ঢাকা ১০ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ২৫ আগস্ট ২০২৪

ঢাবি শিক্ষার্থীদের বৈধ পরিচয়পত্র রাখাসহ ৫ নির্দেশনা

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৪ পিএম
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:১২ পিএম
ঢাবি শিক্ষার্থীদের বৈধ পরিচয়পত্র রাখাসহ ৫ নির্দেশনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং শিক্ষার্থীদের বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখাসহ পাঁচ নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল কমিটির এক জরুরি সভায় শিক্ষার্থীদের এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনাগুলো হলো- আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শিক্ষার্থীদের বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ, ক্যাম্পাসে সন্দেহজনক কাউকে চিহ্নিত করা গেলে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা, শিক্ষার্থীদের সমাবেশে কোনো ধরনের অস্ত্রশস্ত্র (লাঠিসোটা, ইট, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি) বহন নিষিদ্ধ, সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকা এবং কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যেকোনো ধরনের গুজব ছড়ানো এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকা।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টরিয়াল কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরিফ জাওয়াদ/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

বানভাসি অর্ধকোটি, দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৬ এএম
আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৩ এএম
বানভাসি অর্ধকোটি, দুর্ভোগ চরমে
ছবি: খবরের কাগজ

বন্যাকবলিত অধিকাংশ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে উন্নতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। তবে ফেনীর দুই উপজেলা এবং কুমিল্লায় শতাধিক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ১১ জেলায় বানভাসির সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটি। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় প্রকট হয়ে উঠেছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট। জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব কামরুল হাসান শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ পর্যন্ত বন্যায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫, কুমিল্লায় ৪, নোয়াখালীতে ৩, কক্সবাজারে ৩, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীতে একজন করে মারা গেছেন। 

তিনি আরও বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় নগদ ৩ কোটি ৫২ লাখ, শিশুখাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ, গো-খাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার ১৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বর্ষণ হতে পারে তিন বিভাগে

সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তিন বিভাগে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বর্ষণের সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলসহ উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।

শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

অপরদিকে নিয়মিত পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। 

বন্যাকবলিত এলাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। শনিবার বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা এবং পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে। এ কারণে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিচু এলাকায় বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি শুক্রবার থেকে উন্নতি শুরু হয়েছে এবং অব্যাহত আছে।

ফেনীর দুই উপজেলা নতুন করে প্লাবিত

বন্যার পানি জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়ার পর ফেনী সদরেও ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে। তবে দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে পানি বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৫০ হাজার মানুষকে বন্যাদুর্গত অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জেলা প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষের কাছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর আগে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অভিষেক দাশ জানান, উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন।

এ জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল রয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ দুই-তৃতীয়াংশ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ অনেক বেড়ে গেছে।

কুমিল্লায় প্লাবিত শতাধিক গ্রাম 

কুমিল্লার বুড়িচং অংশে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙার পর এবার বাঁধ ভেঙেছে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া অংশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সালদা নদীর। বুড়িচং অংশে গোমতীর বাঁধ ভেঙেছে উত্তর পাড়ে। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রাম। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। নেই বিদ্যুৎ। শুকনো খাবার খেয়ে কোনো রকমে দিনযাপন করছে লক্ষাধিক মানুষ। সংকট দেখা দিয়েছে শিশুখাদ্য এবং ওষুধের। পর্যাপ্ত নৌকা ও স্পিডবোট না থাকায় বন্যার্তদের উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, ইতোমধ্যে জেলার ১৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
 
চট্টগ্রামে বাড়িঘরে ফিরছেন পুরুষরা 

হালদার পানি কমতে থাকায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমছে মিরসরাই, জোরারগঞ্জেও। ঘরে ফিরছেন পুরুষরা। বসবাসের উপযোগী না হওয়ায় নারী ও শিশু-কিশোররা নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন। 

এ ছাড়া চট্টগ্রামের ইছামতী, সাঙ্গু, কর্ণফুলী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে আরও বাড়ছে ফেনী নদীর পানি। 

মিরসরাইয়ের করেরহাটে উজানের দিকে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যার্তরা। খাবারের জন্য হন্যে হয়ে ছুটছেন তারা। ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মীরা অনেক জায়গায় যেতে পারছেন না। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চট্টগ্রামে এখনো ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৫০ কিমি দীর্ঘ যানজট

