ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

মাটিকাটা শ্রমিক সাইফুর পেয়েছে জিপিএ-৫

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১০:০০ এএম
আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ০৭:১৪ পিএম
মাটিকাটা শ্রমিক সাইফুর পেয়েছে জিপিএ-৫
সাইফুর রহমান

বয়স যখন ছয় মাস, ওই সময় তার বাবা পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এর ৩-৪ বছর পরে তার মায়েরও বিয়ে হয় অন্য জায়গায়। এরপর থেকেই দুঃখের জীবন শুরু। নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে ট্রলিতে মাটি ভরে দেওয়ার কাজও করতে হয়েছে তাকে। বলছিলাম, সাইফুর রহমানের কথা। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চরমহল্লা উচ্চবিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

ছোট্ট শিশু সাইফুরকে কোলেপিঠে করে অনেক কষ্টে মানুষ করেন তার নানি আফতেরা বেগম (৭০)। তিনি বলেন, ‘বাবা-মা ছাড়া সাইফুরকে নিয়ে অথৈ দরিয়ায় পড়ে যাই। প্রথম প্রথম কোনো কূল-কিনারা করতে পারিনি। এরপরও নাতিকে মানুষ করতে চেষ্টা করেছি। তবে মা-বাবা ছাড়া বাচ্চাকে মানুষ করা খুব কঠিন। কিন্তু সাইফুরের নিজের চেষ্টা ছিল। তাই আজকে সে এত ভালো করেছে।’

সাইফুর জানায়, তার নানি আফতেরা বেগম তাকে বড় করেছেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। নানি আফতেরা বেগমই তাকে পড়াশোনায় বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষকদের সহযোগিতা ও উৎসাহ রয়েছে। 

চরমহল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক ফয়েজ আহমদের কাছে প্রাইভেট পড়েছে সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাইফুর নবম শ্রেণিতে ক্লাসে অমনোযোগী ছিল। পরে আমি তাকে পড়ানো শুরু করি। একপর্যায়ে দেখি সে অন্যদের চেয়ে যেকোনো বিষয় সহজেই বুঝে যায়। এত ভালো ফল করবে ভাবিনি। আর্থিক কারণে যেন তার এগিয়ে যাওয়াটা থেমে না যায়। সহযোগিতা পেলে সে আরও ভালো করবে।’

গ্রামের ওই স্কুল থেকে এবার তিনজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে একজন সাইফুর রহমান। ছোটবেলা থেকেই গ্রামের পাশে চৈত্র মাসে গাড়িতে মাটি ভরে দেওয়ার কাজ করত সে। এতে যা পেত, তা দিয়ে লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ মেটানোর চেষ্টা করত।

আম নিয়ে বিপাকে কৃষকরা, ১০ কোটি ক্ষতির শঙ্কা

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১১ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১১ এএম
আম নিয়ে বিপাকে কৃষকরা, ১০ কোটি ক্ষতির শঙ্কা
ছবি : খবরের কাগজ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সহিংসতা ও কারফিউয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে বিপাকে আমচাষি, বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীয়রা। কয়েক দিন ধরে বাগান থেকে আম পাড়তে পারছেন না চাষিরা। গাছেই পেকে পচে যাচ্ছে। এতে ১০ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলোতে বিভিন্ন জাতের আম থোকায় থোকায় ঝুলছে। তবে সহিংসতা ও কারফিউর কারণে রাস্তায় যানবহনসংকট, বাজারে ভোক্তা না থাকায় গাছ থেকে আম তুলছেন না আমচাষি ও বাগানমালিকরা। এতে গাছেই আম পেকে পচে নষ্ট হচ্ছে।

আমচাষি মনজের আলম মানিক জানান, এবার আমের দাম ভালো পাচ্ছিলাম। কিন্তু সহিংসতা ও কারফিউর কারণে বাগানের আমগুলো তোলা যাচ্ছে না। গাছেই আম পেকে নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আম তুলতে না পারলে লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হবে।’ 

