শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় কী করেছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি কি করেছেন? বাংলাদেশে ছিলেন, স্বামীকে নিয়ে বহাল তবিয়তে ঢাকায় তো ছিলেন। কই স্বামীকে তো মুক্তিযুদ্ধে পাঠাননি। অথচ আজকে যারা কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রতিবাদ করছে তাদেরকে আপনি রাজাকারের নাতি নাতনি বলছেন!’
সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামের পরিবারের খোঁজখবর নিতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘খন্দকার এনামের স্ত্রীর মর্মস্পর্শী কথাগুলো শুনে হৃদয়ে আলোড়ন তৈরি করেছে। এটি বিরোধী রাজনীতির সবার পরিবারের কথা। কারণ এই পরিবারগুলো বেশি কষ্ট করছে। আমাদের স্থায়ী ঠিকানা করে দেওয়া হয়েছে কারাগার। আমাদের প্রত্যেকের বসবাস হয় নদীর ধারে, বাঁশঝাড়ে, না হয় লাল দালানে।’
প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে রাগ করে কোটা সিস্টেম বাতিল করেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি তো ডামি প্রধানমন্ত্রী। আপনি শপথ নেওয়ার সময় বলেছিলেন রাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না। আপনি তো শপথ ভঙ্গ করছেন। সংবিধান ভঙ্গ করছেন প্রতিনিয়ত। প্রতি মুহূর্তে তিনি একের পর এক আইন ভাঙছেন। রাগের বশবর্তী হয়ে আপনি কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছেন, প্রথমেই আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। আপনি শপথ ও আইন ভঙ্গকারী প্রধানমন্ত্রী।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘বর্তমানে কেউ তো ভোটে নির্বাচিত নয়, তাই তাদের কাছে শপথ ভঙ্গ করা বিষয় নয়, তাদের কাছে জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখাই বিষয়। আজ কোটা সংস্কারের জন্য উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ প্রধানমন্ত্রী যৌক্তিক আন্দোলন পরিপন্থী কথা বলে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিচ্ছেন। ১৮ সালে আপনি আন্দোলনরত ছাত্রদের সান্তনা দিতে বাতিল করেছিলেন। মনে আক্রোশ পুষে রেখেছিলেন, সময়মতো সেটি কাজে লাগাবেন। তাই লাগিয়েছেন। আমি যদি ৩৪ বছর আগে ফিরে যেতে পারতাম। তাহলে এ কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিতাম বলেও ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।’
আইন আদালত সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর আঁচলে বন্দী এমন মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আদালতকে দিয়ে আপনি সব ইচ্ছা পূরণের কাজ করে যাচ্ছেন। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ যুবলীগ ও পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন, সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন, কেউ আসবে না। মনে রাখতে হবে বেহুলার বাসরঘরের কোথাও না কোথাও ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্র দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের ঢেউ আপনার সিংহাসন ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
এনামের স্ত্রী নাজনীন আক্তার লতা তার পরিবারের দুর্সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা সব সময় নিরাপত্তাহীনতা ভুগছি। আমার দুটি বাচ্চা জন্ম হওয়ার সময় আমি আমার স্বামীকে কাছে পাইনি। এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে। জন্ম হওয়ার পর তার সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি। বাবা বেঁচে থাকার পরও আমরা সন্তানেরা এতিম। শুধুমাত্র বিরোধী রাজনীতি করায় বিসিএস ভাইবা থেকে নো নো শুনে বের হয়েছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি জয়দেব জয়, সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুর রহমান তুষার, সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল, বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা নাহিদুর রহমান নাহিদ, মহিউদ্দিন মহি, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহ পরান, ছাত্রদল নেতা ডা. মুশফিক, মিরাজ হোসেন, আশরাফুল আসাদ প্রমুখ।
শফিকুল ইসলাম/অমিয়/