এখনো বন্যার পানির নিচে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অঞ্চল। এ কারণে তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম ও ঢাকার উভয় দিক থেকে যানবাহন চলাচল আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফেনীর লালপোল এলাকায় মহাসড়কের প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ এখনো পানির নিচে। এ কারণে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই প্রান্তে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। 

চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়নি। এ কারণে অনেক এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এ জেলায় প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি। নলকূপ ও সুপেয় পানির অন্যান্য উৎস তলিয়ে গেছে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, রাউজানসহ বন্যাকবলিত উপজেলায়। তাই বানভাসি মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করছে।

তবে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওরাল স্যালাইনের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
 
লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা এখনো প্লাবিত

অল্প কিছু পানি সরেছে শনিবার। তবে পানিবন্দি হয়ে জেলার সাড়ে ছয় লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অনেক এলাকা, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট এখনো তলিয়ে আছে। সেই সঙ্গে ডুবেছে নলকূপ, পানির ট্যাংকও। তাই খাবারের পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকট চলছে। অব্যাহত ভারী বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর জোয়ারের ঢলে লক্ষ্মীপুর জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে।

বানভাসি মানুষ জানিয়েছে, এমন দুর্বিষহ অবস্থা ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও হয়নি।

কক্সবাজারে শিশুর লাশ উদ্ধার

কক্সবাজারের রামু থেকে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া শিশু জুনাইদ আল হাবিবের (১১) লাশ শনিবার দুপুরে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জুনাইদ রামু উপজেলার লম্বরিপাড়ার নুরুল কবিরের ছেলে।

আখাউড়ায় ঘরে ফিরতে পারছেন না অনেকে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ ফুট পানি কমেছে। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপশ কুমার চক্রবর্তী জানান, বন্যাকবলিত ১২৪টি পরিবার উপজেলার ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিল। এর মধ্যে ৮৮টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে বাড়ি ফিরে গেছে। যেভাবে পানি কমতে শুরু করেছে, আশা করা যায়, বাকি পরিবারগুলোও দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবে।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শনিবারও বন্ধ ছিল।

নোয়াখালীর লক্ষাধিক মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে

গত দুই দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো ৫০২টি আশ্রয়কেন্দ্রে লক্ষাধিক মানুষ রয়েছেন। 

এদিকে নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন উপজেলা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ লাখ মানুষ। ৫০২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠে লক্ষাধিক মানুষ। এসব কেন্দ্রে রান্নার ব্যবস্থা নেই। তাই খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন বন্যার্তরা। কোম্পানীগঞ্জের প্রায় সবাই এখনো পানিবন্দি। 

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নোয়াখালীর আট উপজেলা প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে ২০ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ। জেলার ৮২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে দেড় লাখের বেশি মানুষ। এ ছাড়া বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে পানিবন্দি হয়ে নিজের বসতবাড়িতে আছেন। আমরা সবার মধ্যে সরকারি সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।’ 

অন্তঃসত্ত্বা নারীকে উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

নোয়াখালীতে বন্যার পানিতে আটকা পড়া গুরুতর অসুস্থ এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে উদ্ধার করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সোনাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে মুক্তা বেগম (২৩) নামের ওই নারীকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাঙামাটিতে বন্যার উন্নতি 

দুর্গত এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করায় রাঙামাটির বাঘাইছড়ির বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে এখনো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানিয়েছেন, নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে। 

খাগড়াছড়িতে স্বস্তি ফিরছে জনমনে

জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত না থাকায় নেমে গেছে বন্যার পানি। স্বস্তি ফিরছে জনজীবনে। সকাল থেকে বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষজন। জীবনযাত্রাও স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়ি উপজেলায় বরাদ্দের অনুপাতে সামান্য কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হলেও জেলার অন্যান্য উপজেলাতে প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা নেই। তবে ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ পেয়েছেন কিছু কিছু এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা। সেনাবাহিনীকেও ত্রাণ নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে।

জেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে।
 
মৌলভীবাজারে উন্নতি হচ্ছে বন্যার 

গত ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজারে ভারী বর্ষণ ও উজানে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় কমেছে এখানকার নদ-নদীর পানি। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মনু নদের পানি কমতে থাকে। এ ছাড়া ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

