ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

হাইটেক পার্ক প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর, খরচ বাড়ল ১২৭ শতাংশ

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
হাইটেক পার্ক প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর, খরচ বাড়ল ১২৭ শতাংশ
তিনবার মেয়াদ বাড়ার পরও শেষ হয়নি হাইটেক পার্ক প্রকল্পের কাজ। এতে করে খরচ বাড়ছে প্রকল্পের। ছবি: সংগৃহীত

দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়িয়েও দেশে হাইটেক পার্ক নির্মাণে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত সাত বছরে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। এখনো শুরু হয়নি চট্টগ্রাম হাইটেক পার্ক নির্মাণকাজ। এক শতাংশও অগ্রগতি হয়নি কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রাম নলেজ পার্কের। প্রকল্পটি সংশোধন করে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খাতে খরচ বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরামর্শক ফি চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। এবার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে তিন বছর। সঙ্গে খরচ বাড়ছে ১২৭ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশে প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনে হাইটেক পার্ক নির্মাণে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০১৭ সালে ‘জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২ জেলায়)’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বারবার সময় বাড়িয়েও সঠিকভাবে হয়নি কাজ। এতে অর্থের অপচয় হয়েছে। মানুষ প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ সরকারি প্রায় সব প্রকল্পে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না জনগণ। এই প্রকল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। শেষ সময়েও কাজ হচ্ছে না। খরচ বাড়ছে বহুগুণ।’

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে চারজন দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১৫ মে থেকে এ কে এ এম ফজলুল হক (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকল্পের ধীরগতির ব্যাপারে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রথম চার বছরে তিনজন পিডি দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন কারণে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যাকেজ ডব্লিউডির আওতায় রংপুর, নাটোর, ময়মনসিংহ ও জামালপুর এবং ডব্লিউডি-বির আওতায় ঢাকা, গোপালপুর, খুলনা ও বরিশাল হাইটেক পার্ক নির্মাণে এলওসি ঋণের শর্ত অনুযায়ী ভারতের এলএনটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর তারা সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করে। প্রকল্পের মেয়াদ জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটা সত্য। গত এপ্রিল পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৮ শতাংশ। বাকি কাজ এই সময়ে হবে না।

দ্বিতীয়বার সংশোধন করে তিন বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থাৎ ২০২৭ সালের জুনে সমাপ্ত করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। আশা করি, এই সময়ের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে। সময় বৃদ্ধির কারণে বেতন-ভাতা বাড়ছে। রেট শিডিউলও ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে পরিবর্তন হচ্ছে। এ কারণে খরচ বাড়ছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা। ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আনতে বন্দরে আমদানি শুল্ক (সিডি) বাবদ খরচ বাড়ছে ১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৫৫ কোটি ডলার বা ৬০৫ কোটি টাকা খরচ বাড়ছে। মোট খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ও দেশীয় অর্থ ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৭১ লাখ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট তিন বছর মেয়াদ বাড়ানোর সম্মতি দিয়েছে।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘প্যাকেজ ডব্লিউডি-সির আওতায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও সিলেট- এই চারটি হাইটেক পার্ক নির্মাণের অগ্রগতি একটু কম হবে। কারণ অল্প কয়েক মাস আগে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর চট্টগ্রামের মেয়র এখনো জায়গা বুঝিয়ে দেননি। কুমিল্লার আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৫২ শতাংশ, চট্টগ্রামের দশমিক ৪৬ শতাংশ, কক্সবাজারের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ও সিলেটের অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। 

পরামর্শককে অতিরিক্ত ফি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ার পরে তা নিষ্পত্তিযোগ্য বলে অডিট আপত্তিতে বিবেচনা করা হয়েছে। পাজেরো জিপ গাড়ি অন্য কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে পিডি বলেন, ‘হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাড়ি না পাওয়ায় প্রকল্পের এই গাড়িটি ব্যবহার করতেন। পরে আমাকে ব্যবহার করার সুযোগ দেন।’ 

বাংলাদেশের আইটি শিল্পের উন্নয়ন ও আইটি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য সরকার ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের জন্য প্যাকেজ ডব্লিউডি-এ এবং প্যাকেজ ডব্লিউডি-বির আওতায় ৭ তলা স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণ এবং প্যাকেজ ডব্লিউ-সির আওতায় ৫তলা স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ও জিওবি ২৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে অর্থাৎ তিন বছরে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। 

অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও একই দশা হয়েছে। বাধ্য হয়ে খরচ ছাড়া এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তারপরও কাজের কাজ হয়নি। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় তিন বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার জন্য সরকার সময় বেঁধে দেয়। একই সঙ্গে ৫০ কোটি টাকা বা প্রায় ৩ শতাংশ খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বেতন ও ভাতা বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণও দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরামর্শক ফি চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। যানবাহনের খরচও বাড়ানো হয়েছে। ১ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশে ১ হাজার ও জাপানে ৫০ জন। আরও প্রায় ৭ হাজার জনকে প্রশিক্ষণের সংস্থান রাখা হয়েছে। 

প্রকল্প সূত্র মতে, এপ্রিল পর্যন্ত রংপুরের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া নলেজ পার্কের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, নাটোর নলেজ পার্কের ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ নলেজ পার্কের ২৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, জামালপুরের ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, খুলনার ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশাল নলেজ পার্কের ২০ শতাংশ, গোপালগঞ্জ নলেজ পার্কের ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২৫ শতাংশ, সিলেটের ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার কুমিল্লা নলেজ পার্কের অগ্রগতি এক শতাংশও হয়নি। আগামী জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এখনো খুলনা নলেজ পার্কের জন্য প্রায় ৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের অফিসে প্রক্রিয়াধীন। চট্রগ্রাম নলেজ পার্ক নির্মাণে ৯ দশমিক ৫৫ একর জমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। 

আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করতে ও উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানে তিন মাস পর পর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) সভা হওয়ার কথা। দীর্ঘ এই সময়ে ২৪টি হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১৫ পিআইসি ও ১৩টি পিএসসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভা নিয়মিত হলে বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যেত। 

এই প্রকল্পের কাজ করতে বিভিন্ন সময় অর্থের লেনদেন করতে কিছু ভুলত্রুটি ধরা পড়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯টি অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়। তার মধ্যে পাজারো জিপ গাড়ি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেও অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শককে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়েছে। সেই অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হয়নি। 

প্রতিবেদনে প্রকল্পের দুর্বল দিকের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের সহায়তা পুরোপুরি পাওয়া যায় না। এ জন্য জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। করোনাকালে ১৭ মাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ভ্যাট খাতে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের ফলে নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পের প্যাকেজ ডব্লিউডি-সির আওতায় কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট নলেজ পার্ক বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেখানে মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩০ মাস বা আড়াই বছর। তাই পুরো কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। 

‘কিছু বোঝার আগেই গুলি লাগে কোমরে’

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
‘কিছু বোঝার আগেই গুলি লাগে কোমরে’
গুলিতে আহত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসারত কয়েকজন। ছবি : খবরের কাগজ

২০ জুলাই শনিবার, তখন কারফিউ জারি হয়েছে, অবস্থা শান্ত দেখে মিলন বেগম তার চৌদ্দ বছরের ছেলে মিরাজকে ঘরের পাশের সবজির দোকানে পাঠান কাঁচা মরিচ আর ধনেপাতা কিনতে। ঘর থেকে বের হয় মিরাজ। কিন্তু কিছুদূর যেতেই গুলি লাগে তার শরীরে। ঠিক বুঝতে পারে না মিরাজ কী হলো, অচেতন হয়ে পড়ে যায় রাস্তায়। পরে রাতে তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। দ্রুত রক্ত বন্ধ করে ভর্তি করা হয়। রবিবার অস্ত্রোপচারের পর এখন সার্জারি ওয়ার্ডে আছে সে। তবে আন্দোলনে না গিয়েও এমন আঘাতে এখনো আতঙ্কিত মিরাজ। তাই স্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে সরেজমিনে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা পাই মিরাজের। হাসপাতালের বেডে ছেলের শিহরে উদ্বিগ্ন মুখে বসে ছিলেন মা মিলন বেগম। তার কাছ থেকেই জানতে পারি মিরাজের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি।

মিরাজের মতো কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত আরও অনেকেই এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢামেক হাসপাতালে। এদের একজন জিহাদ। গত শুক্রবার সে জুমার নামাজ পড়ে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বন্ধুদের সঙ্গে। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তার কোমরে। এরপর বেরিয়ে যায় পেট দিয়ে। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে জিহাদ। তার বড় ভাই জাহিদ জানান, জিহাদের অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তবে চিকিৎসকরা আশা করছেন আর কয়েক দিন পরে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হবে জিহাদ।

