ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪

ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের অভিমত : ভুল চাল চেলেছেন রওশন

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩০ এএম
ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের অভিমত : ভুল চাল চেলেছেন রওশন
রওশন এরশাদ

নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণার পরের দিনও রাজনৈতিক তৎপরতা থেমে নেই রওশন এরশাদ ও তার সমর্থকদের। দ্বিতীয় দিনের মতো তৎপরতা চালিয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে তারা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন; এরপর সন্ধ্যায় যৌথসভা করেছেন। তবে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মূল অংশ এ প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা ‘বিদ্রোহী অংশ’কে কোনো ছাড় দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। জাপার গঠনতন্ত্রেও চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে সরানোর কোনো বিধা নেই। 

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনপন্থি নেতারা জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে তারা কাউন্সিল আয়োজন করবেন। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ১৪-এর ২ উপধারায় বলা হয়েছে, পার্টির চেয়ারম্যান প্রতিবছর নির্ধারিত তারিখ ও নির্ধারিত স্থানে জাতীয় কাউন্সিলের বার্ষিক সভা আহ্বান করতে পারবেন। ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে জাতীয় পার্টির মহাসচিব যেকোনো সময়ে কাউন্সিল সভা আহ্বান করতে পারবেন। তার পরও গতকাল দুপুরে রওশনপন্থি নেতারা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে কাউন্সিল আয়োজনের কথা জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তারা চেয়ারম্যান পদ থেকে জি এম কাদের ও মহাসচিব পদ থেকে মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ইসিকে জানান। যদিও জাপার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই দুজনকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হয়নি। আগের দিন রবিবার রওশন এরশাদ নিজেই নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন জাপা মূল অংশের নেতা-কর্মীরা।

গতকাল সোমবার জাপার বনানী কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাপা থেকে বহিষ্কৃত বা অব্যাহতিপ্রাপ্তরা ক্ষমা চাইলেও দলে ফিরতে পারবেন না। 

এদিকে রওশনপন্থি কয়েকজন নেতা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, রওশন এরশাদ রবিবারের সভায় যেসব সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন, সেসব বিষয়ে তারা অবহিত ছিলেন না। রওশন এরশাদ ফের ‘ভুল চাল চেলেছেন’ বলেও মন্তব্য করেন তারা। রওশনপন্থি বলে পরিচিত নেতা ইকবাল হোসেন রাজু খবরের কাগজকে বলেন, রওশন এরশাদ ফের ভুল চাল চেলেছেন। বারবার ভুল চাল চেলে রাজনীতি করা যায় না। তার মতে, জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতারা রওশন এরশাদকে চাপ দিয়ে নানা কাজ করাচ্ছেন। রওশন এরশাদের সাবেক রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, ‘রওশন এরশাদের সিদ্ধান্ত আমাদের মনঃপূত হয়নি।’

নির্বাচন কমিশনে রওশনপন্থিদের চিঠি 

জাতীয় পার্টির (জাপা) কমিটি পরিবর্তন করে রওশনপন্থি কমিটিকে আমলে নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে চিঠি দিয়েছেন রওশন এরশাদের ঘোষিত কমিটির মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশিদ। গতকাল নবনিযুক্ত দলের মুখপাত্র সুনীল শুভ রায়ের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একান্ত সচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই চিঠি হস্তান্তর করে।

ওই চিঠিতে দাবি করা হয়, গত ২৮ জানুয়ারি রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। কাজী মো. মামুনুর রশিদকে অন্তর্বর্তীকালীনের জন্য (পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত) জাতীয় পার্টির মহাসচিব নিয়োগ করেছেন তিনি। পাশাপাশি জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন রওশন এরশাদ। 

রওশনপন্থি নেতাদের চিঠিতে বলা হয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দলটির জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হবে। এর আগে রওশন এরশাদ জাপা চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশিদ জাতীয় পার্টির দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। 

এ বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের একান্ত সচিব রিয়াজ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, জাতীয় পার্টির একাংশের ওই চিঠি গ্রহণ করা হয়েছে। মূলত দলটির অবস্থান জানিয়ে ইসিকে অবহিত করতে ওই চিঠিটি তারা দিয়েছেন। এ বিষয়ে বিধি ও আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বহিষ্কৃতরা চাইলেও দলে ফিরতে পারবেন না: চুন্নু 