জেলা সদরসহ রাজনগর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ী উপজেলার দুই শতাধিক গ্রামের ৩ লাখের বেশি মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে।

সিলেটে নদ-নদীর পানি কমছে

সিলেটে কমছে নদ-নদীর পানি। শনিবার দুপুর পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি ৪ পয়েন্ট বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সিলেটের সব নদ-নদীর পানি কমতে থাকে।

এদিকে আকাশে কালো মেঘ থাকলেও বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি সিলেটে।

হবিগঞ্জের ছয় উপজেলার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত 

জেলায় খোয়াই, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপরে হলেও শায়েস্তাগঞ্জ ও মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার অনেক নিচে আছে। অন্যদিকে কুশিয়ারা ও কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও তা এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। 

তবে নদীর পানি কমলেও জেলার বন্যাকবলিত ছয়টি উপজেলার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হলেও অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। এসব মানুষের মধ্যে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন ত্রাণ বিতরণ করছে।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৭ দাবি

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৭ দাবি
ছবি: সংগৃহীত

পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাত দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার আহ্বান জানান সংগঠনটির সদস্যরা।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী এসব দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, মানবাধিকার কর্মী মেইন থিন প্রমীলা, দীপায়ন খীসা। 

সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। দাবিগুলো হলো-পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক তত্ত্বাবধান বন্ধ করা, আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের ক্ষমতায়ন, ভূমি অধিকার এবং পুনর্বাসন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়ন, সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠা। 

খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘২৬ বছর ধরে পার্বত্য শান্তি চুক্তির মূল উপাদানগুলো অনেকাংশে অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ এবং সারা দেশের নাগরিকদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বাংলাদেশের সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখা এবং একই সঙ্গে দেশের জাতীয় ঐক্যের জন্য অপরিহার্য।’

খায়রুল ইসলাম চৌধুরী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সক্রিয় করা, আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে সংলাপ, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের পুর্নগঠন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। 

মেইন থিন প্রমীলা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমির সমস্যার সঙ্গে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ভূমি সমস্যাটা আরও বেশি প্রকট। বরগুনা, পটুয়াখালী অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ভূমি এখনো দখল করা হচ্ছে। তাদের শ্মশান, মন্দির দখল করা হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে তাদের এ নিপীড়নের কথা বলতে হবে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য মুর্শিদা আক্তার ডেইজী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, ঢাকাস্থ জুম্ম নাগরিক সমাজের নেতা ডা. অজয় প্রকাশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলী খান পান্নার মৃত্যু নিয়ে রহস্য

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলী খান পান্নার মৃত্যু নিয়ে রহস্য
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে।

পান্নার ঘনিষ্ট একজন নেতা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, গত শুক্রবার মধ্যরাতে সিলেটের সীমান্ত ভারতের মেঘালয়ের শিলং পাহাড়ে উঠার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পান্না মৃত্যুবরণ করেন। ওই নেতা বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবলীগের রাজনীতি করছেন।

পান্নার মৃত্যুর খবর জানিয়ে শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকাল থেকেই ফেসবুকে শোক জানিয়ে তার বন্ধু-বান্ধব, রাজনৈতিক কর্মীরা পোস্ট করছেন।

তবে পান্নার মৃত্যু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্যও পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে তার লাশের এক পাশে রক্তের স্তূপ দেখা যায়। এ ছাড়া তার পায়ে রক্তের দাগ দেখা গেছে। তবে শরীরের দৃশমান অংশে (বুক, মুখ ও হাত-পায়ে) গুলি বা আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।

পান্নার রাজনৈতিক ঘনিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থানকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। সে সময় তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা ও ছাত্রলীগের আরেক নেতা ছিলেন। তবে কবে, কখন কীভাবে তারা শিলং পৌঁছালেন এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

ইসহাক আলী খান পান্না ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ওই সময় ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। পেশাগতভাবে ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন পান্না। ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক এবং পরে বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

সালমান-আনিসুল-দীপু মনি ও জিয়াউল আবারও রিমান্ডে

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৮ পিএম
আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৯ পিএম
সালমান-আনিসুল-দীপু মনি ও জিয়াউল আবারও রিমান্ডে
ছবি: সংগৃহীত