সার্জারি বিভাগের একই ওয়ার্ডে মিরাজের পাশের বেডে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন নার্গিস। তার পিকআপচালক স্বামী কাজল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নার্গিস বলেন, পিঠ দিয়ে ঢুকে গুলি পেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। এখন একটু ভালো, আল্লাহই বাঁচাইছে...।

তিনি জানান, ফকিরাপুল থেকে যাত্রাবাড়ী দিয়ে যাচ্ছিলেন কাজল। রাস্তায় গোলমাল দেখে গাড়ি থামিয়ে একটু এগিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন যে সামনে আর যাওয়া ঠিক হবে কি না। কিন্তু সামনে এগোনোর আগেই গুলি লাগে কাজলের শরীরে। কে বা কারা গুলি করেছে তা বলতে পারেননি কাজল।

ঢামেক হাসপাতালের কেবল সার্জারি বিভাগের ৬টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৫ থেকে ৭ জন রোগী ভর্তি আছে গুলিবিদ্ধ হয়ে।

বৃহস্পতিবারের প্রতি ওয়ার্ডের হিসাব বলছে, বেলা ১১টা পর্যন্ত ২১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২৭টি সিটের বিপরীতে আছে ৫৬ জন রোগী, ২১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮টি সিটের বিপরীতে রোগী আছেন ৫০ জন, ২১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ সিটে রোগী আছেন ৪১ জন, ২১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ সিটে রোগী আছেন ৩৪ জন, ২১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৫টি সিটের বিপরীতে রোগী ৪৬ জন, ২২০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩১টি সিটের বিপরীতে রোগী আছেন ৪৩ জন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন নার্স খবরের কাগজকে বলেন, আমরা প্রতি সিটের বিপরীতে ৪ জন করে রোগীকে সেবা দিচ্ছি। পরিস্থিতির কারণে রোগী বেশি। সুতরাং সবাইকে সেবা তো দিতেই হবে। এখন আমাদের নতুন রোগী ভর্তি নেওয়ার সময় তাই কিছুক্ষণ পর রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

সব নথি পুড়ে ছাই, লুণ্ঠিত ৪৬ অস্ত্র নিয়ে উৎকণ্ঠা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ পিএম
সব নথি পুড়ে ছাই, লুণ্ঠিত ৪৬ অস্ত্র নিয়ে উৎকণ্ঠা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর, ফটক ভেঙে বন্দি পালানো ও লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই কারাগারের সব নথি। গত চার দিনে পলাতক ৮২৬ বন্দির মধ্যে ৪৬৮ জন আত্মসমর্পন করেছেন বা থানাপুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন। লুট হওয়া ৮৫ অস্ত্রের মধ্যে ৩৯টি, ১ হাজার গুলি ও অনেক হাতকড়া উদ্ধার করা হয়েছে। নাশকতার ঘটনায় কারাগারের ১১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারা অধিদপ্তর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

সূত্র অনুসারে, দেশের ইতিহাসে এর আগে এমনভাবে কোনো কারাগার থেকে সব আসামি পালানো ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।

এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে দেশের সব কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি কারাগারগুলোতে সেনা টহল  অব্যাহত রয়েছে। 

কারা সূত্র জানায়, এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিচার বিভাগীয় দুটি তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম সচিব ফারুখ আহম্মেদকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি ও কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নরসিংদী কারাগারের জেল সুপার, জেলারসহ সেখানে দায়িত্বরত সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কারাগারে এখন দায়িত্ব পালন করছেন নতুন একজন জেল সুপার ও দুজন ডেপুটি জেলার। অগ্নিকাণ্ডের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে নরসিংদীর কারাগারটি। সেখানে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, ১৫ হাজার সন্ত্রাসী হামলা চালায় কারাগারে। পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ জন কয়েদির মধ্যে ছিল ৯ জন জঙ্গি ও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এদের অনেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। কারাগারে হামলার প্রাথমিক কারণ হিসেবে জানা গেছে, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে নাশকতা চলছিল তাতে অস্ত্র ও বন্দিদের ব্যবহার করা।

