দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ইসরায়েলকে সামরিক হামলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজ (আইসিজে)। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৪ মে) নেদারল্যান্ডসের হেগে ১৫ সদস্যের বিচারকের বেঞ্চে ১৩ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এ রায় দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে ইতোমধ্যেই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, হামাস, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, বেলজিয়াম, এইচআরডব্লিউসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
আইসিজের রায়ে গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছেন আইসিজের প্রধান বিচারক নওয়াফ সালাম। তিনি বলেন, ইসরায়েলের কথা বিশ্বাসযোগ্য নয় যে, গাজার অধিবাসীদের নিরাপত্তা এবং মানবিক প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর কোনো প্রমাণ নেই। ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে উল্লেখ করে নওয়াফ সালাম বলেন, এ কারণেই আদালত এখন একটি অত্যন্ত জোরালো আদেশ দিচ্ছে যে, ইসরায়েলকে অবিলম্বে রাফায় তাদের সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। সেখান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। মানবিক সহায়তা পেতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সীমান্ত ক্রসিংগুলো পুনরায় চালু করতে হবে। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশিত ব্যবস্থা প্রয়োগে অগ্রগতির বিষয়ে এক মাসের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট করতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারকরা।
এদিকে আইসিজের রায় মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল। রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করার অর্থ ইসরায়েলের অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যাবে। ইসরায়েল এতে সম্মত হবে না। এ ছাড়া রায়কে ‘নৈতিক পতন এবং নৈতিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড।
আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আল-জাজিরার সাংবাদিক সারা খাইরাত বলছেন, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের রায়ে স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ইসরায়েল সরকার। আইসিজের রায় ঘোষণার পর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের আইন উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হেগে হামাসের প্রতিনিধি বাসেম নাইম বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই, যেটি ইহুদিবাদী দখলদার বাহিনীকে রাফাতে তার সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আমরা বিশ্বাস করি গাজা উপত্যকাজুড়ে এবং বিশেষ করে উত্তর গাজায় দখলদারত্বের আগ্রাসন ঠিক ততটাই নৃশংস এবং বিপজ্জনক হওয়ায় এটি (আদালতের রায়) যথেষ্ট নয়।’ তিনি বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আরও কিছু করা দরকার। আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানাই, অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়কে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবে তা বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিবাদী শত্রুকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করতে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে এই রায় সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পান্ডর পাবলিক ব্রডকাস্টার এসএবিসিকে বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এটি অনেক শক্তিশালী, শব্দের পরিপ্রেক্ষিতে অস্থায়ী ব্যবস্থার আদেশ। এটি যুদ্ধ বন্ধের জন্য খুব স্পষ্ট আহ্বান।’
আইসিজে রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা রয়টার্সকে বলেন, এটি গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
স্বাগত জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ
আইসিজের রায়কে স্বাগত জানিয়ে মার্কিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ বলছে, আইসিজের রায়ে গাজায় কতটা খারাপ অবস্থা তা দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশে গাজায় ফিলিস্তিনিরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে তা উঠে এসেছে।
আইসিজের রায়কে স্বাগত জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাদজা লাহবিব। এক্স-এ তিনি বলেন, ‘গাজায় সহিংসতা এবং মানবিক দুর্ভোগ বন্ধ করতে হবে। আমরা যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং দুই রাষ্ট্রের জন্য আলোচনার আহ্বান জানাই।’
রায়কে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন অধিকার সংগঠন সিএআইআর
মার্কিন নাগরিকদের মানবাধিকার সংগঠন ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস’ (সিএআইআর) আইসিজের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। বিবৃতিতে তারা বলছে, ইসরাইল স্পষ্টতই গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছে। এই ভয়ঙ্কর লক্ষ্য পূরণ থেকে এটি বন্ধ করতে হবে।