![এপ্রিলের ভারী বৃষ্টির প্রভাবে যুক্তরাজ্যে খুচরা বিক্রি কমেছে](uploads/2024/05/26/Sales-News-1716711841.jpg)
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের দোকানগুলোতে খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি কম হয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা ঘর থেকে বের হতে না পারায় বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির খবরে বলা হয়, এপ্রিলে বিক্রি আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৩০ শতাংশ কমে। বিশ্লেষকরা প্রায় দশমিক ৫০ শতাংশ বিক্রি কমবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন। সে হিসাবে মাসটিতে দোকানগুলোর বিক্রি অনেক বেশি কমেছে।
যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) বলেছে, পোশাকের খুচরা বিক্রেতা, খেলাধুলার সরঞ্জাম, গেমস ও খেলনার দোকান এবং আসবাবপত্রের দোকানগুলোতে বিশেষভাবে বিক্রি কমেছে। কারণ খারাপ আবহাওয়ার কারণে দোকানগুলোতে আসা লোকের সংখ্যা কমে গিয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দশমিক ২০ শতাংশ বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে মার্চের পূর্বাভাসটিও সংশোধিত হয়েছিল। তবে এর আগে বিক্রি স্থিতিশীল হবে বলে অনুমান করা হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এপ্রিল মাসে ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর কারণে যুক্তরাজ্যজুড়ে বেশ কয়েকটি বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সাধারণত খারাপ আবহাওয়ায় অনলাইন বিক্রিতে তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব পড়ে। তবে মাসটিতে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রিও ১ দশমিক ২০ শতাংশ কমেছে।
যদিও ওএনএস বলছে, প্রতিবেদনটিতে বিক্রির পরিসংখ্যান ঋতু অনুসারে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। অর্থাৎ মৌসুম বা উৎসবের প্রভাবগুলো প্রতিবেদন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যাতে করে বিভিন্ন মাসের মধ্যে বিক্রয়ের তুলনা করা সহজ হয়। যদিও এটি (মৌসুমের প্রভাব) কখনো কখনো সম্পূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে না। গত বছর ইস্টার সানডের ছুটি এপ্রিল মাসে পড়েছিল এবং এই বছর এটি মার্চ মাসে ছিল।
স্টকব্রোকার (শেয়ার কেনাবেচায় মধ্যস্থতাকারী) এজে বেলের আর্থিক বিশ্লেষণের প্রধান ড্যানি হিউসন বলেছেন, ‘ইস্টারে (ইস্টার সানডে উৎসব) তাড়াতাড়ি আসা এবং সুস্বাদু চকলেট, ডিম ও পারিবারিক ভোজ- এগুলো পরিসংখ্যান বাড়াতে সাহায্য করেনি যে যার কারণে আমরা বলতে পারব আগের মাসের মোট বিক্রির পরিসংখ্যানের সঙ্গে এটা যোগ করা হয়েছে। তবুও মার্চ মাসের বিক্রির হার পর্যালোচনা করে মোট পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দেখানো হয়েছে।’
ড্যানি হিউসন বিলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে ব্যক্তিগত অর্থনীতিতে ধাক্কা অনেককে সতর্ক করে দিয়েছে। মানুষ অনেক কিছু ছাড়িয়ে দিয়েছে এবং যদি এর অর্থ হয় জরুরি অর্থের একটি ছোট্ট ভাণ্ডার তৈরি করা, যা তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করবে, তাহলে তারা তা করতে থাকতে পারে।’ অর্থাৎ প্রয়োজনের মুহূর্তে খরচ করার জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে গিয়ে মানুষ হয়তো কেনাকাটা কমিয়ে দিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন হিউসন। এর ফলে এপ্রিল মাসের খুচরা বিক্রি কমতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে আরও বিস্তারিত বলতে গেলে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত শেষ তিন (ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল) মাসের সঙ্গে জানুয়ারি পর্যন্ত শেষ তিন (নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) মাসের তুলনা করলে বিক্রি দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে। তবে ওএনএস বলেছে, এটি প্রধানত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অস্বাভাবিক খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে হয়েছিল।
বিবিসি জানায়, ভেজা আবহাওয়ায় লোকজন ঘরে বন্দি থাকায় এপ্রিল মাসে জ্বালানি বিক্রি ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে। এটি ২০২১ সালের অক্টোবরের পর থেকে সবচেয়ে বড় মাসিক পতন।
এদিকে গবেষণা সংস্থা জিএফকের একটি পৃথক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভোক্তার আস্থা (ক্রয়ক্ষমতা) দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। তবে জিএফকের সূচক, যেটিতে পরিমাপ করা হয় যে, লোকেরা কীভাবে তাদের ব্যক্তিগত অর্থ এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেখে, সেটি নেতিবাচক রয়ে গেছে।
ব্রিটিশ বহুজাতিক পেশাদার পরিষেবা নেটওয়ার্ক ডেলোইটের খুচরা বিক্রয় বিভাগের প্রধান অলিভার ভার্নন-হারকোর্ট বলেন, ‘যদিও ভোক্তাদের আস্থা বাড়তে শুরু করেছে, তবে অনেকেই আতঙ্কিত এবং এখনো তারা খুব একটা খরচ করছে না। বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় আইটেম ও পণ্য, যেমন পোশাক ও জুতা কেনায়।