এ ঘটনায় ২৩ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া দেশকে বিপর্যস্ত করতে এ আক্রমণ হয়েছে। নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের ধরে আইনের আওতায় আনতে যা যা করা দরকার সরকার সবই করবে। নরসিংদী কারাগারের যে জায়গাকে আমরা সেফ জোন মনে করি, সেখানে তারা ভাঙচুর তো করেছেই, অগ্নিসংযোগও করেছে। অস্ত্রাগার লুট করেছে। যেসব জঙ্গি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, আমাদের পুলিশ বাহিনী যাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আটক করেছিল, এখান থেকে তাদেরকে সন্ত্রাসীরা মুক্ত করে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য দেশকে একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়া। তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেন এই ঘটনা ঘটল, কারও গাফিলতি আছে কি না, কেউ এখানে সহযোগিতা করেছে কি না, এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তিন সদস্যের কমিটি করেছেন আইজি প্রিজন। আর ৬ সদস্যের কমিটি করেছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। যদি কারও গাফিলতি থাকে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘কারাগারের ফটক ভেঙে বন্দি ও অস্ত্র লুটের ঘটনা দেশের ইতিহাসে নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। এখনো উদ্ধার হয়নি ৪৬টি অস্ত্র। এ নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠায় রয়েছি। এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে সে জন্য দেশের কারাগারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে।’

নথি পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় তিনি বলেন, ‘আগুন দেওয়ায় কারাগারের সব নথি পুড়ে গেছে। এখন আসামিদের ডিজিটাল যে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছে সেই তথ্যের ভিত্তিতে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, এই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।’ 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কারাগারে অগ্নিসংযোগ ও সেলের তালা ভেঙে ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যান। পাশাপাশি অস্ত্র-গোলাবারুদ ও খাদ্যপণ্য লুট এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় নরসিংদী জেলা কারাগার। 

‘বাবা তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া’

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৫০ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৬ পিএম
‘বাবা তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া’
বাড্ডা এলাকায় সহিংসতায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী রিফাতের একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

গুলি লাগায় মো. রিফাত হাওলাদারের ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। হঠাৎ এক পা হারিয়ে এখন রাজ্যের দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কথা বলতে বলতেই গলা জড়িয়ে আসে তার। দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এই ছাত্র বলছিল, ‘এখন আমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলার মাঠে থাকার কথা। কিন্তু এক গুলিতেই আমার সব স্বপ্ন শেষ।’

ক্ষোভ ঝেড়ে বলে, ‘একদিন আমার এই পা সাক্ষী দেবে কত বড় অন্যায় হয়েছে আমার সঙ্গে। বড় হয়ে অফিসার কি আর হতে পারব?’ পাশে থাকা এই কিশোরের বাবা ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মো. রিয়াজ ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারপরনাই দুর্ভাবনায় পড়েছেন। তবু সন্তানকে সাহস দিয়েছেন এই বলে যে, ‘কতজনের তো প্রাণ-ই চলে গেছে। তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রামপুরা ও বাড্ডা রোডে সংঘর্ষের সময় গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রিফাতের পায়ে গুলি লাগে। পরে রিকশায় করে তাকে মেরুল বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে এক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নিয়ে যাওয়া হয় এএমজেড হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সরেজমিন এই হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগে গুলিবিদ্ধ ৩৬ জন ভর্তি রয়েছেন। এখানেই বেশির ভাগ আহতের চিকিৎসা চলছে। তাদের সবার শরীরের কোনো না কোনো অংশে গুলি লেগেছে। কমপক্ষে চারজনের পা অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া আরও কয়েকজনের পা-হাত কেটে ফেলতে হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। বাকিরা অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ক্যাজুয়ালটি-১, ক্যাজুয়ালটি-৩ বিভাগ ও নতুন ভবনেও কয়েকজন আহত ভর্তি আছেন বলে একজন নার্স জানান। 

ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগের ১৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ১৬ বছরের মো. নাদিমও এক পা হারিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি এমব্রয়ডারি কারখানায় কাজ করা নাদিম কাজ শেষ করে শনিবার বিকেলে বাসায় ফেরার পথে চিটাগাং রোডে তার পায়ে গুলি লাগে। পরে তিনটি হাসপাতাল ঘুরে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তার মা মরিয়ম জানান, একটা গুলি ছেলের হাঁটুর মধ্য দিয়ে ঢুকে যায়। পুরো পায়ের মাংস কালো হয়ে পচন ধরায় সোমবার চিকিৎসকরা তার পা কেটে ফেলেন। এই কিশোরের মা আরও জানান, তার স্বামী অটোরিকশাচালক। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে নাদিম সবার বড়। মাসে ৭ হাজার টাকা আয় করত। দরিদ্র এই পরিবারের এখন চিকিৎসার খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

