ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

লঙ্কানদের টিকে থাকার লড়াই

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম
আপডেট: ১১ জুন ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম
লঙ্কানদের টিকে থাকার লড়াই
ছবি : সংগৃহীত

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চলতি আসরে খুব কঠিন সময় পার করছে শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নরা গ্রুপপর্বে এবার দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরেছে। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে; দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে। টানা দুই হারে সুপার এইট পর্বে উঠা কঠিন হয়ে গেছে দলটির। ডি-গ্রুপের পাঁচ দলের লড়াইয়ে লঙ্কানদের বাকি আর কেবল দুই ম্যাচ। যার একটি বুধবার (১২ জুন) ভোরে নেপালের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে। কাগজে-কলমে টুর্নামেন্টে টিকে থাকা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা বাহিনীর সামনে নেপালের বিরুদ্ধে জয়ের কোনো বিকল্প নেই!

টানা দুই ম্যাচের দুটিতে জিতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের অবস্থানে বাংলাদেশ। এক ম্যাচে ২ পয়েন্ট টাইগারদের। তিন নম্বরে থাকা নেদারল্যান্ডের সংগ্রহ ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট। চার ও পাঁচ নম্বরে থাকা নেপাল এবং শ্রীলংকা এখনো পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি। টুর্নামেন্টে প্রথম জয়ের খোঁজে রয়েছে দল দুটি।

আইসিসির সহযোগী সদস্য নেপালের বিরুদ্ধে আগে ম্যাচ খেলার কোনো অভিজ্ঞতা নেই শ্রীলঙ্কার। ওয়ানডেতে যেমন নেই, তেমনি টি-টোয়েন্টিতেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবার মুখোমুখি হবে দুদল। ফ্লোরিডার লডারহিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচ সামনে রেখে দুদলই রয়েছে একই অভিজ্ঞতার সামনে। এবারের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার মতো নেপালও হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে। গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে হেরেছে হিমালয়কন্যারা। গ্রুপপর্বে এখনো তিন ম্যাচ বাকি নেপালের। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে রোহিত পাওদেল বাহিনী।

প্যারিস অলিম্পিক নয়নকাড়া-ব্যতিক্রমী জাঁকালো উদ্বোধন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০ এএম
নয়নকাড়া-ব্যতিক্রমী জাঁকালো উদ্বোধন
ছবি: সংগৃহীত

পানি দিয়ে তৈরি করা হলো বিশেষ পর্দা। সেই পর্দা ভেঙে পন্ট ডি’এলিনা ব্রিজের তলা দিয়ে বের হয়ে এল গ্রিস। তার পেছনে উদ্বাস্তু অলিম্পিক দল। এরপর একে একে নিজ দেশের পতাকা নিয়ে অংশগ্রহণকারী সব দলের মার্চ পাস্ট। ফ্রান্সের সিন নদী তখন নানা রঙে সজ্জিত। মার্চ পাস্টের ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের মোহিত করলেন লেডি গাগা, আয়া নাকমুরাসহ তারকা পপ স্টারদের গান। ভালোবাসার শহর প্যারিস, সে উপলক্ষে থাকল বিশেষ এপিসোড। সব মিলিয়ে নয়নকাড়া-ব্যতিক্রমী জমকালো উদ্বোধনের মধ্যে পর্দা উঠেছে প্যারিস অলিম্পিক গেমসের। 

অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সাধারণত হয়ে থাকে স্টেডিয়ামে। সেই ধারা থেকে এবার বের হয়ে এসেছে ফ্রান্স। প্যারিসের প্রাণখ্যাত সিন নদীকে দারুণ ঢঙে ব্যবহার করে গোটা বিশ্বকে মনমুগ্ধকর এক অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছে ফরাসিরা। আগামী ১১ আগস্ট পর্যন্ত এই শহরেই চলবে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ। যেখানে অংশ নিয়েছেন ২০৬টি দেশের সাড়ে ১০ হাজার অ্যাথলেট। ৩৫টি ভেন্যুতে ৩২ খেলায় চলবে ৩২৯ ইভেন্টের পদকের লড়াই। পাঁচ সদস্যের দল নিয়ে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশও। মার্চ পাস্টে বাংলাদেশের হয়ে পতাকা বহন করেন আর্চার সাগর ইসলাম। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে বৃষ্টিস্নাত ছিল প্যারিসের শহর। তাতে অবশ্য ম্লান হয়ে যায়নি বর্ণিল উদ্বোধন। ৯৪টি নৌকা ও বার্জে করে ৭ হাজার প্রতিযোগী আইফেল টাওয়ারের পূর্ব কোণের অস্টারলিটজ সেতু থেকে ট্রোকাড রোতে পৌঁছান। যাদের উচ্ছ্বাস-আনন্দ নদীর ধারে উপভোগ করেছেন কয়েক লক্ষাধিক দর্শক।

