ঢাকা ৯ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪

‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম
‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি
এফবিসিসিআইয়ের কর্মশালা

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজীকরণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত করতে দ্রুত ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এক ছাদের নিচ থেকে সব সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা) বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।

সোমবার (১৫ জুলাই) এফবিসিসিআইর মতিঝিল কার্যালয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোবিষয়ক এক কর্মশালায় এই দাবি জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার যত বড় হচ্ছে, ততই ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) সব অংশীজনের মতামত নিয়ে এই বছরের মধ্যেই ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এটি বাস্তবায়নের ফলে সরকারের যেমন রাজস্ব বাড়বে, তেমনি ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমবে বলেও মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমবে, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আরও উন্নত হবে। যা ব্যবসা, বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে বেগবান করবে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা একটি মাত্র প্ল্যাটফর্ম থেকে বাণিজ্যসংক্রান্ত সব তথ্য জানতে পারবে। এক জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় সব লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবে।

ইতোমধ্যে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর ট্রেড পোর্টাল এবং ট্রেড রেজিস্ট্রেশন মডিউল সম্পন্ন হয়েছে বলে কর্মশালায় জানান আয়োজকরা। সি অ্যান্ড এফ এজেন্টদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সিএলপি প্রক্রিয়াকরণের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। অন্যান্য সংস্থার নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং সিএলপি প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর প্রকল্পের পরিচালক এবিএম শফিকুর রহমান জানান, এই সিস্টেমে আপাতত ১৯টি এজেন্সিকে যুক্ত করা হবে, যারা বিভিন্ন লাইসেন্সিং সেবা দেয়। এরই মধ্যে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর পোর্টাল তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে এটি উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, বেসরকারি খাতের হাত ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। যদিও এতদিন আমাদের ব্যবসা, বাণিজ্য অনেকটা অগোছালো ভাবেই এগিয়েছে। তবে এখন সময় এসেছে নিজেদের শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার। বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহযোগিতা প্রয়োজন। ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতির আরও বিকশিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। এতে করে ব্যবসার ব্যয় কমার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে। এ সময় নীতিনির্ধারক এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুসংহত করার ওপরও জোর দেন মো. আমিন হেলালী।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর পরিচালকরা, সাধারণ পরিষদের সদস্যরা, ব্যবসায়ী নেতারা, সরকারি কর্মকর্তারা প্রমুখ।

ইলিশের দাম বাড়তি, মুরগিতে স্বস্তি

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
ইলিশের দাম বাড়তি, মুরগিতে স্বস্তি
ছবি : সংগৃহীত

‘লেন লেন পদ্মার মাছ। মাওয়া ঘাটের ওপারে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরের ইলিশ। এক কেজির ওপরে ওজন। দাম ২২০০ টাকা কেজি।’ এভাবেই ইলিশ মাছের ব্যাপারে বলছিলেন মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের মাছ বিক্রেতা সালাহ উদ্দিন। কেন এত দাম- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মাছ অরিজিনাল। স্বাদ অনেক বেশি। তাই দাম বেশি।’

শরীয়তপুরের ইলিশ মাছের কেজি ২ হাজার ২০০ টাকা হলেও চাঁদপুর ও বরিশালের ইলিশের দাম এত নয়। এ দুটি জেলা থেকে আসা এক কেজির ওপরে ইলিশের কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ছোটগুলো ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। 

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। তবে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৩০-২৪০ টাকা হয়েছে। বাড়েনি অন্য মাংস ও চালের দাম। 

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর টাউন হল, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

ইলিশ মাছের দামের ব্যাপারে বিক্রেতারা বলছেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার ইলিশের সরবরাহ কম। এ জন্য দাম কমছে না। গত বছরের চেয়ে দাম অনেক বেশি। টাউন হল বাজারের মাছ বিক্রেতা বাদশা মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু সরবরাহ কম। এ জন্য দামও বেশি। গত বছরের চেয়ে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা বেশি। এক কেজির ওপরের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা ও এক কেজির কম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি। কমানো যাবে না। কারণ লাভ বেশি থাকে না। একই তথ্য জানান কারওয়ান বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা খোরশেদ। 

তিনি বলেন, ‘এবার আমদানি কম। এ জন্য দাম বেশি। এক কেজির ওপরের ইলিশ ১ হাজার ৫৫০ ও ছোটগুলো ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।’

এ সময় আমিনুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘এভাবে চলা যায়? সরকার পরিবর্তনের পর কয় দিন কমল কিছুর দাম। পরে আবার বাড়তে শুরু করেছে। এটা তদারকি করা দরকার।’

