![তৃণমূলের সুপারিশ ছাড়াই এবার নৌকার মনোনয়ন](uploads/2023/11/25/1700886814.AL.jpg)
দলের মনোনয়ন বোর্ডে উত্থাপিত জরিপ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করছে আওয়ামী লীগ। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন, বেসরকারি সংস্থার জরিপের তথ্য মিলিয়ে ৩০০ আসনেই প্রার্থীদের একটি তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা ব্যক্তিরাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন। সংসদীয় বোর্ডের একাধিক নেতা খবরের কাগজকে এ তথ্য জানান।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক নেতা খবরের কাগজকে জানান, গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ সভাপতি তিন মাস পর পর ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কার কী অবস্থা, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সরকারি একাধিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং বেসরকারি পেশাদার জরিপ প্রতিষ্ঠানের তথ্য মিলিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সে তালিকায় যারা এগিয়ে আছেন, তারাই এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে এর ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে।
আগামীকাল রবিবারের মধ্যে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার কথা। গতকাল শুক্রবার দেশের চার বিভাগ, আগের দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আসনগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ। আজ শনিবার ও কাল রবিবার দেশের বাকি দুই বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চাইছে আওয়ামী লীগ।
কী ধরনের মানদণ্ডে নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে গত বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের জনমত জরিপে, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব সেল আছে। কার কী অবস্থা সেই সেলের মাধ্যমেও তথ্য আসে। সব মিলিয়ে যার নম্বরটা বেশি, তাকেই মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হবে। গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই আমরা মনোনয়ন দেব।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে তৃণমূল থেকে নাম প্রস্তাব করা হতো। সে নামগুলো মনোনয়ন বোর্ডে বিবেচনা করা হতো। এবার সে পথে হাঁটছে না আওয়ামী লীগ। দলের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ২৭(৫)-তে বলা হয়েছে, ‘উপজেলা/থানা, ইউনিয়ন/পৌর ওয়ার্ড ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী সংসদীয় আসনভিত্তিক মনোনয়ন প্রার্থীদের গুণাগুণ ও জনপ্রিয়তা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করিয়া তাহাদের সুপারিশসংবলিত একটি প্রার্থী প্যানেল স্ব-স্ব সাংগঠনিক কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ড বরাবর প্রেরণ করিবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ড একজনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করিবে।’
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, এবার মনোনয়ন বোর্ডে বিভিন্ন মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থিত থাকা নেতাদের প্রত্যেকের কাছে একটি করে ফাইল দেওয়া হয়। এ ফাইলে আসনভিত্তিক প্রার্থীদের তথ্য থাকে। প্রতিটি আসনে প্রার্থীদের তথ্য টেবিলাকারে উপস্থাপন করা হয়। এ টেবিলে চারটি ঘর আছে।
ঘর চারটি হলো- ক্রমিক নম্বর, নাম, অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে অবস্থান ও ছবি। মনোনয়ন বোর্ডের সভায় যখন যে আসনে যার মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়, তার নামের পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া হয়। বোর্ডের সভায় উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের দপ্তর ও উপদপ্তর সম্পাদক সভার সিদ্ধান্তগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নামের সঙ্গে তার দলীয় পদ উল্লেখ থাকে। কেউ জনপ্রতিনিধি হলে সে তথ্যও উল্লেখ থাকে। অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে অবস্থান শীর্ষক ঘরটিতে উল্লেখ থাকে প্রার্থীদের মধ্যে কে প্রথম কে দ্বিতীয় সেই ক্রম। মোট ১০০ শতাংশের মধ্যে কে কত শতাংশ নম্বর পেয়েছেন, সেগুলোও উল্লেখ থাকে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র জানায়, দলের নেতাদের এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপরে। দলের জন্য অবদান, নেতা-কর্মীদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা, সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা, কতদিন ধরে দল করছেন, পারিবারিক রাজনীতির ইতিহাস, ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, কোভিড মহামারির সময়ে ভূমিকা কী ছিল, এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থীদের ক্রম তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
মনোনয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন আবেদন ফরম বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি আসনে গড়ে ১১ জনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তবে মনোনয়ন বোর্ডে মনোনয়ন আবেদন ফরম সংগ্রহ করা সবার নাম বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে আসনভিত্তিক জরিপ প্রতিবেদনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মূলত তাদেরই প্রার্থী হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা সবার নাম মনোনয়ন বোর্ডে বিবেচনায় নেওয়া না হলেও তাদের সবাইকে একদিন ঢাকায় ডেকে কথা বলতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ বিষয়টি নিয়ে দলের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে।
প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নতুন মুখও এসেছে। কিছু বাদও পড়েছে। বিজয়ী হতে পারেন এমন প্রার্থীদের বাদ দেয়নি আওয়ামী লীগ।’