অ্যাথলেট ও পারফরমাররা নৌকায় পাড়ি দেন প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ। উস্তালিজ সেতু থেকে চলা শুরু করে নৌকা নথু-দেম ক্যাথেড্রালের পাশ ঘেঁষে, আরও অনেক সেতুর নিচ দিয়ে অনেক গেটওয়ে ধরে প্যারিসের দর্শনীয় নানা জায়গা ছুঁয়ে আইফেল টাওয়ারের কাছে গিয়ে শেষ হয় ভ্রমণ। পুরো যাত্রাপথের আকাশ ও পানিতে ছিল রঙের খেলা। পথে দুই ধারে নদীর তীরে, সেতুর ওপরে এবং চারপাশে গান, নাচসহ নানা পারফরম্যান্সে রঙিন হলো প্যারিসের আকাশ। প্যারেডের পাশাপাশি নদীর দুই তীরে চলেছে ফ্রান্সের দেশজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নটর ডেম ক্যাথিড্রালের সামনে হলো গান। পারফর্ম করেন মুল্যাঁ রুজ। এতে ফিরে এল ১৮২০-এর দশকে সৃষ্টি হওয়া একটি বিশেষ নাচ। মার্কিন পপ তারকা লেডি গাগা গাইলেন নিজস্ব ঢঙে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আয়া নাকামুরার পারফরম্যান্স। ফরাসি ভাষা জানা শিল্পীদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় শিল্পী পারফর্ম করেন এতে। মাঝে দেখা গেল রহস্যময় এক মশালবাহককে। কখনো ভিডিওতে, কখনো বাস্তবে পুরো শহর চষে বেড়ালেন তিনি।

অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপক ছিলেন এনবিসির মাইক তিরিকো। সঙ্গে ছিলেন হোদা কোতব, সাবানা গুথরি ও মারিয়া টেলর। সংগীতশিল্পী কেলি ক্লার্কসন, সেলিন ডিওনের গান মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। 

ফ্রান্সের থিয়েটার ডিরেক্টর থমাস জলির পরিকল্পনায় পুরো অনুষ্ঠান মোট ১২টি ভাগে ভাগ করা হয়। এতে অংশ নেন তিন হাজারের মতো নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও বিনোদনকর্মী। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা সিন নদীর দুই তীরে, সেতুতে ও কাছাকাছি স্মৃতিস্তম্ভগুলোয় নিজেদের কারিকুরি দেখান। সব মিলিয়ে বিশ্ব দেখল অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এক অনন্য আয়োজন। কোনো স্টেডিয়াম কিংবা নির্দিষ্ট আঙিনায় নয়, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্যতিক্রমী এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নদীর তীরে ও নদীকেন্দ্রিক করে প্রতিশ্রুত ‘সাহসী’ আয়োজনের মূল ছাপ রাখলেন ফরাসিরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় এক শর বেশি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। নদীর তীর ধরে উদ্বোধনী আয়োজন উপভোগ করেন ৩ লাখের বেশি দর্শক। পথের নানা জায়গায় ছিল ৮০টি বিশালাকৃতির স্ক্রিন।

সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মন কেড়েছে সবার। এবার পদক লড়াইয়ের পালা। যা পদকের লড়াই ছাপিয়ে খেলার চিরন্তন চেতনার উদযাপন। এটি অনেকটা বিশ্বভ্রাতৃত্বেরও। মানুষে মানুষে সংযোগ স্থাপনের মঞ্চ যে এই অলিম্পিক গেমসই।

 

ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:০১ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:০১ পিএম
ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের
ছবি: সংগৃহীত

এশিয়া কাপ শুরুর আগে বাংলাদেশের সামনে দুশ্চিন্তার কারণ ছিল ব্যাটিং ইউনিটের ব্যর্থতা। কঠিন দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পুরোনো ওই সমস্যা জেগে ওঠে নিগার সুলতানা জ্যোতি বাহিনীর সামনে। ওই ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেমিফাইনালে ভারতের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডাম্বুলায় নারী এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে মাত্র ৮০ রান তোলে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ছাড়া আর কেউ ভারতীয় বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। বাকিরা ছিলেন সবাই যাওয়া আসার মিছিলে। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে জ্যোতির ব্যাটে আসে ৩২ রান। এই ইনিংস খেলতে তিনি খরচ করেন ৫১ বল। এছাড়া ১৯ রান আসে স্বর্ণা আক্তারের ব্যাটে। 

ভারতের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন রেনুকা সিং ও রাধা যাদব। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন পুজা ভাস্ত্রেকার দীপ্তি শর্মা।

৮১ রানের ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে ওপেনিং জুটিতে জয় নিশ্চিত করে ভারত। বাংলাদেশি বোলারদের উপর দাপট দেখিয়ে ১০ উইকেটের জয় তুলে নেয় এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার পথে স্মৃতি মান্ধানা ৫৫ ও শেফালি ভার্মা ২৬ রান করেন।
 

সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০২:২০ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০২:২১ পিএম
সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
ফাইল ছবি

ডাম্বুলায় নারী এশিয়া কাপের প্রথম সেমিফাইনালে শুক্রবার (২৬ জুলাই) মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এই ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই বাড়তি উন্মাদনা। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়েও থাকবে সেই উন্মাদনা। টসের সময় ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কাউর বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশ) সব দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দেয়। আশা করি দারুণ লড়াই হবে।’

সেমিফাইনালে বাংলাদেশের একাদশে এসেছে এক পরিবর্তন। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে একাদশে থাকা সাবিকুন নাহারের বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন মারুফা আক্তার। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তাকে রাখা হয়েছিল সাইড বেঞ্চে।

পার্থ/সালমান/

অলিম্পিকে চুরির শিকার আর্জেন্টিনা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৮ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৮ পিএম
অলিম্পিকে চুরির শিকার আর্জেন্টিনা
ছবি- সংগ্রহীত

প্যারিস অলিম্পিকে মরক্কোর বিপক্ষে রেফারির নজিরবিহীন সিদ্ধান্তের কারণে ম্যাচ হারে আর্জেন্টিনা। সমর্থকদের গোলযোগের কারণে দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর খেলা মাঠে গড়ালে রেফারির দেওয়া অদ্ভুতুড়ে সিদ্ধান্তের কারণে মরক্কোর কাছে হাভিয়ের মাশচেরানোর দল। ওই ম্যাচে হারের আগে প্যারিসে চুরির শিকার হয়েছে আর্জেন্টিনা দল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আর্জেন্টিনা কোচ।

বিভিন্ন গণমাধ্যম জানাচ্ছে, অর্থের পাশাপাশি ব্যবহার্য মূল্যবান জিনিস খোয়া গেছে আর্জেন্টিনা শিবির থেকে। গণমাধ্যমের দাবি অন্তত ৫০ হাজার ইউরো ক্ষতি হয়েছে। চুরির এই ঘটনা ঘটেছে আর্জেন্টিনা দলের অনুশীলনের সময়। বিষয়টি নিয়ে লিঁও পুলিশকে ইতোমধ্যে অভিযোগ জানিয়েছে আর্জেন্টিনা।

চুরির ঘটনা নিয়ে আর্জেন্টিনা কোচ হ্যাভিয়ের মাশচেরানো সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ওরা (খেলোয়াড়রা) অনুশীলনে গিয়েছে, তারা এদিকে অলিম্পিক গেমসে চুরি করেছে। অনুশীলনের পর আমরা কিছু বলতে চাইনি। এতে কোনো কাজ হবে বলে মনে হয়নি। তবে অবশ্যই এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘থিয়াগো আলমাদা তাঁর ঘড়ি ও আংটি খুঁজে পাচ্ছেন না।’

লিঁওতে আগামীকাল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইরাকের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আশা টিকিয়ে রাখতে মাচেরানোর দলের জন্য গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ দুটি ম্যাচই জয় নিশ্চিত করতে হবে। গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ইউক্রেন। 

আবেগের ক্রিকেটে হতাশার গল্প

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
আবেগের ক্রিকেটে হতাশার গল্প
ফাইল ছবি

দ্বিতীয় পর্ব...

দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের বলার মতো সাফল্য হলো ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে পরপর তিনটি সিরিজে পাকিস্তান (৩-০), ভারত (২-১ ও দক্ষিণ আফ্রিকার (২-১) বিপক্ষে সিরিজ জয়। এর আগে ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ (৪-০) করা। এ ছাড়াও আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড, উইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একাধিকবার জিতেছে সিরিজ। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে দুবার। কিন্তু ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো সিরিজই জিততে পারেনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাধিকবার ম্যাচ জিতলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০০৫ সালে কার্ডিফে প্রথম জয়ের পর আর কোনো মাচ জিততে পারেনি। এই হলো ওয়ানডে ক্রিকেটের অবস্থা।

টেস্টের অবস্থা আরও বাজে। ২০০০ সালে টেস্ট পরিবারের সদস্য হওয়ার পর জিম্বাবুয়ে ও উইন্ডিজ ছাড়া আর কোনো দেশের বিপক্ষে সিরিজ জিততে পারেনি। আফগানিস্তানের মতো টেস্ট পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্যের কাছেও হারের নোনা স্বাদ নিতে হয়েছে। পরে আবার জিতেছিল। টেস্টে মাঝে মাঝে পাওয়া জয় থেকে একবার করে হারাতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাকে। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে দুবার। জয় অধরাই থেকে গেছে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এই জয়গুলোর মাঝে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া জয়কে বেশ বড় করে দেখা হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে পথ চলার দুই যুগে ম্যাচ খেলেছে ১৪২টি। সেখানে জয় মাত্র ১৯টি। যার ৮টিই অপেক্ষাকৃত দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একসময়ের দুর্ধর্ষ উইন্ডিজের আগের সেই শক্তি আর নেই। এখন নখ-দন্তহীন বাঘ। তাদের বিপক্ষে জয় আছে ৪টি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একমাত্র জয় এসেছে নিজেদের শততম টেস্টে। হেরেছে ১০৯টিতে। ড্র করতে পেরেছে ১৮টিতে। টেস্ট ক্রিকেটে এখনো ধুঁকছে বাংলাদেশ। 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জয় দিয়ে শুরু করলেও সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে দলের অবস্থা সবচেয়ে বেশি কাহিল। ১৭৬ ম্যাচ খেলে জয় মাত্র ৬৮ ম্যাচে। এই ফরম্যাটের সেরা সাফল্য বলা যায় ইংল্যান্ডকে ৩ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করা। এ ছাড়া ঘরের মাঠে উইকেটের সুবিধা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া (৪-১) ও নিউজিল্যান্ডের (৩-২) বিপক্ষেও সিরিজ জয় আছে। 

