আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মাথাচাড়া দিচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দ্বন্দ্ব বাড়ছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলের নেতাদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলার ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপ ২৩ মে, তৃতীয় ধাপ ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ভোট হবে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় দেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ইতোমধ্যেই প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে নেমেছেন। এতে দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের। এ নিয়ে ভোটের আগে অভ্যন্তরীণ বড় সংঘাতের শঙ্কা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
দলের স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও সংসদ সদস্যরা পছন্দমতো প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। এতে দলের অন্য যারা প্রার্থী হতে চান, তাদের সঙ্গে সংসদ সদস্যের বিরোধ দেখা দিচ্ছে। এসব বিরোধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে নানা অভিযোগ জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, এবারে উপজেলা নির্বাচনে দলের কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে না। সে কারণে আমাদের দলের আগ্রহীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, মানুষের কাছে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক হয় এবং কোনো সহিংসতা যেন না ঘটে আমরা সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিগত দুটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের প্রার্থী দেওয়ায় অভ্যন্তরীণ বিরোধ বেড়ে যায়। সে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য এবার দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু বাস্তবে এমন কৌশলের সুফল পাওয়া নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ দলীয় প্রতীক না দিলেও অন্তর্কোন্দল থামানো যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দিলেও বিপদ, না দিলেও বিপদ। কোনো ভাবেই তৃণমূলে বিরোধ থামানো যাচ্ছে না। আসলে শক্ত বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে না এলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় কোন্দল কমানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দলের একাধিক নেতাকে প্রার্থী হতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা চাইছেন নিজের পছন্দমতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে। কারণ অনুগত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হলে স্থানীয় পর্যায়ে সংসদ সদস্যদের আধিপত্য হুমকির মধ্যে পড়ে যায়।
কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনোনয়নে উপজেলা চেয়ারম্যানরা বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকেন। বিগত সংসদের বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা। এবারের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রায় অর্ধশত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই জয় পেয়েছেন। ফলে উপজেলা চেয়ারম্যানদের নিজের জন্য হুমকি মনে করেন সংসদ সদস্যরা। এ কারণে তারা চান যেন বিরোধ থাকা কোনো নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান না হন। এটি করতে গিয়ে দেশের অনেক উপজেলাতেই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে দলের আগ্রহীরা প্রার্থী হবেন, এতে কোনো বাধা নেই। তবে কেউ সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’