![উত্তরবঙ্গের মহাসড়ক, ঈদযাত্রায় ২২ জেলায় স্বস্তির আশা](uploads/2024/03/23/1711167247.Sirajgnaj-Highway.jpg)
উত্তরবঙ্গের একমাত্র প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক। এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দুই থেকে তিনগুণ। আগে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে এ বছর মহাসড়কে চার লেন, নলকা ব্রিজ এবং ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়াতে অনেকটাই স্বস্তি পেতে পারেন উত্তরবঙ্গের ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ।
তবে কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যানজট সৃষ্টি হতে পারে। পরিবহন চালকদের দাবি, ঈদের আগে মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ সংস্কার করলে যানজট নিরসন সম্ভব।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আমরা দুই সপ্তাহ আগেই মহাসড়কের সব শেষ চিত্র পর্যবেক্ষণ করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে ওই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বা ছোট ছোট কাজ রয়েছে, সেগুলো আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে মেরামত করে দেবে বলে জানিয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর মহাসড়কের অবস্থা খুবই ভালো। মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৭৫০ পুলিশ মোতায়ন থাকবে। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এ বছর ঈদে মানুষ নির্বেঘ্নে ও নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল হয়ে চান্দাইকোনা মহাসড়কে ৫০ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় মিলে ২০টি স্থান সংস্কারের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০ রোজার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কার করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোল চত্বর থেকে হাটিকুমরুল হয়ে চান্দাইকোনা মহাসড়কে ৫০ কিলোমিটারজুড়ে বিভিন্ন অংশে চার লেন ও ইন্টারচেঞ্জের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও নির্মাণাধীন চার লেনের অনেক স্থান এক লেনে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ফলে এসব জায়গায় গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এ ছাড়াও মহাসড়কে কোনাবাড়ী, ঝাঈল, গোলচত্বর ফুড ভিলেজ, প্যাচলিয়া, মুলিবাড়ি, চান্দাইকোনা ব্রিজ, জমজম হোটেল, হাটিকুমরুল, ভুইয়াগাতী, সাহেবগঞ্জ সড়ক রয়েছে বেশ ঝুঁকিতে।
সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বাসের চালক শিপন আলী বলেন, ‘ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ফুড ভিলেজ এলাকায় রাস্তা খুবই খারাপ। ওই জায়গায় গাড়ির চাপ বেশি থাকলে যানজট সৃষ্টি হবে।’
বাসচালক আলীম শেখ জানান, ঝাঈল ব্রিজ, নলকা, প্যাচলিয়া ও সয়দাবাদসহ কিছু কিছু জায়গায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য ওই সব পয়েন্টে রাস্তা মেরামত করা জরুরি।
বাসের সুপারভাইজার শাহ আলম বলেন, ‘আগে তো এ মহাসড়কে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো। অন্য বছরের তুলনায় এবার রাস্তার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক জায়গায় ব্রিজগুলো খুলে দিয়েছে, ফ্লাইওভাবের কাজও অনেকাংশে হয়ে গেছে। এবার আশা করা যায় যানজট হবে না।’
মোটরসাইকেলচালক ওমর ফারুক বলেন, ‘আগের তুলনায় বর্তমান রাস্তার অবস্থা ভালো। আগে রাস্তা সরু ও ভাঙা থাকায় যানজট হতো। কিন্তু এবার চার লেনসহ আরও কাজ হওয়ায় আর তেমন যানজট হবে না। কিছু কিছু রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় অল্প যানজট হতে পারে।’
ট্রাকচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘যানজট যাতে না হয়, এজন্য মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনের নজরদারিও বাড়তে হবে।’
সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোলচত্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বর্তমানে সেখানে ৭৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াতে যেন বিঘ্ন না ঘটে, এজন্য হাটিকুমরুল মোড়ে এক মাস আগেই কংক্রিটের রাস্তা মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ চারটি লেনের মেরামত কাজ শুরু করেছে। আশা করছি এ বছর সেখানে ট্রাফিক জ্যাম হবে না।’