![পদ্মা-মেঘনায় যত্রতত্র নিষিদ্ধ জাল, ধ্বংস হচ্ছে রেণুপোনা](uploads/2024/05/24/Chandpur-Net-1716543688.jpg)
চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলায় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ছোট ফাঁদের নিষিদ্ধ জাল টেনে ধ্বংস করা হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের রেণুপোনা।
উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার পদ্মা ও মেঘনা নদীর সীমানা। এসব এলাকায় প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে। মৎস্য বিভাগ থেকে জেলেদের বিভিন্নভাবে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার না করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হলেও তারা তা মানছেন না। যে কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের রেণুপোনা।
সম্প্রতি সময়ে নদী উপকূলীয় এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে ছোট মাছ (রেণুপোনা) ধরার চিত্র। এসব রেণুপোনা ধরে বর্তমানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাজার ও পাড়া মহল্লায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতলব উত্তর, সদরের বিভিন্ন এলাকাসহ বিশেষ করে হাইমচর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার জেলেরা নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, চরঘেরা জাল, চায়না দোয়াইর চাঁই, পাঙ্গাশ ধরার বড় সাইজের চাঁই, চিংড়ি পোনা নিধনকারী পুশ নেট, বাঁধা জাল ও গচি জাল ব্যবহার করে ছোট মাছ ও রেণুপোনা ধরার কাজে ব্যবহার করে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড চাঁদপুর যৌথ অভিযান করে মুন্সীগঞ্জ থেকে হিজলা পাচারের সময় ৬৫ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করে। এ ছাড়াও জাটকা সংরক্ষণ অভিযানের দুই মাস ও মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান ছাড়া নিষিদ্ধ জাল বছরজুড়ে জব্দ হচ্ছে।
নিষিদ্ধ জাল মাছের পোনা নিধন হয় এমন সংবাদের ভিত্তিতে সম্প্রতি অভিযান পলিচালনা করে মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেলা মৎস্য বিভাগ। এর মধ্যে হাইমচর উপজেলা মৎস্য বিভাগ গত ১৭ মে ছোট প্রজাতির মাছ ধ্বংসকারী নিষিদ্ধ ৪০ হাজার মিটার চরঘেরা জাল, ২০টি চায়না দোয়াইর চাঁই ও ৫টি চিংড়ি পোনা নিধনকারী পুশ জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করে।
মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য বিভাগ বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে ১৫টি পাঙ্গাশ মাছের পোনা ধরার চাঁই, ১০ হাজার মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ৩০টি চায়না দুয়াইর রিং চাই জব্দ করা হয় এবং জনসম্মুখে পোড়ানো হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস এই অভিযান করেন। তিনি বলেন, পোনা মাছ রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে হাইমচর মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করছে অসাধু জেলেরা। প্রতিদিন নিধন করা হয় কয়েক কোটি মাছের পোনা। বাঁধা জাল, গচি জাল ও চায়না জালসহ নিষিদ্ধ জালগুলো নদীতে পেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করে চরভৈরবী মাছের আড়তে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয়।
চরভৈরবী আড়তদার নজরুল ফকির বলেন, আমার আড়তে গচি জালের মাছ বিক্রি হয়। কিন্তু বাঁধা জাল কিংবা চায়না জালের মাছ বিক্রি হয় না। অন্যরা বিক্রি করে কিনা জানি না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউসুফ জুবায়ের শিমুল বলেন, আমাদের চরভৈরবী আড়তে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নিধনকৃত মাছের পোনা বেচার বিষয় জানতে পেরেছি। আমি জেলেদের মাছের পোনা ধরা ও বিক্রি না করার জন্য নিষেধ করেছি। তারা আমার কথা না মানলে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে।
হাইমচর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুব রশীদ বলেন, নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছের পোনা ধরার সংবাদ পেয়ে নদীতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু গচি জাল উদ্ধার করে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরার বছরজুড়েই নিষিদ্ধ। মৎস্য বিভাগ কখনই এসব জালের অনুমোদন দেয় না। জেলেরা যাতে করে সুতার জাল ব্যবহার করে সে জন্য উৎসাহ দিতে বিনামূল্যে জালও দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও একশ্রেণির জেলে নদীতে নেমে ছোট পোনা মাছ ধরছে। নদীর মৎস্যসম্পদ রক্ষায় আমাদের জেলাজুড়ে অভিযান অব্যাহত আছে।
শরীফুল ইসলাম/জোবাইদা/