
রাজধানীর হাজারীবাগে ফিনিক্স লেদার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চামড়াজাত পণ্যের গুদামে ভয়াবহ আগুন লেগেছে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ২টার দিকে বহুতল ভবনের ওই গুদামে আগুন লাগে। এতে কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও আগুনে গুদাম ও ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভবনে থাকা ২৫টি কারখানা পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১১টি ইউনিটের চেষ্টায় এবং সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সহযোগিতায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়। তবে এখানেও ঢাকার বড় অগ্নিকাণ্ডের মতো আগুন নেভাতে গিয়ে উসুক জনতার ভিড় ও সরু রাস্তার জন্য বিপাকে পড়তে হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে অবস্থানকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে প্লাস্টিক ও চামড়াসহ দাহ্য বস্তুর কারখানা এবং গুদাম ছিল। সে অনুযায়ী ভবনে ছিল না কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। এ ছাড়া ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার (ফায়ার সেফটি) কোনো প্ল্যান ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাদের কয়েকবার নোটিশও দেওয়া হয়েছিল।
তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘পুরোনো ভবনটিতে মিশ্র পদার্থ, কাঁচামাল, প্লাস্টিক, গার্মেন্টপণ্য এবং ওপরে ছিল জুতার কারখানা। জুতার কারখানায় সাধারণত বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকে। ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম, আগুনের বিস্তার ঘটলে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটত। সেটি আমরা রোধ করতে পেরেছি, এটি আমাদের বড় সফলতা।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাততলা ভবনের পাঁচতলায় প্রথমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে সেই আগুন ছয় ও সাততলা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা ব্যাপক আকার ধারণ করে। থেকে থেকে ভবনের বিভিন্ন জানালার কাঁচ খুলে পড়ে। দাহ্য পদার্থের কারণে ভবনের ভেতরে ছোট ছোট বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে কাজ করলেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া ভবনটিতে এর আগেও অন্তত তিনবার আগুন লেগেছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেভাবে ব্যবস্থা নেয়নি।
এ প্রসঙ্গে হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ভবনে আটকে পড়া ব্যক্তিরা নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। এতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে কী কারণে আগুন লেগেছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
হাজারীবাগের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া বলেন, ভবনটিতে ৫০-৬০টি ছোট ছোট কারখানা আছে বা ছিল। এসব কারখানায় চামড়ার জুতা, ব্যাগ, বেল্ট তৈরি হয়। শুক্রবার হওয়ায় সব কারখানা বন্ধ ছিল। এ জন্য প্রাণহানির মতো ঘটনা থেকে রক্ষা হয়েছে। আগুনে ভবনটিতে থাকা ২৫টির বেশি কারখানা পুড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ঠিকমতো ইউনিটগুলো কাজ করতে পারেনি। উৎসুক জনতার ভিড় এবং ঘিঞ্জি-সরু রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজে বিঘ্ন ঘটে।
কী কারণে অগ্নিকাণ্ড- এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিক বলা যাচ্ছে না। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট বা সিগারেট থেকে আগুন লাগতে পারে। এর বাইরে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে, তবে তা তদন্তের পর স্পষ্টভাবে বলা যাবে। এ ছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে।