ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া পাপ

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া পাপ
প্রতীকী ছবি

মানুষের জীবনযাত্রায় প্রতিবেশীর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিবেশীর হক ও অধিকার ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা ঈমানি দায়িত্ব। তাদের খোঁজখবর নেওয়া, বিপদে পাশে দাঁড়ানো ইবাদত। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া গুনাহ। যারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়, তারা জান্নাত পাবে না। আল্লাহতায়ালা এদের পছন্দ করেন না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, কিছুকেই তাঁর শরিক করো না এবং মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের আয়ত্তাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ওই লোককে ভালোবাসেন না, যে অহংকারী, দাম্ভিক।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬)

মুমিন হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। কেউ নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, হজ করেন, জাকাত দেন ও নিয়মিত দান-সদকাও করেন; কিন্তু প্রতিবেশীর সঙ্গে মন্দাচরণ করেন, তা হলে সে প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, কে সেই ব্যক্তি? তিনি বলেন, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।’ (বুখারি, ৪৭৪৫)
আরেক হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (মুসলিম, ১৮৫)
মুমিনের জীবনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন থাকে জান্নাতে যাওয়ার। জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায় হলো প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়া। রাসুলুল্লাহ  (সা.) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি কখনো জান্নাতে যাবে না, যার অন্যায়ের কারণে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না।’ (মিশকাত, ৪৯৬৩)

প্রতিবেশীর খোঁজ নেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য। প্রতিবেশীর অভাব কিংবা বেদনার দিনে তার পাশে দাঁড়ানো সওয়াবের কাজ। মাঝেমধ্যে তাকে হাদিয়া দেওয়া যায়। হাদিয়া পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আবু জর, যখন তুমি তরকারি রান্না করো, তখন একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বেশি করো এবং তোমার প্রতিবেশীর হক পৌঁছে দাও।’ (মিশকাত, ১৯৩৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে আপ্যায়ন করে। আর যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। অনুরূপ যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (মিশকাত, ৪২৪৩) 

লেখক: শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়

কখন তায়াম্মুম করতে হয়?

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
কখন তায়াম্মুম করতে হয়?
দুই হাতের তালু মাটি বা এ জাতীয় বস্তুর ওপর মেরে তায়াম্মুম করতে হয়। ছবি: ইন্টারনেট

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন,  ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো। তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পদযুগল গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তা হলে ভালোভাবে পবিত্র হও।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬)
 
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোনো নামাজ কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ দিয়ে সদকা কবুল হয় না।’ (বুখারি, হাদিস: ৪২৩) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির হাদাস হয় (অপবিত্র থাকে) তার নামাজ হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অজু করে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৫) 

শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় পানি বা মাটি দিয়ে পবিত্র অর্জন করাকে তাহারাত বলা হয়। তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি মোট তিনটি—

১. অজু করা।

২. গোসল করা।

৩. তায়াম্মুম করা। 

অজু ও গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য পানি প্রয়োজন আর তায়াম্মুম করার জন্য প্রয়োজন মাটি। সাধারণত সমুদ্র, নদী-নালা, ঝরনা, কুয়া, টিউবওয়েল ও বৃষ্টির পানি পবিত্র এবং এর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ। নাপাক জিনিস মিশ্রিত হওয়ার কারণে যদি পানির রঙ, গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে যায়, তা হলে সেটা নাপাক পানি বলে বিবেচিত হয় এবং সে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা শুদ্ধ হয় না। (নায়লুল আওতার, ১/৩৫)

এ ছাড়া গোসল বা অজুতে যে পানি ব্যবহার করা হয় তাকে পরিভাষায় ব্যবহৃত পানি বলা হয়। এ পানি পবিত্র কিন্তু এর দ্বারা দ্বিতীয়বার পবিত্রতা অর্জন করা যাবে না। (বুখারি, হাদিস: ৩২)

আরও পড়ুন : নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়?

পবিত্রতা অর্জন বা নাপাক দূর করার জন্য কিংবা অজু-গোসল করার জন্য পানির ব্যবস্থা না থাকলে অথবা পানির সংকট দেখা দিলে কিংবা পানির ব্যবহারে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা বা অসুখ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তায়াম্মুম করে নিতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অথবা তোমাদের কেউ শৌচাগার থেকে বের হলে কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর (পবিত্রতা অর্জন করার জন্য) পানি না পেলে পবিত্র ভূমি থেকে তায়াম্মুম করবে। চেহারা ও হাতে তা (মাটি) মাসেহ করবে।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬) 

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার ওপর গোসল ফরজ হয়েছিল কিন্তু পানি না থাকায় আমি মাটিতে গড়াগড়ি করেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দাও বলে নিজেই দুই হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দিলেন এবং চেহারা মাসেহ করলেন। পুনরায় দুই হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দিলেন এবং দুই হাত কনুইসহ মাসেহ করলেন।’ (বাইহাকি, ১/২০৭)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের দুই হাতের তালু মাটির ওপর মারলেন এবং উভয় হাতে ফুঁ দিলেন। তারপর দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন। এরপর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করলেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৩৮)

তায়াম্মুমের দুই ফরজ

এক. সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস : ৭১২)
দুই. দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস: ৬৯৭)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

স্বপ্নে জাহান্নাম দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম
স্বপ্নে জাহান্নাম দেখলে কী হয়?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত জাহান্নামের প্রতীকী ছবি।

আবু বাকরাহ বলেন, কেউ যদি স্বপ্নে তাকে আগুনে জ্বালানো হচ্ছে দেখে, সে জাহান্নামে যাবে। ফেরেশতা স্বপ্নদ্রষ্টার কপালের চুল ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে দেখলে ওই স্বপ্ন তার জন্য অপমান ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। কাছ থেকে জাহান্নামের আগুন দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা পরিশ্রম ও কষ্টে ভুগবে। তা থেকে সে মুক্তি পাবে না। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝে নেবে যে, তাদের তাতে পতিত হতে হবে এবং তারা তা থেকে রাস্তা পরিবর্তন করতে পারবে না।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৫৩) 

স্বপ্নদ্রষ্টা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নামের শাস্তি অত্যন্ত নিশ্চিত বিনাশকারী।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬৫) 

ওই স্বপ্ন স্বপ্নদ্রষ্টার জন্য সতর্ককারী; সে যেন ওইসব পাপ থেকে তওবা করে, যা সে করে যাচ্ছে।

জাহান্নামে প্রবেশ করতে দেখার ব্যাখ্যা হলো, সে অশ্লীল বা কবিরা গুনাহে লিপ্ত হবে। ফলে স্বপ্নদ্রষ্টা শাস্তির যোগ্য হবে। কারও মতে, সে বিচারক নিযুক্ত হবে। যদি দেখে, তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে, তাহলে যে ব্যক্তি তাকে প্রবেশ করিয়েছে, সে তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং অশ্লীল কাজে প্ররোচনা জোগাবে। যদি দেখে, জাহান্নাম থেকে বিনা কষ্টে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই বের হয়েছে, তাহলে সে জাগতিক দুশ্চিন্তায় পড়বে।

জাহান্নামের উত্তপ্ত পানি পান করতে বা জাককুম গাছ থেকে খেতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা এমন ধরনের ইলম শিক্ষায় লিপ্ত হবে, যা তার জন্য হবে ধ্বংস ও বিপদের কারণ। কারও মতে, তার কাজগুলো কঠিন হবে এবং ওই স্বপ্ন তার হত্যাযজ্ঞ চালানোর লক্ষণ। যদি দেখে, জাহান্নামে স্বপ্নদ্রষ্টা চেহারা কালো হয়ে গেছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হলো, সে এমন লোকের সঙ্গে ওঠাবসা করবে যারা আল্লাহতায়ালার শত্রু এবং যারা তার খারাপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট। ফলে মানুষের সামনে সে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে এবং তার চেহারা কালো হবে আর তার শেষ পরিণাম শুভ হবে না। 

যদি দেখে স্বপ্নদ্রষ্টা সবসময় জাহান্নামে বন্দি রয়েছে এবং বুঝতে পারছে না কখন সেখানে প্রবেশ করেছে, তবে সে দুনিয়াতে সবসময় দুস্থ, চিন্তিত ও বঞ্চিত থাকবে। নামাজ, রোজা ও সব ইবাদত ছেড়ে দেবে।

কয়লা বা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা ইচ্ছাকৃতভাবে মজলিস-মাহফিলে মানুষের ঘাড় মেড়ে চলবে। স্বপ্নে জাহান্নামের আগুন দেখা, স্বপ্নদ্রষ্টা তাড়াতাড়ি ফেতনা-ফাসাদে পতিত হওয়ার প্রতীক। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ফেতনার স্বাদ গ্রহণ করো, এটা সেটাই যার সম্পর্কে তোমরা তাড়াহুড়া করছিলে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৪)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক 

নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪১ এএম
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়
সিজদারত ব্যক্তির ছবি। পিন্টারেস্ট

ঈমানের পরে ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল নামাজ। এর মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে তার রবের বিশেষ সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। নামাজের আগে কিছু কাজ করতে হবে। মানতে হবে কিছু নিয়ম। এখানে সেসব কাজ ও নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হলো—

১. আজান দেওয়া 
আজান আরবি শব্দ। এর অর্থ ডাকা বা আহ্বান জানানো। বিশেষ কিছু শব্দের মাধ্যমে নামাজের জন্য আহ্বান জানানোকে পরিভাষায় আজান বলা হয়। নামাজের জন্য আজান দেওয়া ইসলামি বিধানমতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

২. পবিত্রতা অর্জন
শরীর, পরিধেয় পোশাক, নামাজের জায়গা বা যার ওপর নামাজ আদায় করা হবে, তা পবিত্র হতে হবে। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন শৌচাগারে ঢুকতেন তখন আমি ও আমার মতো এক যুবক পানির লোটা ও একটি ছোট বর্শা নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইসতেনজা করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫২)

৩. অজু করা
পবিত্রতা অর্জন করার পর সুন্নতসম্মত পদ্ধতিতে অজু করে নিতে হবে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো। তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পদযুগল গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তা হলে ভালোভাবে পবিত্র হও।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোনো নামাজ কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ দিয়ে সদকা কবুল হয় না।’ (বুখারি, হাদিস: ৪২৩)

৪. নামাজের ওয়াক্ত বা সময় হওয়া
প্রত্যেক নামাজের নির্ধারিত ওয়াক্ত বা সময় হলে নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করার জন্য মুমিনদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)

৫. সতর ঢাকা
নামাজের জন্য পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীর মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের গোড়ালি ছাড়া পূর্ণ শরীর ঢাকাকে সতর বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উরু (পুরুষের) সতরের অন্তর্ভুক্ত।’ (বুখারি, ১/৫৩)। তিনি আরও বলেছেন, ‘কাপড় যদি বড় হয় তা হলে গোটা শরীর আবৃত করো। আর কাপড় যদি ছোট হয়, তা হলে লুঙ্গির মতো পরিধান করো।’ (বুখারি, ১/৫২)

৬. মাথা ঢেকে রাখা
রাসুলুল্লাহ (সা.) টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ আদায় করেছেন—সে মর্মে সহিহ কোনো বর্ণনা না পাওয়া গেলেও তিনি যে নামাজে পাগড়ি পড়েছেন, সেটা নিশ্চিত। জাবের ইবনে আমর ইবনে হুরায়েস (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পাগড়ি ও মোজার ওপর মাসেহ করতে দেখেছি।’ (বুখারি, হাদিস: ২০৫)। সুতরাং পাগড়ি পরে নামাজ আদায় করা সুন্নত। আর খালি মাথায় নামাজ পড়ার তুলনায় নামাজে মাথা ঢেকে রাখা উত্তম।
 
৭. টাখনুর ওপর কাপড় তোলা
পুরুষের জন্য সর্বদা টাখনুর ওপর কাপড় পরা আবশ্যক। তদুপরি নামাজের সময় টাখনুর ওপর কাপড় তোলার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় পরে, সে নামাজের মধ্যে আছে নাকি হারামের মধ্যে আছে—তাতে আল্লাহর কিছু আসে-যায় না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৩৭)

৮. কিবলামুখী হওয়া
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘এবং তোমরা যেখানেই থাকো, সেদিকে (মসজিদুল হারাম) মুখ ফিরাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪) 

৯. বিনয়ের সঙ্গে নামাজে দাঁড়ানো
সক্ষম ব্যক্তিকে অবশ্যই দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকলে বসে আর বসার সক্ষমতা না থাকলে শুয়েও নামাজ পড়ার অনুমতি রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করো। যদি তাতে অপারগতা থাকে তা হলে বসে এবং তাতেও যদি অপারগতা থাকে তা হলে শুয়ে নামাজ আদায় করো।’ (বুখারি, ১/১৫০)

১০. জামাতে নামাজ আদায় করা
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কেরআনে এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং জাকাত দাও। আর রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫)

১১. ইমাম নির্বাচন করা
জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য ইমাম নির্বাচন করতে হবে এবং ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করতে হবে। ইমাম নির্বাচন নিয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনির্দেশনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দলের মধ্য থেকে (নামাজের জন্য) ইমাম তিনি হবেন, যিনি কোরআনের জ্ঞানে সবার চেয়ে অগ্রগণ্য। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি সুন্নাহর জ্ঞানে অগ্রগণ্য তিনি ইমাম হবেন। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি আগে হিজরতকারী তিনি ইমান হবেন। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি আগে ইসলাম গ্রহণকারী তিনি ইমাম হবেন। কেউ যেন কারও কর্তৃত্বের স্থানে তার ইমাম না হয় এবং কেউ যেন কারও গৃহে তার সম্মানের স্থানে অনুমতি ছাড়া না বসে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৭৩)

১২. সুতরা রেখে নামাজে দাঁড়ানো 
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়বে, তখন সে যেন তার নামাজের জন্য সুতরা ঠিক করে নেয়। যদিও সেটি একটি তীর দ্বারাও হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৩৪০)। কমপক্ষে আধা হাত উঁচু বা লম্বা কোনো লাঠি বা এ জাতীয় কিছুকে নামাজের সামনে রাখাকে সুতরা বলা হয়। 

১৩. কাতার সোজা করে দাঁড়ানো এবং সামনের কাতার আগে পূরণ করা
জামাতে নামাজ পড়ার জন্য কাতার সোজা করে দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নামাজের কাতারগুলো সোজা করে দাঁড়াও। কারণ কাতার সোজা করা নামাজ পূর্ণতার অংশ।’ (বুখারি, হাদিস: ৭২৩)

১৪. ইকামত দেওয়া
একাকী বা জামাতে আদায়কৃত নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া সুন্নত। এমনকি দ্বিতীয় জামাতের নামাজের জন্যও ইকামত দেওয়া উচিত। ইকামত আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু সোজা করা বা প্রতিষ্ঠা করা। (লিসানুল আরব, ১১/৩৫২) 
শরিয়ত অনুমোদিত শব্দমালা বা বাক্যমালা দ্বারা নামাজের সূচনা হওয়ার ঘোষণা দেওয়াকে ইকামত বলা হয়। ইকামতকে দ্বিতীয় আজানও বলা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জুমা ও দুই ঈদের নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া ফরজে কিফায়া।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা সুন্নত

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম
বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা সুন্নত
একজন বয়স্ক ও একটি ছোট শিশুর ছবি। ইন্টারনেট

আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন সভ্যতা, নৈতিকতা ও আদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে। এখনকার অনেক মানুষের মাঝে ছোট ও বড়র পার্থক্য নেই। নেই বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহের বিষয়ে অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। ছোটদের স্নেহ করা আর বড়দের সম্মান করা, তাঁর নির্দেশ ও অন্যতম সুন্নত আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের হক আদায় করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৩)


হাদিসে আছে, ‘কয়েকজন লোক একটি হত্যা মামলা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসেছেন। নিহতের ছোট সন্তান আগে কথা বলতে চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে থামিয়ে বড় ভাইকে কথা বলার আদেশ দিলেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৬১৪২)


রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মত হওয়ার ফলে পৃথিবীর সব নবির উম্মত থেকে আমরা শ্রেষ্ঠ। এটা আমাদের গৌরবের ব্যাপার। কিন্তু বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ না করলে তাঁর উম্মত থাকা যায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে আমার উম্মতভুক্ত নয়, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না, আর আমাদের আলেমের অধিকার বিষয়ে সচেষ্ট নয়।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ, ৮/১৪)


দয়া মহৎ গুণ। দয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর নাতি হাসানকে চুমু খেলেন। একজন বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমার ১০টি সন্তান রয়েছে। আমি কখনো তাদের কাউকে চুমু খাইনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৫১)


আজকের এই সমাজে বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ কমে গেছে। কারণ আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পাঠ করি না। তাঁকে পূর্ণাঙ্গভাবে জানি না। তাঁর আদর্শের অনুসরণ করি না। সুন্দর ও হৃদ্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণ করতে হলে বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করতে হবে। নবিজি (সা.)-এর আদর্শের বাস্তবায়ন করতে হবে। 

 

লেখক: মাদরাসা শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক 

 

হাফেজে কোরআনের মর্যাদা

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১২ এএম
হাফেজে কোরআনের মর্যাদা
কাঠের রেহালে রাখা পবিত্র কোরআনের ছবি। ইন্টারনেট

