সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন পরিহার করে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশের উচ্চ আদালত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে রায় প্রদান করবেন। শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, তার মূল চালিকাশক্তি হলো মেধাবী জনগোষ্ঠী। শিক্ষিত, দক্ষ, স্মার্ট প্রজন্ম গঠনের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে নিতে মেধাবী তরুণ প্রজন্ম আমাদের প্রয়োজন।’
সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা আইনসিদ্ধ নয়। আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে নিশ্চয়ই একটা চূড়ান্ত রায় দেবেন। উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত সবার অপেক্ষা করা উচিত। কোনো ধরনের উত্তেজনা, রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি অনুচিত। বিশেষত এইচএসসি পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের অসুবিধা হয় যে কর্মসূচিতে, সে ধরনের কর্মসূচি পরিহার করা দরকার।’
২০১৮ সালের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশের উচ্চ আদালত কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করেছেন। সরকারপক্ষের আইনজীবী এই রায়ের বিপক্ষে আপিল করেছেন। সরকার কোটা বাতিলের দাবির প্রতি আন্তরিক বলেই অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল করেছেন। এর আগে যে কোটা আন্দোলন বাংলাদেশে হয়েছিল, সেখানকার প্রথম সারির ৩১ জন নেতা কিন্তু বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এটার হিসাব সাংবাদিকরা নিতে পারেন।’
এ সময় চলমান আন্দোলনে সরকারবিরোধীদের রাজনৈতিক উপাদান যুক্ত হয়ে গেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের বিভক্ত ও মেরুকরণের রাজনীতি এখানে যুক্ত হয়ে গেছে। কারণ বিএনপি প্রকাশ্যে এবং তাদের সমমনারা এই কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করেছে। তারা সমর্থন করেছে প্রকাশ্যেই। এখানে কারা কারা যুক্ত আছে, কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, সেটা আন্দোলনের গতিধারার মধ্যেই বোঝা যাবে।’
যেকোনো আন্দোলনে রাজনৈতিক দল, ইউনিয়ন কর্মীরা অংশ নিলেও নেতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে কেন?- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দল পৃথিবীর কোন দেশে আন্দোলনে শামিল হয়েছে? এটা বিচারাধীন। কোনো রাজনৈতিক দল পারে না এভাবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা তো আদালতের রায়, তারা যে আন্দোলন করছে (কোটা বাতিল) এই সিদ্ধান্তই ছিল সরকারের। সরকারই আবার আপিল করেছে। আদালত রায় দিয়েছেন, এখানে সরকারের দোষ কোথায়? এখানে যে বিষয়টা আদালতের এখতিয়ার, সে বিষয়টা নিয়ে কথা বলা বা সমালোচনা করা, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তো আইনসিদ্ধ নয়। আমরা সেটাই বলছি।’
কোটাবিরোধী আন্দোলনে সরকারের কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না?- এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারপক্ষ তো আপিল করেছে। এখনো আদালত চূড়ান্ত রায় দেননি। আদালতের রায় হোক, তারপর দেখা যাবে।’
এ সময় সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখানে ভুল-বোঝাবুঝি থাকতে পারে। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগও আছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হয়নি। সিদ্ধান্ত তো নিতে হবে বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে। এখানে আমরা সুপিরিয়র, না শিক্ষক সুপিরিয়র- এ বিতর্কে যাব না। যার যার পদমর্যাদার ভিত্তিতে আমরা যাব, যেটা বাস্তবসম্মত, সেটায় যাব।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।