কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে প্রায় ৩০০ কক্ষে ভাঙচুর করেছে। ইতোমধ্যে হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণও করা হয়েছে, শিগগিরই হলগুলো সংস্কার করে খোলার পরিকল্পনা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোকেয়া হল এবং স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন করেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এসময় তিনি ভাঙচুর হওয়া বিভিন্ন হলের কক্ষ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ডিভিশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিকট হতে আর্থিক বরাদ্ধ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলগুলোর কক্ষের পাশাপাশি অনেক স্থপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোও সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্কার শেষে দেশব্যাপী স্থিতিশীলতা বিরাজ করলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি প্রস্তুত হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে।’
কবে নাগাদ খুলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে একটি অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ইউজিসিকে এই আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হবে। সেখানে আবার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে। পরবর্তীতে টেন্ডার ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) অনুসরণ করে কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে। যেই সময়টি প্রয়োজন এতোটুকু সময় তো প্রয়োজন। এখন টেন্ডার দেওয়ার পর সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব কবে কাজ শেষ হবে। এরপর আমরা খোলার সিদ্ধান্ত নেবো।’
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর: গত ১৭ জুলাই রাত ১২টা অভিযোগ ওঠে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসাইনসহ ৯ ছাত্রলীগ নেত্রী হলের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে, ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা এবং ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাদের টেনে-হিঁচড়ে হল থেকে বের করে দেয়। পরে রোকেয়া হলে ‘সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ’- এই মর্মে একটি বিবৃতি প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেন।
একে-একে রাতের বিভিন্ন সময়ে শামসুন নাহার, কবি সুফিয়া কামাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হল ত্যাগ করতে বাধ্য করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর ভোরে ছাত্রলীগ উৎখাত করে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, এরপর সকাল সাতটা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হল, সকাল সাড়ে আটটা থেকে কবি জসিম উদ্দীন হল, বিজয় একাত্তর, মাস্টার দা’ সূর্য সেন, মুহসীন, স্যার এ এফ রহমান এবং সবশেষ সলিমুল্লাহ মুসলিম হল নিয়ন্ত্রণে নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় হলে থাকা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দেন কেউবা আগেই সটকে পড়েন। একেবারেই ছাত্রলীগ শূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো।
পরে আন্দোলনকারী বেছে বেছে পদধারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর এবং জিনিসপত্র বাহিরে ফেলে দেন। এ এফ রহমান হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ৩১৮ নম্বর কক্ষ, কবি জসিম উদ্দীন হলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের কক্ষ, বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের পদ্মা-৭০১০ কক্ষ ও সূর্যসেন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়নের ৩৪৪ নম্বর ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে একটি এবং সূর্যসেন হলের সামনে আরেকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় আন্দোলনকারী।
পরবর্তীতে ওইদিন সকালেই জরুরি সিন্ডিকেটের সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত আসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধে হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এর পরপরই পুরোপুরিভাবে হল ছাড়তে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও এর আগে গত ১৫ ও ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ্ হল এনং ফজলুল হক হল দখলে নেন আন্দোলনকারীরা।
আরিফ জাওয়াদ/এমএ/