![মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি বিনিয়োগ ১৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে](uploads/2024/06/11/ieea-1718088637.jpg)
মধ্যপ্রাচ্যে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ চলতি বছরে আনুমানিক ১৭৫ বিলিয়ন (১৭ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই বিনিয়োগের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ থাকবে ক্লিন এনার্জি (পরিবেশবান্ধব জ্বালানি)। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) একটি নতুন প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। খবর আরব নিউজের।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, ঘোষিত অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ২০২৪ সালের তুলনায় তিনগুণ বেশি হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলতি দশকের শেষ নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা প্রতি ডলারের বিপরীতে ক্লিন এনার্জিতে ৭০ সেন্ট বিনিয়োগ করা হবে।
বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানি সরবরাহের জন্যই বেশি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা প্রতি ডলারের বিপরীতে ক্লিন এনার্জিতে বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ করা হয় মাত্র ২০ সেন্ট। এটি বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের প্রায় এক-দশমাংশ।
খবরে বলা হয়, এই অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) ১২টি দেশের মধ্যে পাঁচটি, তাদের কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা শূন্যে (নিট জিরো) নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে সৌদি আরব, বাহরাইন ও কুয়েত ২০৬০ সালের মধ্যে তাদের কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৯ স্তর থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৯ শতাংশ নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশটি ২০২৩ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স) বা কপ২৮-এ একটি জলবায়ুকেন্দ্রিক বিনিয়োগ উদ্যোগ চালু করার জন্য ৩০ বিলিয়ন অনুঘটক মূলধনের (ক্যাটালিক ক্যাপিটাল) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রসঙ্গত, অনুঘটক মূলধন বা অনুঘটক পুঁজি হলো এমন এক ধরনের বিনিয়োগ, যেখানে সাধারণত লাভের চেয়ে সামাজিক বা পরিবেশগত প্রভাবের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়।
খবরে বলা হয়, এই অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) বিদ্যুৎ খাতের ক্লিন এনার্জি টেকনোলজিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একটি স্বতন্ত্র সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে সোলার বা সৌরবিদ্যুৎ। এই সুযোগগুলো কাজে লাগালে বিদ্যুৎ খাতে তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব বর্তমানে ৫ গিগাওয়াটেরও কম নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১৩০ গিগাওয়াটে পৌঁছানোর লক্ষ্য স্থাপন করেছে দেশটি। একইভাবে সৌদি আরবের বৃহৎ আল-শুয়াইবাহ সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুম সোলার পার্ক প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমও চলমান।
বিভিন্ন দেশ নীল ও সবুজ হাইড্রোজেনে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর জন্য তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের খনিজ অনুসন্ধান প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন খনির অংশীদারত্বের মাধ্যমে এবং তামাসমৃদ্ধ জাম্বিয়াতে নতুন চুক্তিগুলোসহ এই সেক্টরে প্রচেষ্টা বাড়াচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ প্রথমবারের মতো ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন ডলার পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা হবে।
২০২০ সাল থেকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত হয়েছে এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ, গ্রিড ও স্টোরেজের ব্যয় এখন তেল, গ্যাস ও কয়লার মোট ব্যয়ের চেয়ে বেশি।
সস্তা ঋণের (কম সুদহারে নেওয়া ঋণ) যুগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের উচ্চখরচ বেশ কিছু নির্দিষ্ট খাতের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে।
যদিও উচ্চতর ঋণের খরচ বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে, তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে সরবরাহ শৃঙ্খলের চাপ কমে যাওয়া এবং দাম কমার ফলে এই প্রভাব কিছুটা কমে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত দুই বছরে সৌর প্যানেলের খরচ ৩০ শতাংশ কমেছে এবং জ্বালানি পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ধাতুগুলোর দাম, বিশেষ করে ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় ধাতুগুলোর দামও দ্রুত কমেছে।
আরব নিউজ বলছে, ২০২৪ সালে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে বিনিয়োগ ৩২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা ২০২০ সালের বিনিয়োগ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি।