সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোটা পুনর্বহাল রায়ের প্রতিবাদে ও কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেন। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
শাবিপ্রবি: কোটা পুনর্বহাল রায়ের প্রতিবাদে ও কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর এলাকায় নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন তারা। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিবের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূরউদ্দিন রাজু, ফয়সাল হোসেন ও পরিসংখ্যান বিভাগের আয়াতুল্লাহ।
রাবি: ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে জমায়েত হতে থাকেন। পরে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ববি: কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা কাফনের কাপড় পরে এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানববন্ধন ও পরে সড়ক অবরোধ করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা চার দফা দাবিসহ কোটা বাতিল উত্থাপন করেন। দাবি আদায় না হলে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইবি: এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন তারা। এ সময় মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাকৃবি: কোটাবিরোধী আন্দোলনে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন অবরোধ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়সংলগ্ন রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করা হয়। এ সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল করে রেললাইনে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে কোটা প্রথা বাতিলের দাবি জানান। ট্রেন আটকে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সকল চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হয়। অবিলম্বে কোটা প্রথা বাতিল করতে হবে। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে।
চবি: সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে আবারও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টাব্যাপী অবরোধে সড়কের দুই লেনে দুই কিলোমিটারেরও বেশি যানজট তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে শুধু বৈষম্য দূর করার জন্য। কোটা পদ্ধতিতে এখনো সেই বৈষম্য বহাল রয়েছে। কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ, অন্যায় ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত।’
বেরোবি: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কের মোড়সংলগ্ন ১নং গেটের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
কুবি: চারটি দাবি জানিয়ে তিন ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে তারা মহাসড়কে অবরোধ ছাড়ার ঘোষণা দেন। তারা এ সময় চারটি দাবি করেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন ও মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় তারা ‘লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষ্যমের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।