মো. ইকরাম মিন্টু। 

এসব মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন, সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু, জেড এ মাহমুদ ডনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২১৫ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট ও ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর স্থানীয় বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন আসামিরা।

বরিশালে আ.লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা

ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে বরিশালে আরও দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের ৪৬৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। 

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত শুক্রবার রাতে মহানগর বিএনপির নেত্রী রুমা আক্তার বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের ২৩ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই নগরীর তন্ময় কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে স্লোগান দিলে অস্ত্রে সজ্জিত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়।  

একই দিন রাতে অন্য মামলাটি করেন মহানগর বিএনপির সদস্য রফিকুল ইসলাম রিপন। মামলায় মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্না, বিসিসির কাউন্সিলর শেখ সাইদ আহম্মেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, সদ্য সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনসহ ৯৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি নেতা এই মামলায় গত ১৯ জুলাই বিএডিসি অফিসের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন।

সাকিবকে জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে দেশে ফেরাতে আইনি নোটিশ

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
সাকিবকে জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে দেশে ফেরাতে আইনি নোটিশ
সাকিব আল হাসান

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে ক্রিকিটের জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়ার জন্য একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিও করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ঘটা এক ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলায় নাম আসায় এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্টসহ পাঁচজনের বরাবর এই নোটিশ পাঠানো হয়।

ওই মামলার তদন্তের স্বার্থের কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সজীব মাহমুদ আলম এই নোটিশ পাঠান। গতকাল শনিবার ই-মেইল এবং রেজিস্টার্ড ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠানো হয় বলে খবরের কাগজকে জানান তিনি। আরেক আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিনুর রহমানের পক্ষে তিনি এই নোটিশ পাঠান বলেও জানান আইনজীবী।

সজীব মাহমুদ আলম বলেন, ‘পুলিশ কোনো অভিযোগ গ্রহণ করলে বা কোনো ক্রিকেটারের নামে যখন কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আসবে, আইসিসি ও বিসিবির দুর্নীতিবিরোধী কোডে বলা আছে, তখন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বোর্ড বিবেচনা করে তাকে সাময়িকভাবে অপসারণ করতে পারে। যেহেতু সাকিবের বিষয়টি তদন্তাধীন, তাকে খেলা থেকে বাদ দিলেই হবে না, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তদন্তের প্রয়োজনে তার কাছে প্রশ্ন থাকতে পারে। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী যা করা যায়, সে দাবি জানাচ্ছি।’

বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে আইনজীবী বলেন, সাকিব আল হাসানের নামে এর আগেও অনেক রকমের অভিযোগ ছিল। এখন তার নামে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী সাম্প্রতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর আদাবরে গত ৫ আগস্ট পোশাক কারখানার কর্মী মো. রুবেল গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে ৭ আগস্ট মারা যান। ওই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়। নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম এই মামলা করেন। মামলায় সাকিবকে আসামি করা হয়। মামলায় অন্যদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়।