ঢাকার ধামরাইয়ে প্লাস্টিকের বেল্ট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আকর্ষণীয় শস্যের ডোল, ঘর বা অফিসের বোর্ড সিলিং, বাড়ির বেড়াসহ নানা ধরনের প্রয়োজনীয় উপকরণ। টেকসই হওয়ায় বাড়ছে চাহিদাও। সেই সঙ্গে কমেছে বেকারত্ব। আগে যেসব নারী শুধু গৃহস্থালির কাজ করতেন তারাও এখন প্লাস্টিকের বেল্ট দিয়ে চাটাই তৈরি করে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। এতে নিজের সংসারে বাড়তি আয় যুক্ত করতে পারছেন।
সম্প্রতি ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সুয়াপুর বাজারের পাশে প্লাস্টিকের বেল্ট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শস্য রাখার ডোল, বেড়া ও ঘরের সিলিং। যার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকুই কিনতে পারছেন। চাহিদা থাকায় সারা বছরই প্লাস্টিকের বেল্ট দিয়ে জিনিসপত্র করেন এখানকার শ্রমিকরা।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানা থেকে প্লাস্টিকের এই বেল্ট ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে আসা হয়। মজুরির ক্ষেত্রে বেল্ট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর ওজন মাপা হয়। শ্রমিকরা প্রতি কেজি চাটাই তৈরির জন্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকা মজুরি পান। এক কেজি ওজনের একটি চাটাই তৈরিতে খরচ পড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। খুচরা বিক্রি করা হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।
বেল্ট দিয়ে চাটাই তৈরির কারিগর অন্ন সরকার বলেন, ‘আমরা প্রতি কেজির বিনিময়ে ৩৫ টাকা পাই। আগে বাড়ির কাজ করার পর কোনো কাজ থাকত না। অলস সময় পার করতাম। এখন এখানে কাজ করে বাড়তি টাকা আয় করতে পারছি। মালিকরা বিভিন্ন কারখানা থেকে বেল্ট কিনে নিয়ে আসেন। আমাদের কাজ শুধু চাটাই তৈরি করা। এই চাটাই বাড়ির চেগার, শস্যের ডোল, সিলিংসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এখন এগুলোর চাহিদা অনেক বেশি, কারণ এই চাটাই বৃষ্টির পানিতেও নষ্ট হয় না।’
ননী সরকার ও তার স্ত্রীকে দেখা যায় চাটাই তৈরি করতে। ননী সরকার বলেন, ‘আমরা দিনে ৩৫ কেজির মতো চাটাই তৈরি করতে পারি। মালিকপক্ষ কেজিপ্রতি আমাদের ৩৫ টাকা মজুরি দেয়। আমাদের কোনো খরচ বহন করতে হয় না। যত কেজি চাটাই তৈরি করব, তত দাম পাব। আমাদের মালিক বিভিন্ন কারখানা থেকে বেল্ট কিনে নিয়ে আসেন। তবে বেল্ট থেকে চাটাই তৈরি করে আমাদের সংসার ভালোই চলছে।’
বেল্ট দিয়ে চাটাই তৈরি করা হয় এমন একটি কারখানার মালিক সচীন মণ্ডল বলেন, ‘এই বেল্ট দিয়ে তৈরি চাটাই বাড়ির চেগার, ঘর বা অফিসের সিলিং, শস্যের ডোল তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। আমরা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাওনার বিভিন্ন কারখানা থেকে কিনে নিয়ে আসি। প্রতি কেজি বেল্টের দাম পড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। যে শ্রমিকরা বেল্ট থেকে চাটাই তৈরি করেন মজুরি হিসেবে তাদের কেজিপ্রতি দাম দিই ৩৫ টাকা। সব খরচ মিলে প্রতি কেজিতে প্রায় ১১০ টাকা করে পড়ে। আমরা ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করি। চাহিদা বেশি থাকায় সব সময় অর্ডার থাকেই। প্রতি কেজিতে আমাদের ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ থাকে। মালামাল কোথায় থেকে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন কোরিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে আমাদের দেশে কারখানায় যে বড় বড় তুলার গাইড আসে, এই বেল্ট দিয়ে সেই গাইড বাঁধা থাকে। কিন্তু গাইড খোলার পর বেল্টগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। তখন আমরা কিনে এনে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করি।