আমচাষি বিপ্লব বলেন, ‘নাবি জাতের (আয়ানভোগ) আমগুলো গত এক মাস ধরে পাকা শুরু করেছে। এখন আম সম্পূর্ণ পেকে গেছে। গাছে থাকতে থাকতে আমগুলো পচে নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আম পাঠালেও রাস্তা থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এতে আমার ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত কারফিউ উঠিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।’ 

আম বাগানমালিক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গাছ থেকে আম পাড়তে না পারাই অর্ধেকের বেশি আম পেকে পড়ে গেছে। পাকা আমগুলো কোথাও পাঠাতে পারছি না। এতে আমরা বাগানমালিকরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছি।’

শিবগঞ্জ ম্যাঙ্গো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘কারফিউর মধ্যে আমচাষিরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ফজলি, বারি-৪ ও আম্রপালি আমগুলো এখন ওভার ম্যাচুয়েড হয়ে গেছে।
 
কারফিউর কারণে বরিশাল, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জের বাজারগুলো বন্ধ। অনলাইনে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, ‘কানসাট জেলার বড় আমের বাজার। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। কিন্তু সহিংসতা ও কারফিউর কারণে এখন প্রতিদিন ৪ থেকে ৫০ ট্রাক আম যাচ্ছে। এতে আমচাষি, আমের আড়তদারদের ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার কারফিউ তুলে না নিলে আম ব্যবসায় ব্যাপক ধস নামবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘সীমিত পরিসরে আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে মণপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা কম দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে সাড়ে ৪ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।’

গাইবান্ধায় বেড়েছে সবজির দাম, স্বস্তি নেই ব্রয়লার মুরগিতেও

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৫ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৫ এএম
গাইবান্ধায় বেড়েছে সবজির দাম, স্বস্তি নেই ব্রয়লার মুরগিতেও
ছবি : সংগৃহীত

গাইবান্ধার বিভিন্ন হাট-বাজারে অস্বাভাবিক হারে চালসহ সবজির দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও সবজির দাম। পাশাপাশি আদা, পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও কারফিউ আতঙ্কে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে জিনিসপত্রের দাম আরও বেশি। ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগের থেকে গত এক সপ্তাহে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নানা দামে চালসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বেচাকেনার চিত্র। প্রতি কেজি মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা ও দেশি মুরগি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি আলু ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, আদা ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা ও পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, রসুন ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, মসুর ডাল ১০৪ থেকে ১৫০ টাকা, সোয়াবিন তেল ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

শহরের হকার্স মার্কেটে যান রতন মিয়া (৫০)। তার বাড়ি সদর উপজেলার ফলিয়া গ্রামে। তিনি একটি বিদ্যালয়ে পিয়ন পদে চাকরি করেন। রতন মিয়া বলেন, ‘অল্প বেতনের চাকরি। যা বেতন পাই তা দিয়ে কোনো একরকম সংসার চলে। বেতনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে খরচ করি। কিন্তু চাল কিনতে এসে অবাক হলাম। প্রতি কেজি চালে ৩-৫ টাকা বেড়েছে। কারফিউর কারণে এ মাসে অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে। এ জন্য ঋণ করতে হবে।’

একই মার্কেটে আসা শহরের সুখনগর এলাকার চাকরিজীবী হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা চাকরিজীবী। সারা বছর চাল, ডাল, সবজি কিনে খেতে হয়। যে টাকা নিয়ে বাজারে কেনাকাটা করতে এলাম, এসে দেখি দাম বেশি। বাধ্য হয়ে কয়েক কেজি চাল কম কিনলাম। সবজিও কম নিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

এই বাজারের চাল ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চালের দাম বাড়াইনি। বেশি দামে চাল কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

কাঁচা সবজি বিক্রেতার একই ভাষ্য। এই বাজার থেকে শহরের পুরাতন বাজারে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেল। পুরাতন বাজারে আসা সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ‘পাইকারি বাজারে এলাম। ভাবলাম দাম একটু কম পাব। কিন্তু ব্রয়লার মুরগি, মসুর ডাল, আলু, রসুন, সোয়াবিন তেল বেশি দামে কিনতে হলো। প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে দেখলাম।’

বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সাজু মিয়া বললেন, ‘এখন কারফিউ চলছে। ব্রয়লার মুরগি ও সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করছি। বিক্রিও অনেক কম।’

গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর রহমান বলেন, ‘কোনো জিনিসের দাম বৃদ্ধির কারণ নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মালবাহী পরিবহন চলছে। দাম বাড়ানোর প্রশ্নই উঠে না। কারফিউ দোহাই দিয়ে যাতে কেউ দাম বাড়াতে না পারে, সে জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, ‘প্রতিদিনই বাজার মনিটর এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীদের পণ্য বেচাকেনা করতে বলা হচ্ছে।’

মাধবদী পৌরসভা দুর্বৃত্তের আগুনে ৬ কোটি ২ লাখ টাকার ক্ষতি

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০১ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০১ এএম
দুর্বৃত্তের আগুনে ৬ কোটি ২ লাখ টাকার ক্ষতি
ছবি : খবরের কাগজ

নরসিংদীতে ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা আন্দোলনের সময় মাধবদী পৌরসভায় তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ‘মেয়রকে হত্যার’ উদ্দেশ্য করে পৌর কার্যালয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মেয়রকে না পেয়ে আগুন জ্বালিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন কক্ষ জ্বালিয়ে দেয় তারা। একই সময় পৌর ভবনের নিচতলায় থাকা দুটি গাড়ি, বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ পৌরসভার সবগুলো কক্ষ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এতে মূল্যবান নথিপত্রসহ প্রায় ৬ কোটি ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান পৌর মেয়র হাজি মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক।

ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পৌর মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোটাবিরোধীরা আন্দোলন করেছে মহাসড়কে। তাদের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের কেউ ইন্ধন দিয়ে দেয় আমাকে হত্যার জন্য। তারা আমাকে না পেয়ে পৌর কার্যালয়ে তাণ্ডব চালায়। এ ছাড়া দুষ্কৃতকারীরা আমার বাড়িতে গিয়েও খোঁজে। সেখানে না পেয়ে তারা পৌর শহরের আনন্দি মোড়ে সোনালি টাওয়ারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা অস্ত্রধারী ছিল। তারা ককটেল ফোটায় ও গুলি করে। আমরা ভবনের ওপর থেকে খালি হাতে জীবন বাঁচাতে দুষ্কৃতকারীদের ইট-পাটকেল ছুড়ি।’ তিনি বলেন, ‘বাজারের ভেতরে এমবি টাওয়ারে যারা বসেছিল তারা যদি আসতো, আমাদের ওপর হামলা করতে পারত না তারা।’

মেয়র আরও বলেন, ‘মেহেপাড়ায় হুমায়ুনের নেতৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে হামলা করা হয়। তাদের একটি গ্রুপ আমার ওপরে হামলা করার চেষ্টা করে।’

এ ছাড়া পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেনকে সহযোগিতা করার জন্য পুলিশসহ স্থানীয় এমপিকে ফোন করেও কারও সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর মাধবদী বড় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে যায় কোটা আন্দোলনকারীরা। এ সময় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয় তারা। পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মাধবদী থানা ঘেরাও করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় কোটা আন্দোলনকারীদের। পরে শুক্রবার বিকেলে মাধবদী পৌর কার্যালয়, পোস্ট অফিস ও সোনালি টাওয়ারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

অরাজকতা রুখতে মাঠে ছিলাম, এখনো আছি : মেয়র লিটন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৩ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৩ এএম
অরাজকতা রুখতে মাঠে ছিলাম, এখনো আছি : মেয়র লিটন

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘জনগণের জানমাল রক্ষার্থে ও যেকোনো অরাজকতা রুখতে আমরা মাঠে ছিলাম, এখনো আছি।’

ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে গতকাল শুক্রবার রাজশাহী মহানগরীর বড় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
 