গতকাল জাপার বনানী কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। জাপা থেকে বহিষ্কৃত, অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতাদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এই লোকগুলোকে নিয়ে কোনো চিন্তা করি না। তারা আসুক, এটা আমরা চাই না। আর এখন চাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। তারা যদি ক্ষমাও চায়, তবে তাদের আর দলে নেওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’ রবিবার রওশন এরশাদের বাসভবনে মতবিনিময় সভায় জাপা থেকে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। জি এম কাদেরের শিবিরের অভিযোগ, এই অনুষ্ঠানে জাপার শীর্ষ নেতাদের গালমন্দ করেছেন রওশনপন্থিরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘তারা যদি ক্ষমাও চায়, তবে তাদের আর দলে নেওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। মহাসচিব হিসেবে আমি মনে করি, গতকালের (রবিবার) ঘটনার পরে তারা যদি দলে আসতে চায় তাদের দলে নেওয়া উচিত হবে না।’ বহিষ্কৃতদের উদ্দেশে জাপা মহাসচিব বলেন, জাপা একটি স্বীকৃত দল। এখন রাস্তার কোনো লোক বা টোকাই যদি বলে দলে আসতে চায়, তাহলে জাতীয় পার্টির কর্মীরা ব্যবস্থা নেবেন। 

‘ভুল চাল চেলেছেন রওশন এরশাদ’ 

জাতীয় পার্টি থেকে বিভিন্ন সময়ে পদ-পদবি হারানো নেতাদের একটি অংশ রওশন এরশাদের সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল এবারের নির্বাচনের আগে। তাদের মধ্যে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু ছিলেন অগ্রভাগে। গতকাল সন্ধ্যায় এই তিন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন এবং জাপা চেয়ারম্যান-মহাসচিবকে বহিষ্কার করবেন এ কথা তারা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না। 

নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাতীয় পার্টির চলমান অস্থিরতা নিরসনে রওশন এরশাদ ভূমিকা রাখবেন, তিনি দলের দশম কাউন্সিল আয়োজনের জন্য পার্টি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানাবেন, রওশন এরশাদের বাড়িতে এমন আলোচনা হয়েছিল বলে তারা জানান। 

কিন্তু গত শনিবার রাতে জাপা থেকে অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডিয়ামের সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সুনীল শুভ রায় ও রওশন এরশাদ মনোনীত মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদের সঙ্গে সাদ এরশাদের একটি বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। পরে ‘বড় সিদ্ধান্ত’ নিতে রওশন এরশাদকে চাপ দেওয়া হয় বলে তারা জানান। 

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে গোলাম মসীহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিবকে বহিষ্কার করা হলো; কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়া হলো তা আমার মনঃপূত হয়নি। ম্যাডামের বাসায় কী হয়েছে, তা আমার ধারণায় নেই। কথা ছিল ম্যাডাম দলের কাউন্সিল ডাকতে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানাবেন। চেয়ারম্যান সেটি না করলে অন্য একটি প্রক্রিয়া ছিল। তবে কাল (রবিবার) যা হলো, এমনটি হওয়া উচিত ছিল না।’

ইকবাল হোসেন রাজু খবরের কাগজকে বলেন, ‘শনিবার রাতেও তো কথা হলো সাদ এরশাদের সঙ্গে। আমরা কিছু জানতাম না। হঠাৎ সেন্টু সাহেব, সুনীল দাদারা এসে বৈঠক করে কী করলেন, আমরা কিছু বুঝতে পারলাম না।’ রাজু বলেন, এর আগেও ম্যাডাম দুবার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু এভাবে বহিষ্কার করা গঠনতান্ত্রিক না। তিনি পুনরায় ভুল করেছেন। বারবার ভুল করে রাজনীতি হয় না। রওশন এরশাদ আলাদাভাবে জাতীয় পার্টি গঠন করলে তাতে যুক্ত হতে সায় দেননি রাজু। 

রওশনপন্থি নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা; যার রাজনীতি-নির্বাচন নিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্বের নতুন পর্বের সূত্রপাত হয়েছিল। মৃধা রবিবার রওশন এরশাদের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। খবরের কাগজকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে সুনীলদা ফোন করে বলেছিলেন, সভায় আসেন। চমক দেখবেন। কিন্তু এই সভায় যে বক্তৃতা শুনলাম, আমি হতবাক।’ জিয়াউল হক মৃধাও রওশন এরশাদের কাছ থেকে সরে যাচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছি। কিছু দিন দেখব দলের পরিস্থিতি। তারপর সরে দাঁড়াব।’

রওশনের বাসভবনে জরুরি বৈঠক 

জাপার এই নাটকীয়তা চলে গতকাল রাত পর্যন্ত। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে জরুরি বৈঠকে বসেন জাপা থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত দুই নেতা সাবেক কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তাদের সঙ্গে পরে যুক্ত হন রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ, রওশন এরশাদ-মনোনীত মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ, জাপার সাবেক এমপি গোলাম সারোয়ার মিলন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু ও রওশন এরশাদের মুখপাত্র সুনীল শুভ রায়। বৈঠকের বিষয়ে সুনীল শুভ রায় গতকাল রাতে খবরের কাগজকে বলেন, ‘মূলত ম্যাডাম জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা। তারা ম্যাডামকে বলেছেন, দলের বেহাল অবস্থায় ম্যাডাম গত রবিবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা যথোপযুক্ত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত। এরপর দলের কিছু বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আজকের মতো আলোচনা মুলতবি হয়েছে। মঙ্গলবার (আজ) এসব বিষয়ে আবার আলাপ-আলোচনা করা হবে।’ তিনি জানান, মঙ্গলবার সেই আলোচনা সভার খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

তবে সভায় থাকা রওশনপন্থি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রওশন এরশাদ নেতৃত্বাধীন দলে কাজী ফিরোজ রশীদকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করার ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সুনীল শুভ রায়। কাজী ফিরোজ রশীদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। 

কোটা ইস্যু রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে : বাম জোট

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
কোটা ইস্যু রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে : বাম জোট
বাম গণতান্ত্রিক জোট

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহালের ইস্যুতে সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জনগণের প্রতিপক্ষ বানিয়ে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বলেছেন, কোটার বিষয়টি রাজনৈতিক। এটি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। 

রবিবার (৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তারা। 

যৌথ বিবৃতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য গৌরবের এবং শ্রদ্ধার বিষয়। এর সঙ্গে চাকরির কোটা সংরক্ষণকে মুখোমুখি দাঁড় করানো অপমানজনক। দেশের অনগ্রসর, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব আর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে কোটা মানবিক দায়িত্বের অংশ। বেকারত্ব, সরকারি শূন্য পদসমূহে নিয়োগ না দেওয়া এবং নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় ছাত্র-যুবসমাজের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।’ 

ব্যক্তি-গোষ্ঠীস্বার্থে সরকার কোটা পদ্ধতি চালু রাখতে চায়: জি এম কাদের

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
ব্যক্তি-গোষ্ঠীস্বার্থে সরকার কোটা পদ্ধতি চালু রাখতে চায়: জি এম কাদের
বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ফাইল ছবি

ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবহার করে সরকার কোটা পদ্ধতি চালু রাখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘তাদের (সরকার) উদ্দেশ্য হলো শক্তিশালী একটি অনুগত বাহিনী সৃষ্টি। তাই কোটাবিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক।’

রবিবার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এসব কথা বলেন। 

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি  বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা তাদের উত্তরাধিকারীদের কোটা পদ্ধতিতে সুযোগ দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এককালীন সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা অন্য কাউকে বঞ্চিত করে বা বৈষম্যের শিকার করে নয়। একজন চাকরি পাওয়ার জন্য উপযুক্ত কিন্তু তাকে বঞ্চিত করে অন্য কাউকে চাকরি দেওয়াটা স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।’

সরকার কেন কোটা পদ্ধতি বহাল রাখতে চায়- এ প্রশ্নের উত্তরে জি এম কাদের বলেন, ‘তারা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তৈরি করতে অনুপযুক্তদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। অনুপযুক্তদের বিত্তশালী করা হচ্ছে। তারা যেন সরকারের প্রতি অনুগত থাকে। কারণ অনুপযুক্তরা জানে তারা এই চাকরি বা সম্মানের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই সরকারের অনুগত হয়ে থাকবে। সারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে শাসকগোষ্ঠী লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করতে চায়।’

জয়ন্ত/এমএ/

সড়ক দুর্ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেত্রী নিহত

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম
সড়ক দুর্ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেত্রী নিহত
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন লিজা। ছবি: সংগৃহীত

