![ইরানের সঙ্গে চুক্তি করায় ভারতকে হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের](uploads/2024/05/15/chabahar-port-India-1715749794.jpg)
ইরানের চাবাহার বন্দর পরিচালনার জন্য ভারত ১০ বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন বলছে, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বিষয়ে বিবেচনা করছে, এমন যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
পাকিস্তান লাগোয়া ইরানের সীমান্তের কাছে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ চাবাহার বন্দরের উন্নয়নের জন্য তেহরান-নয়াদিল্লির মাঝে ২০১৬ সালে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়। গত সোমবার এই বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য ইরানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত।
ভারতের নৌপরিবহনমন্ত্রী এই চুক্তিকে ‘ভারত-ইরান সম্পর্কের ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
তবে ইরানের সঙ্গে ভারতের চুক্তির বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ইরান-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত তিন বছরে ছয় শতাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
মঙ্গলবার (১৪ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এই চুক্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে এবং ওয়াশিংটন সেগুলোর প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।
ভারতের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান- যারাই ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে; তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে যে, তারা নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ঝুঁকির মাঝে নিজেদেরই উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।’
তবে ওয়াশিংটনের এই বিবৃতির বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
ভারত-ইরান চুক্তিতে তেলেবেগুনে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্র
ভারত আর ইরান চুক্তিতে তেলেবেগুনে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই হয়তো নিষেধাজ্ঞার এই হুঁশিয়ারি। ইরানের চাবাহার বন্দর বৈশ্বিক বন্ধুত্বের সমীকরণটা বদলে দিতে পারে। তাহলে কি সেই ভয়টাই পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?
সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর নিয়ে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে নয়াদিল্লি। তার পরেই যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এল হুঁশিয়ারি বার্তা।
বেদান্ত প্যাটেলের কথায়, কেউ যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসার কথা ভাবে, তাহলে কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে। অর্থাৎ তিনি সরাসরি ভারতের নাম না করে বুঝিয়ে দিলেন, ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার হবে না। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কে বন্ধু রাষ্ট্র, আর কে শত্রু রাষ্ট্র, তা বিবেচনা করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ইরানের সঙ্গে কেউ ব্যবসা করার কথা ভাবলে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার আগে থেকেই সজাগ থাকা উচিত। চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারত আর ইরানের যে চুক্তি হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র খুব ভালোভাবে জানে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ভারতের বিদেশনীতি নিয়ে তাদের কিছু বলার নেই। কারণ এই চুক্তি ইরান আর ভারতের সম্পর্কের আওতায় পড়ে। কিন্তু যেহেতু ইরানের ওপর এখনো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, সেই নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতেও জারি থাকবে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, সবটা জেনে কেউ যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা ভাবে, তাহলে সেই দেশের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। আর সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখে।
এমন বক্তব্যে খুবই স্পষ্ট, এটা ভারতের উদ্দেশে পরোক্ষভাবে একটা বড় হুঁশিয়ারি।
যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি পাত্তা দিবে ভারত?
যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি নিয়ে ভারত কী ভাবছে? আদৌ কি এই হুমকি নিয়ে ভারতের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ রয়েছে? এই প্রথম নয়, এর আগেও কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভারতের মিত্রতার কারণে নয়াদিল্লিকে এমন হুঁশিয়ারি কিংবা সতর্কবার্তার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তবে ভারত সেগুলোকে পাত্তা দেয়নি। যখন রাশিয়া থেকে ভারত এস ৪০০ মিসাইল সিস্টেম কিনেছিল, তখনো একইভাবে দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দেয় ওয়াশিংটন। যদিও ভারত তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি। বরং এস ৪০০ মিসাইল সিস্টেম কিনেই ছেড়েছিল। এবারেও যে ভারত সেই নিষেধাজ্ঞার কথা শুনবে না, তা বলাই বাহুল্য। কারণ ইরানের সঙ্গে চুক্তি ভারতের রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ একটা পদক্ষেপ। যেভাবে দিনের পর দিন ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার জন্য চীন বাণিজ্যিক করিডোর তৈরির পরিকল্পনা করছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে চীনের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারে ভারত-ইরানের চুক্তি।
কারণ শি জিনপিংয়ের স্বপ্নের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভের অংশ হলো চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর। যার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের গদর বন্দর। এবার কিন্তু এই বন্দর আর ভারতের গলার কাঁটা হতে পারবে না।
চুক্তি অনুযায়ী, চাবাহার বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে ভারতের ওপর। যার মাধ্যমে আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়া এমনকি ইউরোপের সঙ্গে ভারত সহজে যোগাযোগ রাখতে পারবে। গদর আর চাবাহার বন্দরের মধ্যে সড়ক পথে দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটার। আর সমুদ্র পথের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চাবাহারকে যুক্ত করা হবে, ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরের সঙ্গে। যার আওতায় রয়েছে ভারত, ইরান, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের জাহাজ রেল সড়কের প্রায় ৭২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ নেটওয়ার্ক। সূত্র: বিবিসি, প্রথম কলকাতা নিউজ।