কমেনি অন্যান্য মাছের দামও

অন্য মাছ বিক্রেতারা জানান, বন্যায় অনেক এলাকা ভেসে গেছে। নদীর মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য কমেনি দাম। আগের মতোই রুই, কাতলা ৩৫০-৭০০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি, মলা মাছ ৫০০-৭০০, পাঙাশ, তেলাপিয়া ২০০-২৫০, পাবদা ৪০০-৫০০, শিং মাছ ৫০০-৭০০, মাগুর ৬০০ ও কই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা কেজি।

সোনালি মুরগির দাম কমে ২৩০ টাকা কেজি

আগের মতোই গতকাল বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০-১৭০ টাকা ও দেশি মুরগির কেজি ৫২০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে সোনালির দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৩০ টাকা হয়েছে। দামের ব্যাপারে টাউন হল বাজারের সোনালি চিকেন হাউসের কামাল বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি খারাপ। তাই বিয়েশাদি নেই। হোটেলেও বিক্রি কমে গেছে, তাই সোনালি মুরগির দাম কমেছে।’
 
বিভিন্ন বাজারের মাংস বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আগের মতোই গতকালও বিভিন্ন বাজারে ১৪৫-১৫৫ টাকা ডজন ডিম বিক্রি হতে দেখা যায়।

পেঁয়াজের কেজি ১১০-১২০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ টাকা। আদার কেজি ২৮০-৩০০ টাকা ও রসুন ২০০-২৩০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১২৫-১৩৫, ছোলা ১১০-১১৫, এক লিটার সয়াবিন তেল ১৬৫ ও পাঁচ লিটার ৮০০-৮১০, চিনির কেজি ১৩০-১৩৫ ও দেশি লাল চিনি ১৬০-১৭০ টাকা।

স্থিতিশীল চালের বাজার

আগের সপ্তাহে রাজধানীতে চালের দাম বস্তায় ৫০-১০০ টাকা বাড়লেও গতকাল দাম বাড়েনি। বিক্রেতারা বলছেন, বর্তমানে নাজিরশাইল চালের কেজি ৭৮ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাশ চাল ৫৫-৫৮ টাকা ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বেড়েছে অধিকাংশ সবজির দাম 

সরকার পরিবর্তনের পর সবজির দাম কমলেও কয় দিন না যেতেই আবার বাড়ছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে গতকাল কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অধিকাংশ সবজি ৭০-১০০ টাকা কেজি ছুঁয়ে গেছে। বিক্রেতারা জানান, বন্যায় দেশের অনেক জেলা তলিয়ে গেছে। তার প্রভাবে বাড়ছে সবজির দাম। তবে কাঁচা মরিচের দাম বাড়েনি। আগের মতোই ২৫০ গ্রাম ৫০-৬০ টাকা বা ২০০-২৪০ টাকা কেজি।

বেগুনের কেজি ৮০-১১০ টাকা, করলা ৮০-১০০, পটোল, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দুল ৪০-৮০ টাকা। ঝিঙ্গা ৭০-১০০ টাকা, মুলা, পেঁপে ৪০-৫০, শসা ৫০-৬০, বরবটি, কচুর মুখি ৭০-৮০ টাকা কেজি। টমেটো, গাজর ১৫০-১৭০ টাকা, শিম ২৫০, লাউ ও চালকুমড়ার পিস ৬০-৮০ টাকা। সবজির দাম চড়া থাকায় শাকের দামও বাড়তি। বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন বাজারে লাউ ও পুঁইশাকের আঁটি ৩০-৪০ টাকা, কলমি শাক, লাল শাক, পালং ও পাটশাক ১৫-২০ টাকা আঁটি।

চাঁদাবাজি বন্ধে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইলেন ব্যবসায়ী নেতারা

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০:০১ পিএম
চাঁদাবাজি বন্ধে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইলেন ব্যবসায়ী নেতারা
ছবি : সংগৃহীত

দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং শিল্প কারখানার উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা সচল রাখার লক্ষ্যে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করাসহ চাঁদাবাজি রোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চান ব্যবসায়ী নেতারা।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ঢাকায় আর্মি হেডকোয়ার্টারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা সেনাবাহিনীর কাছে এসব বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। প্রতিনিধি দলে ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, আব্দুল আউয়াল মিন্ট‍ু, মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ, মো. জসিম উদ্দিন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি তপন চৌধুরী, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ, বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও নাসির এজাজ বিজয়।