কোরআন আমাদের বিশ্বাসের মহাসৌধ, যার আলোকবর্তিকায় আমরা আমাদের ঈমানকে সজীব করি। যার রৌশনিতে আমাদের হেদায়া (ঈমানের পথ) প্রোজ্জ্বল হয়। যার তেলাওয়াত সুর-মূর্ছনায় হৃদয়ের অন্তরীক্ষে ঈমান ডানা মেলে। যার স্পর্শে আমাদের হৃদয়সিন্ধুতে আল্লাহপ্রেমের কল্লোল আছড়ে পড়ে, ঈমানের প্রবৃদ্ধি ঘটে এবং আমলে বসন্তের সজীবতা জাগে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন তো তারাই, আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হয়, কোরআনের তেলাওয়াতে ঈমানের স্তর বাড়ে। আর ঈমানদাররা তো তাদের রবের ওপরই নির্ভর করে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ২)

কোরআনের ফজিলত সম্পর্কে কোরআনের বয়ানই যথেষ্ট। তারপরও আমরা হাদিসপাতার আলোচনায় কোরআনের যে মর্যাদা দেখতে পাই, তা কোরআনের বড়ত্ব, মাহাত্ম্য ও গভীরত্বকে প্রমাণ করে। কোরআন হলো বান্দা ও আল্লাহর মাঝে সেতুবন্ধের অন্যতম মাধ্যম। বান্দা যখন তেলাওয়াত করে, তখন সে যেন আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে। কোরআনের মর্যাদা যদি সীমাহীন হয়; তাহলে যে মানুষ তার বুকে ৩০ পারা কোরআন খোদাই করে সংরক্ষণ করছে তার কী মর্যাদা হতে পারে? কোরআন পরশ পাথর–যাকে সে সঙ্গ দেয়, তা-ই খাঁটি সোনায় পরিণত হয়ে যায়। সংস্পর্শের এমন বরকত হলে, যে বুক তা সংরক্ষণ করে, সেই বুকওয়ালার মর্যাদা কতটুকু? 

কিয়ামতের ময়দানে যখন কোরআন বহনকারী লোকগুলো আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, তখন একজন ফেরেশতা তাদের সম্মানে আল্লাহকে লক্ষ করে বলবে, ‘হে আল্লাহ, কোরআনে হাফেজকে অলংকার পরিয়ে দিন! তখন আল্লাহ তাকে একটি মর্যাদাপূর্ণ তাজ বা মাথার মুকুট পরিয়ে দেবেন। অতঃপর বলবে, হে আল্লাহ, আরও অতিরিক্ত কিছু পরিয়ে দিন! তখন তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। অতঃপর চাওয়া হবে, হে আল্লাহ, আপনি তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান! আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। অতঃপর হাফেজকে বলা হবে, তুমি একটি করে আয়াত পড়ো আর ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এভাবে প্রতিটি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে মর্যাদার স্তর বাড়তে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৯১৫)

যার বুকের ভেতর কোরআন আছে, সে যদি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তাহলে কিয়ামতের দিন কোরআন তার পক্ষে সুপারিশ করবে। উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা কোরআন কিয়ামতের দিন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। সুরা বাকারা ও আলে ইমরান দুটি ডানা প্রসারিত বিশাল পাখির আকার ধারণ করে; তাদের সাহায্য করবে। উমাম বাহিলি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও জানিয়েছেন, তোমরা নিয়মতান্ত্রিক সুরা বাকারা পাঠ করবে, কেননা তা পাঠ করার মধ্যে বরকত নিহিত আছে এবং তার নিয়মিত তেলাওয়াত না করা আফসোসের কারণ হবে। কারণ বাতিলপন্থিরা তাদের সঙ্গে পারবে না।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৯১০) 

কোরআনের বাহকের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন যে, আমরা যেন অবশ্যই বৃদ্ধ মানুষকে সম্মান করি, কোরআনের বাহককে সম্মান করি; সঙ্গে ন্যায়পরায়ণ শাসককেও সম্মান করি। আর তাদের সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৪৩)

এক হাদিসে হাফেজদের মর্যাদা বোঝাতে গিয়ে সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা করেছে। কোরআন যতটা মহান, কোরআনের বাহকও ততটা মহান হয়ে ওঠে। কোরআন যতটা আলোকময়; কোরআন তার বাহককেও ততটা আলোকময় করে গড়ে তোলে। সেই কোরআন আমাদের সবার বুকের বুকশেলফে শোভা ছড়াক, আর হেদায়াতের রওনক ছড়াক আমাদের ঈমান-বিশ্বাসের শুভ্র শামিয়ানায়। 

লেখক: আলেম ও খতিব