কাঁদতে কাঁদতে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেটা এখন বেঁচে থেকেও মরার মতো। ওর জীবনের কোনো দাম আর নেই।’ 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে এই হাসপাতালে এসেছে গুরুতর আহতরা। বিশেষ করে চিটাগাং রোড, কুড়িল, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে আহতদের নিয়ে আসা হয়। আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও সিএনজিচালক, গাড়িচালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন।

চিটাগাং রোড এলাকায় গত শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হন সেলুনে কাজ করা রাকিব। এই কিশোরেরও বাম পা কাটতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে পঙ্গুতে চিকিৎসাধীন ডেমরার দনিয়া এলাকার সিএনজিচালক মো. আমিরুল ইসলামের ডান পায়ে গত শনিবার গুলি লাগে। কোথা থেকে কীভাবে গুলি লাগল বুঝতেই পারেননি তিনি। ইয়াসিন নামের ১১ বছরের এক শিশু কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়। বাড্ডা-নতুনবাজার এলাকা থেকে ডান হাতে গুলি লেগে পঙ্গুতে ভর্তি আছেন মো. সজিব খান।

তিনি দাবি করেন, ‘পুলিশ আমাদের বলল এখন রাস্তা পার হতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। এমন অবস্থায় কোথা থেকে গুলি এসে আমার হাতে লাগল, জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, এমন এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়েছে যে রাস্তার পাগল, এমনকি কুকুরের মতো অবুঝ প্রাণীরাও এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেছে। আমি হাসপাতালে থাকায় আমার সাত বছরের সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।’

ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ক্যাজুয়ালটি বিভাগ-১-এ ভর্তি টঙ্গীর মো. রাজুর মা জানান, ব্যথায় দিনরাত চিৎকার করছে তার ছেলে। এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে প্রশ্ন রাখেন, ওর স্ত্রী, দুই বাচ্চার কী হবে এখন?

এদিকে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আহতদের তথ্য নিতে গতকাল দুপুরে হাসপাতালে যান পুলিশ সদস্যরা। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, হাতের ছাপ নেওয়ায় আতঙ্ক দেখা দেয় আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের মাঝে। 

নিটোরের অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এ পর্যন্ত আড়াই শর বেশি রোগী এসেছেন সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়ে। এর মধ্যে বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে সবাই এখন শঙ্কামুক্ত। ছয়জনের পা কেটে ফেলতে হয়েছে।’

তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ যারা এসেছেন তাদের মধ্যে ১৮ জুলাই আসা ১৭ জন শিক্ষার্থী। পরে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী নেই।

কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে ইসির ৩০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৭ পিএম
কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে ইসির ৩০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প
নির্বাচন কমিশন (ইসি)

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে ২৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের নাম এনহেন্সিং ইফিসিয়েন্সি অব এপ্লয়িজ অব ইলেকশন কমিশন সেক্রেটারিয়েট (ইইইইসিএস)। এর মূল লক্ষ্য- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইসির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বাড়ানো। প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মাধ্যমে যেসব প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব হয় না, সে ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। বিশেষ করে তাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়ানো, যাতে বিদেশে গিয়ে কমিউনিকেশন ও নেগোসিয়েশনের দক্ষতা বাড়ে। এ ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর নানা উদ্যোগ রয়েছে প্রকল্পে। ইসির প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। চলতি মাসে এটি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পের জনশক্তি কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রকল্প পরিচালনায় ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে না। মোট জনবল থাকবে মাত্র ছয়জন। তার মধ্যে নতুন করে একজন হিসাবরক্ষক, একজন গাড়িচালক ও একজন অফিস সহকারী নিয়োগ দেওয়া হবে। বাকি পদগুলোতে কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারাই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন এবং এই কাজের জন্য তাদের বাড়তি সম্মানীও থাকবে না। 

এর আগে গত ৩০ জুন শেষ হয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ (এসসিডিইসিএস) প্রকল্পের কার্যক্রম। ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পেরও মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। লক্ষ্য ছিল- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবার মান বাড়াতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা পেতে সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি কমানো। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশে প্রশিক্ষণের ৫০ শতাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। 

ওই প্রকল্পের অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। তবে প্রকল্প চলাকালে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে ১০০ জন কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর কথা থাকলেও সেখানে ৫০ জনকে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আর নির্ধারিত বাজেটের তুলনায় ব্যয় সাশ্রয় হওয়ায় ১০ শতাংশ অর্থ উদ্ধৃত হয়েছে, যা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’ ওই প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের নতুন প্রকল্প আরও বেশি কার্যকর ও সফল হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন অতিরিক্ত সচিব। 

