![বরিশাল বিভাগে ১০ হেভিওয়েটের সামনে ৯৭ নেতা নৌকার দাবিদার](uploads/2023/11/25/1700890320.Barishal_Politics.jpg)
বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নৌকা প্রতীকের ১০ জন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে বরিশাল-১ আসনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ একক প্রার্থী। এ ছাড়া অন্য ৮ জনের বিপরীতে নৌকা প্রতীকের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে ৯৩ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এতে কিছুটা হলেও ওই সব হেভিওয়েট প্রার্থী চাপের মুখে রয়েছেন।
হেভিওয়েট প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা. শাম্মী আহমেদ, সাবেক উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু।
ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু ঝালকাঠি-২ আসনের এমপি। এর আগে তিনি এই আসন থেকে থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রী। তার এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. গোলাম রব্বানী কবির চিনু।
ভোলা-১ আসনের বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের অপর বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ ৮ বার এমপি হয়েছেন। একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে। তার এই আসন থেকে নৌকার প্রতীক চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন আরও তিনজন। তাদের মধ্যে আছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হেমায়েত উদ্দিন এবং ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মনজু এবং আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরণ।
ভোলা-২ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বর্ষীয়ান নেতা অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। এই আসন থেকে আবেদন জমা দিয়েছেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের ছেলে আফতাব ইউসুফ রাজসহ ১০ নেতা। ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও তার ছেলের মনোনয়ন প্রাপ্তিতে বড় বাধা বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আজম। তিনিও মনোনয়ন চেয়েছেন। এ ছাড়া যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরণ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশিকুর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওমর শরীফ, আওয়ামী লীগ নেতা, আবদুল কাদের খান, মাকসুদ আলম, খায়রুল আলম চৌধুরী, শাহীন চৌধুরী আবেদন জমা দিয়েছেন।
পিরোজপুর-২ আসনের বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি ১৪ দলীয় ভোটভুক্ত শরিক দল জাতীয় পর্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে জয়ী হন। এ পর্যন্ত ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ বছরেও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৪ দলের পক্ষ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এই আসন থেকে নৌকা চেয়ে আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের ১০ নেতা।
অন্যরা হলেন, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মহারাজ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকীব বাদশা, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ সহিদুল আহসান, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আজম খান, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আমিনুর রহমান সগির, খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনাস্থ পিরোজপুর জেলা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলহাজ খান মো. কবির হোসেন এবং আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহিদুল হক, তালুকদার সরোয়ার হোসেন, এ বি এম বায়েজিদ ও মনিরুল ইসলাম।
পিরোজপুর-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনিসহ এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছেন ১৩ জন। তার প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না এবং পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পরিবারে চার সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়াল, তার ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও পৌর মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান খালেক এবং ছোট ভাই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা রোজিনা নাছরিন, গোলাম হায়দার, চণ্ডীচরণ পাল, মাহফুজা খাতুন, একেএম আজম খান, শেখ খালিদ অরিন্দম, দীপ্ত হালদার, এ কে এম আজিজ এবং মশিউর রহমান ও মজিবুর রহমান।
পটুয়াখালী-২ আসন থেকে ৭ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আসম ফিরোজের সঙ্গে নৌকা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ১২ জন নেতা। এতে তিনি অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। নৌকা প্রতীক চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা, বাউফল পৌরসভার মেয়র ও পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েল, বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য হাসিবুল আলম তালুকদার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হক সুপ্ত, পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক ভিপি খলিলুর রহমান মোহন, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য জোবায়দুল হক রাসেল, মেজর (অব.) ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ খান নুন ফরাজি, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ফিরোজ আলম, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান ও ইসমত আরা হ্যাপী।
পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান মিয়ার মৃত্যু হলে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। একাদশ সংসদের একেবারেই শেষ সময়ে অ্যাডভোকেট আফজাল শপথ গ্রহণ করেন। আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হলে আফজাল হোসেন পড়বেন বেকায়দায়। কারণ এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। এ ছাড়া এই আসনে নৌকার মাঝি হতে আরও ১২ জন ফরম জমা দিয়েছেন। তারা হলেন, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সুলতান আহমেদ মৃধা, পটুয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তারেকুজ্জামান মনি, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান মোহন, পটুয়াখালী মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন, পটুয়াখালী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার, দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ হাওলাদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ উপকমিটির সদস্য রাজীব পারভেজ, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আশরাফ, সাংবাদিক নাজনীন নাহার, কাজী নজরুল ইসলাম, নিখিল চন্দ্র গুহ ও গাজী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
বরগুনা-১ আসনের ৬ বার নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তার আসন থেকে নৌকা চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন ২২ জন প্রার্থী। বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের মধ্যে এই আসনেই নৌকার মাঝি হতে সর্বাধিক সংখ্যক নেতা নৌকার মাঝি হতে চাইছেন। ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভুর সামনে বড় বাধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু। তারাও মনোনয়ন চেয়েছেন।
এ ছাড়া সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব মৃধা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ, মো. খলিলুর রহমান, মশিউর রহমান শিহাব, অ্যাডভোকেট শাজাহান মিয়া, গোলাম সরোয়ার ফোরকান, মো. রফিকুল ইসলাম বাপ্পি, মনিরুজ্জামান মনির, এলমান আহম্মেদ সুহাদ, সাবেক আমলা মিহির কান্তি মজুমদার, মনিরুল ইসলাম মনির, জামাল উদ্দিন বিশ্বাস, গাজী শাহ আলম, ইদ্রিস আলী মোল্লা, রোজিনা নাসরিন, ইয়াসমিন সুমি, ফারজানা সুমি ও মেহেরুন নেছা মনোনয়ন চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা. শাম্মী আহমেদসহ ৬ জন। তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের সংসদ সদস্য মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদের মেয়ে। এখানে তার মনোনয়নে বড় বাধা বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ ও ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। এ ছাড়া এই আসনে নৌকা চেয়েছেন আরও চার নেতা। তারা হলেন, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, সাবেক ছাত্রনেতা তারিক বিন ইসলাম এবং দুই সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) নাছিরউদ্দিন খান ও মেজর (অব.) মোহাসিন শিকাদার।
(তথ্য সহায়তা দিয়েছেন ঝালকাঠির আল-আমিন তালুকদার, বরগুনা প্রতিনিধি মহিউদ্দিন অপু, ভোলা প্রতিনিধি ইমতিয়াজ মাহমুদ ও পটুয়াখালী প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান)।