![মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নজরদারির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর](uploads/2024/04/17/1713361113.Sheikh_Hasina.jpg)
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির ঘটনাপ্রবাহের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে চলমান সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই পরিকল্পনা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর রাখতে হবে। ইরান-ইসরায়েল কনফ্লিক্ট দীর্ঘমেয়াদি হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কোন খাতে কী প্রভাব পড়তে পারে, সে জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা যেমন- জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বা অন্যান্য কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। যাতে সময়মতো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া যায়।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার অভিযোগে গত ১৪ এপ্রিল ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় ইরান। কয়েক শ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বিশাল ঝাঁক ছোড়ে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)। ইসরায়েল বর্তমানে ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান গাজা যুদ্ধের মাঝে নতুন করে এ দ্বন্দ্ব ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম চড়তে শুরু করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেবিনেট মিটিংয়ে অনুমোদিত সিদ্ধান্ত এখনো কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, তার কারণও জানতে চেয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া ১৬টি আইন রয়েছে, যা এখনো আইন আকারে উপস্থাপনের জন্য সংসদে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চারটি আইন রয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হলেও কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, এখনো কেন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি তা বিস্তারিত আকারে জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে সেসব সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হলেও যেন তা মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হয়, সংশ্লিষ্টদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদের নির্ধারিত আলোচনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যদের সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সচিব বলেন, ১৯৮৩ সালের একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনারের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। সামরিক সরকারের আমলের যেসব অধ্যাদেশ বর্তমানে প্রযোজ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে, সেগুলোকে আইনে রূপান্তর করার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। তা ছাড়া ওই অধ্যাদেশটি ইংরেজি ভাষায় করা হয়েছে। সরকার এ অধ্যাদেশটি বাংলা ভাষায় আইনে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই আলোকে তৈরি করা আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে।
সভায় মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, মহেশখালী মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে যাতে অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু কার্যক্রম চলমান। এই পুরো কাজগুলো এখন আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় থেকে সম্পাদিত হচ্ছে। সমন্বিতভাবে এসব কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর আওতাধীন মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। বোর্ডে অর্থমন্ত্রী, কয়েকজন মন্ত্রীসহ ১৭ জন সদস্য থাকবেন।