এ ছাড়া ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে ‘নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটির পরিচালক করা হয়েছে সংস্থার প্রশাসন ও অর্থ শাখার যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারকে। এ ছাড়া পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও প্রকাশনা শাখার উপপ্রধান মুহাম্মদ মোস্তফা হাসানকে উপপ্রকল্প পরিচালক এবং সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. রাজীব আহসানকে সহকারী প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি ৩৭ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকার এই প্রকল্পের ব্যয়ের ৪০টি খাত নির্ধারণ করা হয়। খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে প্রশিক্ষণে- ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এরপর রয়েছে সেমিনার, আউটসোর্সিং এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি খাতের ব্যয়। প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে নির্বাচন কমিশন কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ফলাফল ব্যবস্থাপনা সিস্টেম, স্মার্ট নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা অ্যাপ, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম, এনআইডি সার্ভার প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সেবা ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের চেষ্টা করছে।

রোগীতে ঠাসাঠাসি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
রোগীতে ঠাসাঠাসি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

জালাল উদ্দীন বোন ক্যানসারের রোগী, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কথা বলছিলেন কেমোথেরাপি কবে দিতে পারবেন তা নিয়ে। তার কেমো দেওয়ার তারিখ ছিল গত ২০ ও ২১ জুলাই। কিন্তু চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে গত ২০ জুলাই শনিবার থেকে কারফিউ ও রবি-সোম-মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় বন্ধ থাকে কেমোথেরাপি দেওয়ার কার্যক্রম। কারণ স্বাভাবিক সময়েও সাধারণ ছুটিতে এখানে কেমো দেওয়া বন্ধ থাকে। ফলে জালালের কেমো দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু বুধবার (২৪ জুলাই) পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় তিনি এসেছেন কেমো নিতে।

খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমার নিয়মিত কেমো চলছে। তাই হাসপাতালের পাশেই বাসা নিয়ে থাকি। এ জন্য আমার এখানে পৌঁছতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু কারফিউ ও সাধারণ ছুটি থাকায় কেমো দেওয়া হয়নি।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলমান আন্দোলনের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জালালের মতো অনেকেই পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে। কেউ সেবা নিতে ঢাকার বাইরে থেকে হাসপাতালে আসতে পারেননি সময়মতো, আবার কারও চিকিৎসা শেষ হলেও বাড়ি ফিরতে পারেননি।

তেমনই একজন ফরিদপুরের বাসিন্দা কাদের মোল্লা, আক্রান্ত ফুসফুসের ক্যানসারে। চিকিৎসা নিতে ভর্তি ছিলেন এই হাসপাতালে, দুই দিন আগে ছুটি দিলেও চলমান পরিস্থিতির কারণে তিনি যেতে পারেননি বাড়িতে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুনলাম এখন বাস চলছে, এখন বাড়ি যাব।’ 

অন্যদিকে পায়ের টিউমার থেকে ক্যানসার হয়েছে সিলেটের কিশোর সালমান খানের। অবরোধ, কারফিউ আর সাধারণ ছুটির কারণে গতকাল রাতে এই হাসপাতালে এসে পৌঁছলেও এখনো তার চিকিৎসা ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। আর পরীক্ষা চলার সময় তাকে ভর্তিও করা হচ্ছে না। তাই হাসপাতালের কোরিডরে ঠাঁই নিয়েছে সে ও তার পরিবার। 

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. আশফিকা জিনি বলেন, ‘আমাদের জরুরি বিভাগে আজ (বুধবার) সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টা একজন ডাক্তারই ডিউটি করেছেন। কারণ তিনি বাসায় ফিরতে পারছিলেন না। আবার অন্য কেউ ডিউটিতে আসতেও পারছিলেন না। তবে এখন সব স্বাভাবিক।’ তিনি জানান, বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২২ জন রোগী এসেছেন জরুরি বিভাগে।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাতটি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। ফলে সাতজন আছেন পোস্ট-অপারেটিভে। মহিলা ওয়ার্ডগুলোতে পেইড-আনপেইড মোট ১২১টি সিটে রোগী আছেন ১১৬ জন। অন্যদিকে পুরুষ ওয়ার্ডগুলোতে মোট ১২২টি সিটের বিপরীতে ভর্তি আছেন ১০৬ জন। জানা গেছে, সাধারণ ছুটিতে তিন দিন বন্ধ ছিল ডে-কেয়ার কেমোথেরাপি ও আউটডোর। গতকাল থেকে আবার সব কার্যক্রম চালু হয়েছে।