![যশোর বাজারমূল্যের অর্ধেকে পণ্য পেল ৩৫০ পরিবার](uploads/2024/04/06/1712379058.Jessore-back-bencher-1111.jpg)
যশোর শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কের নতুন বাজারে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বসে অস্থায়ী দোকান। এখানে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। চাল, আটা, সয়াবিন তেল, সেমাই, চিনি, দুধ, মুরগির মাংসসহ ৯টি পণ্য পাওয়া যায় এই দোকানে। তবে বাজারমূল্যের থেকে অর্ধেক দামে কিনতে পারেন দরিদ্র, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। পণ্য পেয়ে আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ক্রেতারা। ব্যতিক্রমী এই বাজারের আয়োজন করে যশোরের এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’। এদিন বাজার দরের চেয়ে অর্ধেক দামে সুলভমূল্যে ঈদ বাজার করেছেন ৩৫০ পরিবার।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’ সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। সদস্যরা কেউ চাকরিজীবী কেউ বা ব্যবসায়ী। এই সদস্যদের চাঁদার টাকা দিয়ে চলে নানামুখী স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড। সংগঠনটি মূলত দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, সামাজিকভাবে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। করোনাকালে সংগঠনটি অক্সিজেন সেবা, খাদ্যসামগ্রী বিতরণের মধ্যে দিয়ে মানুষের পাশে ছিলেন।
সংগঠনের সদস্যরা জানান, দরিদ্র, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষরা দ্রব্যমূল্যের এ বাজারে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের জন্য আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদ বাজারের ব্যবস্থা করার জন্যই এই উদ্যোগ। এরপর যশোর শহর ও শহরতলী বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় জরিপ চালিয়ে ৩৫০ জন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে শনাক্ত করে সংগঠনটি। তাদের ঈদে দরকারি এমন ৮২৭ টাকা মূল্যের ৯টি পণ্য তারা মাত্র ৪০০ টাকাতে কিনতে পেরেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আরএন রোড এলাকায় নতুন বাজার প্রাঙ্গণে নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। বিভিন্ন পণ্যের স্টলও রয়েছে। ওই সব স্টলের টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পণ্য। ক্যাশ কাউন্টারে পণ্যের দাম পরিশোধ করে একটি স্লিপ নিয়ে লাইন থেকে একজন একজন করে স্টলে গিয়ে পছন্দের পণ্য ব্যাগে ভরে নিচ্ছেন।
মণিহার এলাকা থেকে বাজার করতে আসা প্রতিবন্ধী আলমগীর বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। জিনিসপত্রের এখন যে দাম, সংসার চালানো কঠিন। এরমধ্যে রোজা ঈদ উপলক্ষে সকল পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। চিন্তায় ছিলাম কীভাবে ঈদে করব। এই বাজার থেকে অর্ধেক দামে জিনিসপত্র কিনতে পেরে ঈদের আগেই খুশি হলাম।’
গৃহকর্মী সফুরা বেগম বলেন, ‘কম দামে পণ্য পেয়ে আমার মতো গরিব মানুষের অনেক উপকার হইছে। এই সংগঠনের মতো আরও দুটো সংগঠন হলে এই অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের খুব উপকার হতো।’
সংগঠনটির সভাপতি জাকিউল ইসলাম পিংকু বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা কষ্টে আছে। তারা কষ্টে থাকলেও কারও কাছে হাত পাততে পারে না। তাদের জন্য আমাদের এই বাজার। তারা যেন ঈদের দিন পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারেন।’
সংগঠনটির উপদেষ্টা শাহনেওয়াজ আনোয়ার লেনিন বলেন, ‘দরিদ্র, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ ঈদের দিন পোলাও-মাংস খেতে পারে না। তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা মুরগির মাংস, পোলাও চালসহ দরকারি ৯টি পণ্য কম মূল্যে বিক্রি করেছি, যাতে তারা আনন্দের সঙ্গে ঈদ করতে পারেন।’