![বেকার হওয়ার শঙ্কায় ১৪০০ কর্মী](uploads/2024/05/15/nilfamari-1715746397.jpg)
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আবদুল হালিম। সাত বছর ধরে একটি প্রকল্পের অধীনে এখানে চাকরি করছেন। সাকল্যে বেতন পান ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা। এই বেতন দিয়েই চালান সংসার। সন্তানদের লেখাপড়া করান। দুর্মূল্যের বাজারে কোনো রকমে চালান সংসার। কিন্তু এখন তিনি বেকার হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। যে প্রকল্পের অধীনে এতদিন কাজ করছেন তার মেয়াদ আগামী ২৫ জুন শেষ হবে। এর আগেও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখন আর বাড়াতে চাচ্ছে না। এরই মধ্যে ওই পদে স্থায়ী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ১৭ জুন পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার তা স্থগিত করা হয়। শুরুর দিকে প্রকল্পের কর্মীদের এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। পরে উচ্চ আদালতে রিট করে তারা পরীক্ষায় বসার আদেশ পেয়েছেন।
আবদুল হালিম বলেন, ‘বিভিন্ন সময় চাকরি স্থায়ী করার কথা বলা হলেও এখনো হয়নি। চাকরি স্থায়ী হবে জেনে অন্য কোনো চাকরির চেষ্টা করিনি। এখন সরকারি চাকরির বয়স শেষ। এই চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব।’
২০১৬ সালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের আউটসোর্সিংয়ে আবদুল হালিমের সঙ্গে কাজ শুরু করেন হাবিবুর রহমান লিটন। তিনি এখন একই জেলার জলঢাকা উপজেলা নির্বাচন অফিসে কর্মরত। বলেন, ‘এত বছর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পরও আমাদের অভিজ্ঞতা ও সততার কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমি কমিশনের ওপর আস্থা রেখে আদালতে রিট করিনি। তাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাব না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আমি এখন সন্তানদের খরচ কীভাবে চালাব? তাদের কাছে আমি সারাজীবন ব্যর্থ পিতা হয়ে থাকব।’
শুধু আবদুল হালিম আর হাবিবুর রহমান লিটন নন। তাদের মতো একই অবস্থা জেলার আরও ১৪ জনের। এ ছাড়া এই প্রকল্পে দেশব্যাপী কাজ করা ২ হাজার ২৬১ কর্মকর্তা-কর্মচারী বিপাকে পড়েছেন। তাদের মধ্যে এখনই বেকার হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। আগামী ২৫ জুন এ প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে।
প্রকল্পের কর্মীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত অভিজ্ঞ জনবল বাদ দিয়ে নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসি। ফলে টানা দুই মেয়াদে কর্মরত থাকা অভিজ্ঞ এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনের মাঝপথে এসে বেকার হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের প্রথম দিকে ‘আইডিইএ’ প্রকল্পের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ দেয় নির্বাচন কমিশন। ১৩ হাজার টাকা বেতনে এক বছর মেয়াদি এ চাকরির মেয়াদ পরে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালে চার হাজার টাকা বেতন বাড়ানো হয়। ২০২০ সাল থেকে প্রকল্পটি ‘আইডিইএ (২য় পর্যায়)’ নামে চলমান আছে। বিভিন্ন সময় প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য দাবি করলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পে ২ হাজার ২৬১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ২০ জন সহকারী পরিচালক, ২০ অ্যাসিস্টেন্ট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ৮৪ জন সহকারী ইঞ্জিনিয়ার, ২০ জন উপসহকারী পরিচালক, ১ হাজার ৪২৪ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ৫১৯ জন স্ক্যানিং অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অপারেটর পদ অন্যতম। এ ছাড়া বিভিন্ন পদে আরও কর্মী নিয়োজিত আছেন।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার আরেক অপারেটর গোলাম আজম পারভেজ বলেন, ‘আমাদের চাকরির পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আদালতে রিট করে আমরা সেই সুযোগ ফিরিয়ে এনেছি। কিন্তু চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই বয়সে এসে চাকরি হারালে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অভিজ্ঞ জনবল না থাকলে আমাদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। নতুন জনবল এলে প্রতিটি কাজে ভোগান্তি পোহাতে হবে। তবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কাছে আমরা নিরুপায়।’