ইতোমধ্যে শিল্পের নিরাপত্তা ইস্যুতে শিল্প এলাকাগুলোর বিভিন্ন কার্যক্রম ও টহল পরিচালনা করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। দেশের সব নাগরিকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বস্ত করেন সেনাপ্রধান।

তিনি জানান, শিল্প প্রতিষ্ঠান, সাপ্লাই চেইন, বন্দরের নিরাপত্তা প্রদানসহ দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে নির্বিঘ্নে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তৎপর রয়েছে।

কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান যেকোনো ধরনের হুমকির শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

শিবলী ও তার ছেলেসহ ১১ জনের বিও অ্যাকাউন্ট জব্দ

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম
শিবলী ও তার ছেলেসহ ১১ জনের বিও অ্যাকাউন্ট জব্দ
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম, তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামসহ ১১ ব্যক্তির সব বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করেছে বিএসইসি। 

আরও যাদের বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে তারা হলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান সিডব্লিউটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিজা চৌধুরী, শিবলী রুবাইয়াতের সময় বাজারের আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতব্বর, বোন কনিকা আফরোজ ও ভাই সাজেদ মাতব্বর এবং জাভেদ এ মতিন।

বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উল্লিখিত ব্যক্তিদের নামে পুঁজিবাজারে যত বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকবে। এসব হিসাব যতদিন অবরুদ্ধ থাকবে, ততদিন এগুলোতে শুধু অর্থ জমা করা যাবে, কিন্তু কোনো অর্থ তোলা যাবে না। জব্দ থাকা অবস্থায় এসব বিও হিসাবে কোনো শেয়ার লেনদেন করা যাবে না। শেয়ার ও বিও হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে সব ব্রোকারেজ হাউসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইউটিউবে দেখে তরমুজ চাষে সফল ইকবাল

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
ইউটিউবে দেখে তরমুজ চাষে সফল ইকবাল
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তরমুজের পরিচর্যা করছেন ইকবাল। ছবি: খবরের কাগজ

মহামারি করোনার অভিঘাতের কারণে ব্যবসায় ক্ষতির পর কৃষিতে মনোনিবেশ করেছেন ইকবাল হোসেন। এক সময় প্রসাধনীর ব্যবসা করে আসা ইকবাল এখন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মসজিদিয়া গ্রামে ৫০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন। করোনার সংকটকালে কৃষি খাতে প্রবেশ করে দীর্ঘ সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে চাষাবাদের অভিজ্ঞতা লাভ করেন তিনি। পরে ইউটিউব দেখে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহী হন। ধীরে ধীরে চাষাবাদ করে সফলতা অর্জন করে চলেছেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

ইকবাল হোসেন জানান, এই মৌসুমে ৯-১০ টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করলেও বর্তমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৬-৭ টন উৎপাদন হবে বলে মনে করছেন তিনি। ২৫ শতক জমি থেকে তরমুজ তোলার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি তরমুজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং এক-একটি তরমুজের ওজন ৫ থেকে ৬ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি জানান, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে পরিশ্রম ও খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়, যা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। তবে এবারের মৌসুমে কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে কিছু তরমুজের চামড়ায় পচন ধরার শঙ্কা রয়েছে। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তবুও, এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ অন্যান্য চাষের তুলনায় লাভজনক বলেই দাবি করেন তিনি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, মালচিংসহ অন্যান্য সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান ইকবাল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইকবালের চাষ করা তরমুজের মধ্যে সূর্যডিম, স্মার্টবয়েজ, ল্যান্ডফাই, ইয়েলো কিং, ব্ল্যাকবেবি ও রবি জাতের তরমুজ রয়েছে। এসব তরমুজ মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে, যার ফলে জল ধরে রাখতে সুবিধা হয়েছে এবং পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। তরমুজের পরিচর্যার জন্য মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়েছে ও মাচা দিয়ে নেটের প্যাকেটে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তরমুজগুলো।

গত বছর প্রথমবারের মতো মিরসরাই উপজেলায় ৮ জন কৃষকের মাধ্যমে ১ একর জমিতে পরীক্ষামূলক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হয়। স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসিপি) আওতায় ৫০ শতক জমিতে প্রদর্শনী করা হয় এবং ফলন ভালো হওয়ায় এই বছর চাষ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ একর জমিতে করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছে।

