![বাতিল দরপত্রেই জন্মনিরোধক বড়ি কেনার প্রক্রিয়া!](uploads/2024/05/29/dgfp_logo-1111-1716966276.jpg)
দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে চলতি বছরের জন্য ৪ কোটি ৮০ লাখ সাইকেল (তৃতীয় প্রজন্ম) খাবার বড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য চলতি বছরের ২ জানুয়ারি একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। যেখানে পাঁচটি লটে এই ওষুধ সরবরাহের শর্ত দেওয়া হয়। ওই দরপত্র আহ্বান করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) মার্জিয়া হক। পাঁচটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। একপর্যায়ে এ টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে অধিদপ্তর গত ১৩ মার্চ ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়। পরে সংক্ষুব্ধ তিনটি প্রতিষ্ঠান আদালতে অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। পরে অভিযোগকারী একটি প্রতিষ্ঠান তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, এসব অভিযোগের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। তা সত্ত্বেও নতুন কোনো দরপত্র আহ্বান না করেই গতকাল মঙ্গলবার হঠাৎ করেই ওই ওষুধ সংগ্রহের কার্যাদেশ দেওয়াবিষয়ক এক বৈঠক হয় অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে। যেখানে আগের দরপত্রে অংশ নেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য মতামত চেয়ে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) কাছে চিঠি পাঠানো হয়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ( উপকরণ) মো. মতিউর রহমান ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন, যা নিয়ে গতকাল দুপুর থেকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। দরপত্র আহ্বান ছাড়াই একটি প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ সাইকেল বড়ি সরবরাহ করতে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বড় ধরনের অনিয়ম বলে অভিহিত করেছেন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা।
অধিদপ্তরের সূত্রগুলো জানায়, বাজেটকে সামনে রেখে টাকা ধরে রাখার কৌশল হিসেবেই তড়িঘড়ি করে আলোচিত ও বিতর্কিত একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে নতুন কোনো দরপত্র ছাড়াই কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সূত্র জানায়, যে প্রতিষ্ঠানটিকে এই বিপুল পরিমাণ ওষুধ সরবরাহের সুযোগ দেওয়ার জন্য গতকাল সুপারিশ করা হয় সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের রায়ে অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন ও ক্যানসার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। জাতীয় সংসদ থেকে মনোনীত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকার সূত্র ধরে একটি রিটের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ২৮টি প্রতিষ্ঠানের বন্ধের নির্দেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের কারণে ২৮ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছিল মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ। এর আগে রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি এসব প্রতিষ্ঠানের তিন ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ তিন দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (উপকরণ) মো. মতিউর রহমান খবরের কাগজের কাছে গতকাল বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে যেভাবে আলোচনা হচ্ছে ঠিক এমনটা নয়। আমরা কেবল একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আদালতের দেওয়া আদেশ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত চেয়েছি।