![সিলেটে নেই নিরাপত্তা বালাই!](uploads/2023/11/30/1701324483.Sylhet Security 2.jpg)
চা-বাগানে ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন সবাই। সবুজের সমারোহের মধ্যে অবস্থিত এই মাঠ দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। এতটাই মুগ্ধতা ছড়ায় যে, বিদেশি ক্রিকেটাররা এই মাঠে এলে অন্তত একটি ছবি তুলে রাখেন। প্রত্যেক সুন্দরের পেছনে থাকে কোনো না কোনো অন্ধকার। সিলেটের ওই অন্ধকার হলো- নিরাপত্তাব্যবস্থা। সিলেটের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বারবারই কোনো না কোনো প্রশ্ন ওঠে। প্রত্যেকবারই বলা হয় নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতন থাকা হবে। কিন্তু বাস্তবে তার সিকিভাগও দেখা যায় না।
চলতি বছরে বিপিএলের সিলেট পর্বে এক ভক্ত মাঠে ঢুকে জড়িয়ে ধরেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। তিনি মাঠে প্রবেশ করেছিলেন গ্যালারির নিরাপত্তাবেষ্টনী টপকে। গতকাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ফের একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এক শিশু মাঠে প্রবেশ করে সেলফি তোলার প্রস্তুতি নেয় মমিনুল হকের সঙ্গে। এই উদ্দেশ্যে পকেট থেকে ফোন বের করেন। এর আগেই অবশ্য তাকে ধরে ফেলেন বাউন্ডারি লাইনের বাইরে থাকা মাঠকর্মীরা। অন্য প্রান্তে থাকা ডিবি সদস্যরা দৌড়ে এসে তাকে ধরে মাঠের বাইরে নিয়ে যান।
চলতি বছরের দুই ঘটনার আগেও সিলেটের মাঠে দর্শকের ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৮ সালে সিলেটে হওয়া প্রথম টেস্টেও মাঠে অনাহূত হিসেবে ঢুকে পড়েন এক সমর্থক। সেবার ক্রিজে গিয়ে মুশফিককে জড়িয়ে ধরেছিলেন সেই সমর্থক। একই ঘটনা বারবার পুনরাবৃত্তির পরও বোধোদয় হয়নি কর্তৃপক্ষের। গ্যালারির সামনে থাকা নিরাপত্তাবেষ্টনীতে আনা হয়নি কোনো পরিবর্তন। ওই নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে সহজেই মাঠে ঢুকে পড়তে পারবে যে কেউ। সেই সুযোগটাই নিয়েছে মাঠে ঢুকে পড়া সমর্থকরা।
মাঠের বাইরে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে টেস্ট চলাকালে চোখে পড়ে ছোট শিশুদের। তারা সবাই স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে। সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামের চারপাশের বেশির ভাগ অংশে নেই কোনো দেয়াল। নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয়েছে লোহার বেষ্টনী। সেই বেষ্টনী পেরিয়ে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে ঢোকা মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র। অল্প যেটুকু অংশে দেয়াল আছে তার উচ্চতাও খুব বেশি নয়। যেকোনো সময় ওই দেয়াল টপকে মাঠে প্রবেশ করা সম্ভব। এর পাশাপাশি স্টেডিয়ামের গ্রিন গ্যালারির অংশে নেই কোনো নিরাপত্তাপ্রচীর। ফলে চা-বাগানের ভেতর দিয়ে যে কেউ সহজে মাঠে প্রবেশ করতে পারবে। নিরাপত্তাব্যবস্থায় হাজারও গলদ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ের এর উন্নয়নে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিসিবি কিংবা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
চারপাশে থাকা গিলের সীমানাপ্রচীর টপকে বেশির ভাগ সময়ই লাক্কাতুরার স্থানীয় বাচ্চা ও ছেলেমেয়েরা বারবার মাঠে প্রবেশ করে। আশপাশে বিসিবির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার ব্যক্তিরা সেটা পরখ করলেও নেন না কোনো ব্যবস্থা। ফলে অবাধে স্টেডিয়ামের এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় টিকিটবিহীন সেই সব লোকজনকে। এতে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা সমর্থক ও ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ম্যাচ চলাকালীন ক্রিকেটার ও সমর্থকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনায় সব সময় উদ্বেগ থাকলেও বাস্তবে সেসব রোধে নেই কোনো ব্যবস্থা। কেন সম্ভব হচ্ছে না তা জানতে চেয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জয়দীপ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সিলেট থেকে নির্বাচিত বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
সিলেটের আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামেও একাধিকবার মাঠে দর্শক প্রবেশের ঘটনা ঘটেছিল। ঢাকায় গ্যালারির বিভিন্ন অংশে থাকা নিরাপত্তাপ্রাচীর পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে খানিকটা নিশ্চিত করা গেছে নিরাপত্তা। তবে সিলেটে নেই সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থা।