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শাহজাহান জানান, ‘আমরা সব সময় চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। বৃষ্টির কারণে কিছু গাছের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তবে নতুন চারা গাছগুলো ভালো অবস্থায় রয়েছে। চাষিদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।’ মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব খেতের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমান বৃষ্টির কারণে ফলনে কিছুটা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তবে আমরা চাষিদের সহায়তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ইকবাল হোসেনের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের এই সফলতা মিরসরাইয়ের কৃষি খাতে একটি নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে। কৃষি অফিসের সহায়তায় স্থানীয় কৃষকরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি গ্রহণ করে নিজেদের জীবিকা উন্নত করার সুযোগ পাচ্ছেন।

ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান রুবেল

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০১:২৯ পিএম
ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান রুবেল
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উত্তর বঠিনা গ্রামে কৃষক রুবেল ইসলাম ভাসমান সবজি খেত পরিচর্যা করছেন। ছবি: খবরের কাগজ

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক রুবেল ইসলাম ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন। বর্ষাকালে জলাবদ্ধ জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে লাউ চাষ শুরু করে তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন এবং জৈব সার ব্যবহার করছেন। তার উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে কম খরচে লাভ বেশি হচ্ছে এবং এলাকার অন্যান্য কৃষকও এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের উত্তর বঠিনা গ্রামের কৃষক রুবেল ইসলাম তার নিচু ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করতে পারেননি। ইউটিউব দেখে ভাসমান পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে তিনি প্রথমবারের মতো বস্তা পদ্ধতিতে জলাবদ্ধ জমিতে লাউ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে পানির ওপরে বাঁশের মাচায় ঝুলছে শত শত লাউ। তিনি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই শুধুমাত্র জৈব সার ব্যবহার করে এসব সবজি উৎপাদন করছেন। 

২৫ শতক জমিতে এবার পরীক্ষামূলকভাবে লাউ চাষ করেছেন রুবেল ইসলাম। এতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও ৫০ হাজার টাকার ওপরে লাভ করবেন বলে তিনি আশাবাদী। 

রুবেল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি অনেক নিচু সেই সঙ্গে নদীর তীরবর্তী। তাই বর্ষাকালের বেশ কয়েক মাস আমাদের জমিগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যে কারণে আমরা প্রতি বছরই ওই কয়েক মাস চাষাবাদ করতে পারি না। কিন্তু ওই পতিত জমিগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায় তার ওপায় খুঁজতে থাকি। এর একপর্যায়ে ইউটিউব দেখে জানতে পারি ভাসমান পদ্ধতি সম্পর্কে। এরপর বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষ কীভাবে করা যায় ওই সম্পর্কে ধারণা পাই। পরে প্রথমবারের মতো শুধু লাউ চাষ করেছি। পরবর্তী সময় লাউয়ের সঙ্গে অন্যান্য সবজি আবাদ করার ইচ্ছা আছে। চলতি বছর যে সবজি চাষ করছি তা থেকে অনেক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

রুবেলের ওই বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষে পরিচর্যা ছাড়া তেমন কোনো পরিশ্রম নেই। কম খরচে বেশি লাভও হয়। তাকে দেখে পরিত্যক্ত ডোবা জলাশয় বা অনাবাদি জমিতে ভাসমান বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও। 

উত্তর বঠিনা গ্রামের কৃষক মনসুর আলী বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষাকালে আমরা কোনো চাষাবাদ করতে পারি না। রুবেল এবার অভিনব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছে এবং ফলনও খুব ভালো হয়েছে। তার সবজি খেত দেখে এসেছি। পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। আমিও ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করব।’ 

একই গ্রামের আরেক কৃষক ইসমাইল হোসেনের বলেন, আমার কিছু জমি পতিত পড়ে রয়েছে। রুবেলের ওই সবজি খেত দেখে আমাদের চোখ খুলে গিয়েছে। এরপর থেকে আমাদের জমি আর পতিত পড়ে থাকবে না। ভাসমান পদ্ধতিতে আমরাও লাউসহ নানান ধরনের সবজি চাষ করব।’ 

রুবেল ইসলাম তার ভাসমান পদ্ধতিতে মাচায় সবজি চাষ করে এলাকায় একটি সফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আলমগীর কবির জানান, রুবেলের উদ্ভাবনী পদ্ধতি দেখে অন্য কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে রুবেলকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিয়ে আসছি। জলাবদ্ধ জমিগুলো কাজে লাগিয়ে অন্য কৃষকরা যদি রুবেলের মতো ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করে, তবে আমরা তাদেরও সহযোগিতা করব। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন ও সবজির চাহিদা পূরণ হবে।’