চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে ফসলি জমি রক্ষায় কৃষকরা কাফনের কাপড় ও বিষের বোতল নিয়ে প্রতিবাদ জানান। এর কিছুক্ষণ পরে সরেজমিনে তদন্তে আসে ভূমি মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় গ্রামের কৃষকরা প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, কৃষ্ণপুর মাঠের জমিতে সব ধরনের ফসল হয়। বর্তমানে মাঠটি শস্য-শ্যামল সবুজে ভরা। কিন্তু কয়েক বছর আগে ওই গ্রামের ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল জমি বিক্রির জন্য মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, তা সবই তিন ফসলি। সেখানে প্রকল্প স্থাপন করলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে।
পুরো গ্রামে জমির পরিমাণ ৬০০ একর। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি। এ ছাড়া ২০ শতাংশ বসতভিটা ও বাকি ২০ শতাংশ বাগান এবং অন্যান্য স্থাপনা। মাঠের জমিতে ধান, ডাল, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেয়ারা, তিল এবং বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ হয়।
এদিকে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা কৃষিকাজ করে খাই। মাঠে বছরে তিনটির বেশি ফসল চাষ হয়। ভুট্টা, ধান, পাট, আলু, পেয়ারা, বাদামসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। আমরা জীবন দিতে রাজি। কিন্তু মাঠ দিতে রাজি না।’
ওই সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের বিষয়ে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। গতকাল সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে তদন্তে আসেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম, বিদ্যুৎ বিভাগের (নবায়নযোগ্য জ্বালানি-১) উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য আলী আফরোজ, তদন্ত কমিটির সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মিজানুর রহমান।
তদন্ত শেষে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের শান্ত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম বলেন, ‘এই ধরনের জমিতে কী কী ফসল হয়, এলাকাবাসী কী চায়, আমাদের এটা তদন্ত করার জন্য পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আমরা জমি দেখেছি, এখানকার কৃষি অফিসারের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছি। সব বিষয় বিবেচনা করে প্রতিবেদন দেব।’