দল হিসেবে বাংলাদেশ যেমন এখন পর্যন্ত দেশবাসীকে বলার মতো কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেনি, তেমনি সাকিব ছাড়া বাকি খেলোয়াড়রাও ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দিয়ে নিজেদের বিশ্ব দরবারে সেভাবে আলোচিত করতে পারেননি। সাকিব যদিও বেশ কয়েকবার আইসিসির অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিয়ে সেরা ছিলেন, এমন কি তিন ফরম্যাটেও একসঙ্গে শীর্ষে ছিলেন, এই যা। ব্যাটিংয়ে যেমন আহামরি তেমন কিছু করতে পারেনি, তেমনি বোলিংয়েও। কিন্তু দুটি মিলিয়ে তিনি নিজেকে নাম্বার ওয়ানে নিয়ে যান। আর তা নিয়েই দেশবাসী হয়েছেন আনন্দে আত্মহারা। সাকিব ডুকে গেছেন তাদের অন্তরে। বেড়েছে সাকিবের ব্র্যান্ড ভেল্যু। যে কারণে তিনি বিভিন্ন দেশের ফ্রাঞ্চাইজি লিগ যেমন খেলেছেন, তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও হয়েছেন। ফুলেফেঁপে উঠেছে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চপাণ্ডবের চার পাণ্ডব তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ কাছাকাছি সময়ে ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সালের মাঝে জাতীয় দলের হয়ে খেলা শুরু করেন। সবার আগে শুরু করেন মাশরাফি ২০০১ সালে। কিন্তু এরা কেউই লিজেন্ডারি হতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় প্রথম ৮০ জনেও নেই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান ৮৮ ম্যাচ খেলে মুশফিকুর রহিমের ৫৬৭৬। সেঞ্চুরি ১০টি। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান শচীন টেন্ডুলকারের। ২০০ টেস্ট খেলে রান করেছেন ১৫৯২১। সেঞ্চুরি ৫১টি। কিন্তু মুশফিকের চেয়ে ২/৩টা টেস্ট কম-বেশি খেলা ব্যাটারদের রানও তার চেয়ে অনেক বেশি। ৯০ টেস্ট খেলে পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইউসুফের রান ৭৫৩০, সেঞ্চুরি ২৬টি। আবার মুশফিকের চেয়ে ৩ টেস্ট কম খেলে ২২ সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের ওয়ালি হ্যামন্ডের রান ৭২৪৯। অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ চ্যাপেল ৮৭ টেস্ট খেলে ২৪টি সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৭১১০। এরা সবাই মুশফিকের অনেক আগের ক্রিকেটারের এবং লিজেন্ডারি। কিন্তু মুশফিকের এক বছর পর ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনেক উপরে। ২০১৮ সালে অবসর নেওয়ার আগে তিনি ১৬১ টেস্ট খেলে ১২৪৭২ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় পাঁচে নিয়ে গেছেন তার নাম। নামের পাশে সেঞ্চুরি ৩৩টি। ভারতের বিরাট কোহলির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা শুরু হয় ২০১১ সালে। তিনি এখন বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের একজন। ১১৩ টেস্ট খেলে রান করেছেন ৮৮৪৮। সেঞ্চুরি করেছেন ২৯টি। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তামিম ইকবালের। ২৪৩ ম্যাচ খেলে তিনি রান করেছেন ৮৩৫৭, সেঞ্চুরি ১৪টি। টেস্ট ক্রিকেটের মতো এই ফরম্যাটেও সর্বোচ্চ রান শচীন টেন্ডুলকারের। ৪৬৩ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ১৮৪২৩। সেঞ্চুরি ৪৯টি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো বিরাট কোহলির অবস্থান। তামিম ইকবালের ৪ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া বিরাট কোহলি ২৯২ ম্যাচ খেলে ১৩৮৪৮ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকার তিনে অবস্থান করছেন। রানের দিকে না হলেও সেঞ্চুরিতে ছাড়িয়ে গেছেন টেন্ডুলকারকে। কোহলির সেঞ্চুরি ৫০টি। শচীনের ৪৯টি। তামিমের অভিষেকের বছরই যাত্রা শুরু হয়েছিল ভারতের রোহিত শর্মার। তিনিও ছাড়িয়ে গেছেন তামিম ইকবালকে। ২৬২ ম্যাচ খেলে ৩১ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ১০৭০৯। ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৩২৩টি। উইন্ডিজের ক্রিস গেইলের সর্বোচ্চ ৩৩১টির পরই রোহিতের অবস্থান। সেখানে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা তামিম ইকবালের ১০৩টি। 

টি-টোয়েন্টিতে রোহিত শর্মা ১৫৯ ম্যাচ খেলে ৪২৩১ রান করে সবার উপরে আছেন। দুইয়ে থাকা বিরাট কোহলির রান ১২৫ ম্যাচ খেলে ৪১৮৮ রান। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান সাকিব আল হাসানের। ১২৯ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ২৫৫১। কিন্তু সম্মিলিতভাবে তার অবস্থান ৩৫তম। তার নামের পাশে নেই কোনো সেঞ্চুরি। বিরাট কোহলির আছে একটি। তবে সবচেয়ে বেশি পাঁচটি সেঞ্চুরি রোহিত শর্মার। 

বিশ্ব ক্রিকেট দলগত কিংবা ব্যক্তিগত কোনো রেকর্ডেও নেই বাংলাদেশের নাম। টেস্ট ক্রিকেটে দলগত সর্বোচ্চ রান শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেটে ৯৫২ (ডি.)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ইংল্যান্ডের ৯০৩ (ডি.)। সেখানে বাংলাদেশের দলগত সর্বোচ্চ রান ৬৩৮। সর্বোচ্চ ৫০টির মধ্যেও নেই এই রান। ওয়ানডেতে দলগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ইংল্যান্ডের ৪ উইকেটে ৪৯৮। এ রকম চার শতাধিক রানের ইনিংস আছে আরও ২৭টি। সেখানে বাংলাদেশের দলগত সর্বোচ্চ ৬ উইকেটে ৩৪৯ রান। প্রথম ১০০টির মাঝেও নেই বাংলাদেশের সংগ্রহ। টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান নেপালের ৩ উইকেটে ৩১৪ রান। সেখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ৫ উইকেটে ২১৫। বাংলাদেশের এই সংগ্রহও প্রথম ১০০টির মাঝে নেই। 

টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস উইন্ডিজের ব্রায়ান লারার অপরাজিত ৪০০। শুধু তিন শতাধিক রানের ইনিংসই আছে ৩১টি। সেখানে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ২১৯। বাংলাদেশের হয়ে মোট ডাবল সেঞ্চুরি মাত্র ৫টি, সেখানে সর্বকালের সেরা ব্যাটার স্যার ডন ব্রাডম্যান একাই করেছেন ১২টি। ব্রাডম্যানের সঙ্গে কারও তুলনা করা চলে না। তার কথা বাদ দিলেও শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারারই ডাবল সেঞ্চুরি আছে ১১টি। এ ছাড়া ব্রায়ান লারার ৯টি, ওয়ালি হ্যামন্ড, বিরাট কোহলি, মাহেলা জয়াবর্ধনে ৭টি করে ডাবল সেঞ্চুরি আছে। সেখানে বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি ৩টি। 

ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস লিটন কুমার দাসের ১৭৬। সেখানে বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ভারতের রোহিত শর্মার ২৬৪। এই দুই শতাধিক রানের ইনিংস আছে ১২টি। যার ৩টি আবার এসেছে রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে। আর কারও একাধিক নেই। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সেঞ্চুরি হয়েছে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি। সেটি এসেছে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ওমানের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৩ রান। তার উপরে আছেন ৯৮ জন। ১৭২ রানের ইনিংস খেলে সর্বোচ্চ রানের মালিক অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চ।

বোলিংয়ে টেস্ট ও ওয়ানডেতে একই অবস্থা বিরাজমান। ১৩৩ টেস্ট খেলে ৮০০ উইকেট নিয়ে মুরালিধরন নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন। মুরালিধরনের চেয়ে অনেক পেছনে থেকে বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলার সাকিব আল হাসানের উইকেট ৬৭ টেস্টে ২৩৭টি। অবস্থান ৫৯তম। ওয়ানডে ক্রিকেটেও শ্রীলঙ্কার মুরালিধরন ৩৫০ ম্যাচে ৫৩৪ উইকেট নিয়ে যেখানে চূড়ায় অবস্থান করছেন, সেখানে বাংলাদেশের সেরা বোলার সাকিব আল হাসানের ২৪৭ ম্যাচে উইকেট ৩১৭টি। তার অবস্থান দ্বাদশ। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদের অবস্থান বেশ ভালো। ১২৯ ম্যাচ খেলে ১৪৯ উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসান অবস্থান করছেন তিনে। সবার উপরে থাকা নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদির উইকেট ১৬৪টি। তিনি ম্যাচ খেলেছেন ১২৬টি দুইয়ে আছেন আফগানিস্তানের রশিদ খান। ৯৩ ম্যাচে তার উইকেট ১৫২টি। 

ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত আবেগ তা কিন্তু মূল জাতীয় দল নিয়েই। বয়সভিত্তিক দল বা নারী দল নিয়ে তাদের আবেগের মাত্রা কম। যে কারণে এই সব দলের সাফল্য তাদের হৃদয়ে খুব একটা দোলা দেয় না। কিন্তু মূল জাতীয় দল দেশবাসীকে এখন পর্যন্ত আইসিসি বা এসিসির কোনো শিরোপা উপহার দিতে না পারলেও এই দলগুলোই কিন্তু দেশবাসীকে আইসিসির সর্বোচ্চ শিরোপা যেমন এনে দিয়েছে, তেমনি এশিয়া কাপও জিতেছে। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল আকবর আলীর নেতৃত্বে। আবার ২০২৩ সালে এসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপও জিতেছিল বাংলাদেশের যুবারা। এদিকে মেয়েরা ২০১৮ সালে জিতেছিল টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ। 

এভাবেই বাংলাদেশের আবেগের ক্রিকেট হতাশার গল্প লিখে চলেছে!

প্রথম পর্ব