মেয়র বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমরা শুরু থেকেই পর্যবেক্ষণ করেছি। আমাদের কাছে মনে হচ্ছিল, এটা হয়তো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হবে এবং কয়েক দিন যেতে না যেতেই সেটা প্রমাণিত হতে শুরু করল। ওই সময় থেকেই আমরা সতর্ক হয়ে যাই। জনগণের জানমাল রক্ষা ও কেউ যাতে অরাজকতা করতে না পেরে, সে জন্য আমরা মাঠে ছিলাম। আমরা এতে সফল হয়েছি। জেলার শান্তিপ্রিয় মানুষ আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, সাধুবাদ জানিয়েছেন।’

এর আগে, বড় মসজিদে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। জুমার নামাজ শেষে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এরপর দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুমারপাড়ার মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যান।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঢাবির হলগুলোতে ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৬ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম
ঢাবির হলগুলোতে ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর
ঢাবির হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। ছবি: খবরের কাগজ

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে প্রায় ৩০০ কক্ষে ভাঙচুর করেছে। ইতোমধ্যে হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণও করা হয়েছে, শিগগিরই হলগুলো সংস্কার করে খোলার পরিকল্পনা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোকেয়া হল এবং স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন করেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এসময় তিনি ভাঙচুর হওয়া বিভিন্ন হলের কক্ষ পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ডিভিশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিকট হতে আর্থিক বরাদ্ধ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলগুলোর কক্ষের পাশাপাশি অনেক স্থপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোও সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্কার শেষে দেশব্যাপী স্থিতিশীলতা বিরাজ করলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি প্রস্তুত হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে।’

কবে নাগাদ খুলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে একটি অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ইউজিসিকে এই আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হবে। সেখানে আবার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে। পরবর্তীতে টেন্ডার ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) অনুসরণ করে কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে। যেই সময়টি প্রয়োজন এতোটুকু সময় তো প্রয়োজন। এখন টেন্ডার দেওয়ার পর সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব কবে কাজ শেষ হবে। এরপর আমরা খোলার সিদ্ধান্ত নেবো।’

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর: গত ১৭ জুলাই রাত ১২টা অভিযোগ ওঠে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসাইনসহ ৯ ছাত্রলীগ নেত্রী হলের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে, ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা এবং ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাদের টেনে-হিঁচড়ে হল থেকে বের করে দেয়। পরে রোকেয়া হলে ‘সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ’- এই মর্মে একটি বিবৃতি প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেন। 

একে-একে রাতের বিভিন্ন সময়ে শামসুন নাহার, কবি সুফিয়া কামাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হল ত্যাগ করতে বাধ্য করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর ভোরে ছাত্রলীগ উৎখাত করে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, এরপর সকাল সাতটা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হল, সকাল সাড়ে আটটা থেকে কবি জসিম উদ্দীন হল, বিজয় একাত্তর, মাস্টার দা’ সূর্য সেন, মুহসীন, স্যার এ এফ রহমান এবং সবশেষ সলিমুল্লাহ মুসলিম হল নিয়ন্ত্রণে নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় হলে থাকা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দেন কেউবা আগেই সটকে পড়েন। একেবারেই ছাত্রলীগ শূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো।

পরে আন্দোলনকারী বেছে বেছে পদধারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর এবং জিনিসপত্র বাহিরে ফেলে দেন। এ এফ রহমান হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ৩১৮ নম্বর কক্ষ, কবি জসিম উদ্দীন হলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের কক্ষ, বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের পদ্মা-৭০১০ কক্ষ ও সূর্যসেন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়নের ৩৪৪ নম্বর ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে একটি এবং সূর্যসেন হলের সামনে আরেকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় আন্দোলনকারী।

পরবর্তীতে ওইদিন সকালেই জরুরি সিন্ডিকেটের সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত আসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধে হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এর পরপরই পুরোপুরিভাবে হল ছাড়তে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও এর আগে গত ১৫ ও ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ্ হল এনং ফজলুল হক হল দখলে নেন আন্দোলনকারীরা।

আরিফ জাওয়াদ/এমএ/