সড়ক দুর্ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন লিজা মারা গেছেন। লিজার বড় ভাই পলাশ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবু হোরায়রা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, শনিবার (৬ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন লিজা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

তিনি জানান, দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন লিজার স্বামী পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাহফুজ ইসলাম উজ্জ্বল। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে, লিজার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন মো. আবু হোরায়রা এবং সাধারণ সম্পাদক এম. রাজীবুল ইসলাম তালুকদার (বিন্দু)।

শফিক/এমএ/

শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক: মান্না

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম
শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক: মান্না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি

কোটা পুর্নবহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি পালন করতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন মোড়ে, সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলনে স্পষ্ট সমর্থন দেখা যায় সাধারণ মানুষেরও। তাই দাবি দ্রুত তা বাস্তবায়ন করে তাদেরকে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হবে। 

রবিবার (৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। 

মান্না বলেন, প্রধান বিচারপতি জানতে চেয়েছেন, রাস্তায় আন্দোলন করে আদালতের রায় পরিবর্তন করা যায় কী-না! অথচ বিশ্বের কতো রাষ্ট্র আর তার সরকার আইনব্যবস্থারই পরিবর্তন ঘটেছে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আদালতে রিট হয়েছে কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করতে, আদালত তা বাতিল করে শুনানি শুরু করেছে যা বর্তমানে মুলতবি রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলন ও দাবির মুখে জারি করা কোটা বাতিল পরিপত্র বহাল রেখেই শুনানি করতে পারতেন আদালত, অবশ্য দুটিই আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। পড়াশোনা ছেড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাধারণ মানুষের দুর্গতি, অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা ভেবে পরিপত্র বহাল রেখেই শুনানি চলমান রাখা যেত। 

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে, পরিপত্র বহাল রেখেই রিটের শুনানি কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। না হলে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া শিক্ষার উপর আরও প্রবল নেতিবাচক প্রভাব দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আমাদেরকে।

মান্না আরও বলেন, কোটা পুনর্বহাল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানান। এগুলো হল- ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

শফিক/এমএ/

ভারতের সার্টিফিকেটে সবকিছু করছে সরকার : রিজভী

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম
ভারতের সার্টিফিকেটে সবকিছু করছে সরকার : রিজভী
ছবি : খবরের কাগজ

‘ভারত আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু, আর চীন উন্নয়নের’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভারতের সার্টিফিকেট থাকলে তারা (সরকার) সবকিছু করতে পারে। গোটা জাতিকে জিম্মি করে তারা ক্ষমতা ধরে রেখেছে।’ 

রবিবার (৭ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যফ্রন্টের ঢাকা মহানগরের সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

সংগঠনের সদস্যসচিব সুভাস চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিজন কান্তি সরকার, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সহসম্পাদক অপর্ণা রায়, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যফ্রন্টের এস এন তরুণ দে প্রমুখ।

রিজভী বলেন, ‘ভারত আওয়ামী সরকারের অপরাধ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের রাজনীতি সমর্থন করেছে। তাই ভারত এখন আওয়ামী লীগের এনার্জি ড্রিংক। কারণ ভারত তাদের সঙ্গে থাকলে তারা সবকিছু করতে পারে। শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদী বীজ বপন করে গোটা জাতিকে আজ বিভক্ত করেছেন। বর্তমানে এরা গণতন্ত্রকে লাশ বানিয়ে ফেলেছে। তারা পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে বিভাজন তৈরি করেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে বেনজীর-আজিজকাণ্ডের মতো আরও অনেক কাণ্ড ঘটেছে। এটা সামান্য ঘটনা, আরও বড় বড় কাণ্ড আছে। লুটপাট, কালোটাকা, জমি দখলের মানসিকতার দল হলো আওয়ামী লীগ। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সক্ষমতায় টিকে আছেন।’ 

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘এখন আওয়ামী আর বিরোধী দলের মধ্যে কোনো সামাজিক সম্পর্ক পর্যন্ত নেই। সমাজে এমন একটা বিভাজন তৈরি করেছে। যেখানে শেখ হাসিনার আত্মীয়দের পরিবারের এমপি আছে, সেখানে তো ভয়ংকর অবস্থা। সেখানে বিরোধী দলকে দাঁড়াতেই দেওয়া হয় না। আপনারা বাগেরহাট, বরিশালে দেখেছেন কয়দিন আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়নি।’