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের পৃথক দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিন, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির এক মামলায় ৪ দিন ও সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজের এক মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার (২৪ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিমের আদালত তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ডে চেয়ে এই আবেদন করা হয়।

এর মধ্যে রাজধানীর আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। শনিবার তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর আক্কাস মিয়া ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তাদের উপস্থিতিতে শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর নিউ মার্কেট থানার এক হত্যা মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর ১৫ আগস্ট গভীর রাতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। 

ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই লালবাগের আজিমপুর সরকারি আবাসিক এলাকায় আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় তার বাবা কামরুল হাসান ১৯ আগস্ট লালবাগ থানায় এই হত্যা মামলা করেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে মো. সুমন শিকদারকে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর বাড্ডা থানার মামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। গতকাল বাড্ডা থানার পুলিশ এ রিমান্ড আবেদন করে। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ২০ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মিছিলে নির্বিচারে গুলিবর্ষণে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় দীপু মনির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সোহাগ মিয়া নামে এক কিশোর হত্যার অভিযোগে রাজধানীর ভাটারা থানার মামলায় জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও টানা আটবারের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিল পুলিশ। শুনানি নিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

আরও ৪ জেলায় মামলা, মন্ত্রী-এমপিসহ আসামি ১৫০০

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম
আরও ৪ জেলায় মামলা, মন্ত্রী-এমপিসহ আসামি ১৫০০

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি ও হামলায় হতাহত এবং আগের বিভিন্ন হামলার অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার (২৪ আগস্ট) চার জেলায় সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক একজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী, তিনজন সাবেক সংসদ সদস্য ও দুজন সাবেক মেয়রসহ ১ হাজার ৫৫০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আসামি ১ হাজার ১০০ জন। আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

রাজশাহীতে সাবেক এমপি ও মেয়রের নামে মামলা

পাঁচ বছর আগে রাজশাহীর পবা উপজেলায় মারধর, লুটপাট-ভাঙচুর ও ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ৯ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ২০০-২৫০ জন। গত শুক্রবার আরএমপির কর্ণহার থানায় তালুক ধর্মপুর গ্রামের সাবের আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম সবুজের (২৫) মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারে ৪২ জনের নাম উল্লেখ আছে।

গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন নিহতের বাবা মাইনুল হক (৬০)। এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট নগরীর শাহ মখদুম কলেজ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাকিব আনজুম সবুজ। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক গণপূর্তমন্ত্রীর নামে হত্যা মামলা

সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৬ নেতা-কর্মীর নামে হত্যা মামলা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ জেলা শহরে সংঘর্ষের সময় মাদ্রাসাছাত্র হুইসাইন আহম্মেদ নিহতের ঘটনায় এ মামলা করেন নিহতের বড় বোন তানিয়া আক্তার। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলাটি করা হয়।

মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন এবং সাবেক মন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরীর দুই ব্যক্তিগত সহকারী আবু মুছা আনছারী ও এম এ এইচ মাহবুব আলমসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।

খুলনায় হাসিনার চাচাতো চার ভাইয়ের নামে মামলা

খুলনায় বিএনপির অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো চার ভাইয়ের নামে দুটি মামলা হয়েছে। তারা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বাবু।

গত শুক্রবার রাতে খালিশপুর থানায় মামলা দুটি করেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শেখ দবির ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মো. ইকরাম মিন্টু। 

এসব মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন, সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু, জেড এ মাহমুদ ডনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২১৫ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট ও ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর স্থানীয় বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন আসামিরা।

বরিশালে আ.লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা

ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে বরিশালে আরও দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের ৪৬৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। 

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত শুক্রবার রাতে মহানগর বিএনপির নেত্রী রুমা আক্তার বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের ২৩ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই নগরীর তন্ময় কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে স্লোগান দিলে অস্ত্রে সজ্জিত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়।  

একই দিন রাতে অন্য মামলাটি করেন মহানগর বিএনপির সদস্য রফিকুল ইসলাম রিপন। মামলায় মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্না, বিসিসির কাউন্সিলর শেখ সাইদ আহম্মেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, সদ্য সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনসহ ৯৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি নেতা এই মামলায় গত ১৯ জুলাই বিএডিসি অফিসের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন।