![কর্মীদের টাকা ফেরত দিতে সময় চেয়েছে বায়রা](uploads/2024/06/11/BAIRA-1718078189.jpg)
নিজেদের মতো করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিজ (বায়রা)। এ জন্য সরকারের কাছে কিছু সময় চেয়েছে সংগঠনটি। মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীরা যাতে টাকা ফেরত পান সেই চেষ্টা করছেন সংগঠনটির নেতারা। পাশাপাশি সরকারের প্রতি কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছে বায়রা।
অন্যদিকে, সোমবার (১১ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বায়রার বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তুমুল হট্টগোালের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাহী কমিটির একটি পক্ষ সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার ও মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে এজিএম বয়কট করে। পরে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে বয়কট করা নেতারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে না পারায় চরম হতাশ এসব কর্মী যাতে টাকা ফেরত পান সেই চেষ্টাই করছে বায়রা। সরকারি হিসাবে এমন কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে বায়রার একজন শীর্ষ নেতা বলেছিলেন যে এমন কর্মীর সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ হাজার।
মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার কারণ অনুসন্ধানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান) নূর মো. মাহবুবুল হককে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা তদন্ত কমিটির কাছ থেকে প্রতিকারও চাইতে পারবেন। টাকা ফেরত পেতে কমিটির কাছে অভিযোগ করতে হবে।
কিন্তু বায়রার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সংগঠনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে বলা হয়েছে, কিছুদিন সময় পেলে দায়ী অ্যাজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিজেরাই টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবে। আপাতত সরকারের পক্ষ থেকে যেন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বায়রার যুগ্ম মহাসচিব-৩ টিপু সুলতান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বায়রা নেতৃবৃন্দ টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অ্যাজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। আশা করি বিষয়টির একটি সমাধান আসবে। পাশাপাশি সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতেও অনুরোধ করা হয়েছে বায়রার পক্ষ থেকে, যাতে এসব কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেন।’
কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান
এদিকে যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরত পাওয়ার চেয়ে তারা যাতে যেতে পারেন, সেটাই তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো বলে মনে করে বায়রা। কূটনৈতিক তৎপরতা সফল না হলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে বারবার বলছেন সংগঠনটির নেতারা।
সরকারের পক্ষ থেকে যদিও এ ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ৩১মের পর মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অন্য ১৩টি উৎস দেশের জন্য যে আইন, বাংলাদেশের জন্যও সেই আইন। কাজেই বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়া প্রবেশের সময় বাড়বে না।
৫ মে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারও জানান, সময় বাড়ছে না। তবে ঢাকার বার্তাটি তিনি কুয়ালালামপুর পাঠাবেন বলে জানান।
এ প্রসঙ্গে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর খবরের কাগজকে বলেন, টাকা ফেরত দেওয়ার চাইতে ভালো হয় যদি সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এসব কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারে। কারণ কর্মী টাকা পেলেও দেখা যাবে পুরো টাকা পাবেন না। এ ছাড়া যতটুকু টাকাই পাওয়া যাবে, সেটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা: প্রতিমন্ত্রী
এদিকে গত রবিবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে আপনাদের বিস্তারিত জানানো হবে। আশা করছি, যারা দোষী আছে তাদের কী ধরনের সাজা দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে সুপারিশ থাকবে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বায়রার সাধারণ সভায় হট্টগোল, লাঞ্ছনার অভিযোগ
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানোর কথা বলে প্রতারণার অভিযোগ ও সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ করায় বায়রার এজিএমে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির একাংশের নেতারা।
বায়রার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রিয়াজ উল ইসলামসহ একাংশের সাধারণ সদস্যরা জানান, সোমবার (১১ জুন) সকালে সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভায় তাদেরকে লাঞ্ছনা ও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করা নেতাদের অভিযোগ, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও মহাসচিব মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সংগঠনটির সাধারণ সদস্যদের দাবি অগ্রাহ্য করেছেন তারা।
তারা বলছেন, বায়রার মহাসচিব যে ৩-৪ হাজার কর্মী যেতে পারেননি বলে গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি আসলে সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা ৫০ হাজার।