৭ জানুয়ারির নির্বাচনে শক্ত লড়াইয়ের আভাস মিলছে ঢাকা-১৪ আসনে। মিরপুর, শাহ আলী ও দারুস সালাম এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনে এবার নৌকার কাণ্ডারি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। তার বিপরীতে মাঠে নিজের অবস্থান বেশ ভালোভাবেই জানান দিচ্ছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন। ভোটারদের ধারণা, এখানে সহজে পার পাবেন না কোনো প্রার্থী।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন দুজনেই। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তারা। যেন এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার সকাল থেকেই নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গেছেন তারা। নিজের নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর-১, পাইকপাড়া, কল্যাণপুর, গাবতলী, দিয়াবাড়িসহ বেশির ভাগ এলাকা ছেয়ে গেছে তাদের পোস্টারে। পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে নৌকা ও ট্রাকের পোস্টার। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী লুৎফর রহমান ও জেড আই রাসেলের প্রচারও লক্ষ্য করা গেছে।
মিরপুর-১ বাজারের রতন নামের একজন ফল ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার ভালো ভোট হবে। কারণ নির্বাচন কমিশনের আইনকানুন এবার বেশ কড়া। এ আসনে নিখিল ও তুহিন দুজনই হেবিওয়েট। অর্থাৎ লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।’ রাব্বানী নামের এক ভোটার বলেন, ‘এটা ইলেকশন নয়, সিলেকশন। এত নাটকের কী দরকার ছিল? সঠিক নির্বাচন হলে ভোট দিতাম।’ বাসেত নামের এক ভোটারের সঙ্গে কথা হয় শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায়। তিনি বলেন, ‘ভোট এলে ভাই ভাই, ভোটের পর কেউ নেই। যে যায় লঙ্কা, সেই হয় রাবন।’
গতকাল দিনভর নানাভাবে প্রচার চালান নৌকার প্রার্থী মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নাগরিক সংবর্ধনা ও নির্বাচনি সভা, দুপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানসংলগ্ন সিটি কলোনি এলাকাবাসীর আয়োজনে মতবিনিময় সভা, ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে সভা, বিকেলে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের আয়োজনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনি পথসভা ও গণসংযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া মিরপুর-১ শাহ স্মৃতি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর পাইকপাড়ায় বাড়ি মালিক সমিতির আয়োজনে উঠান বৈঠকে অংশ নেন নিখিল। এ সময় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে আসেন, সে বিষয়ে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। বিএনপি চেষ্টা করবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে। এ ব্যাপারে সজাগ থাকাতে হবে।’
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তার তুহিন সকাল ৯টা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। গতকাল তিনি গাবতলী, তুরাগ সিটি, বড় বাজার, টালি কোম্পানি এলাকায় প্রচার চালান। যুব মহিলা লীগের ঢাকা উত্তরের সাবেক এই সভাপতির সঙ্গে নারীকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ট্রাক প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমার অসমাপ্ত কিছু কাজ শেষ করতে চাই। কাউন্দিয়া ব্রিজ আমি নির্মাণ করব ইনশাল্লাহ। এই এলাকার সমস্যা আমার জানা। তাই আমার জন্য নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। বেকারত্ব দূর করব, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাইনুল নিখিলের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বহিরাগত দিয়ে কাজ হবে না। আমি এই এলাকার মেয়ে। মানুষ আমাকে ভালোবাসে।’ সব প্রার্থীই যোগ্য মন্তব্য করলেও তুহিন বলেন, ‘মাঠে তার ভোট ও লোক দুটোই বেশি।’
অন্যদিকে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জেড আই রাসেল বলেন, ‘এলাকায় তার জনপ্রিয়তা অনেক। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তিনি ১ নম্বরে চলে আসবেন বলেও দাবি করেন।’ তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা ও কর্মীদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। কারা হুমকি দিচ্ছেন জানতে চাইলে ঈগল প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ‘নিখিল ও তুহিন দুই প্রার্থীর লোকজনই হুমকি দিচ্ছেন।’