কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি আগামীকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। তাকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা। সফরকালে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।
২০০৫ সালে কাতারের তৎকালীন আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন। প্রায় ২০ বছর পর বর্তমান আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশে আসছেন।
ভারত ও থাইল্যান্ডের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে কাতারের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর ফলে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের হস্তান্তর করতে পারবে দুই দেশ। দেশটিতে শতাধিক বাংলাদেশি কারাগারে আছেন। চুক্তি হলে তাদের ফিরিয়ে আনা যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন। এই সংখ্যা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই আলোচনা প্রাধান্য পাবে সফরকালে। সই হবে একটি সমঝোতা স্মারক।
সফরকালে ফিলিস্তিন ইস্যু এবং ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান কাতারের কাছে তুলে ধরা হবে।
কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সফর দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক অবদান রাখবে। সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।’
২০১৩ সালে কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য বাংলাদেশ একটি চুক্তি সই করে। তারপর ২০১৭ সালের জুনে বাংলাদেশ কাতারি সংস্থা রসগাসের সঙ্গে পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য বছরে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি চুক্তি সই করে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জাতিসংঘ সম্মেলনের (এলডিসি-৫) ফাঁকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জ্বালানি চাহিদা মেটাতে কাতারের কাছে জ্বালানি, বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর ১৯৭৪ সালের ৪ মার্চ কাতার বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। এরপর কাতারও ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে।
বাংলাদেশ ও কাতার বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ এবং কাতারের রূপকল্প ২০৩০ বাস্তবায়নে একে অন্যকে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে।
আমিরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ঢাকা
সরকার এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে আমিরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। সফর উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের ছবি দিয়ে ঢাকার কয়েকটি রাস্তা সাজানো হয়েছে।
আগামীকাল সোমবার বিকেলে একটি বিশেষ ফ্লাইটে আমিরের পৌঁছানোর কথা রয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আমিরকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে তার কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের দুজনের মধ্যে বৈঠক হবে এবং এরপর আরও একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। দুই নেতা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের সময় উপস্থিত থাকবেন এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেবেন। তারপর বিকেলে আমির বঙ্গভবনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে কাতারের আমিরের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন রাষ্ট্রপতি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া নির্বাচিত ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও একান্ত বৈঠক করার কথা রয়েছে আমিরের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন।
আমিরের নামে ঢাকায় পার্ক-সড়ক
কাতারের আমিরের নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি পার্ক ও উড়াল সেতুর নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসির আওতাধীন মিরপুরের কালশীর বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হবে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ৩টায় পার্ক ও উড়াল সড়ক উদ্বোধনের কথা রয়েছে আমিরের।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাতার বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের এই সম্পর্ক এবং আমিরের এ সফরকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে তার নামে এই পার্ক ও রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছে।’