![ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মারা গেলেন ক্যাশিয়ার রকি](uploads/2024/03/01/1709297869.Jessore.jpg)
মৃত্যুকালে মোবাইল ফোনে মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি করেছিলেন কাচ্চি ভাইয়ের ক্যাশিয়ার যশোরের কামরুল হাবিব রকি (২১)। কিন্তু কলিজার টুকরোকে বাঁচাতে পারলেন না মা। মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মারা গেলেন রকি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার বেইলি রোডের কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনায় তিনি মারা যান।
দরিদ্র পরিবারের অভাব ঘোচাতে মাত্র দুই মাস আগে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন রকি। পরিবারের এই ভরসা ফিরলেন লাশ হয়ে। ছেলের এই করুণ পরিণতিতে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন রকির মা।
শুক্রবার (১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তার লাশ পৌঁছায় গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার ধোপাখোলা কামার পাড়ায়। তার মৃত্যুর খবরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন এক নজর দেখার জন্য। তাদের আহাজারি ও কান্নায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ভারী হয়ে ওঠে বাতাস।
বিলাপ করতে করতে নিহতের মা রিপা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলেটারে মাদ্রাসায় পড়িয়েছি। নামাজ-কালামের ওপরে থাকত। কত আদরের ছেলে ছিল। ও সোনাপাখি। তুমি (রকি) না বলেছিলে, আমার ছাড়া থাকতে পারবা না। কেন তুমি আমারে ছেড়ে চলে গেলে?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমারে কল দিয়েছে। দিয়ে বলছে, মা আমার কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে। আমারে বাঁচাও। আমি রকিকে সান্ত্বনা দিচ্ছি তোমার কিছু হবে না সোনা। দোয়া পড়ো সব ঠিক হয়ে যাবে। তার পরও সে বলতে লাগল, আম্মু আমি আর বাঁচব না। তারপর ফোন কেটে গেল আর কিছু শুনতে পারলাম না। আর কোনো কথাও হলো না। ও আল্লাহ তুমি আমার সোনারে ফিরিয়ে দাও। আমার সোনার বদলে আমারে নিয়ে নাও।’
নিহতের ভাই কামরান হোসেন সাজিম বলেন, ‘আমার ভাই আলিম পাস করে গত ডিসেম্বরে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি নেয়। আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে রকি সবার বড়। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিল। বাবা ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান। তাদের দুজনের আয়ে আমাদের সংসার চলত। ভাইকে এভাবে হারাতে হবে কখনো কল্পনাই করিনি।’
নিহতের মামা জিহাদ হোসেন বলেন, ‘সেদিন রাতে রকির মেসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়েছি, সে রিসিভ করেনি। পরে আমাকে কল ব্যাক করে বাঁচানোর আকুতি জানায়। আমি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। তারা জানায় উদ্ধারকাজ চলছে, ধৈর্য ধরুন। এরপর আমি ঢাকায় রওনা হই। সেখানে হাসপাতালে পাই রকিকে। ততক্ষণে সে আর আমাদের মাঝে নেই।’
এরপর শুক্রবার বাদ জুমা স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।