ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

আখের গোছাতে ব্যস্ত তাঁতী দলের নেতারা

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১০:১৪ এএম
আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ১০:২১ এএম
আখের গোছাতে ব্যস্ত তাঁতী দলের নেতারা
তাঁতী দল

দলীয় পদ-পদবি এবং কমিটি বাণিজ্যের মাধ্যমে আখের গোছাতে ব্যস্ত তাঁতী দলের শীর্ষ নেতারা। বিস্তৃত করার পরিবর্তে তারা সংগঠনকে আরও সংকুচিত করেছেন। ৯০ দিনের আহ্বায়ক কমিটির ‘বয়স’ এখন ছয় বছর। দীর্ঘ এই সময়ে তাঁতী দলের শীর্ষ নেতারা নিজেদের বলয়কে আরও প্রসারিত করেছেন, পদ বাণিজ্য চালিয়েছেন প্রকাশ্যেই।

সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, শীর্ষ নেতারা তাঁতী দলকে নিজের ‘টাকা কামানোর’ দোকান হিসেবে ব্যবহার করছেন। অভিযোগকারীরা বলেছেন, দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ ও সদস্যসচিব মজিবুর রহমানকে টাকা দিলে পদ মেলে, না দিলে পদ নেই। পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। অর্থ গ্রহণকারীদের অনেককেই তিনি পদ দেননি, তবে কারও টাকা ফেরতও দেননি। উৎকোচের বিনিময়ে জেলা কমিটি অনুমোদন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্থের লোভে এক জেলায় দুই-তিনবার আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, আজাদ ও মজিবুর ‘মাইম্যান’ দিয়ে জেলা ও মহানগরের পকেট কমিটি গঠন করেছেন। বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের খরচ দেওয়া হলে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন এই শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। সংগঠন পুনর্গঠন হলে নতুন নেতৃত্ব আসবে।’ তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বা প্রতিহিংসার কারণে তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে বদনাম ছড়াচ্ছেন।’

তাঁতী দলের নিয়ন্ত্রণে আছেন গুটিকয়েক নেতা। তাদের মধ্যে আছেন আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শামছুন্নাহার বেগম, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান খান এবং আব্দুল মতিন। তাদের সঙ্গে আছেন আরও সাত-আটজন। এদের অনিয়ম-দুর্নীতি, কমিটি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে বিভিন্ন সময়ে লিখিত আকারে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসব লিখিত অভিযোগের কপি খবরের কাগজের হাতে রয়েছে।

চিঠি থেকে জানা যায়, পিরোজপুর জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক মারা যাওয়ার পর দলের নেতাদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা পরিবারের কাছে ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তান্তর না করে নিজের কাছে রেখেছেন আহ্বায়ক আজাদ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের ১ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। ১০ লাখ টাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজি মজিবুর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এর আগে একই পদের জন্য টাইলস ব্যবসায়ী মতিন চৌধুরীর কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা, সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার ও যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নেন তাঁতী দলের আহ্বায়ক আজাদ। যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মঞ্জুরের কাছে ৩ লাখ টাকা চান আজাদ। ২০১৭ সালে যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির একটি সমিতি থেকে ৮ লাখ টাকা তুলে ধার দেন। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে মূল টাকা ফেরত দিলেও সমিতির সুদ দেননি আজাদ। 

চিঠি থেকে আরও জানা যায়, ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ডামি কাউন্সিলের মাধ্যমে আহ্বায়ক মোস্তফা কামালের স্বাক্ষর ছাড়াই ঢাকা মহানগর উত্তরে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ময়মনসিংহ জেলা কমিটির জন্য সাধারণ সম্পাদক শহীদ আনোয়ারুল ইসলাম উজ্জ্বলের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেন আজাদ। গাজীপুর কমিটির সাবেক সহ-তথ্য গবেষণা সম্পাদক আসাদুল আলম সরকারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন এই শীর্ষ নেতা। 

অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁতী দল ছেড়ে গাজীপুর স্বেচ্ছাসেবক দলে যোগ দিয়েছেন আসাদুল আলম সরকার এবং ময়মনসিংহ মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম উজ্জ্বল। তারা বলেন, তাঁতী দল ব্যবসায়ী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। 

জানা গেছে, নীলফামারী, ফরিদপুর, রাজশাহী মহানগর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ অনেক জেলায় দু-তিনবার আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের তালিকা ওলটপালট করে জুনিয়রদের সামনে আনা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে পদ-পদবি ‘বিলিবণ্টন’ করা হয়েছে। ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলার আসামি মোশারফ হোসেন কাজলকে রাজশাহী মহানগরের সভাপতি করা হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ বাহার উদ্দিন বাহার, নীলফামারীর সদস্যসচিব এনামুল হকসহ বেশ কয়েকজন।

সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিলেমিশে কাজ করার তাগিদ দিলেও তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না। টাকার বিনিময়ে কমিটি দিচ্ছেন, আবার পছন্দ না হলেই ভেঙে দিচ্ছেন। দুটি গ্রুপ সৃষ্টি করে সংগঠনকে সামনের দিকে এগোতে দিচ্ছেন না।’

যুগ্ম আহ্বায়ক জে এম আনিছুর রহমান বলেন, ‘প্রোগ্রামের কথা বলে তারা সারা দেশে চাঁদাবাজি করেন। প্রোগ্রাম সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা- সবই একা করেন। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই বহিরাগত দিয়ে অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হয়, পরে টার্গেট করে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাই দুর্নীতিমুক্ত তাঁতী দল গড়ে তুলতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জরুরি হস্তক্ষেপ দরকার।’

অভিযোগের বিষয়ে আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘অভিযোগ দিলেও তারা শক্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। পদ-কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগও সর্ম্পূণ মিথ্যা। আমার টাকার প্রয়োজন নেই, নিজের টাকায় দল চালাই।’ তিনি বলেন, ‘কেউ তাঁতী দল করতে চায় না। সেখানে কেন পদ-পদবি কিনবে? প্রতিটি জেলায় সাংগঠনিক টিমের রিপোর্ট অনুযায়ী কমিটি দেওয়া হয়।’

সদস্যসচিব মজিবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার দরকার নেই, নিজের টাকায় দল করি। কমিটি না থাকলেও ভালোবেসে দল করে যাব।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তাঁতীবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগ আছে, তবে শক্ত প্রমাণ নেই। তাই ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসা যেন না থাকে। যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে।’

নেই গঠনতন্ত্র-কার্যালয়
১৯৮০ সালে তাঁতী দলের প্রতিষ্ঠা হলেও ৪৪ বছরে গঠনতন্ত্র তৈরি করতে পারেননি নেতারা। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে তাঁতী দল। রাজধানীসহ সারা দেশে কোনো কার্যালয় নেই। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে সংগঠনের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু সেখানে তাদের কোনো কক্ষও নেই।

জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৯ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৯ এএম
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

ন্যূনতম একদফা, অবৈধ, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দাবিতে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য "জাতীয় ঐক্যের” আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে, লুণ্ঠিত গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, অধিকারহীন জনগণের ও জাতির মুক্তির লক্ষ্যে আমরা উপরোক্ত ন্যূনতম একদফার ভিত্তিতে এবং দাবিতে দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, ব্যক্তি ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি "জাতীয় ঐক্য" গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনের সকল শরিকদল ও জোট, বাম-ডান সকল রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক ও সকল ইসলামী রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের প্রতিও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সময় ও যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতার কারণে বিবৃতির মাধ্যমে সম্মতি প্রদান করা যেতে পারে। শীঘ্রই সম্মতিপ্রাপ্ত সকলের স্বাক্ষরে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হবে। জাতীয় ঐক্যের এই ঐতিহাসিক ঘোষণা ও দলিল দেশ ও জাতির মুক্তি ত্বরান্বিত করবে ইনশাআল্লাহ।

সবুজ/এমএ/

বামপন্থি দলগুলোর শোক সমাবেশ আন্দোলন জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:২৩ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:২৩ পিএম
আন্দোলন জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ
ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর জনগণের মনে যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে, তারই বহিঃপ্রকাশ সারা দেশ দেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বামপন্থি দলগুলোর নেতারা। দেশব্যাপী যে চরম সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাকে ‘জনতার আন্দোলন’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন তারা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নিরপরাধ মানুষকে হত্যার দায়ে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদ শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে দেশব্যাপী শোক সমাবেশ ও মিছিল করেছে। ঢাকার পুরানা পল্টনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশে বাম দলগুলোর নেতারা সরকারের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। বাম দলগুলোর নেতা-কর্মীরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে কালো ব্যাজ ধারণ করে সমাবেশ ও শোক মিছিলে শরিক হন। নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

বামপন্থি নেতারা বলেন, পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ২০৬ জন মানুষ হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। সর্বশেষ কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী নামিয়ে দমন-পীড়ন চালাতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করেনি। এখন চলছে নির্বিচার গণগ্রেপ্তার। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণগ্রেপ্তার কর্মসূচির নিন্দা জানিয়ে বাম নেতারা বলেন, সরকার যদি ভাবে এভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে তারা আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে পারবে, তবে তারা ভুল পথে হাঁটছে। এই আন্দোলন কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা শুরু করলেও বাস্তবে এ আন্দোলন সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট, স্বৈরাচারী নীতি ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনতার দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। আন্দোলনের যে আগুন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তা দমন-পীড়ন করে বন্ধ করা যাবে না। 

সরকারের পদত্যাগ দাবি করে তারা বলেন, সরকার কোনোভাবেই এই হত্যাযজ্ঞ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দায় এড়াতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

শোক সমাবেশ থেকে নানা দাবি উত্থাপন করেন বাম নেতারা। এ দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কারফিউ প্রত্যাহার করে সেনাবাহিনী-বিজিবিকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত হামলায় জড়িতদের বিচার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ করা। 

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার বেলাল চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

কোটা সংস্কার আন্দোলন হত্যা ও পঙ্গুত্বের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের দাবি বিএনপির

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩২ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩২ পিএম
হত্যা ও পঙ্গুত্বের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের দাবি বিএনপির

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত কয়েকদিনে কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সেই সঙ্গে জনগণের টাকায় কেনা কী পরিমাণ গোলাবারুদ, টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাবও জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে দলটি। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক বিৃবতিতে এ দাবি জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বিএনপি ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার, কারান্তরীণ ও জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিবৃতি দেন তিনি। 

মির্জা ফখরুল বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজির স্থাপন করেছে তা দেশ-বিদেশের সব স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেবে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবৈধ সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে গ্রেপ্তার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনকে তিন দিন পর আদালতে তোলা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, অব্যাহত গতিতে দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মী বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দকে গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন/চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে, যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদেরকে গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে। সরকারকে এ ধরণের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, এই নির্মম অত্যাচারে দেশের জনগণ হতবাক ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচিও পালন করেছে। কিন্তু সরকার মরিয়া হয়ে রাষ্ট্রের সকল বাহিনীসহ দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে সাধারণ মানুষ, বিএনপি নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ব্লক রেড দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। এখন পর্যন্ত তাদের হিসাবে প্রায় ৩ হাজার গ্রেপ্তার করছে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।

ফখরুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই অবৈধ সরকারকে বলব- অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। এই গণহত্যা, নির্যাতন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সকল দেশ প্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভয়াবহ ফ্যাসীবাদী শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দূর্বার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

শফিক/এমএ/

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি সভা ডেকেছে জাপা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:০১ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি সভা ডেকেছে জাপা

দেশে সহিংস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আগামী রবিবার (২৮ জুলাই) দলের সর্বস্তরের নেতাদের নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম দলের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ তথ্য দেন।

তিনি জানান, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) নির্দেশে আগামী রবিবার বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন জি এম কাদের।

দলের এই জরুরি যৌথসভায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, সব কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদ সদস্য, ঢাকায় অবস্থানরত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য সচিবদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা গণমাধ্যমকে জানান, সংকটময় পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীদের করণীয় নির্ধারণে এই সভা ডাকা হয়েছে। রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস, জনসম্পৃক্ত হয়ে দলের ভাবমূর্তি প্রতিস্থাপনের বিষয়েও দলের শীর্ষ নেতারা তৃণমূলের উদ্দেশে বার্তা দেবেন।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের প্রেসিডিয়ামের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘রওশন এরশাদের পক্ষটি দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো বিনষ্ট করতে নানা রকম অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের পক্ষে ভিড়িয়ে নিতে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে দলের তৃণমূলকে। 

ইতোমধ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীরা ওই পক্ষে গিয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এতে দলের ভেতরে নানা অসন্তোষ দানা বাঁধছে। এ ছাড়া দলের নবম কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। এর আগে দলকে গোছানো জরুরি। তাই এ সভাটি গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাঠে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে রওশন এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। তার দলের দপ্তর সম্পাদক আবুল হাসান আহমেদ জুয়েল শুক্রবার দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ শনিবার (২৭ জুলাই) বেলা ১১টায় সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় রাজধানীর নানা ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শনে যাবেন। 

তিনি সেতু ভবন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোলপ্লাজা হয়ে যাবেন মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন ছাত্র-সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যদের দেখতে যাবেন। পরে তিনি গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন।

জয়ন্ত সাহা/ইসরাত চৈতী/

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে : ওবায়দুল কাদের

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:১২ পিএম
প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে : ওবায়দুল কাদের
ওবায়দুল কাদের

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কামনা করি না। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে। যারা সহিংসতায় জড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। অচিরেই দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ দায় বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরদের। এ দায় থেকে মুক্তি পেতে তারা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাইছে। দেশ ও দেশের মানুষের ওপর তারা আস্থা রাখে না। এবারও তাদের সেই সন্ত্রাসী চরিত্র উন্মোচিত হওয়ায় এ দায় থেকে মুক্তি পেতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চাইছে।’ 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সরকার হটানোর অপচেষ্টা সফল হতে দিতে পারি না। এই অশুভ চক্রান্ত ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কায়দায় লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। সরকার হটাতে এখনো সক্রিয় দেশি-বিদেশি কুচক্রী মহল।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখনো যারা আন্দোলনের ডাক দিয়ে যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য দেশকে ধ্বংস করা, দেশের অর্থনীতিকে আরও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা আবারও হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, যেখানেই আক্রমণকারী দেখবেন সেই খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতাকারীদের ধ্বংসাত্মক কাজ জাতির সামনে উপস্থাপন করে সত্য প্রকাশ করুন। আওয়ামী লীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষ বানানোর চেষ্টা সফল হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আহমাদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

রাজু/সালমান/